![]() |
রঙের উৎসব - উৎসবের রঙ : পিনাকী চৌধুরী |
শীতের রুক্ষতা ও জড়তা কাটিয়ে নব কিশলয় এর মধ্য দিয়ে বসন্তের আগমন ঘটেছে। গাছে গাছে সবুজের সমারোহ দেখে আপনার আমার মন আজ পুলকিত! প্রকৃতি যেমন রঙিন হয়ে উঠেছে, তেমনই মানুষের হৃদয়েও যেন আজ রঙ লেগেছে ! আর ঠিক এই সময়টাই যেন আদর্শ রংয়ের উত্সব দোলযাত্রা বা হোলি উৎসবের জন্য। দোলযাত্রা হল একটি হিন্দু পবিত্র ধর্মীয় উৎসব। আর বাঙলার বাইরে পালিত হয় হোলি উৎসব। রাধা কৃষ্ণের ঈশ্বরিক প্রেম তো জগৎ বিখ্যাত। প্রচলিত মত অনুসারে বসন্ত পূর্ণিমা বা দোল পূর্ণিমার এই পবিত্র দিনে বৃন্দাবনে শ্রীকৃষ্ণ আবির নিয়ে রাধিকা এবং তার অন্যান্য গোপী গনের সাথে রঙের উৎসবে রঙিন হয়ে রং খেলায় মেতে উঠেছিলেন।
সম্ভবত সেই থেকেই দোল যাত্রার সূচনা হয়েছিল। আজও এই দোলযাত্রার দিন সকালে চারপাশটা কেমন রঙে রঙে রঙিন হয়ে ওঠে। রংয়ের উৎসবের এই দিনে সকালে রাধাকৃষ্ণের বিগ্রহ খুব সুন্দরভাবে সাজিয়ে , আবির রঙে রাঙিয়ে দোলায় চড়িয়ে নাম সংকীর্তন সহকারে শোভাযাত্রায় বার করা হয়। অসংখ্য ভক্ত যেন তখন রঙে রঙে রঙিন হয়ে ওঠেন এবং এক অনাস্বাদিত রঙিন আনন্দ লাভ করেন। সেই পথ পরিক্রমায় যেন জনজোয়ারের রূপ ধারণ করে। এখানে উল্লেখ্য, এই পূর্ণিমা তিথিতেই কিন্তু আবার চৈতন্য মহাপ্রভুর জন্ম বলে একে গৌর পূর্ণিমা বলে অভিহিত করা হয়ে থাকে।
শান্তিনিকেতনের বসন্ত উৎসব তো জগৎ বিখ্যাত ! রঙিন আবিরে স্নাত হয়ে নারী পুরুষের সমবেত নৃত্যানুষ্ঠান সকলের নজর কাড়ে ! এবং এটি রবীন্দ্রনাথের সময়কাল থেকেই শুরু হয়েছিল। সেই ট্র্যাডিশন আজও অব্যাহত। এই হোলি উৎসব বা দোল যাত্রার পৌরাণিক উপাখ্যানটিও কিন্তু বেশ চমকপ্রদ। কি সেই কাহিনি ? দোলযাত্রার আগের দিন পালিত হয় হোলিকা দহন বা নেড়াপোড়া। কিন্তু কে এই হোলিকা ? হোলিকা ছিলেন মহর্ষি কশ্যপ এবং তাঁর পত্নী দিতির পুত্র হিরণ্যকশিপুর ভগিনী। ব্রহ্মার বরে হিরণ্যকশিপু দেব ও মানব বিজয়ী হয়ে দেবতাদের অবজ্ঞা করতে শুরু করেন এবং অমিত শক্তিধর বলে নিজেকে মনে করতে শুরু করেন।
তার পুত্র প্রহ্লাদ আবার ছিলেন বিষ্ণুর ভক্ত। প্রহ্লাদ বিষ্ণুকে নিজ পিতার ওপরে সসম্মানে স্থান দেওয়ায় প্রবল ক্রুদ্ধ হয়ে হিরণ্যকশিপু নিজের পুত্রকে পুড়িয়ে মারার হুঙ্কার এবং আদেশ দেন। এদিকে দাদার আজ্ঞাবহ হয়ে হোলিকা প্রহ্লাদকে কোলে করে অগ্নিতে প্রবেশ করলেন। কিন্তু বিষ্ণুর কৃপায় আবার প্রহ্লাদ কিন্তু অক্ষতই রয়ে গেলেন। বরং আগুনে প্রবলভাবে দগ্ধ হয়ে হোলিকা মৃত্যুবরণ করেন। সেই থেকেই দোলের আগের দিন হোলিকা দহন বা চাঁচর উৎসব হয়ে আসছে। আজ ও দোলের আগের দিন শুকনো কাঠ আর শুকনো গাছের ডাল একত্রিত করে মহাসমারোহে তাতে অগ্নিসংযোগ করে নেড়া পোড়ায় মাতেন বহু মানুষ।
আর দোলের দিন জাতি ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সকল ভেদাভেদ ভুলে প্রায় প্রতিটি মানুষই রঙের উৎসবে মেতে ওঠেন এবং একে অপরকে রাঙিয়ে দিয়ে এক সুস্পষ্ট সামাজিক বার্তা প্রেরণ করেন। তাই এই ঋতুভিত্তিক উৎসবটির গুরুত্ব আজও অপরিসীম। যাবতীয় সংকীর্ণতার ঊর্ধ্বে উঠে এই দোল উৎসব হয়ে উঠেছে আজ সর্বজনীন । তবে বিশেষজ্ঞরা বলেন থাকেন, এই দোলযাত্রার দিন ভেষজ রঙ এবং ভেষজ আবীর দিয়ে রঙ খেলা ভাল এবং তা ত্বকের কোনো ক্ষতি করে না ।
0 Comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন