বাদশা-আলো : ঋদেনদিক মিত্রো


বাদশা-আলো  

ঋদেনদিক মিত্রো


বাদশা-আলোয় আমি হেঁটে চলি পথ,  
সে-আলোয় সূর্যাস্ত নেই,   
আমি শুধু পরিব্রাজক !  

সঙ্গে ঝুলিতে আছে সেই বিদেশী
   প্রাচীন পন্ডিত হিউয়েং সাং এর মত  
                   কিছু পুঁথিপত্র,  
আর চিন্তনের আকাশ-নুপুর,   
তারা নাচতে -নাচতে বাজে,   
তখন তো আমি চলে যাই  
       জোৎস্নার আকাশে !

বাদশা-আলোয় আমার দেহ হেঁটে যায়,   
দেহের ভিতরটা জোৎস্না-আকাশ নিয়ে  
       খেলছে,  খেলছে গো খেলছে !  

এখন সময়টা কি দুহাজার কুড়ি,  
তাই যদি হয় ----
তাহলে কত বছর আগের শৈশবে  
    চলে গিয়ে গুড় মুড়ি খাচ্ছি কী করে !
     বাড়ির কলাকাঁদির কলা,  সফেদা,   
এই ফাস্টফুড এর যুগে ---
    আমি এখনো শৈশবের খাবার  খাই,  
     যদিও সেগুলো এখন আমার ঘরে নেই,  

এখনো আমি ক্লাস সিক্সে পড়া ফ্রক-পরা
    সুমিত্রার সাথে আমবাগানে প্রেম করি,   
        যদিও সে আজ কোথায় জানিনা,  

টাইমমেশিন নাকি সব
              উলটপালট করে দিতে পারে,   
 কে বলে এখনো আবিষ্কার হয়নি তা,  
    আমরা টাইম মেশিন নিয়ে চলাফেরা করি!
 
যারা, ঘরে  ধুলাঝুল ভর্তি
     "বর্ণ পরিচয় " ,  সহজ পাঠ "  দেখলে  
         চলে যাই সেই টালি খড় ছাওয়া
              প্রাইমারি স্কুলে,  

আহা !  মাস্টার মশায় বলতেন ---
        ইস্কুল মানে ঈশ্বরের ঘর,  

এখানে যে আসে সে নতুন জীবন পায় !

হে,  একবিংশ শতক,  
সেই আলো-মাস্টার মশাইরা কোথায় এখন?  

যাঁরা চরম দারিদ্রেও মিথ্যে বলতেন না,  

আমাদের কানমলা দিয়ে যখন তখন
          এক একটা করে কথা বলতেন,  
তখন ওইসব কথা সব বুঝতাম না,  
    কিন্তু কানে লেগে আছে আজও,   

তাঁদের সেই কথা গুলি মনে করে-করে  
   তোমাদের একটু শোনাই !  
      তারপর আবার ফিরে যাবো
                    বাদশা-আলোয় !.

আমার সেই ছোট ইস্কুলের
    ছোট মাস্টার মশাইদের  
      মুখের কথাগুলো আজ শুনলে
      তুমিও হঠাৎ করে দেখতে পাবে হয়তো  
        তুমিও হেঁটে চলেছ বাদশা-আলোয়,   

জীবনে কত বই পড়েছো, কত ডিগ্রী নিয়েছো,  
  কত বছর খরচ করেছো,
     আমার সেই ছোট ইস্কুলের
        ছোট মাস্টারমশাইদের
           মুখের কিছু উপদেশ
            শুনে দেখো,  মাত্র মিনিট দুই তিন,  

 তাঁরা বলতেন ---
         কোনো কাজে ফাঁকি দিবি না,  
                      সফলতা পাবি !
তবে কোনো কাজ
       কারা নষ্ট করতে পারে কী ভাবে
          সেটা বুঝে সতর্ক না থাকলে
            সৎ চেষ্টা নিষ্ফল হয় !

সফলতার পরেও সফলতা ভেস্তে যায়
        সারা জীবন সতর্ক না থাকলে !
মৃত্যুর আগে রেখে যেতে হয় সক্রিয় করে
       সেই সতর্কতার পথ গুলি !

না হলে সুনামে কলঙ্ক নেমে আসে,  
  বিরাট কর্মও হারিয়ে যায়
  নদীর গর্ভে ক্রমে-ক্রমে
           একটা দেশ ঢুকে যাবার মত !

তাঁরা আরো বলতেন,  
বলতেন মানে ওই
      ক্লাসে কোনো-কোনো সময়,
আবার কখনো যখন বড় হয়েছি,  
  পথে দেখা হলে প্রণাম করলে বলতেন
         দুটো কথা,  আবার হেঁটে যেতেন
            বিশ্ব পরিব্রাজকের মত
            জোড়াতালি দেওয়া পোশাক o
              সেলাই করা জুতা পরে,  

আমি তো তাঁদের মত এতো বড়
       পরিব্রাজক হতে পারিনি!
    
হ্যাঁ,  তাঁরা বলতেন :--

যা পড়বি বুঝে পড়বি,  সেটাই জ্ঞান,  
যা করবি জেনে বুঝে করবি, সেটাই কাজ,  
যা নিবি জেনে বুঝে নিবি, সেটাই অমৃত,   
যা বলবি ভেবে বলবি,  সেটাই কথা,  
যা দিবি,  ভেবে দিবি,  তোরও ক্ষতি হবেনা
     যাকে দিবি তারও ক্ষতি হবে না,  
                           সেটাই দান !
যে কোনো কথা যেই বলুক নিজে ভাববি,  
    তবেই জীবনে টিকে থাকবি !  

নিজের চিন্তা ও কর্ম ঠিক থাকলে
     কারোর দেওয়া কলঙ্ক বা
        কোনো ধর্মের সংস্কারকে ভয় পাবি না !

       জানবি, তোর সিদ্ধান্তই তোর গুরুজন,
         তোর উদ্দেশ্যই সেরা ধর্ম,
                  তোর ধর্মই তোর জয় !.

সংস্কার ব'লে আলাদা কিছু নেই,  
ভাববি, নিজেকে সুস্থ রাখতে পারার পথই
         আমার কাছে সেরা সংস্কার !.  


বলতো, এবার তোমরা কি
    বাদশা-আলোর পথের কাছাকাছি
               আসছো না পরপর?  

তাঁরা বলতেন আরো কী কী শোনো :-

যে-শিক্ষিত মানুষ
      বই থেকে দূরে থেকে সুখ পায়,  
             সে সবচেয়ে বড় প্রতারক হয়,  

যে-মানুষ  মনযোগিয়ে কথা বলে সে ভীরু,  
যে-মানুষ সাহস দেখানোর নামে
     উৎপাত করে
            সে মূর্খ ও কুটিলের ক্রীতদাস,  

অসৎ মানুষও কখনো বদলাতে পারে  
       কিন্তু,  তাকে বিশ্বাস করা যায়না !
তাকে বিশ্বাস করার আগে
            অনেক হিসেব জানতে হয় !

কোনো আইন নয়,  পুলিশ নয়,  
    নিজের বিচার বুদ্ধি,  
      প্রতিনিয়ত বহু সতর্কতা  
          ও সৎ সাহসই
           একজন সৎ মানুষকে
                             রক্ষা করে যায় !  

শিশুকে দিয়েও কেউ সর্বনাশ করতে পারে
  অপরাধী নিজে যাতে কখনো ধরা না পড়ে !..

আচ্ছা বলতো
    তাঁরা এতো কথা পেতেন কোত্থেকে,
তাঁদের না ছিল বড় ডিগ্রী,  না ছিল
        বাড়িতে আলমারি ভরা বই,  

তাঁদের ছিল না কোনো আলমারি,   
  তাঁদের একটি জিনিস শুধু ছিল
       ছাত্রকে গড়ে তোলার জন্য
              ইচ্ছের জয়যাত্রা,   

তাঁদের মত কি আমরা কেউ হতে পারি গো !

তাঁরা আরো বলতেন কী জানো :--

যে-কোনো ঘটনা সহজ ভাবে নিবি না,  
  বাইরে যা দেখবি তার ভিতরে আছে  
  অনেক দূর অবধি অনেক কিছু,  
   সেইগুলি ভেবে বের করার
   বুদ্ধি ও চেষ্টা সমাজে নেই বলেই
   দুরূহ কূটিলরা কোনোদিন ধরা পড়ে না !.

জাত অপরাধীকে ধরতে গেলে
   সে নানা কৌশলে সব গুলিয়ে দেবে
            বছরের পর বছর,  
সতর্ক থেকে তোর কাজ চালিয়ে যাবি,  
    আর নিজের লোককেও বিশ্বাস করবি না,  
জাত অপরাধী তোর কাছের লোককেও
 তোর চেষ্টা বন্ধ করাতে কাজে লাগাতে পারে !

জানবি,  জ্ঞানী হয়ে বাঁচাই সুখ !   

বড় হয়ে কতবার কত বিপন্নতায়
   পথে-পথে
     পাগলের মত হেঁটে গেছি,
  হঠাৎ পথে দেখা হলে সেই পুরানো
 ছোট ইস্কুলের ছোট মাস্টারমশাইদের
      কারোর  সাথে,  
     আমার প্রণাম নেবার পর
         আমার সমস্যা শুনে
          একটা কিছু বলে দিতেন,
  আমার মনে হতো সব সমস্যা চলে গেলো !

সেইসব কথা আজ তোমাদের শোনাচ্ছি,  

তাঁরা বলতেন কী সোহাগ দিয়ে :--

কাউকে না কাউকে জ্ঞানী ও সৎ সাহসীরূপে
      গড়ে তুলবি,  সেটাই  শ্রেষ্ঠ কর্ম,  
        

পৃথিবীর যেখানেই থাক,
   যত ঘনিষ্ঠ সঙ্গেই থাক --- ভাববি একা,  
                 কারণ,  এটাই সত্য!
এইসত্য যে লঙ্ঘন করে সে বিপদে পড়ে !

বারে-বারে সৎ মানুষের বিপন্নতা
      বুঝিয়ে দেয় ---
          আইন হলো অসৎ লোকদের   
  অসৎ কাজ করার জন্য তৈরী একটি পন্থা !

নির্লোভ হওয়া মানে নিজের সম্পদ
  অসৎ বা মূর্খ সৎ এর হাতে ছেড়ে দেওয়া নয়,   
কারণ,  ওদের হাতে সম্পদ গেলে
      পৃথিবীর ক্ষতি,  
            তাই নির্লোভ হলেও নিজের সম্পদ
      অন্যের হাতে যেন না যায়,  
                 খেয়াল রাখিস !
প্রয়োজনে মৃত্যুর আগে
         নিজের সম্পদ নষ্ট করে দিবি,
কীট,  পশু,  পাখি,  
  এদের সেবা করে শেষ করে দিবি,
  কিন্তু ভুল মানুষের হাতে তুলে দিবি না,  
  নিজের পরিবারের লোক হলেও
  ইতর অভ্যাসের লোক ইতর কাজই করবে !
          তোর সুনাম কলংকিত করবে,  
             সমাজের ক্ষতি করবে !
তারা তোর সাথে যে-ভালো আচরণ করবে
   সেটা তোর থেকে কোনো না কোনো ভাবে  
      ভোগ বিলাসের উৎস লুটে নেবার কৌশল !

তাঁরা বলতেন আরো কত কী :--

আগ্রাসী মনের প্রাণ
    কখনো কাউকে ভালোবাসতে জানে না !.

বাড়িতে কাজকরা শ্রমিক মানুষদের প্রতি
      তোর আচরণ বুঝিয়ে দেবে
           তুই আসলে কতটা শিক্ষিত !

ঠিক কাজ করতে পারাই শান্তি,
        শান্তি নিয়ে আর সব বাণী মিথ্যা !
    
লোভী মানুষের সম্পদ বা পদ নষ্ট হলে
           দুঃখ করা পাপ জানবি,    
লোভীদেরকে সম্পদ বা উচ্চ শিক্ষা বা
    পদমর্যাদা পাইয়ে দেওয়া মানে  
     পৃথিবীর ক্ষতি করা,  
     সে-কাজকে দেশের কাজ বলে না,  
     সে-কাজকে বলে --- দেশের ক্ষতি করা !

কী গো,  কেমন লাগছে আমার সেই
    শৈশবের ছোট ইস্কুলের
       ছোট মাস্টারমশাইদের কথা?  

তারা বলেছিলেন :--

পরিবারের লোক মানে আপন হবে এটা ভুল,  
  লোভীরা কখনো কারোর আপন নয়,  
  তারা সম্পদ পাবার জন্য
                          আপন সেজে থাকে,  
চারদেওয়ালের  ভাবনা থেকে যেদিন বেরুবি
      সেদিন হবি আসল সুখি !

ধর্ম মানে সহজ ভাবে চলাফেরা করা !
জাত মানে দুটো,  
    পৃথিবীর যারা উপকার করে
         তারা উঁচু জাত,  
            বাকিরা নীচু জাত,  অস্পৃশ্য !

কোনো জায়গায় যাবার আগে
              বা  প্রবেশের আগে
                  অনেক হিসেব করবি,   
কারণ,  বিপদ হওয়ার জায়গা বেশী !

যারা তোর সাথে বেশী গল্প করতে চায়  
    তারা কেউ বন্ধু বা আপন নয়,
    তারা তোকে ঠকানোর পথ খুঁজছে !

যারা কোনো দিকে কিছু
          না দেখার সরলতা দেখায়
                তারা অসম্ভব বিষাক্ত !


শুনছো তো তাঁদের কথা?

তাঁরা বলতেন আরো কী কী শোনো :--

যে আজ উপকার করলো
        সেও কালকেও ক্ষতি করতে পারে!

যে যতই উপকার করুক  
       প্রতিদানে তাকে এমন কিছু দিবিনা
          যেটা দিয়ে সে তার লোভী চরিত্রকে
                  বাড়িয়ে তুলতে পারে !  
প্রতিদানের তাকে সেটাই দিস
                     যেটা না দিলে নয় !

গরীব হলেই সে সত্যবাদী থাকবে তা নয় !

ধনী মানেই সে মিথ্যেবাদী তা নয় !

মেহনতি দিয়ে একজন গরীবই তো ধনী হয় !

ধনকে অসৎ কাজে যে লাগায় সেই হলো অসৎ !

পৃথিবীর মানুষেরা যখন জ্ঞানী ও নির্লোভ হবে
     তখনি মানুষ মানুষকে বিশ্বাস করার
                   অধিকার জন্মাবে!

তার আগে যারা
   বিশ্বাস করার জন্য উপদেশ দেয়,  
       তারা নিজেরা বড় প্রতারক
          বা প্রতারকদের সহায়ক বন্ধু !

তারা ধর্মগুরু,  লেখক,  যেই হোক,  
                তারা গণশত্রু,  সাবধান !.

কাউকে বিশ্বাস ক'রে তোর ক্ষতি হলে
     সেই খেসারত তারা দেবে কিনা
                 জিজ্ঞেস করে নিস্ !

পিতা মাতা মানে দেবদেবী,  এসব ভুল,  
 তাই যদি হতো তবে ---
      সমাজে ও দুনিয়ার এতো ক্ষতি
               কারা করে চলেছে?  

ভাবতে পারো,  এসব কথা তাঁদের কথা,  

যাঁরা ধর্ম বলতে শুধু জানতেন   
  ছাত্রছাত্রীদের চেতনা প্রবণ করে তোলা, .
   স্বচ্ছলতা বলতেন সেটাকেই ---
       নিজেকে নির্লোভ হিসেবে
           বিশ্বাস করার সুখ !

তারাই বলতে পারতেন ::--

যারা যতটা সময় যতটা ভালো কাজ করে
     তারা ততটুকু সময় ততটা ভালো !

যদি কিনা সেই ভালো কাজের পিছনে
 কোনো কুমতলবের কারণ না জানা যায় !

ধর্মের লোকেরা অনেকে অনেক ভুল কথা বলে,  
    এটা যেদিন বুঝবি সেদিন তুই প্রকৃত ধার্মিক !

সমাজের সব কথাই  হলো
    ঠিক ভাবনার মানুষকে
                 দুর্বল করে রাখার নির্দেশ,
নিজের মত নিজে ভাববি,  
        পরোয়া করবি না,  তবেই বাঁচবি,
           যদি ভাবিস তোর ভাবনা ঠিক !
            
বইকে ভাববি সব কিছু,  তবেই তুই শিক্ষিত,  
অসৎকে ভাববি বিষ,  তবে বাঁচবি,  
       বিষ কখনো অমৃত হয়না,  জানবি !
সৎকে ভাববি
        যে কোনো সময় অসৎ হতে পারে,   
এর কোনো কারণ নেই,  কিন্তু ঘটে,  
আর,  সেই হলো আসল সৎ  
        যে প্রতিবাদী,  যে নির্লোভ,   
          জয়ের নিশান তার হাতে এমনি
                  কে যেন দিয়ে যায় !.

এবার শেষ হলো তাঁদের কথা গুলি,  
আমি জানি তোমরা নেমে গেলে
         বাদশা-আলোর পথে এইবার,   

 
হে পৃথিবী,  হে সফলতার রূপকথা,  
  আমার কোনো বিশ্ববিদ্যালয় ছিলোনা,  
   শুধু সেই সব ছোট ইস্কুলের
   ছোট মাস্টারমশায়দের হাতের স্পর্শ  
      আমার কানে লেগে আছে,  
বছর -বছর ধরে
   তাঁদের বলা মাঝে -মাঝে শোনা
                            ওই সব কথা  
  বুঝে উঠতে এতো বছর
                  সময় লেগেছে আমার,  

সেই ছোট মাস্টার মশাইদের
                       ওই কথা গুলি সহ
আর আছে সেই ইস্কুলের পড়াগুলি,  
   আমার ঝুলিতে পুঁথিপত্র যা আছে,  
      সেগুলি ওইসব ছোট মাস্টারের  
        আর ছোট বইয়ের জয়োধ্বনি,  
 
তার এতো মান !

সারা মানব সভ্যতা আমাকে বলছে  ---
                তুমি খুব বড় কবি !

আমি কী বা জানি,  নাকি তাঁদের নিয়েই
  করি চলাফেরা,  
   তাই বাদশা-আলো আমার পথে -পথে?  

না,  তবুও আমার কোনো
                      শান্তি নেই,  সুখ নেই,  

সব সুখ শান্তি ফেলে এসেছি  
   শৈশবের আম পেয়ারা বাগানে,  
   মৌসুমীদের হাঁস ও শাপলা ভর্তি পুকুরে, .

     প্রতিবেশী মিতালি মাসির পুরপিঠায়,   
     বট গাছের পাশে  
          রফিক চাচার  চা দোকানের
               লণ্ঠন জ্বলা অন্ধকারে  
                বিস্কুট চকোলেট জারে,   

কিছু পিঁপড়েকে দেখতাম
   তারা রফিক চাচার ওই বিস্কুট চকলেট
      খেয়ে যায়,  ওখানে পড়ে থাকতো !
তাদেরকে আমি দেখতাম চুপচাপ !.
রফিক চাচা পিঁপড়েদের দিকে তাকিয়ে
      আমাকে বলতেন --- ওরাও জীবন !

সামনে চা খেতে থাকা
   পুরানো স্বাধীনতা সংগ্রামী হরিশ হালদার  
      তখন সায় দিয়ে বলতেন ---
         রফিক ভাই,  ঠিক বলেছো !

আমরা যদি এইসব
   অসহায় জীবদের স্বাধীনতার জন্য
     যুদ্ধ করতাম! সেটা আর হয়ে ওঠেনি !

প্রকৃত স্বাধীনতা-যুদ্ধ মানে  
      সব জীবের বাঁচবার অধিকার,  
        শুধু মানুষের বাঁচবার অধিকার নয়,  
           কে বুঝবে এইসব,  রফিক ভাই !

এই কথা বলে তিনি দীর্ঘ শ্বাস ফেলেছিলেন !


ঠিক ই তো, সব অধিকার কি হবে মানুষের?  

তাহলে বাকি প্রাণীকুল কোথায় যাবে?  

তাদেরও চোখ আছে,  মন আছে,  
      নৃত্য আছে,  সংগীত আছে,  
          আছে আশ্চর্য স্মৃতি কথা,  

না হলে রাস্তায় আমি হেঁটে গেলে  
     কোনও কুকুর ছুটে এসে  
       আমাকে বলে কেন ---

গুরু,  বছর খানেক আগে আমাকে
  বিস্কুট খাইয়েছিলে,  তারপর কোথায় গেলে !

আজ বিস্কুট খাওয়াবে নাকি !
 কদিন কিছু জোটেনি,
 তুমি ছাড়া কেউ আমাদের বোঝে না,  
 গুরু,  আজ একটু জমিয়ে খাওয়াও না গো !
    হোটেলে গিয়ে অনেকটা
    ভাত তরকারি আনো,  
     নিয়ে এসে রেখে যেও হোটেলের পিছনে
      বাঁশ ঝাড়ের ভিতর,  
      খুব প্রেটেকশান ওখানে গুরু,  

আর অনেক বেড়াল বন্ধু আমাকে বলে ---
       কুকুর বন্ধু,  আমরা আরো নিঃস্ব !
           ওরাও ওখানে খাবে আমার সাথে !
    
কুকুর বন্ধুটার কথা শুনে
                  আমি অবাক হয়ে যাই !


আমি অবাক হয়ে যাই,  
                   মানবাধিকার মানে কী?

মানবাধিকার মানে কি শুধু  
  মানুষের জন্য একছত্র
                    লুটের আইন বানিয়ে ---

অন্য জীব-জগতের প্রতি  
                  অন্যমনস্ক থাকা?  


এসব ভাবতে পারছি আমি
              বাদশা -আলোয় পথে হেঁটে !

বলতো বাদশা -আলো,  তুমি কোত্থেকে আসো,  
         আমরা কেউ জানিনা,  

         তবু তোমাকে দেখে মুগ্ধ হই,  

            ভালোবাসি,  সুদীর্ঘ পথের দৈর্ঘের মত
                 তোমাকে ভালোবাসি !

তারপর,  কেঁদে ফেলি হঠাৎ করে !
    তুমি ধমকে বলো তখন ---
        কাঁদিস কেনরে পাগল,  
             তুই তো আমার আলোয় !

--------------------------------------------------------
  ( 13 নভেম্বর 2020,  Ridendick Mitro )  

বিঃদ্রঃ :-- যদি এই " বাদশা-আলো " কবিতাটি পড়ে পৃথিবীর একজনও বদলে যায়, বা আপাতত কেঁদে ওঠে,   আমার অশ্রুভেজা পরিশ্রম ধন্য !  :-- কবি

Share on Google Plus

About Shraboni Parbat

This is a short description in the author block about the author. You edit it by entering text in the "Biographical Info" field in the user admin panel.