অদ্বৈত মল্লবর্মণের সংক্ষিপ্ত জীবনী : রুদ্রসাগর কুন্ডু


অদ্বৈত মল্লবর্মণের সংক্ষিপ্ত জীবনী : রুদ্রসাগর কুন্ডু

 
অদ্বৈত মল্লবর্মণের সংক্ষিপ্ত জীবনী 
 
রুদ্রসাগর কুন্ডু
 

`তিতাস একটি নদীর নাম' -এর কথা সাহিত্যিক অদ্বৈত মল্লবর্মণ বাংলাদেশের কুমিল্লা জেলার ব্রাহ্মণবাড়িয়ার তিতাস নদীর তীরের গোকর্ণ গ্রামে ১ জানুয়ারি ১৯১৪ সালে জন্মগ্রহণ করেন। নদীমাতৃক বাংলাদেশের এক ছোট নদী তিতাস। এই তিতাসের তীরে মালোদের বাস। গোকর্ণ গ্রামের অদ্বৈত মল্লবর্মণদের পড়াটিকে বলা হত মালোদের পাড়া। তাঁর পিতার নাম অধরচন্দ্র বর্মণ। তিন ভাই ও এক বোনের মধ্যে অদ্বৈত ছিলেন দ্বিতীয় সন্তান। অদ্বৈতের গ্রামের মানুষ তাঁর মধ্য দিয়ে আলোর দিশা দেখেছিল।

অত্যন্ত প্রতিকূল পরিবেশে তাঁর লেখাপড়া শুরু হয়েছিল। স্কুলে ভর্তি হওয়ার আগেই তাঁর পিতা-মাতার মৃত্যু হয়, সেই কারণে তাঁর পরিবারের আর্থিক সচ্ছলতা ছিল না। তাঁর গ্রামের কয়েকজন পাড়ায় পাড়ায় ঘুরে চাঁদা তুলে তাঁর লেখাপড়ার খরচ সংগ্রহ করতেন। ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের মাইনর স্কুলে তাঁর লেখাপড়া শুরু হয়। তাঁদের পরিবার দরিদ্র থাকার ফলে কোনো কোনো দিন অনাহারে কাটাতে হত। ধুলি-ধুসরিত নগ্ন পায়ে, অভুক্ত পেট নিতে স্কুলে যেতেন এই মেধাবী ছাত্র। ম্যাট্রিকুলেশন পাশ করার পর তাঁর শুভানুধ্যায়ীরা কুমিল্লা ভিক্তোরিয়া কলেজে ভর্তি করে দেন।

অদ্বৈত ৫ম শ্রেণিতে পড়ার সময় থেকেই লিখতে শুরু করেন। তিনি স্কুলজীবনে গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ লিখে নানা পুরস্কার লাভ করেন। উচ্চ মাধ্যমিকের ১ম বর্ষের ছাত্র থাকা অবস্থায় `সন্তান' প্রেসের মালিক জিতু দত্তের পরামর্শে ১৯৩৪ সালে জীবিকার সন্ধানে তিনি কলকাতা আসেন। কলকাতায় মাসিক ত্রিপুরা' পত্রিকায় তাঁর কর্মজীবন শুরু হয়। ১৯৩৫ সালে তিনি ক্যাপ্টেন নরেন্দ্রনাথ দত্তের প্রতিষ্ঠিত সাপ্তাহিক নবশক্তি পত্রিকায় সহকারী সম্পাদক পদে যোগ দেন। সম্পাদক ছিলেন প্রেমেন্দ্র মিত্র। 

১৯৩৬ সালে সাগরময় ঘোষ নবশক্তি পত্রিকায় যোগ দেন এবং অদ্বৈতর সহকর্মী হিসাবে জীবনের হাতেখড়ি হয়। ১৯৩৮ সালে অদ্বৈত নবশক্তি পত্রিকার সম্পাদক নিযুক্ত হন। ১৯৪১ সালে তিনি `মোহাম্মদী' পত্রিকায় যোগ দেন। একই সঙ্গে তিনি দৈনিক আজাদেও কাজ করতেন। তিনি ৩ বছর মাসিক মোহাম্মদীতে কাজ করেছিলেন। কর্মরত থাকার সময়ে ১৯৪২ সালের শ্রাবণ সংখ্যা থেকে মাঘ সংখ্যা পর্যন্ত `তিতাস একটি নদীর নাম' উপন্যাস ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হয়। ১৯৪৫ সালে তিনি সাগরময় ঘোষের অনুরোধে দেশ পত্রিকায় যোগ দেন।

অতিরিক্ত পরিশ্রম ও অর্ধাহারে থাকার ফলে যক্ষারোগে আক্রান্ত হয়ে ১৯৪৮ সালে কাঁচরাপাড়া যক্ষা হাসপাতালে ভর্তি হন। ১৯৫১ সালে ১৬ এপ্রিল তিনি নারকেল ডাঙ্গার ষষ্ঠীতলার বাড়িতে শেষ-নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। আর এভাবেই শেষ হয়ে যায়, বাংলাসাহিত্যের অমর এক উপন্যাস রচয়িতার ইতিহাস। থেকে যায় `তিতাস একটি নদীর নাম' নামক এক মিথ।

Share on Google Plus

About Shraboni Parbat

This is a short description in the author block about the author. You edit it by entering text in the "Biographical Info" field in the user admin panel.

2 Comments:

Samapti Choudhury বলেছেন...

কম সময়ে অনেকটাই জানা গেল। ভালো লাগল।

Samapti Choudhury বলেছেন...

ভালো লাগল
ভালো লাগল।