গল্পের সাথে সুন্দরবন : ঋদেনদিক মিত্রো


গল্পের সাথে সুন্দরবন নিয়ে আমার 

কয়েকটি বাংলা ও ইংরেজি কবিতা

ঋদেনদিক মিত্রো  (ভারত )


[ Eleven poems in Bengali & English on the World Heritage Site Sundarbans including a prose by Ridendick Mitro ]

 

 ( এক )


     জীবন মানে আলো, না, ভুল, জীবন মানে জোৎস্না-আকাশ !
    
      এগারোটি  কবিতা আছে এখানে ! পৃষ্ঠা খুললেন,  এবার পুরো লেখাটার নিচে নেমে গিয়ে কী কী আছে কী ভাবে আছে দেখে নিন,  তারপর নিজের মত পড়া শুরু করুন ! একনাগাড়ে না পড়ে  যখন তখন অবসরে স্বাদ নিয়ে পড়ুন,  ভাবুন,  অনুভব করুন ! গদ্য ও কবিতা,  দুটোই অনুভব করুন নীরবতার সৌন্দর্যে !  


     গদ্যটায় এক একটি ভাব ও কাহিনীকে আলাদা -আলাদা করে রাখা আছে,  এটা কোনো ধরাবাঁধা নিয়মে রচনা নয়, কারণ অল্প পরিসরে আমার জীবনবোধের কিছু প্রকরণ রাখতে হবে এখানে,  সেই ভাবে সেই রসবোধ নিয়ে আপনাকেও পড়তে হবে,  তাই পুরো রচনাটা দেখে নিন চোখে,  একপলকে হালকা করে touch দিয়ে যান,  বিষয়টার সাথে অনুভব দিয়ে খাপ খাইয়ে নিয়ে,  একটু চুপ থেকে শুরু করুন কী ভাবে পড়া শুরু করবেন ! বহু বিষয় এর মধ্যে রয়েছে ! এই লেখার শেষে দুটো কবিতা ইংরেজি, অবশ্যই সরাসরি ইংরেজি,  মানে original English, কোনো অনুবাদ নয় ! তার আগে বাংলা কবিতা কয়টা দেখবেন,  নিজের মতন অবসরে !


(দুই )


     এবার বলি, সুন্দরবন নিয়ে আমি অনেক কথা ছোটবেলা থেকে শুনতাম,  যেমন পৃথিবীর বৃহত্তম ব -দ্বীপ,  ওখানে রয়েল বেঙ্গল টাইগার থাকে,  ওখানে বিধবা পাড়া বলে একটা পাড়া আছে যেখানে পুরুষেরা বাঘ কুমির, কামোটের মুখে জীবন দিয়েছে ! ওখানে বড় - বড় ঝড় হয় !  বন্যা হয় ! --- কয়েক বছর আগে টিভিতে দেখেছিলাম, বিদেশিরা বিভিন্ন বাড়িতে গিয়ে দেখছে ও ইন্টারভিউ নিচ্ছে,  যাদের কোনো না কোনো অঙ্গ বাঘ, কুমির,  কামোটের দ্বারা কেটে বা খুবলে বেরিয়ে গেছে,  আহত অংশটি ঘা হয়ে গিয়ে পরপর শুকিয়ে যাচ্ছে ! তবুও তাদের মুখে স্বাভাবিক হাসি ও কথাবার্তা ! আমি ওই দৃশ্য দেখে চমকে গিয়েছিলাম ! এসব মনে পড়ছে এই লেখাটাকে নিয়ে বারবার ভাবতে গিয়ে !  


     একটা কথা,  আগে বলি,  সুন্দরবন মানে কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের একটি এলাকা নয়,  এটা অনেকে জানেন না যে ভারতে এটার মাত্র 40%  (চল্লিশ ভাগ ) ,  ও বাংলাদেশে আছে বাকি 60% ! এবং এটা রাষ্ট্রসংঘ থেকে একটি " ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট "  হিসেবে ঘোষিত হয়েছে গত শতাব্দীর শেষের দিকে ! মানে,  ভারত ও বাংলাদেশের সুন্দরবন এর সমগ্রটাই অতি যত্নে রক্ষিত হওয়া দরকার !  এর মূল্য এতটাই ! পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে মানুষ আসেন,  দেখেন,  গবেষণা করেন,  কেউ -কেউ প্রচুর অর্থ খরচ করেন এই স্থানের প্রয়োজনে, তাঁরা বোঝেন সুন্দরবনের মূল্য,  আমরা বুঝিনা !  এটাই দুঃখের কথা ! পরের কথাটি হলো, আমার বিভিন্ন লেখা বিভিন্ন পর্যায়ে আলোচনা,  বিতর্ক ও গবেষণার স্তরে গেছে,  এখন সুন্দরবনের ওপর কিছু লেখা নিয়ে  গবেষণা মূলক আলোচনা হবে,  thesis এ-ও আলোচ্য হবে,  সেই বিষয়ে আমি জেনে,  সেই মত এই লেখাটা লিখছি, সামগ্রিক প্রয়োজনে ! তাই আমার জীবনবোধ সহ কিছু কাহিনী ও কথা এখানে বলছি,  যেগুলি সংক্ষেপে গবেষক ও আলোচকদের অনেক কিছু অনুভব করতে সাহায্য করবে ! একজন লেখকের জীবনদর্শনটাই আসল ! বিভিন্ন মুক্ত মনের সম্পাদকগন আমাকে সেই বিষয়ে উপযুক্ত ভাবে কিছু লিখে দেবার সুযোগ করে দিয়েছেন,  দিচ্ছেন,  তাঁদের কাছে আমি কৃতজ্ঞ ! গবেষণার প্রয়োজনেই এই অনুমতি তাঁরা আমাকে দিয়েছেন ! 


 (তিন )


     হ্যাঁ, সুন্দরবন,  ওখানে গভীর বনে মৌ পাওয়া যায় ! যারা মৌ সংগ্রাহক তাদেরকে মৌলি বলে ! মৌ সংগ্রহ করতে গিয়ে অনেকে মারা যায় ! ঘরের ভিতর বাঘ ঢুকে যায়,  সাপ ঢুকে যায়,  শিশুরা খেলছে,  হঠাৎ একটা বাঘ কোত্থেকে এসে একজনকে মুখে করে নিয়ে নদীতে ঝাঁপ দিলো বা জঙ্গলে ঢুকে গেলো !

     এইরকম আবছা কিছু ধারণা নিয়ে আমাদের সুন্দরবন নিয়ে ধারণা তৈরী হয়ে ছিল ! যদিও সুন্দরবন নিয়ে কোনো লেখা লেখবার জন্য ভিতর থেকে তাড়না হয়নি তখন,  অবশ্য ছোট বেলা থেকেই সৃষ্টিশীল পথে পেশা নেবার স্বপ্ন ছিল ও সেই ভাবেই নিজেকে নিজের অংকে গড়ে তুলেছিলাম পারিপার্শ্বিক অনেক সমর্থন ও  বাধা নিয়ে ! সে সব অনেক কাহিনী,  এখানে সেগুলি বলে বাক্যের সংখ্যা বাড়ানোটা কোনো ভদ্রতা হবে না ! এমনিই কতটা বেড়ে যায় কে জানে !

     তবে একটা মজার ব্যাপার বলি,  যে-খাটে শুতাম,  সেই খাটের ডানদিকে ছিল একটা জানলা,  শুয়েই ডানদিকে, সেই জানলা দিয়ে আসতো আলো, খাটের অন্য দিকে জানলা ও খোলা থাকলেও এই জানলাটা খাটের গায়ে ঘেঁষে ছিল বলে ওটার মর্ম আলাদা ছিল আমার কাছে ! কোনো ছোট্ট পাখিও ঢুকে যেতো কখনো হয়তো,  আবার বেরিয়ে যেতো ! ওই খাটের মাথার ওপর ছিল বাঁশের মাচা,  তার ওপর ছিল অনেক পুরানো পত্রপত্রিকা,  আর খাটের মাথার দিকে একটা বই আলমারি !  এছাড়া বাড়ির নানা স্থানে বই ও পত্র পত্রিকা ছড়ানো,  কোথাও গোছানো !   আমি ওই সব বইপত্রপত্রিকা মাচা থেকে পেড়ে,  আলমারি থেকে বের করে, পুরানো পত্রিকা ও বইয়ের পাতা শুকতাম,  দেখতাম,  আর অনেক দূরের অনুভবে ডুবে যেতাম ! আর,  মনে -মনে ভাবতাম,  আমি যেমন এইসব পত্রপত্রিকা,  বই,  কত লেখকের লেখা এই খাটে শুয়ে জানলা-ধারে দেখছি,  পড়ছি,  তেমনি আমার লেখা পৃথিবীর নানা প্রান্তে এইভাবে আমার মত খাটে শুয়ে জানলা-ধারে কতলোক পড়বে ! 

 

 ( চার )

     আর আজ সেই বাসনা পূর্ণ হচ্ছে কয়েক বছর ধরে ,  কিন্তু,  সেই দিনগুলির স্মৃতি ভুলতে পারছি না ! পৃথিবীর বিভিন্ন সরকারী দপ্তরে আমার লেখা আছে,  দেশী বিদেশী মানুষ ছড়িয়ে ছিটিয়ে নানা প্রান্তে আমার লেখা পড়ছে,  আমার লেখা ইংরেজি ও বাংলা গান শুনছে, লেখার জন্য লোক আমাকে টাকা দিচ্ছে ,  কখনো ব্যক্তিগত ভাবে,  কখনো তার দপ্তর থেকে,  এসব ভাবতে গেলে সেদিনের সাথে আজকের সময় মেলাতে গেলে আমার কাছে অবিশ্বাস্য মনে হয় !

     এখানে টুকটাক কিছু গল্প করে যাচ্ছি,  কারণ অনেকে আমাকে বলেন আমার লেখার কাহিনী নিয়ে কিছু আলোচনা করতে,  কারণ এনিয়ে তাঁরা খুব আগ্রহী ! তাই কিছু কথা বলছি স্মৃতি থেকে ! আসলে কী ভাবে কত বীভৎস অবস্থা গুলো যে অতিক্রম করেছি,  সে গুলো এখানে বলা নিষ্প্রয়োজন,  সব বলতে গেলে প্রায় আড়াইশ পৃষ্ঠা বই হবে ! তবে এইভাবে চলতে চলতে,  দুহাজার সালের কাছাকাছি কিছু আগে সুন্দরবন এলাকার ভিতরে একটা অনুষ্ঠানে গিয়েছিলাম,  কতৃপক্ষ ডেকেছিলেন একটা গ্রুপকে,  সেই গ্রুপে আমিও ছিলাম ! তাই সম্ভব হয়েছিল  ! তখন আমার প্রচুর ছোটাছুটি,  একটা লেখা ছাপাতে কতদূর যে যেতাম কোত্থেকে কোথায় পায়ে হেঁটে বা বিনা টিকিটে ট্রেনে,  নিজের খাবার টাকা দিয়ে অন্যকে খাওয়াতাম,  কত বাজে লিখে বাছাই করে ভালো লেখা কোথাও দিলে,  সেগুলো কেউ ঝেড়ে নিতো,  কেউ ছাপতো,  কেউ ঠিক করে ছাপতো,  কেউ ইচ্ছে করে ভুল টাইপ করে ছাপতো যাতে আমার দুর্নাম হয়,  কেউ অসতর্ক হয়ে ছাপতো তাই ভুল থাকতো ! যে যার মত কৈফিয়ত দিয়ে যেতো,  আর আমি এইসব গুলো চুপচাপ থেকে মেনে নিয়ে নিজের মত করে আবার চলতে হতো ! বিচিত্র হিংসুটে,  বিচিত্র নাটক বাজ, বিচিত্র আনাড়ি, এই জাতীয় অনেক পুরুষ,  নারী,  বা সংস্থার  সংখ্যা এই সমাজে এতো বেশী যে এখনো আমাকে এদের দ্বারা বিপন্ন হতে হয়,  আবার খুব সামান্য সংখ্যার কেউ -কেউ আমাকে এতটাই যে যার মত উপকার করে দেন যে,  তার ফলে আমি আজ বিশেষ অবস্থানে আসতে পেরেছি ! এই সত্যটাও মানতে হবে !  

 

( পাঁচ )

     এবার বলি,  সুন্দরবন নিয়ে সম্ভবত আমার প্রথম রচনা,  ওই যে একটু আগে বললাম,  বিংশ শতকের শেষের দিকে কোনো একসময় সুন্দরবন গিয়েছিলাম,  ওটা মথুরাপুরের কোন একটা জায়গায় ! কী মজা,  একজন কবি হিসেবে গেছি !  আরো কবি ছিলেন কেউ-কেউ !  


     আসলে সুন্দরবনটা কী,  সেটাই ঠিক মত তখন জানতাম না ! তবে,  ওই অনুষ্ঠানে গিয়ে সুন্দরবন কেন্দ্রিক আলোচনা ও লেখা মাইকে শুনে,  আমি ওই রাত্রেই  ওখানে লিখে ফেললাম,  দুটো লাইন :---
 
     " পায়ে কাদা,  গামছা কাঁধে,   
                 ভিতরে খুশ মন,  
       মুখে হাসি,  মাটির মানুষ,  
                 এই সুন্দরবন ! "   

     এইটা প্রথম  পড়েই আমি আমার অন্য কবিতাগুলি পড়তে যাবো,  আর হাততালি,  মনে হচ্ছে হাততালি পড়েছিল !  তারপর আমার অন্য কবিতা পড়লাম,  পেলাম বিপুল হাততালি ! ইংরেজি টেলিগ্রাফ পত্রিকার একজন সংবাদিক এসেছিলেন,  আমাকে বললেন,  " বাব্বা,  তুমি তো হট কেক ( hot cake )!"  দেখলাম,  কবিতা লোক শোনেনা,  এটা ভুল,  কবিতা টা কবিতা হতে হবে,  ও সঠিক পাঠ চাই ও কোন এলাকায় কী লেখা চাই সেটা দেখতে হবে,  এবং মাইক নিয়ে বাপের সম্পদ ভাবলে হবে না,  মার্জিত সময়ের মধ্যে নিজের কাজ করে বেরিয়ে আসতে হবে ! এবং পোশাক টাও পড়তে হবে আকর্ষণীয় ! কারণ,  পোশাকের আকর্ষণেই অন্য পেশার লোকেরা তাদের মূল্য বাড়ায়,  কবিরা যদি কুৎসিত অবয়বে বা বার্ধক্যের আভরণে নিজেকে দেখিয়ে বেশী জ্ঞানী গুণী বলে সমাদর দাবী করতে চায়,  তাহলে সেটা তাদের অদূরদর্শিতা ! ভুল আবেগ সফলতাকে দূরে সারিয়ে দেয়,  এই সত্যটা কবিদেরকে বেশী করে জানতে হবে !  কবি মানে কৃষক বা জামাইবাবু বা ঋণগ্রস্থ গৃহস্থ রূপে দেখাতে হবে,  এমন ভাবনা না সরালে কবিলেখকদের সময় মাপিক উন্নতি ও সফলতা আসবে না !

 

( ছয় )

     তবে আমি দিনরাত প্রচুর প্রাকটিস করতাম বলে হাতটা ইচ্ছে মত খেলাতে পারতাম লেখাতে,  কিন্তু,  তবুও প্রচুর দুর্বল লেখা বেরুতো,  চেষ্টা করতাম বেছে নিতে ও নিজে সংশোধন করতে ! এবং আন্তর্জাতিক কবিতা,  সাহিত্যের সাথে নিজের লেখার মাপকাঠি মেলাতাম ! প্রতিদিন দশ পনেরটা লিখতাম,  আজও তাই করি,  কমবেশি কয়েক পৃষ্ঠা লিখতে হয়,  প্রয়োজনে সবটাই বাদ দিয়ে দিই ! বস্তা-বস্তা লেখা পুড়িয়ে দিয়েছি,  উই খেয়েছে অনেক,  এখনো যা লিখি চেষ্টা করি নির্ণয় ঠিক রাখতে,  না হলে নষ্ট করে দিই ! বা ফেলে রাখি পড়ে ভাববো বলে ! লেখাটার ভারসাম্য কোথায় দাঁড়ালো বোঝার চেষ্টা করি,  সেই মত সিদ্ধান্ত নিই ! 

     একবার মনে পড়ে,  একটা কবিতাকে পঞ্চাশ বার মত লিখেছিলাম  পঞ্চাশ রকম করে,  দেখেছিলাম,  কেন কোনো একটি মাত্র রকম গ্রহণ যোগ্য হয় !  আবার একদিন ভাবলাম,  সারা দিনরাত লিখবো ,  মোট একশটা লেখা,  যে রকম লেখাই হোক,  তাই করলাম,  দিন রাত খেটে পঁচিশ টা গান,  কিছু কবিতা,  ও তেষট্টি টা লিমেরিক !  ভুল বসত নম্বরিং করার সময় একটা সংখ্যা বেড়ে যাওয়ার জন্য নিরানব্বই সংখ্যা টা একশ নম্বর হয়ে যায় !  ওটাই আফসোস ছিল ! লেখাগুলি আপাত গ্রহণযোগ্য হলেও আমি সবগুলোকে অযোগ্য বলে গ্রহণ করিনি ! শুধু প্র্যাক্টিস হিসেবে দেখেছি ওই গুলিকে !

     কত লেখা চুরি গেছে,  কেউ ছাপাবার জন্য নিয়ে দু একটা ছেপে বিশ্বাস নিয়ে বাকি গুলো নিয়ে নীরব ঠেকেছে,  আবার কেউ আমার সাথে দেখা করে গল্প করতে এসে আমার বন্ধুত্ব সুলভ আচরণের দুর্বলতার নিয়ে আমার পাণ্ডুলিপি নিয়ে কায়দা করে দেহের কোথাও ঢুকিয়ে অন্য কোনো ভাবে চুরি করেছে ! এর বাইরেও কেউ বা সিনেমা করার নাম করে লেখা নিয়ে চুরি করেছে ! লেখা পছন্দ হয়েচ্ছে জানিয়েও তারপর চুপ ! এরা আবার দেখা হলে কী সুন্দর ভঙ্গীতে কেউ -কেউ কথা বলেন,  যেন কিছুই হয়নি ! আরো কতরকমের সব মানুষ দেখেছি !

     এবার বলি,  অনেক আগের কাহিনী, প্রাথমিক অবস্থায় আমি যে সব কবিতা পাঠের অনুষ্ঠানে গেছি,  অনেক জায়গায় কতৃপক্ষ বলেছিলো যে কবিতা কে শুনবে,  পারলে একটা গান কোরো ! তারপর আবার তোমার নিজের কবিতা,  কী করে হয়,  পারলে নামী কোনো কবির কবিতা পড়ো !

     এইসব কথা ! আমি বুঝতাম না,  কবিতাটা কবিতার মনে গ্রাহ্য --- না কি কবির নামের জন্য গ্রাহ্য হওয়া উচিত সেটা বুঝতাম না ! এইভাবে আমাকে দাঁড় করিয়ে রাখতো অনেক সময়, কখনো ঘন্টার  পর ঘন্টা,  তারপর কতৃপক্ষ দেখলো যে --- এ নির্লজ্জ্ব তো সরবে না,  নির্লজ্জ্ব ছোকরাকে একটা সুযোগ দেওয়া যাক,  আমি উঠেই এমন করে দিতাম হাততালির ঝড় বয়ে যেতো,  সবাই অবাক হতো,  সেসব অবিশ্বাস্য কাহিনী এখন এখানে আর বলবো না !থাক ! একটু করে ছুঁয়ে যাচ্ছি !  বিকেল হলে কোনো -কোনো দিন বেরিয়ে পড়তাম কোথায় কতদূরে ফাংশান হচ্ছে খুঁজে যাওয়া ও হেনস্থা হয়ে কতৃপক্ষের কাছে অনুরোধ করা ও সম্মান হারিয়ে অপেক্ষা করা,  মাঝে -মাঝে অনুরোধ করা ! ওঃ,  সেই দিন গুলো ভাবি,  আজকে বিশ্বাস করতে পারি না,  এই সম্প্রতি কয়েক বছর আগেও যে দিন গুলো গেছে ,  সেইরকম না হলেও আর একটু অন্য আদলে বিকট রকম, বিশ্বাস হয়না,  কী করে পেরিয়ে এলাম !

     যাইহোক, সুন্দরবনের ওপর ওই ছোট্ট কবিতাটা নিয়ে একটি বহু কবির সংকলনে বেরুলো,  যেখানে আমার কবিতার শব্দ বদলে কবিতার উন্নত ভঙ্গিকে নষ্ট করেছে কতৃপক্ষ ! আসলে,  যাঁরা পত্রিকা বা সংকলন সম্পাদনায় আসেন তাঁদের অনেক সাহিত্য পড়াশুনা করে ও মুক্ত মনের ভাবনা নিয়ে কাজ করতে হয়,  এদেশে দেখি হুজুগের কাজকর্ম সাহিত্যে বেশী ! তাই অনেক উন্নত সাহিত্য ও লেখক সঠিক অবস্থান পান না সঠিক সময়ে ! এটা খুব দুঃখের কথা ! তার ওপর নানা রকমের রেষারেষি ও দাবিয়ে রাখার প্রকরণ কাজ করে কোথাও -কোথাও যেখানে যেমন !  অবাক হয়ে যাই,  কাজ করতে নেমে অকাজ করে সফলতা চায়,  এমন আজব মানুষ এরাই হতে পারে !  

 

 ( সাত )

     বন্ধুরা কেউ বলতো,  " তুই কবিতা লিখিস কেন?  " আমি বলতাম,  " কোটিপতি হবো বলে !" তারা আমার উত্তরে চমকে গিয়ে বলতো,  " এটা আবার সম্ভব কি করে?  "  আমি বলতাম ,  " কোটিপতি -র  'ক ' ,  কবির 'ক ',  দুটোই যদি 'ক ' তে মিল থাকে তাহলে কবি কেন কোটিপতি হতে পারবে না কবিতা লিখে (মূলত সাহিত্যের পথে )! "  

     আমি আরো বলতাম যে,  একজন মূর্খকে শিক্ষিত হতে বলা হয়,  যাতে সে প্রতারিত না হয়ে স্বচ্ছল অবস্থা নিয়ে বাঁচতে  পারে ! এবং একজন মানুষকে বেশী শিক্ষিত হতে বলা হয়, বেশী অর্থ ও পদ মর্যাদা পেতে,  বেশী স্বস্তিকর জীবনের জন্য ! তাহলে একজন কবি -লেখক যদি বিশ্ব জ্ঞান চেতনা নিয়ে কাজ করে তাহলে তার উচিত বিশ্বে একজন পুঁজিপতি হওয়া,  টাকার প্রয়োজনে নয়,  কারণ,  মানুষের সুস্থ ভাবে বাঁচার জন্য সামান্য অর্থ দরকার ! অপব্যয়,  কারোর অনিষ্ট করা  ও নানান বর্বরতা ও অসভ্যতার জন্য বেশী টাকা লাগে,  কিন্তু,  কবি-লেখকের উচিত বেশী ধনী হওয়া কেবল তার বেশী জ্ঞানের মর্যাদা রক্ষার্থে ! কবি-লেখকই পৃথিবীর সেরা পুঁজিপতি হবার যোগ্য,  তার প্রমাণ কবি-লেখককে উপযুক্ত টাকা ও গ্ল্যামার না দিয়ে তাদের লেখা নিয়ে পৃথিবীর সব প্রজেক্ট চলছে,  সিনেমা,  থিয়েটার,  টিভি,  যাত্রা,  --- এগুলিতে যুক্ত প্রযোজক ও কলাকুশলী,  প্রযুক্তিবিদ,  কর্মী,  সকলেও অতি স্বচ্ছল ও  ধনী,  কেউ পুঁজিপতি ! খেলা,  রাজনীতি,  পৃথিবীর যেখানে যত যা,  সবই লেখকের লেখার ফলাফলের ওপর দাঁড়িয়ে,  সেটা সাহিত্যের আদলে হোক,  বা সাংবাদিকতার ফর্মে হোক !  তাই প্রকৃত পুঁজিপতি হলো লেখক, সাংবাদিক গন,  --- এদের কাজে লাগিয়ে চাপ সৃষ্টি করে বা ঠকিয়ে বাকি পৃথিবীটা গ্ল্যামার হচ্ছে,  ধনী হচ্ছে,  কবি -লেখক -সাংবাদিকদের লেখাই অন্যদের উপার্জনের পথ দেখাচ্ছে ! এমনকি,  পৃথিবীর যত শিক্ষা ও ডিগ্রী,  সবই কবি -লেখক -সাংবাদিকদের সৃষ্টি থেকে ! এবং সেই মাপকাঠিতে একজন যোগ্য পত্রিকা সম্পাদক ও যোগ্য সৎ প্রকাশক হলেন পুরো পদ্ধতির ক্যাপ্টেন !  এদের শুষে  পৃথিবীটা চলছে ! আর এঁদের বলা হয় নাকি ভিখারী জাত !  কৌতুক আর কাকে বলে ! হায় !

     যদিও উঁচু পদ ও বেশী টাকা কখনোই বেশী সুখের উৎস নয়,  কিন্তু,  সামাজিক ব্যাবস্থায় কতকগুলি পর্যায়ে নিরাপত্তার প্রয়োজনে যথেষ্ট অর্থ ও কিছু না কিছু পদ মর্যাদা দরকার হয়,  কারণ মানুষ এখনো মুক্ত মনের হয়ে উঠতে পারেনি !  সে বিষয়গুলি আলাদা ব্যাপার

     ওরা আমার এই উত্তরে চমকে যেত ! আমি ওদের বলতাম যে কবি লেখক মানে নাকি গরীব হয়,  এটা ভুল বার্তা,  মানুষ গরীব হয় কোনো দুর্ঘটনায়,  বা খারাপ নেশার জন্য,  বা অপব্যয় করার জন্য,  বা অবিশ্বাসীকে বিশ্বাস করার জন্য,  বা অর্থ আয়ের প্রতি উপযুক্ত ভাবে যত্নশীল না হওয়ার জন্য,  কবিতা লেখার জন্য কেউ গরীব হয়েছে,  এমন প্রমাণ পৃথিবীতে কোথাও আছে বলে তো আমার জানা নেই ! কবি যদি দারিদ্রের প্রতীক,  তাহলে পৃথিবীর সব ভিখারী কবি ! সাহিত্য করা ভিক্ষাবৃত্তিকে সমর্থন করে এই ভুল ভাবনা কোন নির্বোধরা শিখিয়েছে? 

     ওরা আমার এই উত্তরে আরো চমকে যেতো ! ওরা কেউ আমাকে বলতো,  " তুই মদ সিগারেট কিছুই খাস না,  বড় কবি হবি কী করে?  "  আমি বলতাম যে, নেশা করলে যদি বড় কবি হয় তাহলে নেশা করে রাস্তায় পড়ে থাকা সব লোকগুলো বড় কবি !

     ওরা এবারে আরো চমকে যেতো ! আমি এবার বলতাম যে,  এই দেশ সমাজ পিছিয়ে,  কারণ,  যত উল্টো ও ভুল চিন্তা ও সিদ্ধান্তকে গুরুজনের দেওয়া অমৃত জ্ঞান ভেবে সেই গুলো আঁকড়ে চলে ! সেই  ট্রাডিশান আজও চলছে ! যে মানুষ নিজের বুদ্ধিতে সমাজের ভুল চিন্তা,  পরিবারের তরল সেন্টিমেন্ট থেকে বেরিয়ে এসে নিজেকে মুক্ত করে চিন্তায় ও সিদ্ধান্তে স্বাধীন বলে নিজেকে নিজে ঘোষণা করতে পারবে সেই হবে বিশেষ সফল !

     ওরা আমার কথায় চোখ মিটিমিটি করে কী যেন ভাবতো আর আমার দিকে দেখতো !  

     কেউ বলতো,  " তুমি সফল হবে কী করে,  যদি না হও ,  তখন কী করবে  !"

     আমি উত্তর দিতাম ,  " যারা সফল তারা আমার উদাহরণ,  তাই আমি সফল হবো,  আর,  ' যদি ' সফল না হই,  এই জাতীয় শব্দ আমি বিশ্বাস করিনা,  কারণ আমি ' যদি ' শব্দের সাথে সহবাস করিনা বা বন্ধুত্ব করিনা ! ওটা দুর্বল মনের প্ৰিয় শব্দ ! "

     ওরা এবার আমার কথা শুনে কিছু বলতো না,  চোখ বড়-বড় করতো !  আসলে,  অনেক কিছু বুঝে আমি অনেক সম্পর্ক ছেড়েছি,  বন্ধু,  পরিচিত,  প্রচলিত নিয়মের আত্মীয়,  কারণ,  এতো ভুল ভাবনা ও বিশ্বাসে তারা ডুবে আছে যে,  তাদের রোম চামড়া সর্বত্র হতাশার হাওয়া ! এরা জীবনে যা কিছুই হোক,  অস্তিত্বের ভিতরে হতাশ,  বিপন্ন ও নিঃস্ব ! যদি এদের ফেরাতে পারতাম ধন্য হতাম,  কিন্তু,  এদের জীবন নিয়মের ধারা না বদলালে  ভুল ভাবনা ও কুৎসিত অভ্যেসের ধারা বদলাবে কী করে?  জীবন বোধ বদলানো তো সস্তার বিষয় নয় ! তবে দু দশ জন আছে যারা লেখক না হলেও অত্যন্ত মনযোগী গভীর ব্যাপ্ত,  সামান্য সময় হলেও তাদের সাথে কখনো -কখনো কথা বলে সুখ পাই ! আসলে লেখক হলেও যে কেউ খুব গভীর হবে,  উন্নত অভ্যেসের  হবে তা নয়,  কোনো মানুষ নিজেকে গভীর করে তুলতে পারে যদি তার নিজের দায়িত্ব থাকে নিজের প্রতি,  এটাই আসল কথা !

 

( আট )

     এবার আগের কথাটায় আসি, মনে পড়ে,  কোনো অনুষ্ঠানে আমাকে হয়তো সুযোগ দিলো না,  তাদের অভিযোগ কবিতা কেউ শুনবে না !

     আমি আত্মবিশ্বাস নিয়ে বললাম,  " দাদা (কখনো " স্যার " ),  আমার কবিতা জনগণ না শুনলে আমার গলায় আমার এই মাফলার জড়িয়ে অপমান করে তাড়িয়ে দেবেন ! " কমিটির লোক তখন বলতো,  " তোমার  কবিতা না শুনতে চেয়ে বা শুনে ক্ষিপ্ত হয়ে পাবলিক যদি প্যান্ডেলে চেয়ার টেবিল ভাঙে তখন কি তোমাকে আমরা অপমান করলে সেই ক্ষতি উসুল হবে?  " 

     সত্যি এই কথার উত্তর দেবো কী ! তবু আমার নির্লজ্জ্ব হয়ে অপেক্ষা করা দেখে একটা সুযোগ দিতো,  আর আমি মঞ্চে উঠলে কী যেন ঘটে যেতো,  অবশ্যই আমার কবিতাই আমি পড়তাম,  আর তাতেই পুরো দর্শক শ্রোতা মেতে উঠতো !

     কমিটির ধারণা বদলাতো,  পূর্বের নামী কবি যাঁরা তাঁদের কবিতা ছাড়াও তাহলে কবিতা শোনে !  আসলে,  কবিতা নিয়ে  দেশের অনুষ্ঠান কমিটির ভুল ধারণা বদলে দেবার মত অনেক কবি দরকার,  এটাই আমি বুঝেছিলাম !

     কখনো কোনো কমিটি আমার দক্ষতায় খুশি হয়ে দাঁড় করিয়ে স্পেশাল বড় প্যাকেট বানিয়ে আমাকে দিতো,  আমি চমকে যেতাম,   ওদের আচরণ বদলে যাওয়া দেখে ! আবার কোনো কমিটির কর্ণধার আমার জনপ্রিয় অনুষ্ঠানে অবাক হয়েও বলতেন , " পরের বছর এসো,  প্যাকেট দেবো ! " এমন আশ্চর্য আচরণে কষ্ট পেতাম না,  কারণ আমি তো আমন্ত্রিত নয় ! যে ভাবে হোক সুযোগ পেয়েছি,  মন জয় করেছি,  এর চেয়ে বড় পাওয়া আর কী হতে পারে,  এই আনন্দে ফিরে আসতাম ! মনের ভিতর কত মজা,  তাহলে আমি ঠিক একদিন অনেক বড় কবি হবো,  এইতো এতো মানুষকে পাগল করে দিলাম নিজের লেখা কবিতা পড়ে ! নারীরা আমার দিকে সদয় দৃষ্টিতে তাকাচ্ছে,  পুরুষ ও নারীরা আমার প্রতি হাততালি দিচ্ছে,  এই তৃপ্তিতে ফিরে আসতাম গভীর রাত্রিতে !  কখনো কোনো গুণীজন উঠে আমার কবিতা নিয়ে মঞ্চে দাঁড়িয়ে বিশ্লেষণ করে কোনো মনীষীর সাথে আমার চিন্তা মেলাচ্ছেন,  যা অপ্রত্যাসিত,  আর এইসব দেখে আমিও চমকে যেতাম !
     সেই সময়গুলো মনে হয় এইতো সবে ফেলে এলাম,  কত স্মৃতি আছে সেই সময় গুলির সাথে জড়িয়ে ভাবা যায় না !

     তবে এসব যে প্রতিদিন ঘটতো,  তা নয়, কখনো -কখনো এভাবে ফাংশান নিয়ে কোনো কাহিনী ঘটতো !  যাইহোক,  এবার বলি সুন্দরবন নিয়ে আমার বাংলা ও ইংরেজি কবিতা,  ছড়া অনেক লেখা আছে,  সেগুলি নানা পত্রিকায় ও গ্রন্থে আছে ! এই মুহূর্তে সে গুলি খুঁজে বের করে এনে এই নিবন্ধ লেখা সম্ভব নয় !  পরপর সুন্দরবন নিয়ে পড়াশুনা করতে থাকলাম,  সুন্দরবন-কেন্দ্রিক অনুষ্ঠান করতে থাকলাম,  ভাবতে থাকলাম,  ও সুন্দরবন নিয়ে নানা আলোচনা শুনতে থাকলাম কোনো -কোনো সময়,  সুন্দরবন এলাকায় নানা সময় যেতে থাকলাম,  এইভাবে নিজের নিয়মে কিছু উপলব্ধি করতে থাকলাম,  সুন্দরবন নিয়ে !   

     সম্প্রতি 16 নভেম্বর 2020 একটি আন্তর্জাতিক জনপ্রিয়  wabesite পত্রিকা " কাব্যপট.কম " ( kabyapot.com, এটা নতুন নাম যেটা চলছে --- সম্পাদকের পত্রিকার আগের নাম ছিল www.patrika.kabyapot.com , সম্পাদক : কবি শ্যামল মন্ডল ) এ সুন্দরবন নিয়ে দুটো গীতিকবিতা বেরুলো :

      (1)   কবিতা সুন্দরবন উৎসব  -- " সুন্দরবন উৎসব,  তাই সুন্দরবন উৎসব " !  
     (2 ) সুন্দরবনের ওপর ব্র্যান্ডসং বা গীতিকবিতা ( শোনো হে পৃথিবী,  সুন্দরবন ),  সুন্দরবনের পরিবেশ ও ব্যক্তির ওপর আমার আরো অন্য লেখা ওখান থেকে সংগ্রহ করতে পারেন ! সুন্দরবনের ওপর প্রকাশিত ও অপ্রাকাহিত কবিতা আমার 50-60  (পঞ্চাশ -ষাট ) মত,  তার মধ্যে ইংরেজী 45 (  পঁয়তাল্লিশ  )  টি মত !  সম্প্রতি হঠাৎ 2--4 বছরের মধ্যে লেখা পুরানো ফাইল খুঁজে পেলাম,  এই নতুন কবিতা গুচ্ছ লেখার পর ! গ্রন্থ আকারে ওগুলি বেরুবে ! দেখে নিজে চমকে গেছি কয়েক বছর আগে এই কাজ করা ছিল ! যদিও  সেই পাণ্ডুলিপি আবার দেখতে গিয়ে শেষ পর্যন্ত কয়টা লেখা  রাখবো,  বই প্রকাশের আগে বলা যাবে না !

     কিন্তু,  সাম্প্রতিক লেখা ওই কবিতা দুটি  " কাব্যপট.কম " পত্রিকায় বেরোনোর জন্য কেউ প্রবন্ধ লিখতে গিয়ে  বা গবেষণা করতে গিয়ে ওই কবিতা দুটিকে ব্যবহার করতে পারবেন,  বা আমার নিজের বইতেও ঢোকাতে পারবো,  কিন্তু,  অন্য আর একটি পত্রিকায় কবিতা পৃষ্ঠায় ওটা আবার বের করতে পারবো না,  কারণ ওই পত্রিকার সম্পাদক বের করেছেন তাঁর পত্রিকার বাণিজ্যিক প্রয়োজনে ! এবার সেটা ভারতে হবে না,  অন্যদেশ থেকে হতে পারে,  যে হেতু ওই দুটোই ভারতের wabesite পত্রিকা ! আবার wabesite পত্রিকা সরাসরি পৃথিবীর সবাই পড়ে,  যে যেমন ভালোবাসে যে পত্রিকা,  বা যার লেখা !খুঁজে নেয়,  বা একটা খুঁজেতে গিয়ে আর একটা হাতের কাছে পায় ঘটনাক্রমে ! মুদ্রণে একটি দেশের একটি ভাষায় প্রকাশিত সাহিত্য সেই দেশের সেই ভাষায় অন্য পত্রিকায় বেরুবে না,  বেরুতে পারে দুই সম্পাদকের সম্মতি থাকলে, মানে দুজনেই ব্যাপারটা জানবেন !.

( নয় )

     আর,  এটা তো wabesite,  এখানে আইনটা আরো অন্য রকম হতে পারে,  তবে,  বিশেষ ক্ষেত্রে একটি লেখা কোনো পত্রিকা বের করলে,  সেটার সময় অতিক্রম করে আরো কিছুটা সময় পেরিয়ে গেলে,  অন্য কোনো পত্রিকা সেটা বের করতে পারে,  এবং সেটা প্রথম সম্পাদকের থেকে অনুমতি পেয়ে !  লেখককে সেই বিষয়ে মাধ্যম হয়ে দুই সম্পাদকের সাথে কথা বলিয়ে দিতে হবে !  

     আসলে,  যে কোনো কাজ করতে হলে নিখুঁত করে করতে হবে,  যাতে কোনো সমস্যা না হয় !

     তাই ওই দুটি কবিতা পড়তে হলে ওই পত্রিকায় গিয়ে ওই তারিখের সেটিং এ ঢুকতে হবে !  পাঠক-পাঠিকা বন্ধুদের এইটুকু পরিশ্রম করতে অনুরোধ করি !  

     তবে,  এই বাংলাসাহিত্য.কম ( www.banglasahiyo.com) আন্তর্জাতিক জনপ্রিয় পত্রিকার সম্পাদক রুদ্রসাগর কুন্ডু সম্পাদকের কাজ টা খোলা মনে করছেন বলে তাঁর পত্রিকায় অন্য একটি পত্রিকার নাম দিতে পারছি এটা ভাবে,  যদিও ওঁরা দুজনেই ওয়েবসাইট পত্রিকার  সম্পাদক, একে ওপরের সাথে এখনো অপরিচিত,   অথচ কোনো অসৌজন্য প্রতিযোগিতা নেই !  

 

 ( দশ )                      

     মনে পড়ে,  একটা সময় দেওয়ালে  মাইকেল জ্যাকসনের ছবি রাখতাম, ভাবতাম,  মাইকেল জ্যাকসনের গান যেমন শোনে পৃথিবী,  আমার কবিতাও তেমনি শুনবে !  

     লোকে সার্কাস দেখে,  কবিতা দিয়েও সার্কাস দেখানো সম্ভব ! কেন কবিতা দিয়ে,  সাহিত্য দিয়ে অনেক কিছু করা যাবে না,  এই প্রশ্ন আমাকে ভাবাতো !  যাইহোক,  এখন সুন্দরবন নিয়ে একটা কবিতা লিখছি,  প্রথমে চিত্রকল্প প্রধান গদ্য কবিতা একটি দিই,  পরের গুলি সহজ অনুভবের অন্তমিল কবিতা হোক,  তাহলে টেস্ট এর মেজারমেন্টটা ভারসাম্য রাখবে :-  


                               🍓
                সুন্দরবনের বাড়ির দাওয়া  
            -----------------------------------------
                   ঋদেনদিক মিত্রো  

বাড়ির দাওয়ায়
থালার ওপরে শুয়ে বসে আছে রোদে
  কুমড়ো ও ডালের তৈরী চকচকে বড়ি গুলো  
       আত্মবিশ্বাসের মত তকতকে স্বচ্ছ,

                   বাড়ির সদর দাওয়ায়,   

পিঁপড়ে ও আরশোলা কয়টা  
      কোত্থেকে চলে এলো এখানে,   
     পিঁপড়ে ঢুকেই গেলো বড়ির ভিতর
        যেভাবে ঐতিহাসিক ঢুকে যায়  
              মাটি খুঁড়ে প্রাচীন জনপদে,   

           এটা সুন্দরবনের
                 কোনো এক বাড়ির উঠোন,

আরশোলা দুটো মুখোমুখি
        কিছু চুক্তি করে নেয়   
           পুরানো দাম্পত্যের
             দুরূহ বোঝাপড়ার ইঙ্গিতের মত  
                সন্তর্পন নিয়ম,   

রোদ তো ওদের দিয়ে রেখেছে উত্তাপ,  
         আলো আর বোধসূক্ষ্ম পথ  
           মহাজাগতিক উত্তরহীনতায়,   

মানুষ তো এরকমই জীব,  
      তাহলে তার কেন এতো দিমাক হুঙ্কার,  

মৌটুসীর মা সুলতা কলসি কাঁখে জল নিয়ে  
     কোমর ভিজিয়ে ঢুকছে ঘরে,  
দূরের টিউবঅয়েল থেকে  
      আসার সময়
              হালকা সাদা পাট কাঠির  মত  
তার দিকে  তাকিয়ে ছিল কোনও তরুণ,   

সংস্কারে তুড়ি দিয়ে সে-দৃষ্টি  
     সুলতার ভিতর ঢুকে  
           জিভে লাগা খইয়ের মত  
             মিইয়ে দিচ্ছিলো সকল দূরত্ব,  

এসময় অন্যমনস্কতায়
        দাওয়ায় পা দিয়ে ওঠবার সময়  
         কলসির মুখ থেকে  
           দাওয়ায় ছলকে পড়ে জল-হাসি,  

মেঝে তাতে কী খুশি,  
নারীর একটা আলাদা মূল্য আছে  
      বাড়ির মেঝের কাছেও,  

পুরানো দলিলের মত এ রহস্য গোপন থাকে  
         না হলে ঠিক জমে না  
                আনন্দের আদিখ্যেতা !

থালার ওপর সে পিঁপড়ে ও আরশোলা দেখে  
       একটু খানি রেগে গেলো  
          নারীত্বের পরম্পরায় সৌন্দর্যে,   

কিছু বললো না,  ঠোঁট কামড়ে ঢুকে গেলো  
     কিছু একটা অব্যক্ত তৃপ্তির আরামে,   
একই সাথে ঢুকে গেলো
    পরপর সদরের দরজা দিয়ে  
     ঘরের ভিতর পরপর ইতিউতি    
                 পৌঁছলো রান্নাঘরে,    
যেখানে জল কলসি থাকে  
     নরম বেড়ুর পরে
                 নির্ণীত বিশেষ আরামে !   

সুলতা যখন ঢুকছিল এইভাবে সদর থেকে
         হেঁটে -হেঁটে রান্নাঘরে,  
মনে হলো তার
       এটা আদিম নীরবতার সুড়ঙ্গ  দিয়ে
            কোনো পরিব্রাজন,   

কেন তার এ ভাব্না,  কে জানে !  

মানুষকে,  পশুকে,  পাখিকে,  কীটকে,  
    এমনকি বৃক্ষকেও
          এভাবেই স্থিতধী করে  
              অনুভবের গোপন নিয়ম,

  কবিতার নাম ,  বাড়ির দাওয়া,  সুন্দরবন !


   (  সকাল,  19 নভেম্বর 2020 )

     এবার ঢুকে পড়ি কবিতার আর এক রকম অনুভবে !
                          🌴🌷🦆🐓
                    নেই সেই সুন্দরবন
                ----------------------------------
                     ঋদেনদিক মিত্রো  

নেই সেই সুন্দরবন,   
শহর ঢুকেছে আজ,  
বদলে গিয়েছে কাজ,  
মানুষের শহর-জীবন,  
নেই সেই সুন্দরবন !   

পরপর যায় কমে,
গ্রামের সে-রূপ,   
মাঠ ঘাট নেই আর  
সেই নির্জন,  
নেই সেই সুন্দরবন !

ঢুকে গেছে বিদ্যুৎ,  
মোটর ও বাস,  
ঢুকে গেছে,  ট্রেন,  লরি,  
শহুরে বিকাশ,  
ঘরে -ঘরে বাইক আর  
কারো চার চাকা,  
মাটির দেওয়াল ভেঙে  
বাড়ি গুলো পাকা !   

কোথায় গিয়েছে সেই  
কেরোসিনে জ্বলা আলো,  
হ্যারিকেন,  লম্ফ,  লণ্ঠন,  
নেই সেই সুন্দরবন !   
এসে গেছে ট্রাক্টর,  
এলো একি চল,
কোথায় পাবো এখন  
গরুর লাঙ্গল,  
কোথায় সেই কৃষক,
হাতে চাষাবাদ,  
মাটির সঙ্গে কত  
ভালোবাসা ভাব !  

সেই ঝোপ ঝাড় গাছ,  
শীতে পাতাঝরা,  
গৃহপালিত জীব  
আদরে ভরা,   
পাখপাখি,  মৌচাক,  
বোলতা,  ফড়িং,  
চামচিকে,  প্রজাপতি,  
ওড়া কী রঙ্গীন,  
নেই সে দিগন্ত,  
বাজার ও হাট,  
নেই সে পুকুর গুলি,  
কাঠ দিয়ে ঘাট,  
নেই সেই ইস্কুল,  
ভাঙা টালিঘর,  
তার ভিতরেতে বসে  
পড়াশুনা ঘোর ---
দুলে -দুলে পড়ে যাওয়া,  
ভাঙা জানালার হাওয়া,   
পড়তে -পড়তে
    কল্পনা  বিস্তর,  
কী সুখ পরম !
নেই সেই সুন্দরবন !

নেই সেই গ্রাম্য  
সিনেমার হল,  
নেই বাঁশে বাঁধা সেতু,  
খাল-ভরা জল,  
সেই সেই কুয়ো আর  
ঢলঢলে কল!
 
নেই সেই ভূত প্রেত  
অন্ধকারে,   
সেই সব ছবি,  --- কেউ  
ভুলতে কি পারে?   
সেই সব  দিবস ও  
রোদ,  গোধূলি,
সেই সব সন্ধ্যে ও
রাত্রি গুলি,   
কোথায় গিয়েছে সব  
কী করে ভুলি!

সেই শিক্ষক গন,  
মনে কত জাগরণ,  
ছাত্র ছাত্রীদের  
দিতেন আলো,  
মানুষের মন গুলো  
একটু আধটু যেন  
ছিল বেশ ভালো,   
স্বচ্ছল পরিবার  
এবং গরীব,  
ছিল তো শোষণ বেশ  
সত্য অতীব,   
ছিল কুসংস্কার,  
প্রথা নির্মম,  
তবু তার মাঝে ছিল  
বিস্ময়-সাজে ছিল
সুন্দরবন !
তা বলে চাইনা আমি  
শোষণ-নিয়ম !

আজো আছে নদনদী,  
সেই পাখ পাখি,  
ভুলে গেছে তারা যেন  
সেই ডাকাডাকি,   
আজও আছে পুকুর ও
খাল বিল খাঁড়ি,  
আজও আছে পুরানো  
সময়ের বাড়ি!
 
আজও আছে গাছতলে   
পাড়ার দোকান,  
কেউ বসে-বসে সেথা  
গল্পে আরাম,  
রেডিওর খবরে  
রাত্রির প্রহরে,  
শুনে যায় খবর ও গান !  

আজও আছে মেলা আর  
পাবন, উৎসব,   
তবুও কোথায় যেন  
হৃদয় নীরব,    
সুপ্রাচীন ইতিহাস,  
প্রত্ন প্রমাণ,  
তাই নিয়ে গবেষণা  
কেউ করে যান,  
কবিতা,  গল্প,  ছড়া,  
কুমড়ো ফুলের বড়া,  
এইসব নিয়ে আজও  
আছে স্পন্দন,  
তবুও কোথায় সেই  
সুন্দরবন !

ধন যার নেই তার  
ধন হওয়া ভালো,  
কিন্তু মনের মাঝে  
চাই ঢের আলো,  
বিলাসের আয়োজনে  
চেতনাটা নির্জনে  
মরে-মরে যায়,  
কে বোঝে এই কথা  
এ পৃথিবীটায়?  

সেই ভাত,  পান্তা,  
ঘরে মুড়ি ভাজা,
চিড়া, চালভাজা, ছাতু,   
খাদ্যের রাজা,  
সেই চচ্চড়ি,  ডাল,  
ভাজা, ঝোল, আর   
কাগজা লেবুর সাথে
বেগুন পোড়ার ---
গ্রাম্য খাবার নিয়ে  
স্মৃতির ছবি,  
সেই দিকে আর কেউ  
নেই মনযোগী,  
ফাস্ট ফুড এসে গিয়ে  
করে দিলো শেষ,  
শেষ হলো বাংলা,  
শেষ হলো দেশ,  
শেষ হতে -হতে আজও  
শেষ হয়নি এখন,  
সে শুধু আমাদের  
সুন্দরবন !  

কারা যেন এনে দিলো  
সুন্দরবন-মাঝে  
রেষারেষি,  ক্ষয়,  
একদিন সব সরে  
হবে জেনো জয়,  
সুন্দরবনটা তো  
দৈত্যের নয় !

যতই করি গো ক্ষোভ
এই মাটি নিয়ে,  
আজও কিছু ভালো লোক  
রাখে জাগিয়ে,  
জোৎস্নার মত হয়ে --
স্মৃতির রাত্রিটায়   
তোলে ভাবিয়ে,  
রাখে জাগিয়ে,   

একদিন হয়তোবা
বলবো গো বলবো,  
তোমায় পেয়েছি ফিরে  
আগের মতন,   
সেই মাটি,  সেই হাওয়া,  
কৃষকের গান গাওয়া,  
ঘরোয়া সে সব খাওয়া,  
সরল সহজ নম্র  
সুন্দরবন !

 ( 17 নভেম্বর 2020,  রাত্রি )

     এই বাংলা কবিতাটা লেখার আগে একটা দীর্ঘ কবিতা সুন্দরবনের ওপর আজকে সকালে লিখে এক কবি বান্ধবীকে পাঠিয়েছিলাম,  এই set এ,  তিনি পড়ে বললেন দুরন্ত হয়েছে ! আমি বললাম,  " হয়নি,  কারণ,  লেখাটা এতো ভারি হবে না ,  কঠিন চিত্রকল্প দিয়ে লেখাটা হলে তখন আলাদা,  কিন্তু এমনি সহজ ভাবে কোনো আবেদন প্রকাশের লেখা হলে খুব নরম কলেবরে লিখতে হবে, তাই বদলে দিয়ে নতুন করে লিখছি ! " সেটাই হলো এটা !

     তারপর ফোনটা চার্জ করে (চার্জ অবস্থায় ফোনকে যে কোনো রকমের ব্যাবহারে বিপদ ঘটে শুনেছি ! সম্প্রীতি আমার পাড়া থেকে কিছু দূরে একজন ছেলের  মাথার ডানদিকের অংশ উড়ে গেছে,  শুনলাম! আগে জীবন, পরে ব্যাস্ততা ! ) এই কবিতাটা লিখলাম,  কবিতার নাম ও বিষয় ও ভঙ্গী নতুন করে দিয়ে ! তাই করলাম,  যেটা পড়ে ফেললেন  --- " নেই সেই সুন্দরবন "!  

     এবার লেখা যাক মাতলা নদী নিয়ে একটি কবিতা ! এই ক্যানিং নদীর ওপর একটি কবিতা একটি পত্রিকায় দিয়েছিলাম,  সেটা এখন পেতে হলে সেই সম্পাদককে এখন কোথায় পাবো,  করোনার সময় ! তাঁর ফোন নম্বরটাও এখন কাছে নেই ! যে-ফোনে লোড ছিল সেটা নষ্ট হয়ে গেছে ! ডায়েরিতে লিখে রাখিনি তখন ! পত্রিকা সংখ্যাটা আমার কাছে থাকতে পারে,  কিন্তু,  হঠাৎ করে তো পাবো না ! করোনার সময়কাল পেরিয়ে গেলে তখন তাঁর থেকে ওটা পেতে পারি !

     
                            🌲🚴
                    মাতলা নদী,  সুন্দরবন   
                   ---------------------------------
                      ঋদেনদিক মিত্রো   

মাতলা নদী, জানো সবাই, ক্যানিংয়ের সেই নদী,
দেখতে গেলে হয়ে যাবে মনটা তোমার কবি !
হাজার-হাজার বছরেরই  ইতিহাস আছে তার,  
কল্পনাতে চলে যাবে কতটা বিস্তার !
কত বণিক,  নাবিক,  পরিব্রাজক এসেছেন !  
সুন্দরবন জায়গাটাকে ভালোবেসেছেন !  

ক্যানিং হলো সুন্দরবন জায়গার এক অংশ,  
কত টুকু জানবে তুমি,  প্রায় ইতিহাস ধ্বংস,
হাজার-হাজার বছরেরই ইতিহাস পরে পড়ো,  
এখন এসো ব্রিটিশ যুগের ইতিহাসটাই ধরো,   
ব্রিটিশ যুগের আগের অনেক কিছু খুঁজে পাবে,
যখন তুমি ক্যানিং গিয়ে নদীর পাড়ে যাবে,    
এখন এসো ব্রিটিশ যুগের কিছু স্মৃতি টানি,  
আঠেরোশ ছাপান্ন থেকে বাষট্টি খুব দামী !
 
লর্ড ক্যানিং ঠিক ঐ সময়ে ভারতবর্ষে এসে  
প্রথম দুটি বৎসর এই বিরাট ভারত দেশে  
ছিলেন তিনি গভর্নর জেনারেল,  তারপর ---
ভাইসরয়ও হলেন তখন পরের চারবছর !   
ওই সময়ে  তাঁর মাথাতে এসেছিলো এক প্ল্যান,  
সিঙ্গাপুর বন্দরের মত ক্যানিংকে গড়বেন,  
আদেশ মত তৈরী হলো হোটেল,  বাড়ি, এসব ,  
জলা জঙ্গল চারিদিকে, পাখির কলরব,  
পুরানো সেই কালের হোটেল, বাড়ির ছবি ভাবো,  
চলো, ঐতিহাসিক হয়ে সেসব দেখতে যাবো,  
হঠাৎ করে আঠেরো শ সাতষট্টি সালে,  
নদীর গতি বদলে গেলো নদীর আপন তালে,  
পন্ড হলো যা কিছু শ্রম সেই সাথে স্বপ্ন,  
কোনো ভালো কাজ হয়না পন্ড, থাকে ভালোর জন্য!  

ভালো কাজের স্মৃতি হাঁটে ভবিষ্যতের দিকে,  
তা দেখে কেউ নতুন কিছু আবার ভাবতে শিখে,  
আজও আছে লর্ড ক্যানিং এর ভেঙে পড়া বাংলো,  
কেউবা আবার সেখান থেকে কিছু ভেঙে আনলো,  
ইতিহাসের চিন্তা-রসে সবাই কি আর জাগে,
তাই তো সবাই হয়না মানুষ, রয় পাশবিক ভাবে !  

সেই ক্যানিং এর বন্দরেরই ছবিটা আজ ভাবো,  
বিদেশেতে কী আছে গো,  কী দেখতে যাবো,  
বিদেশিরা যেখানটাকে ভাবলো সেরা স্থান,  
সেটা আমাদেরই মাটি সুন্দরবন নাম,  
সঙ্গে আছে বাকি বাংলা,  এবং ভারত বর্ষ,  
কেউ ভাবিনা,  আমাদেরই দেশ কত উৎকর্ষ !  
বলতে -বলতে মাতলা নদী মজে যাবার হেতু,
তার ওপরে তৈরী হলো দীর্ঘ মাতলা সেতু  !

দুই হাজার এগারোতে মুখ্যমন্ত্রী মশাই,
মাতলা সেতু উদ্বোধন টা করেছিলেন তাই!
 
সেতুর ওপর দাঁড়িয়ে থেকে তাকিয়ে দেখো দূর,
চোখের সামনে উঠবে ভেসে কল্পনা ভরপুর,  
কত ডিঙা, নৌকা, জাহাজ, নাবিক এবং মাল,  
ওঠা নামার সময় কত হতো তালবেতাল !
কত রকম নীরবতা,  গোলমাল কতনা,
কত না প্রেম,  বন্ধুত্ব,  বিচ্ছেদ যন্ত্রনা,  
সেসব পুরুষ, নারী, শিশু, পোশাক,  ভাষা, চলা,  
সেসব জীবন, সে সব চাওয়া, তাদের কথা বলা!
 
ভাবো তুমি,  বাংলোটাতে বসিয়া লর্ড ক্যানিং,  
বলিতেছেন ইংরেজিতে কাউকে গুডমর্নিং,  
বাহিরেতে এসে তিনি যেই বেরোলেন পথে,  
এদেশী সব মানুষগুলো অবাক হয়ে দ্যাখে,   
চামড়া সাদা,  চকচকে রূপ,  ইংরাজীটা কয়,  
শুনতে লাগে কেমন মিঠা কানেতে ঝড় বয়!
 
কল্পনা যে করতে পারে বেশী যত খানি,  
তার জীবনে সুখ শান্তি ততটা হয় দামী,  
অর্থ,  শিক্ষা,  পদ,  সম্পদ,  সবই প্রয়োজন,  
কল্পনাটা না রইলে উন্মাদের জীবন !  
যে-জাতিরই কল্পনাটা দীর্ঘ ছিল যত,  
সেই জাতিটাই বিশ্বটাকে জয় করেছে তত,  
কল্পনা যার যত বেশী , তত ই সে হয় উদার,  
জীবনটা নয় অর্থ এবং জৈবিক সব ক্ষুধার !  

কল্পনা বোধ সব কিছু দেয়, আভিজাত্যের বহর,  
সেই তো তত শক্তিশালী,  কল্পনা যার প্রখর !  
প্রেমও হলো কল্পনারই চরমতর পথ,  
অনুভূতির গভীরতাই প্রেমেরই হিম্মৎ !
এসব কথা বোঝে কজন,  সবাই দেখি যন্ত্র,  
মানুষ কি আর মানুষ হবে,  রাখলে দূরে গ্রন্থ?
 
আর একটা জিনিস ভাবো, সেসব নাবিক এসে,  
থাকতো যখন আমাদেরই বিরাট ভারত দেশে,  
থাকতো যখন এই ক্যানিং এ,  কত জনের সঙ্গে  --
মিলে মিশে আমোদ করে ছিলো অঙ্গে-অঙ্গে !  
আমাদেরই রক্ত ধারা মিশলো তাদের রক্তে  
তারাই মিশলো আমাদেরই ধারায় একই  সত্যে,  
বিদেশিরা এ দেশ ছেড়ে গেছে নিজের ঘরে,
কিন্তু তারা রয়েছে আমাদেরই ভিতরে,  
এইযে দেওয়া নেওয়া হলো রক্তে এবং বোধে,  
এটাই হলো বড় পাওয়া,  ইতিহাসের যোগে !

বিশ্বে সবাই আমরা মানুষ,  ধর্ম,  বর্ণ তুচ্ছ,  
সবার ভালো সবাই নিলে সবাই সমান উচ্চ !  

এই কথাটি মাতলা নদী দেয় জানিয়ে বটে,  
আজও আছে সেই বন্দর কল্পনারই পটে !  

( সকাল 18 নভেম্বর 2020)  
                                ***
     এবার গঙ্গাসাগর মেলা নিয়ে একটা কবিতা উপহার দিচ্ছি :--
                                     🐚
                           গঙ্গাসাগর মেলা .
                           ----------------------
                          ঋদেনদিক মিত্রো  

গঙ্গাসাগর মেলা,  
জলের সাথে করবে খেলা  
          পুণ্য স্নানে নেমে,
সাগরদ্বীপের দক্ষিণেতে  
গঙ্গানদীর বিস্তারেতে    
         এই মেলা, নাও জেনে !  

কলিকাতা থেকেই তা প্রায় ---
একশ কিমি দূরত্ব যায়,  
         গঙ্গাসাগর  স্থান,  
যেকোনও সময় গিয়ে --
এসো ঘুরে ফুরফুরিয়ে,  
        সঙ্গে নিও শাস্ত্র পুরাণ !

লোকগাথায় লেখা আছে  
গঙ্গাদেবী বিশ্বমাঝে  
          নেমে ছিলেন এথায়,  
সগর রাজার সন্তানগন ---
কেন হারিয়েছিলেন জীবন,  
         গল্প বয়ে যায় !  

প্রাচীন গল্প কাহিনীগাথা,  
পড়বে যত খুলবে মাথা ---
         কল্পনারই সাথে,
কবে,  কেন,  কী ঘটেছে,  
সত্য, মিথ্যা,  কী হয়েছে,  
          কজন বা খোঁজ রাখে !

কুম্ভ মেলার পরে এটা  
বৃহত্তম মেলা যেটা ---
           দ্বিতীয় বলেই গণ্য,
এটাই গঙ্গাসাগর জেনো,  
পরিবারকে সঙ্গে এনো,  
          জীবন হবে ধন্য !

মকর সংক্রান্তি যবে  
এই মেলাটা হয় যে তবে,  
          প্রতি বছর-বছর,  
দেশ বিদেশের কত মানুষ,  
ঘুরতে থাকে কী দিলখুশ,  
         দিনরাত্রি প্রহর,   
হাজার দোকান কিনবে কী কী,  
কিনে নিও মেলার স্মৃতি,  
         মেলার সুখের বহর !

কপিল মুনির মন্দিরেতে
দিচ্ছে পূজা মানুষেতে  
         যে যার কামনায়,  
কত নতুন পরিচয়ে  
একটু সাহস,  একটু ভয়ে,   
         কেউ বা কারো  
             বন্ধু হয়ে যায় !
মেলা মানেই অনেক দেখা,
কদিন ধরে চলে এটা,  
        জগৎ মজে যায় !  

ভগীরথের ডাকে গঙ্গা  
        নেমেছিলেন বলে,  
সেইটা নিয়েই এই মন্দির  
        লোকগাথা চলে !  
খ্রিস্টাব্দ চারশ তিরিশ,  
         রানী সত্যভামা,   
কপিল মুনির নামে গড়েন --
         মন্দির, হয় জানা !
 
পরে সেটা নষ্ট হয়ে   
        বারে-বারে ভাঙে,  
কালের খেলা রুখে দেবার  
        কল কি মানুষ জানে?  
এই এলাকা ছিল বিরাট  
        সভ্য জনপদ,  
আঠেরো শ আটষট্টি  
        মহাবিপদ যোগ,  
সমুদ্র ঝড় এসে নিল  
       দু লাখ লোকের প্রাণ,  
সেই যুগেতে দুই লক্ষ,  
        ভাবো কত মান !  

এখানটাতে কারা আসে  
        পুন্য স্নানে বেশী,  
চোর,  ডাকাত, ও খুনি, লম্পট,  
        এসব স্বদেশী,  
তা বলে কি সবাই তেমন,  
         অনেক ভালো প্রাণ ---
শুদ্ধ মনে ভক্তি নিয়ে  
         সাগরে নেয় স্নান !  
ভালো মন্দ,  পাপি তাপি,  
         সবার জন্য সাগর,  
সমুদ্রতে জন্ম সবার
         সাধু হতে পামর !

 ( বিকেল 18 নভেম্বর 2020 )    

এবার সুন্দরবন নিয়ে খুব হালকা চালে একটা কবিতা লেখা যাক :---

                              🌷🌾🌷
                          সুন্দরবন সেই স্থান  
                       --------------------------------
                          ঋদেনদিক মিত্রো  

সুন্দরবন সেই স্থান,   
লেখো যদি কবিতা ও গান,  
কেউ বলবে না পাগলা,   

কতগুলি আছে বই,  
প্রাইজ টা পেয়েছো কই,    
এই নিয়ে করবেনা
              কেউ  মামলা !    

জ্ঞানচর্চায়  যদি  
থাকো তুমি মনযোগী,  
সকলেই দেবে মান,   
করবেনা বিদ্রুপে খাবলা !

ভারতের বঙ্গে  
এই গুণ অঙ্গে  
আছে কার  বল তো,  
সুন্দরবন ছাড়া,  
কোথা আছে এই ধারা,   
উত্তর হলো তো !  

( রাত,  18 নভেম্বর 2020).

                                  🐓

                       NO মোরগ লড়াই
                   ----------------------------
                      ঋদেনদিক মিত্রো  

মোরগ লড়াই করাও কেন,  
এটা সুন্দরবন,   
অসহায় জীবদেরকে  নিয়ে  
কাঁদাচ্ছ কেমন !  

মানুষেরই ইচ্ছে বলে  
বাকি জীব সব জ্বালায় জ্বলে,  
তাদের নিয়ে এ কী খেলা,  
আয়োজন নির্মম,   
মোরগ লড়াই করাও কেন,  
এটা সুন্দরবন!  

অসহায় জীবদেরকে দিও  
সুস্থ বাঁচার আশা,  
সুন্দরবন মানে হলো  
গভীর ভালোবাসা,     
তুমি যদি মোরগ হতে,  
এমন হলে কেমন হতো  
তোমার সেই জীবন?  

( 01: 03 ,  AM, 19 নভেম্বর 2020 )

     এবার আসি আমার একটা ইংরেজি গীতিকবিতায় ও একটি Rhyme এ,  সাম্প্রতিক লেখা ! এই জাতীয় গদ্যের ও বাংলা কবিতা গুলির সাথে জুড়তে হলো প্রাসঙ্গিকতায় ! সুন্দরবন মূলত বাংলা কেন্দ্রিক অবস্থান হওয়ায় বেশী ইংরেজি কবিতা এই লেখার set *এ বেমানান !

                                  🐦

   *  WONDERFUL GREAT SUNDARBANS.
     ----------------------------------------------------
              ----- Ridendick Mitro  

Wonderful great Sundarbans,    
Wonderful its sun shine,  
Wonderful its impression,  
And its nature and clime.    

See and imagine about it,   
What a history in its  lessons,   
Age after age  years ago  
Had many civilizations.   
Enjoy its folklores,  proverbs & rhyme,  
Wonderful its night and sun shine.

The United Nations decleared so ---
The Sundarbans a world heritage Site,  
Excellent creatures and air,  
Ocean,  runlet,  lane, and street.  
Dreamy homes and livlihood fine,  
A deep lonelyness within.

Foreigners come here to see  
Its eternal niceity in deep,  
Their glossy faces beautify  
All over nature and street.  
In the light of judgement to mean,  
Sundarban is the knowledge-stream. .

  ( Afternoon,  12  November 2020) .

     এবার একটা ইংরেজি ছড়া নিয়ে কাজ হোক :-  
                           🧑🐦🦉👧     
                   **  Sundarbans Rhyme.
                  -----------------------------------
                         Ridendick Mitro  

Sundarbans rhyme,  
How it is fine,  
Just like sun shine,  
Sundarbans rhyme.

Dawn,  afternoon,  
Twilight and gloom,  
New moon, full moon,   
Bush,  ponds and brine,  
All are sweet clime,
Sundarbans rhyme.   

Houses free air,  
Crop fields are fair,  
Creatures endeared,  
Home foods taste rare,  
Sky shows divine,  
Sundarbans rhyme.  

Citizens are deep,  
Loves knowledge to meet,   
Horizon is calling,  
Sundarbans rhyme.

Trees, bush and grass,  
Insect,  beast,  birds,  
Street,  lane,  market,  
Something seperate,   
Really charming,  
Sundarbans rhyme.  

Village and town all,  
Play with same soul,  
All creative dream,  
Sundarbans rhyme.

(Night 18 November 2020)

                            ( এগারো )

     একটা কথা বলি,  আমি কী ভাবে লেখা প্র্যাক্টিস করতাম,  জানেন?  ফুটবল ক্রিকেট খেলে বাড়ি এসে হাতপা না ধুয়ে ধুলাবালি লেগে থাকা ঘাম গায়ে হাওয়া না নিয়ে জোর করে ব্রেইনকে চাপ দিয়ে লিখতাম ! খেলায় অনুভূতি শরীরে থাকার সময়ও কবিতা লিখবার চেষ্টা করলে যে কোনো মুহূর্তে যে কোনো অনুভূতি নিয়ে আসার দক্ষতা জন্মাবে,  সেই জন্য !  প্রখর জ্বরে মাথায় জল না নিতে চেয়ে খাটে শুয়ে অন্ধকারে চুপিচুপি আন্দাজে পাশ ফিরে লিখতাম,  জ্বরের সময়ও যাতে ব্রেন কাজ করার পাওয়ার অর্জন করে ! আরো অনেক রকম করে অভ্যেস করেছি সব বলা গেলো না ! যার ফলে আমার শরীরটা poetrified হয়ে গেছে ! কী ভাবে নিজেকে তৈরী করেছি,  স্মৃতিগুলি নিজেই বিশ্বাস করতে পারিনা ! যা বললাম সামান্য ! একই সাথে প্রতিজ্ঞা করেছিলাম,  এই পথে রাজা হবো,  অথবা ফকির ! এই প্রতিজ্ঞা রাখতে গিয়ে কী সব অবস্থার সম্মুখীন হয়েছিলাম,  গল্পের চেয়েও অবিশ্বাস্য মনে হবে ! মনে করতাম,  পোশাক না পরতে পেলে সেটা লজ্জা নয়,  মানুষ জন্মে জ্ঞানী না হতে চাওয়া ও সঠিক প্রতিবাদী না হতে পারাটাই লজ্জার ! সমাজের প্রচলিত ব্যাখ্যায় " লজ্জা " শব্দটাকে আমার ছেলেমানুষী মনে হতো,  আজও হয় ! তবুও কেন নেকটাই  পরে ইউরোপীয় সৌন্দর্য নিয়ে থাকি --- কারণ এই ট্রেন্ড জনমনে বিশেষ গতি ও উন্নত স্বপ্নের প্রতিক বলে গৃহীত হয়,  ও কবির দারিদ্র পোশাক কবিকে প্রতিষ্ঠার সম্মানে দুর্বল প্রমাণিত করে ! তাছাড়া এই পোশাক আমাকে তৃপ্তি দেয় ! যদিও কঠিনতম জীবন যুদ্ধের সময় ভিখারীর মত পোশাক পড়েছি গর্বের সাথে,  কারণ আমি ওটাকে ভাবতাম রাজা বা রাজপুত্রের ছদ্মবেশ,  নিজের অবস্থানে পৌঁছনোর জন্য ! জীবন দর্শন-এর মাপকাঠি  একজন মানুষকে কোথায় পৌঁছে দেবে সেটা গাইড করে ! সর্বোপরি ব্রেইনটাকে ঘরে বাইরে কারোর কাছে কোনও আবেগেই বন্ধকী দেওয়া চলবে না,  আমি মানে  আমি ! আর, প্রতিষ্ঠা মানে দাড়িচুল পাকানোর মাপকাঠি বা " মৃত্যুর পরে আমাকে লোকে বুঝবে " --- অনেকের মতো এইসব বিরল দুর্বল ভাবনায় আমি বিশ্বাস করতাম না ! যাইহোক,  আমার লেখা আপনারা ভালোবাসছেন,  আমি ধন্য !


     অনেকে বলেন নাকি মাইকেল মধুসূদন দত্ত ইংরেজি না পেরে বাংলা লিখতে দৌড়ে পালিয়ে এসে শ্বাস ছেড়ে বেঁচেছিল !  --- এসব ভুয়ো তথ্য কে বলেন,  কেন বলেন,  কে শোনেন,  কেন শোনেন,  বলতে পারবেন?  প্রথমত মাইকেল কী পেরেছেন,  বা পারেন নি,  এর সাথে আমি কী পারবো বা পারবো না,  তার কী সম্পর্ক,  কিংবা আপনি কী পারবেন বা পারবেন না --- তার সাথে কী সম্পর্ক,  বলবেন কী বন্ধু ! আপনার বাবা মা মূর্খ ছিলেন বা অল্প শিক্ষিত ছিলেন,  মানে কি আপনিও ভাববেন আপনার শিক্ষা ও সামর্থের দৌড় আপনার বাপ মা পর্যন্ত হবে?   আর  যদি ভেবে বসেন সেটাই,  তাহলে কি সেটা আদৌ বাস্তবে মেলে?  এবার বলি একটা কথা,  মাইকেল বাংলা লিখতে এসেছিলেন তখনকার একমুখী বাংলা কাব্যে পাশ্চাত্য-মুখি মিশ্রনে নতুন আদল তৈরী করতে ডেভিড হেয়ার সাহেবের অনুরোধে ! ডেভিড হেয়ার সাহেব ছিলেন মুক্ত মনের মানুষ,  তিনি বুঝেছিলেন একমাত্র তখন মাইকেলের পক্ষে এই অসম্ভব কাজ সম্ভব ! এটাই মাইকেলের বাংলা লেখার কারণ !

     আর একটা কথা বলি,  মাইকেল কবিতা লিখতে গিয়ে গরীব হন নি,  পৃথিবীতে কেউ কোনোদিন কবিতা লিখে গরীব হয়নি,  তিনি গরীব হয়েছিলেন অপরিমিত খরচ করার জন্য,  এই সাধারণ বিচার টুকু যদি বাংলার পাঠক সমাজ না করতে পারে,  তাহলে সেটা বাংলার দুর্ভাগ্য ! এইসব ভুল বিশ্বাস নিয়ে এদেশের অভিভাবকগন বংশধরদের উন্নত স্বপ্নকে নিরুৎসাহিত করে দুর্বল করে দেন,  এই জন্য এতো ডিগ্রীধারীর দেশে চিন্তার ভঙ্গী ও স্বপ্নের মর্যাদা এতো দুর্বল !  আসলে আমাদের  একাডেমিক শিক্ষা ও পারিবারিক আলোচনা ও অভ্যেসের অনেক রদবদল চাই !

 

 ( বারো )

     যে কথাটা এখানে এখন বলা দরকার,  সুন্দরবনের ওপর অনেকের অনেক কবিতা,  গান,  নাটক,  গবেষণাগ্রন্থ, উপন্যাস আছে, কিছু ব্যাতিক্রম ঘটনা বাদ দিলে এটা বলা যায় যে,  সুন্দরবনের মানুষেরা,  নর নারী শিশু,  সকলেই প্রখর মেধা সম্পন্ন,  জ্ঞান চর্চায় ডুবে থাকতে ভালোবাসেন, সোনার সিংহাসন পেলেও মাটির সাথে মিশে জীবনযাপন করেন,  সুন্দরবনের বাইরের পৃথিবীর নানা মানুষ যেমন সুন্দরবনের ওপর নানা কাজ করেছেন,  আবার সুন্দরবনের অসংখ্য মানুষ সুন্দরবন নিয়ে যেমন অনেক কাজ করেছেন,  তেমনি বাকি পৃথিবীর জন্যও এঁরা অনেক কাজ করেছেন,  দেশে থেকে ও বিদেশে গিয়ে !  

     আমার এই কাজ গুলি আর এক রকম আঙ্গিকে কাজ,  কিন্তু,  সুন্দরবনের ওপর দুরন্ত সব কাজ অনেকে করেছেন ও করছেন,  যেগুলি অতুলনীয় !

     একটা কথা জানিয়ে রাখি,  সুন্দরবনে গিয়ে আমি একবার একদিন একরাত্রি (এ পর্যন্ত ) অনেক আন্তর্জাতিক বিদেশীদের সাথে কাটিয়েছি,  এসব নানা অনুভূতি নিয়েছি,  এমন কী কয়েকবার নানা কারণে গেছি,  তা বলে সুন্দরবনকে জেনে গেছি তা নয়,  আসলে আমি একজন লেখক হিসেবে লিখছি আমার অনুভব থেকে,  এর বেশী কিছু বলতে পারিনা !  

     একটা কাহিনী বলি,  2010 বা 11 সালে ওই সময় আমি একটি NGO তে PRO বা পাবলিক রিলেশন্স অফিসার ছিলাম ! যেহেতু এই পদ টি সাংবাদিকতা ফর্মের চেয়ার,  তাই গ্রহণ করতে পিছপা হইনি ! যদিও   সাংবাদিকতার কাজ ও পদ এটা নয়,  কিন্তু,  এই ফ্লেভার এর পদ এটা ! আসলে কাজ ও আয় টাই আসল, যেকোনো  সৎ কাজ হলেই  হলো,  কিন্তু আমার নির্দিষ্ট স্বপ্নের ক্ষেত্রে মাপজোক করে আমাকে সিদ্ধান্ত নিতে হতো কখন কোন পরিস্থিতি আমার ক্ষেত্রে যথোপযুক্ত হবে ! কতটা ক্ষতি স্বীকার করার পরেও কতটা আমার উপকার হবে কোনদিক থেকে !

     নানা কারণে উর্ধতন কতৃপক্ষের প্রতিনিধি হয়ে আমাকে যেতে হতো,  সে সব বিরল অভিজ্ঞতা,  যেকোনো একটা কাহিনী তুলে ধরছি মাত্র !

     এভাবেই,  প্রথম একটি NGO তে কাজ করার সময় একটি ঘটনা ! আমাকে ওই পদে নিয়েছিল তাদেরই আগ্রহে আমার লেখার বুদ্ধি চিন্তা তাদের কাজে লাগানোর জন্য ! কারণ সাহিত্য শিল্প বা সৃষ্টিশীল কোনো কাজ ছাড়া আমি কোনো পদ স্বইচ্ছায় গ্রহণ করতে চাইনি !বাধ্যতামূলক ভাবে কোনো কিছু কেউ করালে সেটাতো আমার ইচ্ছে বলে গ্রাহ্য হবে না !

     যাইহোক,  আমি একাধিক NGO ও Foundation এ উচ্চপদ বহণ করেছি !  অবশ্যই অর্থের বিনিময়ে বুদ্ধি ও শ্রম! যেটা আমার শ্রম ও মর্যাদার বিনিময়ে উপযুক্ত টাকা ছিল না,  কতৃপক্ষের দেবার ক্ষমতা ছিল,  কিন্তু দিত না ! তবু করেছি ! বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যম ও পাবলিকেশন হাউসে কাজ করেছি,  বিচিত্র সব ভালো মন্দ অভিজ্ঞতা ! কষ্ট পেতাম,  কতৃপক্ষের ভুল আচরণে,  বা বোকা চালাকির কৌশলে,  এইটুকুই বলতে পারি !  আবার আমার  কাজ করা ওইসব সংস্থা গুলোর কতৃপক্ষ বলতেই পারেন যে তাঁদের সামর্থ ছিলোনা আমার ক্ষেত্রে উপযুক্ত বেতন দেবার,  সেটা তাঁদের যুক্তি ও কারণ হতেই পারে!  তবে সবাই যে একইরকম প্রবণতার প্রতিষ্ঠানে কাজ করে আমার মত পরিস্থিতি পেয়েছেন,  তা বলতে পারিনা ! আমি কেবল আমার অনুভূতি গুলো শেয়ার করছি !  

 

( তেরো )

     আসলে আমি একটা জিনিস দেখি,  কোনো মালিক পক্ষ যেমন বোকা চালাকি করে কর্মীদের ভুল বুঝিয়ে শুধু  নিজের টাই দেখতে চান,  তাতে তাঁর যা হবে হোক পরোয়া নেই, আবার কোনো সংস্থা ভালো যুক্তি ও পথ নিয়ে এগুনোর পদ্ধতি ও সামর্থ যোগান পেলেও সেটা সঠিক ভাবে গ্রহণ না করে নিজে বিপন্ন হবে ও পুরো সিস্টেমকে বিপন্ন করবে,  কর্মীদেরও স্বস্থি দেবে না ! আমাদের দেশে এই ভুল প্রকরণের ব্যবহার বেশী বলেই দেশ এতো দুরাবস্থার মধ্যে পড়ছে বারবার !

     এখনও  অনেকে বলেন তাঁদের অফিসে উচ্চপদে স্টাফ হিসেবে কাজ করতে,  আমার এখন লেখার ব্যাস্ততার সাথে লেখা দেবার এতো প্রকাশনী ও পত্রিকা পাচ্ছি যে,  সেই সময় নেই ! তবে,  এখন ভাবছি consultancy খুলবো ! কারণ,  আমার থেকে নানা যুক্তি ও পদ্ধতি নিয়ে মানুষ লাভবান হয়,  লোকে কত ভুল কথা বলে টাকা লুটছে,  আর আমি ঠিক কথা বলে আমার জ্ঞান ও অভিজ্ঞতার মূল্য নেবো না  কেন?  এটাও তো সাহিত্যের টাকা ! কারণ,  সাহিত্যের মেধা তো consultancy -র কাজ করবে !

     সাহিত্যিক -সাংবাদিক গন বিনে পয়সায় লোককে ভালো কথা বলেন,  তাই সেটা মানুষ গ্রহণ না করে পাগলামি,  আঁতলামি,  জ্ঞানীর অভ্যেস বলে এড়িয়ে যায় ও অপমান করে বিনয়ের আদলে,  কিন্তু যারা অন্য অনেক পেশা নিয়ে ঠকিয়ে খায় মানুষকে বাঁচানোর নামে আরো সর্বনাশ করে,  তাদেরকে জনগণ সেলাম করে ! আরো -আরো তারকে টাকা,  উপহার সহ অনেক কিছু দিয়ে আসে,  দিনের আলোয় ও রাতের অন্ধকারে ! এইরকম অনেক পেশা বা পেশার ব্যক্তিদের আপনারা জানেন !

     লেখক -সাংবাদিকগন যখনি কাউকে একটা ভালো কথা বলার জন্য উচ্চ পরিমান fees বা সাম্মানিক নেবেন,  তখনি তাঁদের কথা লোকে মূল্য দেবে গ্রহণ করার জন্য এবং দেশ বদলাবে !  আসলে, জনগণ যেহেতু বোঝে যেটা বেশী টাকা দিয়ে কেনা হয় সেটাই গ্রহণ করা উচিত,  তাহলে আমার উচিত আমার প্রতিটি বাক্যের জন্য উচ্চ পরিমান টাকা নেওয়া,  কারণ আমি যদি সত্যি জ্ঞানের প্রেমিক তাহলে জ্ঞানকে অপদস্থ করার জন্য কোনো ভাবে চেষ্টা করা উচিত নয়,  তাই প্রতিটি কথা বলার জন্য আমাদের উচ্চ পরিমান টাকা চাই !

     তাই আমি এখন বন্ধুর আড্ডাতে বসলেও চুপ থাকার চেষ্টা করি,  অন্য পেশার লোকেরা একটু কথা বলে টাকা নেন,  তার ফলাফল খারাপও হতে পারে,  আর আমি ভালো খাঁটি উপদেশ দিয়ে সিস্টেম বুঝিয়ে আলোচনা করে বাচাল তকমা নেবো কেন?

     এখন বুঝি,  কোন-কোন ভুলের জন্য এদেশে লেখক -সাংবাদিক দের জ্ঞানী বলে সম্মান দিয়েও কোথাও যেন একটা হেয় করা হয়,  আর সেটা লেখক -সাংবাদিকগন নিজেদের মূল্যকে নিজেরা মূল্য দেন নি বলে !

 

( চৌদ্দ )

     হ্যাঁ,  ভিতরে এতো ভুল ছিল বলেই,  সাহিত্যিক -সাংবাদিকদের নানা রকম বিপন্নতায় পড়তে হয়,  আমি সেই অবস্থান থেকেই ঘুরে দাঁড়িয়েছি ! পুরো সিস্টেমকে বদলে দিতে চাই !  আমার চাওয়া নিয়ে অন্যদের কিছু যায় আসে না,  কিন্তু,  আমার এই অনুভূতিকে কার্যকরী করতে আমি উদ্যোগী ! এর বেশী তো কিছু বলতে পারিনা আমি !

     কেউ যদি আমাকে বলে তার ছেলে মেয়ে কী পড়লে ভালো হতে পারে ইত্যাদি,  তার জন্যও আমার ভিজিট চাই,  কারণ আমার এই সাজেশন নিয়ে তার ছেলে মেয়ে যে উন্নতি করতে পারে সেটার ফল কে নেবে? 

     আমি আমার যে -জ্ঞান দেবো সেটাতো আমাকে অর্জন করতে হয়েছে কঠিন পরিশ্রম করে কঠিন ভয়ংকর পরিস্থিতির মধ্যদিয়ে ! ওই অভিভাবকের ছেলে মেয়েরা আমার কোনো উপদেশ নিয়ে প্রতিষ্ঠা পেলে তারা যে -পথে টাকা আয় করবে,  সেটা তো আমার দেখানো পথে,  প্রতক্ষ বা পরোক্ষ ভাবে ! তাহলে আমি ভিজিট নিলে আমি চুথিয়া,  তারা আমার জ্ঞানের ওপর দাঁড়িয়ে তারা ভিজিট বা পারিশ্রমিক নিলে তারা হবে বিশেষ পদাধিকারী ----- কেন?  

     যারা বলে কবি -লেখক মানে অন্যমনস্ক বা আধ পাগল জীব,  তাদেরকে আমি বুঝিয়ে দিতে চাই যে, কবি -লেখক আসলে কত সতর্ক ও হিসেবি ! আস্কারা দেবার জন্য সমাজ কবি -লেখক -সাংবাদিকদের পেয়ে বসেছিল,  এটাই ঘটনা ! সেই আস্কারা আর দেওয়া যাবে না !

     এসব অনেক কথা হলো, এসব তো আছে, সেই সাথে সম্ভব হলে ইংরেজি ও বাংলা সিনেমা করতে চাই,  কোনো শেয়ারে নয়,  যদি কখনো সম্ভব হয় নিজের খরচে করবো ! এসব লাইন নিয়েও আমার নানা ভালো মন্দ অভিজ্ঞতা আছে !  চেষ্টা করবো ! এটাও তো শিল্পের একটা মাধ্যম ! শর্ট ফিল্ম ও ফিচার,  সবটাই ইচ্ছে আছে !  
                            ( পনেরো )
     আসলে নানা পরিস্থিতির দ্বারা বিপন্ন হবার জন্য অনেক কাজ পিছিয়ে গেলো আমার,  এটাই আমার মনে হয়েছে আপাতত !   এতো রকমের কৌশলের ধাপ,  উঃ,  কত আর সামলানো যায় !  খুব কষ্ট পাই,  কী করবো !

     যাইহোক, সেই সূত্রে একটা গল্প বলছি ! ওই 2010-11 সালের দিকে ভেসেল (vessel ) ধরতে রাত হওয়ার জন্য,  আমি কাকদ্বীপ আট নম্বর ঘাটে এসে রিকশাতে বা অটোতে এসে যেই কাকদ্বীপ স্টেশনে এসেছি,  তখন শেষ ট্রেন টা ছেড়ে গেলো ! প্রখর শীত,  আবার নদীতীরবর্তী এলাকা ! আবার গ্রাম্য এলাকা ! শীত কাকে বলে !  

     স্টেশন এ কাটাতে হবে ! শীতে কাঁপছি ! তবু কাটাতে হবে ! দেখলাম পাশে একটা ছেলে বসে গায়ে কাঁথা দিয়ে বসে আছে ! আমি অনেক কষ্ট সহ্য করেও না সইতে পেরে ওকে বলি, " ভাই,  আমার জ্যাকেট দিয়ে এই শীত যাচ্ছে না, তোমার কি আলাদা কিছু আছে !"

     সে বললে,  " হ্যাঁ দাদা,  আমার ব্যাগে কাঁথা আছে, " বলেই সে বের করে দিলো ! এবং কথায়-কথায় বললো যে,  সে  উচ্চমাধ্যমিক পাস, বি.এ পড়ছে,  চাকরির ইন্টারভিউ দিতে রাত ভোরের ট্রেনে উঠবে ! কলকাতা যাবে,  তারপর সেখান থেকে অন্য কোথাও যাবে !

     আমি তার কাঁথা নিয়ে ধন্যবাদ দিয়ে বললাম,  " ভাই,  তুমি আমাকে কী দিলে জাননা, অসুবিধা না থাকলে তোমার নম্বর ও নামটা যদি বলো, "  সাথে-সাথে প্রমাণ স্বরূপ আমার পরিচয় তাকে দিয়ে সন্দেহহীন করলাম,  তার পদবীটা মনে আছে,  নাম মনে নেই,  আগের নম্বরটি তাকে দিয়েছিলাম post paid অফিস নম্বর,  অন্য দিকে তার নম্বরটাও হারিয়ে ফেলেছি,  আজ এই লেখা লিখতে গিয়ে বারবার পড়ে-পড়ে এডিট করতে গিয়ে তার কথাটা মনে এলো !  তাকে যদি ঘটনা ক্রমে কোথাও কোনোদিন দেখে চিনতে পারি এই বিরাট পৃথিবীতে,  আমার জীবন ধন্য হবে !  

     তার থেকে তার বাড়ির তৈরী কাঁথা গায়ে দিয়ে আমি গ্রামীণ জীবনের অন্য আলো-ছায়া অনুভব করলাম, যেগুলো আমরা হারিয়ে ফেলছি পরপর ! অনেক আগের কথা তো,  বিষয়টা এইভাবে আজকে লিখবো বলে তো মনে রাখার চেষ্টা করিনি,  তাই ওটা বাড়ির তৈরী কাঁথা ছিল কিনা প্রশ্ন উঠতে পারে,  কিন্তু,  মনে হচ্ছে তাই ছিল !


( ষোলো )

     মনে পড়ে ওই সময়টা আমি যখন তখন সুন্দরবন এলাকায় যেতাম,  তবে রিজার্ভ ফরেস্ট আজও দেখিনি!  তবে অনুভব করার ক্ষমতা থেকে অনেক কিছু অনুভব করতাম !তবে ওখানকার কোনো জায়গায়  গ্রামের বাজারে গিয়ে কম টাকায় প্রচুর টক দই খেতাম নিজের খরচে,  মানে কারোর থেকে খেতাম না ! বরং সময়ে -সময়ে আমার নিজের টাকা খরচ করেও তাঁদের প্রতি সৌজন্য পালন করেছি ! কারণ বাইরে যাওয়া আসা ও খাওয়া দাওয়ায় খরচ যা পেতাম,  অতিরিক্ত খরচগুলি আমার নিজের থেকেই হতো,  কারণ আমি যন্ত্র মানব হয়ে থাকতে পারতাম না ! অপব্যয় অনুচিত,  ঠিক কথা,  কিন্তু কিছু -কিছু ক্ষেত্রে কিছু -কিছু ব্যায়কে অপব্যয় বলেনা,  যদি সেটা সংস্কারের বাইরে বিশেষ বিবেচনায় খরচ করা হয় !অবশ্যই নিজের বিপন্নতা না এনে !

     মানুষ খুব গুরুত্ব দিত আমাকে কলকাতার কোনো সংস্থার একজন  প্রধান প্রতিনিধি ও কবি  বলে !  কারণ ওই দই কলকাতায় এসে পাঁচগুণ দাম হয়ে যায় ! এসব মজা আলাদা ! ওই NGO এর সহকর্মীরা ওখানে বিভিন্ন ব্রাঞ্চ এ থাকতেন  চাকুরীর নিয়মে ! তাঁরা আমাকে কোম্পানির উর্ধতন কর্মী ও কবি হিসেবে খুব ভালোবাসতেন ,  এসব অনুভূতি আলাদা ! ওখানে যখন গ্রামে বেরিয়ে পড়তাম কত মানুষের কত জিজ্ঞাসা থাকতো আমাকে নিয়ে ! বিভিন্ন নেতানেত্রী,  ব্যাংক ম্যানেজার,  ভিডিও, বিভিন্ন   ভিডিও অফিসের পদস্থ কর্মী,  অন্য বিভিন্ন সহযোগী NGO ও ফাউন্ডেশন এর কর্নধারদের সাথে আমার যোগাযোগ হতো ! আলোচনা হতো ! দেখতাম,  গ্রাম ও শহরের মধ্যে বিনিময়ের খেলায় কী কী ঘটে,  কেন কোথায় কী কী পরিস্থিতি আসে,  উৎপাদন ব্যাবস্থার কোন রীতিনীতি কী ভাবে কোন বিষয়কে পরিচালিত করে ! সমাজ ব্যাবস্থার মূল অধ্যায়কে জেনে ফেললাম! যেসব সত্য সংবাদপত্র বা গবেষণার গ্রন্থ পড়ে পুরো বোঝা যায়না!  

     এটাও  ঠিক,  সুন্দরবন মানে কেউ খারাপ নাগরিক নেই,  এমন ভুল কথা বলতে পারিনা,  কিন্তু সুন্দরবনের জনমন বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই উন্নত ও মুক্ত ! সেটাই আমার মনে হয়েছে ! খারাপ,  কূটিল,  যন্ত্রণাদায়ক মানুষদের নাম তো ভালোর তালিকায় থাকবে না ! সেটা যেকোনো স্থানেই হোক ! যেকোনো ক্ষেত্রেই হোক !

     এই লেখাতে অনেক ভাষা আছে যেগুলি কাউকে  যদি আঘাত করে তবে সেটা তাঁর বোঝার ভুল ! লেখার প্রসঙ্গে আমি আমার নিজের কিছু বিষয় বলেছি,  যা বলতে হয়েছে !

     একটা কথা সবাইকে ভাবতে হবে,  যেকোনো মানুষের যেকোনো ভালো কাজ ভালো ফল দেয় ! এটাই সত্য ! এবার যে যেমন মাত্রায় কাজ করি ও প্রকাশ করার ও প্রতিষ্ঠার সুযোগ ঘটে,  তার প্রকাশ ও অবস্থানটা সেই ভাবে হয়ে যায় ! এখানে  " সেই ভাবে " কথাটা দিয়ে কাউকে বড় বা ছোট করছি না,  বরং বলছি যে,  সকলের কাজে একটা নিজস্ব বৈশিষ্ট আছে, সেটাই তার অবস্থানের রূপ !  

     আমরা সব রকমের সব বিষয়ের লেখক, সাংবাদিক,  পাঠক-পাঠিকা,  আমাদের আত্মবিশ্বাসী হয়ে সমাজের ভুল ভাবনার মানুষদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে ! তাদের বোঝাতে হবে পড়াশোনাই জীবনের সবচেয়ে অভিজাত রূপ ! চিন্তার অনুশীলনই শান্তি ! সব জীবের কষ্টের প্রতি সতর্ক থাকাই মানব জন্মের শ্রেষ্ঠতা ! 
                           

(  সতেরো )

     আপনি কোনো লেখক না হয়েও যদি শুধু পাঠক হন,  তাহলেও আপনি গ্রেট,  কারণ,  ওই মুহুর্তটা আপনি সহজ পথে অর্থ আয়ের সুযোগ না খুঁজে বা তুচ্ছ ভাবনার আলোচনায় না থেকে নিজেকে জ্ঞানের সাগরে চিন্তার নৌকোতে ভাসিয়ে দিয়েছেন,  আপনার জীবন যুদ্ধের মধ্য থেকে যতটুকু সময় বের করেই তা করুন না কেন,  আপনার দেহ মনের অবস্থান উদ্দেশ্য তো তখন মহৎ !

     আমি এটাই বলছি,  আপনি বড় কাজ করে আত্ম বিশ্বাসী না হলে বিপরীত পক্ষের অন্যেরা আপনাকে ছোট কাজের লোক বলে স্বীকার করিয়ে নেবে ! এই কষ্ট কেন আপনি বহণ করবেন অকারণে !  আমি সেই কথাই বলতে চেয়েছি বারবার !

     লিখে -লিখে শেষ হচ্ছে না কথা,  কেটে -কেটে সংক্ষিপ্ত করে বলতে গিয়েও বেড়ে যাচ্ছে ! তবু খাবার শেষে চাটনি খেতে হয়,  চাটনি অনেক রকম ছিল,  এখানে এতো দেওয়া যাবে না,  দু একটা দিয়ে এই লেখাটা আপাতত শেষ করছি !  

 

 ( আঠেরো )

     তার আগে বলি,  এক মুহুর্ত Sudith এর কথা,  অনেক বছর আগে সুন্দরবনে প্রথম গিয়ে অস্ট্রিয়ার  সাংবাদিক Sudith এর সাথে বন্ধুত্ব !  একবিংশ শতক পড়ার ঠিক আগে-আগে সময়টা, তখন আমি নতুন চলছি ! দুজন বিদেশী  মহিলা সাংবাদিক,  একজন অস্ট্রেলিয়ার ছিল ! কিন্তু আমাকে পছন্দ করলো Sudith ! তার ঠিকানা নিজে হাতে লিখে  দিয়েছিলো ! জীবনযুদ্ধের সময় কোথায় হারিয়ে গেছে সব ! শুধু পরিচয়,  চোখাচোখি,  ইত্যাদিতে আমরা অনেক খানি এক হয়ে গেলাম ! কিন্তু,  নানা জনের এক আধটু হিংসার জন্য আমাদের আর কিছুই তখন এগুলোনা ! 

     সে এখন কোথায় কী ভাবে জানিনা,  জানি না সে আমার মত কোনো স্মৃতি বহন করছে কিনা,  যদি কখনো আবার দেখা হয় পৃথিবীর কোথাও,  কেমন হবে,  তখন সে তার এই  ভুলে যাওয়া ভারতীয় বন্ধুটাকে তার ইংরেজি ভাষার কবি-লেখক হিসেবে দেখে কেমন অনুভব করবে !  যখন সে শুনবে আমার লেখা ইংরেজি গান ইন্টারনেটে তখন সে কী ভেবে ডুবে দেবে কোন রোমাঞ্চে,  জানিনা !

     জীবন কি এরকমই হয়?  

     সেটা ছিল সুন্দরবনেই ! আমার জীবনের প্রথম Press Meet এ ! পরে সে নিয়ে আরো ইন্টারেষ্টিং কাহিনী দিয়েছি,  পরপর পরে যান ! তবে অনেক বিষয় নিরাপত্তার জন্য আমি এখানে অনেক কিছুই বলতে পারছিনা,  কারণ কে কী ভাবে কী বিষয়টা নেবেন সেটাই কথা !  তাই আমাকে সেই ভাবেই বলতে হচ্ছে !  আপনাদের শুধু উপলব্ধিগুলো ছুঁয়ে দেওয়ার জন্য ! ডিটেল না বললে অনেকে বলবেন , " ঋদেনদিক,  তুমি আমার,  আমাদের নাম ও আরো অনেক কিছু ঘটনা,  পরিবেশ, পরিস্থিতি, এসব এড়িয়ে গেলে কেন?  "

     আবার ডিটেল করে লিখলে ওরাই বলবে, " আমাদের নিয়ে এতো ডিটেল করার কী দরকার ছিল তোমার? " তাই সংযুক্ত অনেক কিছু বলা গেলোনা,  আপাতত এখন ! আমি অকৃতজ্ঞ হতে চাই না,  কিন্তু কৃতজ্ঞতা দেখাতে গিয়ে কষ্ট পেতে চাইনা !

     জানি, পাঠক-পাঠিকা  তবুও চাইবেন,  এই টানটান অনুভবে একটু সংকেত, জায়গা কোথায় ও কবে ! না হলে অতৃপ্ত থাকলো মনটা !  

 

 ( উনিশ )

     তাহলে সংক্ষেপে বলে ফেলি, জীবনের প্রথম press meet আমার জীবনে,   1997 বা 98   এর নভেম্বর বা ডিসেম্বর মাসে মনে হয়,  বিশ্ববিখ্যাত উপন্যাস " The City Of Joy " এর লেখক ডমিনিক লাপিয়ার এর press meet বহু বিখ্যাত নানা দেশের সাংবাদিক,  গবেষক ও ডাক্তার দের মিলিত সভা ছিল সেটা ! Press meet কেমন জিনিস জানতাম না,  তাও আবার আন্তর্জাতিক press meet এ আমার হাতে খড়ি হচ্ছে ! ওখানেই একদিন একরাত কাটিয়েছিলাম ! গিয়েই Sudith এর সাথে বন্ধুত্ব হয় ! 

     জায়গাটা সুন্দরবন এর ভাঙড় ! সংস্থার নাম SHIS. সেক্রেটারি এম এ ওহাব,  প্রেসিডেন্ট সাবিত্রী পাল !  বা কেউ সভানেত্রী সাবিত্রী পাল বলেন !  Officially এই দুটোর একটা ব্যবহার করা হয় সাবিত্রী দেবীর ক্ষেত্রে !

     সেখানে গিয়ে দেখি সাংবাদিকের ষ্টার হোটেল সিস্টেম এ আপ্যায়ন ! মনে -মনে ভাবলাম,  ওরে শালা,  লেখক -সাংবাদিক হলে এরকম ব্যাপার ! তাও আমার প্রথম press meet !  

     আমি তো কিছু প্রস্তুত  হয়ে যাই নি,  বাবু ভায়াদের ব্যাপার কিছু  বুঝি না ! তবে একটা ব্যাপার,  আমার মধ্যে তো স্বপ্ন ছিল অসম্ভব,  যেমন আমার ছেলেবেলা বাপি (বাবা ) একদিন আমাকে পুরানো একটা পত্রিকা দেখালেন,  দেখলাম প্রধানমন্ত্রী নেহেরুজী রাশিয়ার রাষ্ট্রপতি ও উপরাষ্ট্রপতি দুজনের সাথে বা একজনের সাথে যাই হোক,  ডাব দোকানে দাঁড়িয়ে ডাব খাচ্ছেন !  

     সেই দৃশ্য দেখে হঠাৎ আমার মাথায় এলো আমি এমন জায়গায় যাবো,  আমিও একদিন এদের সাথে,  মানে এঁদের মত বিখ্যাতদের সাথে ডাব খাবো !  

 

( কুড়ি )

     ফলে মানসিক ইচ্ছের পরিণতি গুলো খুব উন্নত হওয়ায়,  সেই প্রক্রিয়া দেহ মনে চলা ফেরা করতো ! তাই ভাঙড়ের বিদেশী অতিথিদের পৰিবেশে আমার উপস্থিতি টা আমার কাছে রোমাঞ্চকর হলেও,  অবিশ্বাস্যকর  হলেও, দ্রুত সিস্টেম টায় ঢুকে পড়ে মানিয়ে নেওয়াটা কোনো অসুবিধা হয়নি !

    যাইহোক,  প্রেস মিট এ বসে আছি,  যেযার মত প্রশ্ন করে যাচ্ছিলেন লাপিয়ের সাহেবকে !  উনি স্ত্রী সহ    ওহাব সাহেবকে নিয়ে press meet করছেন ! বিদেশী অন্য অতিথি ও বিদেশী সাংবাদিক গনও ভারতীয় সাংবাদিকদের  পাশে দাঁড়িয়ে ও  বসে ! আমার  মনে হলো সকলের প্রশ্ন গুলোই উপযুক্ত,  কিন্তু এই যোগ্যতার বিদেশির প্রতি প্রশ্ন গুলো একটু ভিন্ন হলে  জমে যায় !

     আমার প্রশ্ন কিছু ভাবা ছিলোনা,  হঠাৎ লাপিয়ের সাহেবকে বললাম,  "   Sir,  you have come to India to help the people of this land ! Do you think India is a poor country?  "  

     মানেটা সবাই বুঝতে পারছেন, বলছিলাম,  " স্যার,  আপনারা ভারতে আসেন ভারতকে সেবা করতে, আপনারা কি মনে করেন ভারত গরীব দেশ? "  

     উনি,  ওনার স্ত্রী দুজনে আমার দিকে তাকিয়ে হকচকিয়ে গেলেন,  অন্য বিদেশিরাও আমার দিকে চোখ দিলো,   এবার স্বাভাবিক হয়ে উঠে আমাকে উত্তর দিলেন,  " The life and words of India motivated us,  so we come to India to do something for the people. "  --- ভারতের মহাপুরুষদের জীবন ও বাণী আমাদের মুগ্ধ করে,  তাই তাঁরা আমাদের উজ্জীবিত করেছেন এই দেশে এসে কিছু কাজ করতে !"

 

 ( একুশ )

     পাকা কথা,  আসলে উনি নিজেই কুড়ি বছর সাংবাদিকতা করেছিলেন,  এবং পৃথিবীর একজন সেরা ধনী সাহিত্যিক,  লেখা থেকে তিনি পান কোটি কোটি টাকা,  অনেক বই, অনেক ভাষায় অনূদিত !  আবার স্বামী স্ত্রী মিলে কখনো ফুটপাতে নানা রকমের বই বিক্রি করেছেন শুনেছি,  পৃথিবীর সেরা মানুষেরা অনেকে তাঁর বন্ধু ও তাঁর অনুরোধে অনেক বিদেশী ধনীরা ভারত সহ নানা দেশে টাকা দান করেন সমাজ কল্যাণের জন্য ! তিনি আমার প্রশ্নের কাছে হেরে যাবেন এটা হতে পারে না ! খুব বুদ্ধিমত্তার উত্তর তিনি দিয়েছিলেন !  এবার ওনার চোখে আমি পড়ে যাই !  ওনাকে অনেকেই নানা প্রশ্ন করছিলেন, উনি কিন্তু সেগুলি উত্তর দিতে -দিতে আমাকেই আঙ্গুল তুলে দাবী নিয়ে আমার থেকে আরো প্রশ্ন চাইলেন !  আমার দিকে আঙ্গুল তুলে  বললেন --- you,  you,  you !  

     বুঝলাম আমার দ্বারা উনি বুদ্ধি দ্বারা বিপন্ন হতে চাইছেন,  আর সেটাই ওনার কাছে interest.  

     যদিও এদেশের কিছু সাংবাদিক দাদা বন্ধুরা আমার প্রতি ভাবভঙ্গী দিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করছিলো !  


     তবু লাপিয়ের সাহেবের আদেশে আমি তাঁকে এবার  প্রশ্ন করলাম,  "  The secretary of this NGO Mr.Wahab may be nominated for Nobel Peace prize due to his effort in social work someday,  So what is your openion about it !"  --- এই সংস্থার সেক্রেটারি ওহাব সাহেব সামাজিক কাজের জন্য কোনো একদিন নোবেল পুরস্কারের জন্য নির্বাচিত হতে পারেন বা মনোনয়নের জন্য ওনার নাম ওই পুরস্কারে পাঠানোর যোগ্য হতেই পারে ! এ নিয়ে আপনার মতামত কী? 

     ওহাব সাহেব ডমিনিক লাপিয়ের -এর পাছায় আলতো করে হাতের তালু  দিয়ে ধাক্কা মেরে হেসে কথাটা উড়িয়ে দিয়ে পরিবেশটাকে সহজ করাতে চাইলেন,  আসলে officially  ওনার কাছেও এই প্রশ্ন টা ঐসময় ভালো লাগেনি হয়তো,  কিন্তু,  লাপিয়ের ও তাঁর স্ত্রীর চোখ দিয়ে জল পড়তে থাকে !  

     একটা কথা বলি ওঁরা কিন্তু কোনো পুরস্কারের দিকে তাকিয়ে কেউ কিছুই করছেন না,  ওহাব,  ল্যাপিয়ের,  সহ সকলেই ! কারণ ওখানে যাঁদেরকে দেখেছি,  তাঁদের দেখে আমার জীবন ধন্য হয়েছে ! পৃথিবীর যেখানেই হোক,  দায়িত্বশীল কর্মবীর-বীরাঙ্গনাদের সাথে আমি মিশে রোমাঞ্চিত হই !  

     কিন্তু,  প্রশ্নের মনস্তত্বে লাপিয়ের ও তাঁর স্ত্রী আমার দিকে তাকালেন,  স্পষ্ট বোঝা গেলো,  চোখে জল !

     এবার  ডমিনিক লাপিয়ের বললেন , "  If Wohab someday goes in that quality his name may be sent to the Noble Commite by the journalists. " -- যদি ওহাব সাহেব কোনোদিন তেমন মাপের কাজ করতে পারেন তাহলে তাঁর নাম নোবেল কমিটিতে সাংবাদিকগন পাঠাতে পারেন !'

     আমার এই সব প্রশ্নে ও লাপিয়ের এর উত্তরে পরিস্থিতি আরো অন্য রকম হলো,  আমি মোট তিনটি প্রশ্ন করেছিলাম হঠাৎ বানিয়ে নিজের ময় ভেবে,  আর একটি প্রশ্ন ছিল একদম প্রথমে , " You offered huge money to our CM Jyoti Basu,  from your  royalty of The City of Joy  as we heard,  in the people's purpose ! But Basu prevented shooting a film City of Joy.   Have you any openion about him?  " --- আমাদের মুখ্যমন্ত্রীকে আপনি অকাতর টাকা দিয়েছেন আমাদের জনগনের উন্নতির জন্য, আপনার উপন্যাস The City Of joy এর লভ্যাংশ থেকে,   কিন্তু উনি এই উপন্যাসের সিনেমা শুটিং এ বাধা দিয়েছিলেন,  ওনার ওপর আপনার মতামত কী? "

     উনি আমার প্রথম এই প্রশ্নের থেকেই বিব্রত হয়ে আমার প্রতি আলাদা দৃষ্টি দিয়েছিলেন ! তিনটে প্রশ্নের এটাই ছিল প্রথম !

     উনি বলেছিলেন,  " He is a politician,  I  am non -political person,  I don't Know about him. "  --- তিনি রাজনীতিবিদ,  আমি রাজনীতির কেউ নই, তাই তাঁকে নিয়ে কিছু বলতে পারবো না !

     এই উত্তরটা উনি ঠিক দিতে পারেন নি,  কিন্তু আমার দিকে  উনি শুকনো মুখে নীরব ভাষায়  বুঝিয়ে দিয়েছিলেন -- রাজনীতি জিনিসটা কী সেটা সবাই জানে,  আমাকে এই নিয়ে বিপাকে ফেল না !  কাজ করতে দাও !  
 

( বাইশ )

 
     ওনার চোখের ভাষা বুঝে আমি চুপ হলাম ! যাইহোক অন্যদের থেকে উনি অনেক প্রশ্ন নিচ্ছিলেন ও আমার আরো দুটো প্রশ্ন নিচ্ছিলেন,  যা আগে বলে এলাম,  এইভাবে কিছুক্ষন পর প্রেস মিট শেষ হলো ,  আমাকে নিয়ে এদেশী কিছু সাংবাদিক দাদা বন্ধুরা অনেকে কটূক্তি করলেন  --- একে কে এনেছে,  এই লাইনে ঢুকলো কী করে?   কী করে এইসব প্রশ্ন হতে পারে !


     ওই কথা গুলি একই রকম ভাষায় অনেকেই বলতে থাকলো,  এমনকি ফিরে যাবার সময় পরদিন বাসে বসে সেখানেও আমার ওপর এই আক্রমণ অব্যাহত থাকলো,  আমি  তাঁদের অনেককে বোঝাতে পারিনি যে আন্তর্জাতিক বিষয়ের দৃষ্টিকোন আলাদা,  তারা কোনোভাবেই মানলো না !  বুঝতে চাইলো না ! আমি এবার ব্যাগ থেকে বের করলাম ওই SHIS সংস্থার লোগো দেওয়া লম্বা খাম,  যার ভিতরে ঢুকিয়ে লেখার প্যাড ও কলম দেওয়া হয়েছিল প্রতিটি সাংবাদিককে !

     সেই খামের ওপর লেখা " Ridendick Mitro is a Good and Honest journalust,  all best wishes to him, "  সঙ্গে ওনার সই, তারিখ,  ফ্রান্সের ঠিকানা ও ফোন নম্বর !

     ভাগ্যিস ওটা ওখানে কেউ ছিঁড়ে  দেয়নি,   এই তর্কের অবস্থায় ওটা বের করা ঠিক হয়নি,  গালি শুনে চুপ থাকলে হতো,  তবু বের করে বাসে দেখাতে ওরা অনেকে অবাক ! কেউ বললো,  " ভাই,  যা পেয়েছো,  অ্যাসেট !" কেউ বললো,  " এটা আর এমন কী !".

 

( তেইশ )

     কিন্তু ওরা যখন --- কী করে এটা পেলাম,  ঘটনাটা শুনতে চাইলো,  তখন বলে ফেললাম  --- কালকে press meet শেষ হবার পর যখন সবাই যেযার মত হাঁটাচলা করছিলো তখন ঘটনা ক্রমে একটা সময় সিঁড়িতে লাপিয়ের এর মুখোমুখি হই,  উনি আমার কাঁধ চাপড়ে বললেন,  you are a good journalist.  পরে ওনাকে আমি বলি যে স্যার,  আপনার মত বিশ্বখ্যাত মানুষ আমার মত অখ্যাত নতুন সাংবাদিককে এইকথা বলছেন এই নিভৃতে সিঁড়িতে মুখোমুখি হবার সময়, আমার প্রতি আপনার ওই প্রশংসাটা আমি যদি বাইরে বলি লোক আমাকে মিথ্যেবাদী বা পাগল বলবে !'আপনি তাই ওই কথাটা যদি লিখে দেন তাহলে সেটা দেখাবো,  ও জনগণ বিশ্বাস করবে !তারপর উনি আমাকে খানিক্ষন পরে দেখা করতে বললেন,  ও  ওনার রুমে ঢুকলেন,  আমি বাইরে দাঁড়িয়ে থাকলাম, এবং অনেক ক্ষণ দেরি হবার জন্য আমি ধৈর্য্য হারিয়ে চলে এলাম,   আবার গেলাম,  ওনার স্ত্রী বেরিয়ে এসে বললেন যে ওনার স্বামী জিনিসপত্র গোছাচ্ছেন বিকেলে আর একজায়গায় যেতে   হবে  ! এবার  আমি ফিরে এসে সাংবাদিকদের রুমে নিজের খাটে শুয়ে পড়লাম,  ভাবলাম,দুর,  উনি আমাকে লিখে দেবেন কী করে সম্ভব ! এর পর কিছু ক্ষণ পরে দোতালায় ওনার নির্দিষ্ট রুমের দিকে যেতে গিয়ে দেখছি উনি নিজেই আমাকে খুঁজছেন -- where you are,  where you are !  আমি সাথে -সাথে গিয়ে বললাম,  " I am here ! " উনি বললেন,  যেমন  ইংরেজিতে বললেন -- বাংলাতেই বলছি,  বলেন, --- কাগজ দাও, লিখে তোমার নাম বলো ! আমি বললাম,  আপনার লেটারহেড এ লিখে দিলে ভালো হতো ! উনি আমার বুদ্ধিটা দেখলেন হয়তো,  আমি এই সময় কী করতে পারি !  আমি বাড়িয়ে দিলাম SHIS এর লোগো লাগানো খাম !  উনি এবার আমার নাম জিজ্ঞেস করে লিখে দিলেন ওই কথা,   কথ্য ভাষায় লিখেছেন, তাই all the wishes না লিখে all wishes লিখেছেন !   


     আমার মুখে ঘটনাটা শুনে কেউ-কেউ চুপ থাকলো,  কেউ -কেউ তবুও আমাকে গুরুত্ব দিতে চাইলো না !  তবে খাম টা হাতে নিয়ে পরীক্ষা করে দেখলো খাম  ও লেখা original !  

 

( চব্বিশ )

     সেই ফ্রান্সের লেখক লাপিয়ের 2008 সালে পদ্মভূষণ পেলেন  ভারত সরকার থেকে ভারতের ওপর কাজ করার জন্য,  উনি বহুদেশের ওপর কাজ করেন,  কতকি পেয়েছেন কে জানে,  তবে এখন ওনার বয়স প্রায় নব্বই ! যদি জানতেন উনি যাকে ভারতে প্রশংসা পত্র লিখে দিয়েছিলেন  1997 (98) সালে  সেই ছেলেটি ইংরেজি ও বাংলাভাষায় একজন আন্তর্জাতিক পরিচিত পেশায় লেখক !  উনি নোবেল পেলে শান্তি পেতাম ! শুধু তাই নয়, গোপনে -গোপনে কত মানুষযে যে নোবেল,  ম্যাগ সাইসাই, পদ্মবিভূষণ,  পদ্মা ভূষণ,  পদ্মশ্রী  প্রভৃতি পাবার যোগ্য,  কত টুকু বা সেই হদিশ বাইরে আসে ! কিন্তু পৃথিবী টিকে আছে এদেরই মত অসংখ্য মানুষদের জন্য !
     কেমন লাগবে তাঁর এমন মুহুর্ত যদি তিনি ও আমি মুখোমুখি হই কখনো ?  আমি তাঁর সেই ভূমিকার মর্যাদা রক্ষা করতে পেরেছি ! এটাই আমার তৃপ্তি ! তৃপ্তি পেতাম আরো যদি তাঁর সাথে দেখা হতো এখন ! 

     ওই প্রশংসাটা নিয়ে জেরক্স করে রেখেছিলাম,  দেখতে হবে আসল ও জেরক্স কপি কোথায় আছে ! এসব ভুলে গিয়েছিলাম,  এই লেখা লিখতে গিয়ে মনে পড়লো ! এসব মনেই ছিলোনা আমার,  অকাতর নানা বিকট নাগরিকদের দ্বারা নানা ভাবে বিপন্ন হতে -হতে, কষ্ট পেতে -পেতে অনিবার্য জিনিস গুলো রক্ষা করবার হুঁশ কখন যে হারিয়ে যেতে থাকে, বুঝতে পারিনা !  

     ঘটনা গুলো চোখের সামনে যেন ভাসছে ! ওই সময় ওখানে ঘোরাঘুরি করতে গিয়ে দেখি,  একজন জার্মান সুন্দরী চরম নোংরা একটা বেসিনে হাত লাগিয়ে ন্যাকড়া দিয়ে ঘষে পরিষ্কার করছেন,  হাতে কোনো গ্লাভসও  নেই ! আমি দেখে কাছে গিয়ে বলি,  " Hy,  what are you doing it?  " উনি ডানহাতে liquid সাবানের বোতল ধরে বাম হাত দিয়ে ন্যাকড়া টা বেসিনে ঘষতে -ঘষতে সাবলীল ভাবে একটু হেসে বললেন,  " people have made it dirty.  I am cleaning ! " 

     কী অপূর্ব কথা !আমি যখন বললাম,  " আপনি এটা কী করছেন?  " উনি উত্তর দিলেন,  " জনগণ এটা না হয় নোংরা করেছে,  আমি পরিষ্কার করছি ! "  বলছে কে,  যে একজন সাদা চামড়ার জার্মান সুন্দরী,  যারা ওদের দেশে কোনো না কোনো পদ মর্যাদায় বিরাট,  একই সাথে ধনী,  যে সংস্থায় টাকা দান করেন সেই সংস্থায় দাসীর মত কাজ করছেন বিবেচনার মূল্যবোধ থেকে !


     এই চরিত্রগুলোকে বলে আন্তর্জাতিক ! এদের সাথে থাকলে দেহ মন জীবন আলোকিত হয় ! ওদের নাম ঠিকানা সব ওই SHIS লোগো লাগানো খামের ওপর দু  প্রান্তে লেখা ছিল ওদের হাতে !   

     এবার লেখাটা আর না বাড়িয়ে একটা ট্রাজেডি ও একটা কমেডি দিয়ে শেষ করছি !  

     সালটা 2010 বা 2011 হবে ! ডিসেম্বর বা জানুয়ারিতে পিকনিক করতে গেছি,  আমার অফিস টিমের সাথে ! হৃদয়হীন পরিবেশের ভিতর কোথাও মিশতে ভালোলাগে না,  এইদেশে নিজের মত চুপচাপ থাকাই সুখ বা একটু স্বস্থি ! সুখ কথাটা অনেক বড় meaning,  এখানে ব্যবহার না করাই ভালো ! তবু অফিস টীম  যাচ্ছে,  সব ব্রাঞ্চ এর কর্মীদের নিয়ে পিকনিক,  স্থান বকখালি ! সুন্দরবনের বকখালি !  

     বকখালীতে সেই পিকনিক নিয়ে বলি ! বিরাট টীম গেলাম !  যে যার নিজের বাড়ি বা অফিস থেকে ওখানে গেলাম  ! মালিক  পক্ষ সহ আমরা হেড অফিস থেকে ওখানে গেলাম,  বাকিরা যে যার মত গ্রুপ করে পৌঁছলো ওখানে !

     ঝাউবনে আস্তানা বানিয়ে চললো আড্ডা ও রান্নার জোগাড় ! আমি সহ কয়েকজন সমুদ্রের ধারে গেলাম!  অকারণ ঝুঁকি নিয়ে অকাজে বিপদে পড়ার জন্য উদ্দেশ্যহীন বীরত্ব আমি দেখাতে চাই না,  তাই কোনো রকম ঝুঁকি ছাড়াই নিজের ভারসাম্য রেখে হাঁটাচলা করতে থাকলাম ! বীরত্ব যদি কেউ দেখাতেই চাইবো,  সেটা সমাজ জীবনের দূষণ তাড়াতে,  পৃথিবীর সমাজে নানা খারাপ এর বিরুদ্ধে দেখাতে পারি,  জীব জগৎ বিপন্ন,  বৃক্ষ জগৎ বিপন্ন,  সবাই ভারসাম্য হারাচ্ছি ভুল ব্যাবস্থার জন্য,  সেই সব যন্ত্রনা ও আতঙ্কের পরিস্থিতিকে বদলে দিতে বীরত্ব দেখানোর লোক নেই,  kকেবল  সমুদ্রের জল নিয়ে খেলবার ঝুঁকি নিয়ে বীরত্ব দেখাবে,  এইজাতীয় আরো নানা কাজ করে ঝুঁকি নিয়ে বীরত্ব দেখাবে !  বীরত্ব টা কি এতো সোজা জিনিস?  তার ব্যবহার কি এতো তুচ্ছ ভাবে হয়?  কেউ আবার অল্প সেদ্ধ খাদ্য খেয়ে,  কেউবা কুখাদ্য খেয়ে বীরত্ব দেখায় !  বীরত্ব কি এতো সহজ ব্যবহারের শব্দ?  

 

(  পঁচিশ )

     যাইহোক,  আমি সমুদ্রের কাছে অনেকের সাথে গিয়ে,  ফিরে আসার সময় দেখি একজন স্লিম ফিগার রূপসী বসে আছেন মাটিতে ঘাসে ভাবুক দৃষ্টিতে দূরের দিকে তাকিয়ে,  পরনে শাড়ি ! আমি পাস দিয়ে হেঁটে যাবার সময় পরিচয় করলাম ! উনি বেশী কথা বললেন না !  নামটা বলেছিলেন কিনা মনে নেই ! স্বামী দুবাইতে থাকে,  বললেন !  এটার সত্য মিথ্যা জানিনা ! কারণ এইসময় বা এই যুগে বাঙালিদের ভিতর একটা গড়পড়তা রেওয়াজ হয়ে গেছে কতকগুলো কথা,  " আমার স্বামী দুবাই থাকে !"  " আমার ছেলে মেয়ে BBA বা MBA হয়েছে বা CA পড়ছে ! "  "  আমার মেয়ে English Hons পড়ছে !"

     যাঃ শালা,   বাস্তবে দেখা যায় সে ইংরেজি অনার্স পড়েই যাচ্ছে,  কোর্স আর শেষ হয় না ! কারণ এটা English Hons তো ! ইংল্যান্ড পর্যন্ত হেঁটে যেতে যত সময় যায় তত সময় যাবে English Hons পাস করতে !  আরো আছে ! " আমার ছেলে ডাক্তারি পড়বে !" " আমার মেয়ে ইংরেজি পড়বে !" " আমার নাতি সৌরব গাঙ্গুলির কোচিং এ ক্রিকেট খেলে !" যাঃ শালা,  সৌরব গাঙ্গুলির কোচিং ক্যাম্পে কি লুডো খেলা না জুয়া খেলা হয় বলে লোক জানে,  সেই জন্য " আমার নাতি সৌরভ গাঙ্গুলির কোচিং ক্যাম্পে ক্রিকেট খেলে " বলতে হবে? 

     " আমার মেয়ে মমতা শঙ্করের কাছে নাচ শেখে " এটাও কেউ বলেন !  আচ্ছা,  মমতা শঙ্করের কাছে কি লোক রান্না শিখতে যায় বলে প্রচার আছে যে ওখানে কেউ গেলে নাচ শিখতে যায় বলে আলাদা করে বলতে হবে?  

     কেন,  শুধু " ক্লাস করে " বললে হয়না?

     কেউ বলেন,  " আমার মেয়ে এখন "জেসমিন টু হাইকু ডেড্ডিন কোম্পানি 'তে আছে,  এই চলে যায় আর কী,ভাবছি চাকরিটা ছেড়ে দিক,  ওকে পেয়ে কোম্পানি এতো খাটায় ! উঃ ! "

     কিন্তু আমি তো বাবু চোদ্দপুরুষেও ওই রকম কোম্পানির নাম শুনিনি গো,  ঐরকম নাম শুনে আমার মাথা যন্ত্রনা করছে গো বাবু !

     উঃ বাঙালি জাত কথাশিল্পী ! কিন্তু সাহিত্য দেখে ভয় ! তাহলে কথা শিল্পী কেন?  কারণ সাহিত্যের বাইরেও একটা কথা আছে,  তার নাম খেয়ালের মিথ্যা ! সেটাতেই বাঙালি পাকা !

     যাক, এবার আসি,  ওই ঘাসে বসে থাকা নারীর কথায় ! দেখে মনে হলো মহিলা অন্য পথগামী মহিলাদের ট্রাপে পড়েছে ! পাশাপাশি সেই সংকেত পেলাম ! কিন্তু এই মহিলাকে হাতে আনতে চেয়ে তারা ধীরে-ধীরে এগুচ্ছে তাদের নিয়মে ! তারপর নানা বিপন্নতা,  কঠিন ব্যাধি,  ইত্যাদি কোন না কোনো ঘুরপাক,  এইভাবেই এইসব উন্নত চিন্তার নারীরা চুপিচুপি অজান্তে ঢুকে যায় গভীর বিপন্নতায় ! কেউ -কেউ ইচ্ছে করে ঠান্ডা মাথায় যায়, তবে এই মহিলা মনে হলো অন্যরকম,  যেন নিজের মত একটা পরম গভীর বন্ধু চাইছে !

     এবার উনার স্বামী দুবাইতে থাকে কিনা জানিনা,  তবে উনি ওটা বললেন,  থাকলেও কী করেন জানিনা ! কিন্তু মেয়েরা যখন উচ্চারণ করে বলে যে তার স্বামী বিদেশে থাকে,  এমন ভাবে বলে যেন রাষ্ট্রদূত হয়ে গেছে বা তেলের খনি কিনেছে বিদেশে গিয়ে !

     এটা কোনো ভালোবাসা থেকে বলে না,  বলতে মজা পায়, সমাজে একটা দাপটের সচলতা তৈরী করা যায় সম্মানের অস্তিত্ব রক্ষার সংকটে !  

     যদিও  ওই নারীর কথাটা হয়তো মিথ্যে নয়,  কিন্তু আমি কিছু, -কিছু  বাঙালির স্বভাবটা তুলে ধরলাম !

     এবার কথায় - কথায় আমি জানালাম আমি কবি ! ওনার আগ্রহে আমি পকেট থেকে একটা বাংলা বিপ্লবী কবিতা পড়লাম ! আবৃত্তি করেই পড়লাম  পাণ্ডুলিপি ধরে !  ওনার অনুরোধে সম্ভবত দুবার কবিতাটা পড়েছিলাম !


     উনি বললেন,  " কবিতাটা আমায় দিন ! "

     আমি  বললাম,  "এটাতে আমার ফোন নম্বর আছে ! আপনার ফোন নম্বর কি আমি পেতে পারি?  কারণ আপনি কবিতা ভালোবাসেন,  তাই আবার পাঠাবো কবিতা, আমার বই পাঠাবো আপনাকে! " উনি বললেন,  " আমার ফোন আপনার লাগবে না ! আমি আপনাকে খুঁজে নেবো !" এই কথাটা এতো বিদুষী ব্যক্তিত্বের সাথে দেমাক দিয়ে বলে ছিলেন উনি,  সেই অনুভূতিটা আমার মনে ভাসছে ! জানিনা সে কোনোদিন আমাকে ফোন করেছিল কিনা,  কারণ আমার রিলায়েন্স একটা ফোন অচল হয়ে যায় ! CDMA ফোন  ! আর অন্য ফোনের যে নম্বর দিয়েছিলাম সেটা অফিস এর post paid নম্বর ছিল !  সেই নম্বর অফিস ছাড়ার পর নষ্ট হয়ে গেছে ! 

     তাহলে কি সেই নারী পৃথিবীর যেখানেই থাক আমার কবিতা পড়ে শরীর মন গরম করে মাঝে -মাঝে অনুভব করে সেই  স্মৃতি ! নাকি খোঁজ করছে আমাকে জীবনের অনেক কথা বলতে,  কে জানে ! এসব নারীরা জীবনে চায় জ্ঞান চর্চার সাথে দেহ মনের স্বাদ ! অতি অর্থ,  শুধু দেহ সুখ,  এসবে এদের সুখ নেই,  এরাই সত্যি প্রকৃত অর্থে অপ্সরি ! কিন্তু,  আমাদের চলমান লোভী ব্যাবস্থার সমাজ ও পরিবার প্রথা এদের উন্নত মননশীল দেহমনকে অস্থির করিয়ে নির্বোধ ও লোভী করে তোলে !

     না,  সে এখন কোথায় কী ভাবে আছে জানি না,  তার কথাও ভুলে গিয়েছিলাম,  এই লেখাটা লিখতে গিয়ে মনে পড়লো লেখার ধারায় !

     জীবন কি এভাবেই হেঁটে বেড়ায় সবার আড়ালে?

 

( ছাব্বিশ )

     জীবন মানে অনেক কিছু,  কিন্তু সেই অনেক কিছুর ব্যাপ্তি অনেক -অনেক দূর,   আমাদের কল্পনা ও নীরবতাকে আরো প্রসারিত করতে হবে !  কোভিড -উনিশ এর বিশ্ব মড়কে দেশে মানুষ যখন দায়িত্বহীন হয়ে উৎসবে ভিড় জমাচ্ছে,  তখন হতাশ হই,   আমাদের এতো শিক্ষা,  ডিগ্রী ও ভাবনার রূপ কত কদর্য ও তুচ্ছ !

     যেদেশে মানুষ বই পড়তে ভয় পায়,  কবিতা,  উপন্যাস, নাটক,   প্রবন্ধ  এসব নিয়ে থাকা তো দূরের ব্যাপার ,  স্কুল কলেজ পাঠ্যের বইটাও না পড়ে নকল করে পাস করে,  বা note পড়ে বা প্রশ্ন পত্র চুরি করে বা টাকা ঢেলে বা আরো অন্য প্রক্রিয়ায় কাজে লাগিয়ে  ডিগ্রী নেয়, ও প্রতিষ্ঠা চায়,   সেই দেশ-পৃথিবী-সমাজ সুন্দরবনের মত গৌরবের অবস্থানকে নষ্ট করতে চাইবে ! আমাজনে আগুন লাগলেও ভ্রুক্ষেপ করবে না,  অস্ট্রেলিয়ার বনে আগুন লাগলে বা লাগালেও নীরব দর্শক হয়ে সংবাদপত্রে সেই খবর পড়ে,  বৈদ্যুতিন মাধ্যমে সেই খবর দেখে একটু খানি " ইস " বলে আবার স্বাভাবিক হয়ে জীবনযাপন করবে ! আসলে নগর সভ্যতা যত বাড়বে,  মানুষের ইতরিয়তা তত বাড়বে,  আর বাকি প্রাণী জগৎ তত যন্ত্রনায় কাঁদতে -কাঁদতে অভিশাপ দেবে !  আবার এটাও বলে রাখি,  আমি একবার সুন্দরবনে একটি জায়গায় গিয়ে ইন্টারভিউ নিয়েছিলাম প্রায় আশি বছরের এক তাজা তরুণ শ্রমিকের কাছ থেকে !  শুনলে চমকে যেতে হয়,  তিনি বলেছিলেন,  " সুন্দরবনে যারা শ্রমিক তাদেরকে বাবুদের পরিবার তরকারি দিয়ে ভাত দিতোনা !  বাবুরা বলতো,  তরকারি দিলে শ্রমিক বেশী ভাত খাবে ! এইজন্য নুন দিয়ে ভাত দিতো !"  

     এই ছবি হয়তো সারা সুন্দরবনে সব জায়গায় না থাকতে পারে,  কিন্তু,  শোষণের তীব্রতা তো সুন্দরবনেও কম ছিলোনা,  এখনো আছে কম বেশী !  আমরা কিছু মানুষ জ্ঞান চর্চার নামে যদি কেবল পুস্তক,   খাতা,  কলম নিয়ে নিজেদের শ্রেষ্ঠতা দাবী করি,  তাহলে সেটাও আত্মপ্রতাড়না হবে !  

     যে -মানুষ গুলো শোষিত হয়েও হিংস্র না হয়ে সাবলীল হয়ে বেঁচে আছেন ,  তাঁদের উপস্থিতিটাই আমাদের কাছে বিস্ময়কর !

     তারাও সুন্দরবনের সবচেয়ে বড় গৌরব ও আশ্চর্য !

 

 ( সাতাশ )

     আর একটা কথা এখানে বলে পরের কিছু কথা বলে  পাঠক-পাঠিকা বন্ধুদের আপাতত রেহাই দেবো !

     সেটা হলো, চোরা শিকারিরা  সুন্দরবনকে কী ভাবে অসহায় করছে,  সেখানে কেন নীরবতা?   চোরা শিকারিদের পূর্বাপর পরিস্থিতি দেখে কেন তাদের ধরে বুঝিয়ে বিকল্প কাজ দিয়ে সুস্থ পথে নিয়ে আসার চেষ্টা করা হচ্ছে না?  ধ্বংসের পথগুলিকে খুলে রেখে কী করে শান্তি আনা যাবে সমাজে? এবার এখানে আর একটা কথা বলি, সুন্দরবন নিয়ে কথা বলতে -বলতে সুন্দরবনের নানা স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠানের সাথে আমার মিলিত হবার কাহিনী বলতে -বলতে একটা বিষয় এখানে আলোচনা করতে মন চাইছে  দেশে অনেক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন আছে, যে যাঁর মত কাজ করছেন,  কিন্তু,  মানুষ কী সব কিছু?  দুনিয়ার সব কিছুতেই কি শুধু মানুষের অধিকার?  মানুষ তো নিজে সব করতে পারে,  কিন্তু,  বাকি জীবেরা তো মানুষের দিকে তাকিয়ে থাকে একটু স্বস্থি নিয়ে বাঁচবার জন্য ! তাদের অনাহার,  শীতে কষ্ট নিয়েতো কোনো ভাবনা নেই উপযুক্ত প্রকরণে?  আমরা মানুষেরা সব কিছু দখলের মত বুদ্ধি ও নিজেদের আগ্রাসনের ইচ্ছে মেটাতে সেই ধরণের কাজ করার  অঙ্গপ্রতঙ্গ পেয়েছি বলেই কি আমরা অন্য জীবেদের ইতর জীব হিসেবে ভাববো?  আমাদের শিক্ষা ব্যাবস্থায় কত ভুল আছে,  মানুষ ছাড়া অন্য জীবদের ইতর প্রাণী হিসেবে উল্লেখ করা আছে,  সেই গুলোই শিশু বয়স থেকে আমরা পড়তে -পড়তে মাথাটা এই ভাবে তৈরী হয়েছে যে,  বাকি জীবগুলোর সুস্থ ভাবে বাঁচবার অধিকার নেই ! মানুষের ভোগ ও  সেবা করার জন্য যেন তাদের জন্ম হয়েছে পৃথিবীতে ! এমনিতেই সবসময় ওরা বিপন্ন, তার ওপর,  করোনা কোভিড -ঊনিশের আক্রমণে বিশ্ব মড়কে লক ডাউন এর সময়ে পথের কুকুর বেড়াল দের,  অন্য নানা পশু পাখিদের কী কষ্ট,  অসহায়তা ! স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাগুলো কেবল মানুষের জন্য কাজ করার নামে মানুষের চটুল ভোগ বিলাসের পথকে সমর্থন করছে,  আর অসহায় মানুষগুলো তাদের ভোগ বিলাসের উপকরণ পেয়ে  আরো -আরো লোভ ও আগ্রাসনের প্রতি ধাবিত হচ্ছে ! এটাকে বলছি সমাজের উন্নতি ! মানুষকে স্বাভাবিক,  নির্লোভ ও  জ্ঞানী করে তুললেই তো পুরো সভ্যতা উন্নত হবে,  সেটাই হচ্ছে না !  আসলে তাঁরাও দিশাহারা হয়ে যান,  মানুষের বিপন্নতায় ! তাই কিছু না কিছু করতে যে যেমন পারেন এগিয়ে আসেন ! কিন্তু শুধু মানুষের জন্য কাজ করাটা কি সত্যি অন্তরের ক্ষেত্রে তৃপ্তিদায়ক?  আমরা যদি একটু ভেবে দেখি,  এটাই দেখবো যে,  অসহায় মানুষ মানে মহৎ নয়,  তাই যদি হতো,  তবে একটা অসহায় মানুষ  সহায় হয়ে গিয়ে অন্য অসহায়দের জন্য কাজ করতো,  সমগ্র জীবজগতের জন্য নিজের সময় ও অর্থ খরচ করতো ! 

     অনেক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা,  অনেক কঠিন ঝুঁকি নিয়ে অনেক কাজ করেন,  কিন্তু তাঁরা আমার কথাগুলি ভাবলে হয়তো কেঁদে তাঁদের চোখ ভেসে যাবে !মানুষগুলো যদি আত্ম কেন্দ্রিক হয়ে থাকলো,   ওদের  থেকে ধন্যবাদ    নিয়ে কী হবে,  ওদের অন্তরের গভীরে আছে ভোগের জন্য একাডেমিক  শিক্ষা ও  বিলাসের দ্রব্য পাবার সংযোগ সূত্র নিয়ে  নীরব থাকা ! এইভাবে ওরা একে -একে আসে আর নিয়ে চলে যায় ! যে দরদ নেবে সে তো দরদ দেখাবে !  দরদ নেওয়াটা দেহের সুখ,  দরদ দেওয়াটা মনের সুখ ! মন বড় করাই তো শান্তির পথ ! আসলে আমি অসহায়  মানুষকে  ছোট করছি না,  তার  সুন্দর মানুষরূপকে খুঁজে দেখার পথ বলে দিচ্ছি ! অনেক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা আছেন নানা অসহায় জীবদের জন্য কিছু করছেন,  তাঁদের পাশাপাশি বাকি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাগুলি যদি নিজেদের মত কিছুটাও এগিয়ে আসেন অন্য প্রাণীকুলের জন্য পৃথিবীটা ভরে উঠবে আলোয় ! অন্যদিকে মানুষকে গড়ে তোলা হোক মুক্ত চিন্তা দিয়ে বিশ্ব অনুভবে ,  এটাই সব স্বেচ্ছাসেবীদের কাছে আমার প্রার্থনা !

     যে-মানুষ একটা আরশোলা,  পিঁপড়েকেও পা মাড়িয়ে দিলে কেঁদে উঠবে, পাড়ায় বা পথে  সম্বলহীন কুকুর বেড়াল পাখিদের জন্য ভাবতে গিয়ে নিজের খাবার থালায় বসে কেঁদে ফেলবে, তখনি তার শিক্ষিত হওয়ার বা ডিগ্রী নেবার অধিকার আছে,  পেট ভরে খাবার অধিকার আছে !  সেইভাবে ভাবনা করে,  বিচার বিশ্লেষণ করে কাজ করার কথা রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা ও সমাজসেবী সংস্থা গুলো ভাবছেনা বলেই দেশে বিশ্বে  এতো বিপন্নতা !  আমি বিশ্বাস করি,  স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাগুলো নিজেদের মত করে আমার এই চিন্তাগুলি আলোচনা করে কর্ম-প্রক্রিয়ার কিছু পরিবর্তন ঘটালে,  সারা পৃথিবী হবে সুস্থ !  তাঁদের মিলিত প্রয়াস ছাড়া একাজ  সম্ভব নয় !

     মনে পড়ে,  একজন অক্ষরজ্ঞান  কৃষক,  1998 সালে একটি অনুষ্ঠানে এসেছিলেন,  কমদামি ধুতি পাঞ্জাবী পরা   পঁচাত্তর বছরের খাড়া লম্বা যুবক ছড়া পড়ে জানালেন, তিনি সোজা মেয়ের বাড়ি যাবেন ! তিনি কেমন লিখেছেন সেটা কথা নয়,  কথা হোলো তিনি জ্ঞানের পূজারী,  অনুভবের সারথি ! তিনি বীরের মত ঘোষণা করে জানালেন,  পঁচিশ  বছর ধরে দারিদ্রের কারণে তিনি দৈনিক একবার খান ! কাজের সময় ছড়া লিখে বা বানিয়ে মাঠে বন্ধুদের শোনান ! তাঁর প্রাণ স্পন্দন জানিয়ে দিয়েছিলো,   " আমার নাম সুন্দরবন !" 

বিঃদ্রঃ : ঋদেনদিক মিত্রো ( Ridendick  Mitro ), কলকাতা,  ভারত (India),  পেশায় ইংরেজি ও বাংলাভাষার কবি- ঔপন্যাসিক-গীতিকার (পৃথক ভাবে দুটো ভাষায়,  অনুবাদ নয় ) একটি বিশ্বজাতীয় সংগীত "  World anthem --- we are the citizen of the earth, "  ও  " corona anthem 2020 official bengali song, " ( আগ্রাসনের নেশার সাথে হিংসা সীমাছাড়া ) প্রভৃতি বিশেষ ধরণের সংগীতের গীতিকার ! বিবিধ প্রকাশনী থেকে 2020 পর্যন্ত দুটি ভাষায় প্রায় 18-19 টি গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে !  দেশ বিদেশে বিভিন্ন পত্রপত্রিকার লেখক !


Share on Google Plus

About Shraboni Parbat

This is a short description in the author block about the author. You edit it by entering text in the "Biographical Info" field in the user admin panel.