মাতলো রে ভুবন : পিনাকী চৌধুরী

মাতলো রে ভুবন : পিনাকী চৌধুরী

মাতলো রে ভুবন 

পিনাকী চৌধুরী 

প্রকৃতির কি অনন্যসাধারণ সৌন্দর্য ! হ্যাঁ , মাতৃবন্দনাকে কেন্দ্র করে যেন প্রকৃতি আজ নব সাজে সজ্জিতা। তাই বোধহয় আনন্দে মেতে উঠেছে ভুবন! দিগন্ত বিস্তৃত সবুজ মাঠে আন্দোলিত কাশফুল তাইতো আহ্লাদে আটখান ! ভোরের নরম আলোয় প্রস্ফুটিত শিউলি ফুলেরা যেন আনন্দে আত্মহারা। হ্যাঁ, এভাবেই দিকে দিকে রটে যায় মহামায়ার আগমনীবার্তা। কিন্তু কে এই দুর্গা? হিন্দু শাস্ত্রে দুর্গা নামের ব্যখ্যা করা হয়েছে এইভাবে- ' দ' অক্ষর দৈত্যনাশক, ' গ' অক্ষর পাপনাশক, এবং অ-কার ভয় ও শত্রুনাশক। অর্থাৎ দৈত্য, পাপ,ভয়, বিঘ্ন,রোগ ও শত্রুর হাত থেকে যিনি আমাদের সর্বতোভাবে রক্ষা করেন, তিনিই হলেন দেবী দুর্গা।

পৌরাণিক উপাখ্যান অনুসারে কিন্তু কৃষ্ণকে দুর্গাপুজোর প্রবর্তক বলা হয়ে থাকে। ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণ অনুসারে সৃষ্টির প্রথম যুগে পরমাত্মা কৃষ্ণ বৈকুণ্ঠের আদি বৃন্দাবনে মহারাস মন্ডলে প্রথম দুর্গাপুজোর আয়োজন করেন। এরপরের কাহিনি টি আরো চমকপ্রদ! মধু ও কৈটভ নামে দুই অসুরের ভয়ে ব্রহ্মা দ্বিতীয় দুর্গাপূজা করেন। ত্রিপুরার নামে এক অসুরের সাথে যুদ্ধ করতে গিয়ে শিব বিপদে পড়ে যান এবং সঙ্কট থেকে মুক্তি পেতে তৃতীয় দুর্গাপুজো করেন। কুমারী পুজো হল দুর্গাপুজোর এক বিশেষ অনুষ্ঠান। কি সেই কাহিনি ? তন্ত্র শাস্ত্র মতে, অনধিক ষোলো বছরের অরজঃস্বলা কুমারী মেয়ের পুজো। মহাষ্টমীর শেষে, আবার মতান্তরে নবমী পুজোর দিন এই বিশেষ কুমারী পুজো অনুষ্ঠিত হয়। বেলুড় মঠের কুমারী পুজো খুবই প্রসিদ্ধ। আমরা যদি ইতিহাসের পাতায় চোখ রাখি, তাহলে দেখা যাবে যে, ১৯০১ সালে স্বামী বিবেকানন্দ বেলুড় মঠে প্রথম দুর্গাপুজো করেন।

সেই পুজোতে মা সারদা স্বয়ং মঠে উপস্থিত ছিলেন। যেকোনো দুর্গা মন্ডপে নবপত্রিকা প্রবেশের মাধ্যমে দুর্গাপুজোর মূল অনুষ্ঠানের প্রথাগত সূচনা হয়। কিন্তু এই নবপত্রিকা আসলে কি ? উত্তরের স্বপক্ষে বলা যায়, ন'টি গাছের পাতা, এগুলি হল - জয়ন্তী, কচু, কদলী, মান, ধান, হরিদ্রা, বিল্ব, অশোক, দাড়িম্ব।‌‌‌ নবপত্রিকার এই নয়টি উদ্ভিদ আসলে দেবী দুর্গার নয়টি বিশেষ রূপের প্রতীকরূপে কল্পনা করা হয়। দুর্গাপুজোর অপর একটি বিশেষ পর্ব হল সন্ধি পুজো। অষ্টমী তিথির শেষ ২৪ মিনিট এবং নবমী তিথির প্রথম ২৪ মিনিট অর্থাৎ মোট ৪৮ মিনিট অনুষ্ঠিত হয় এই সন্ধিপুজো।

এই সময়কালে দেবী দুর্গাকে তান্ত্রিক মতে মা চামুণ্ডা রূপে পুজো করা হয়। দেবীকে মোট ১৬ টি উপাচার নিবেদন করা হয় ! সত্যিই, নয়নাভিরাম সেই দৃশ্য! দেবীর ৫১ পীঠের অন্যতম মহাতীর্থ কালীঘাট। এখানেও সাড়ম্বরে পালিত হয় দুর্গাপুজো। তবে এখানকার বিশেষত্ব হচ্ছে, এখানে দুর্গা প্রতিমা আনা হয়না, মন্দিরের গর্ভগৃহে স্থাপিত মা কালীর মূর্তিকেই দুর্গার মন্ত্রে চামুণ্ডা দুর্গা রূপে পুজো করা হয়। এখানকার অপর উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য হল, মহানবমীর রাতে পান্তা ভাত দিয়ে  দেবী দুর্গাকে ভোগ নিবেদন করা হয়।
Share on Google Plus

About Shraboni Parbat

This is a short description in the author block about the author. You edit it by entering text in the "Biographical Info" field in the user admin panel.