![]() |
কিশলয় গুপ্ত'এর একগুচ্ছ কবিতা |
বাউলানা_৭০
শামিয়ানায় কী লুকালে- চাঁদ?
আঁচলেই গিঁট দিয়েছ সূর্য
কাজ করে না এই মেয়েলী ফাঁদ
বুকের ভিতর সব বালুচর দুর্জয়
স্বামীয়ানায় কোন প্রবাদি জল
ঝুল বারান্দায় একলা নাচে চেয়ার
আমার হাতে কলঙ্ক সম্বল
আঁধার ধরে ফালতু বাঁচে কে আর
প্ররোচনায় পা দিলেই কেলো
আলোচনায় পেঁয়াজ রসুন ঘোরে
এই তো সেদিন হাওয়ায় ভেসে এলো
স্বপ্ন নাকি মধ্যরাতে ওড়ে।
শামিয়ানায় ঢাকলে ঢাকো চোখ
অনিচ্ছাতে আকাশ দেখা মানা
স্বামীয়ানার বর্ষ পালন হোক
সমুদ্র চাই? আজকে একা যা না
৭১
শব্দে অভাব দেখা দিলে তুমিই ভরসা
কিছু অভিমানের কথা বলো
উঠান জুড়ে হড়পা বান নেমে আসে
হিসেবী ঘাসেরা গঙ্গা ফড়িং গোনে
আমি লন চেয়ারের অযোগ্য
মাটি মেখে চাষাবাদ কথা লিখি
বাজার ভরে থাকে তুমি বাক্যে
মাছ ওয়ালী চারাপোনা মাপে পাল্লায়
দরদাম চলতে থাকে দিনভর
তবু মাঝে মধ্যে শব্দে অভাব দেখা দেয়
তখন ঘুমের কাছে নতজানু হই
তখন উল্লাস ঘোরে হাওয়া ঘরে
বোতামে আটকে আছে শব্দ
তুমিময় হয়ে থাকে ছেঁড়া ফাটা বুক।
৭২
মা বলেছে মাসকলাই'এর ডাল খাবে
মাছের মাথা দিয়ে, ধনেপাতা যোগে
পুঁই শাক সাথে হলুদ কুমড়ো অবশ্যই
আরও দু'একটা ওদিক এদিক টুকরো
মেয়ে বলেছে একটু মাংস হলে হত না?
মেয়ের মা চুপ। ইচ্ছে থাকলেও সাহস নেই
আমি নিজের পয়সায় বাজার সরকার
যোগানদার রুপে বেশ খেয়ে পরে আছি
এদের আপনজন বলে মনে হয় অজান্তেই
যদিও আমি নিজেই নিজের আপন কি?
এসকল ভাবনায় দিন কেটে গেলে রাত
রাতের গভীরে নিজের ছায়া দেখতে পাই
৭৩
কী দেখাবে আমাকে- সম্পর্ক?
বেশ,দেখাও
কী শোনাবে আমাকে- প্রেমনাম?
ঠিক আছে,শোনাও
কী বলবে আমাকে- অসামাজিক?
একদম, বলতেই পারো
কিছু গান এমন থাকে
বার বার শুনলেও পুরানো হয় না।
আবার শুনতে গেলে
ফিরে এসে শুরু করতে হয় নতুন ভাবে...
৭৪
এক আকাশেই তোমার আমার বাস
তোমার বুকের বারো পোয়ায় আমার সর্বনাশ
এক মাটিতেই নামছে সমান ধ্বস
শিকড় জোড়া জন্ম কথায় কার কত সাহস
এক হাওয়াতেই তোমার আমার শ্বাস
তোমার উঠান জুড়ে থাকে আমার বাড়ীর লাশ
এক জলেই তোমার আমার গান
তবু ভিন্ন রঙে আঁকা হয় তোমার পিছুটান
এক চোখেই কাটছে সময় বেশ
আবার লিখি প্রেমিক আছে পুরুষ নিরুদ্দেশ
সব লিখেও অবিশ্বাসী চোখ
এবার তবে চিতায় আগুন সত্যি দেয়া হোক।
৭৫
অভিমানকে রাগ ধরে নিয়ে
যতই দুই দিয়ে যোগ করা হোক
ফলাফল কখনোই শূন্য হয় না।
মহাকাশের কত দূরে দৃষ্টি দিলে
সম্পর্কের আলো দেখা যায়
কেউ জানলে লিখতেই পারে।
এখানে প্রেম নামে পড়শী চোখ
কুয়োতলায় মন বোঝাতে গিয়ে
অপমান হয়ে ফিরে আসে পুরুষ।
জোনাকির গল্প ছাপিয়ে যায়
পেরিয়ে যায় রাতের সীমারেখা
আর অভিমান পড়ে থাকে বালিশে।
নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করি,
এক হাতে সামলাই গোটা সূচীপত্র
৭৬
রবি ঠাকুরের 'অতিথি' গল্প পড়া আছে?
বিদ্যুৎ চমকালে সংসারী দাদা বাবুরা
চপ,মুড়ির গল্পে মজে যায়। এবং
বৃষ্টি পড়লেই সংসার সংসার খেলে
এই নাকি ওদের ঝুলির একমাত্র প্রেম।
তারপর সকাল হলে ভাঙাচোরা বিছানা
কুঁচকানো চাদর থেকে অসভ্য দাগ তুলে
অথবা আত্ম প্রতারণার নামাবলীতে
সব পুরুষত্ব ঢেকে সংসার গোছায়।
বেলা বাড়লে ডাল ভাত, মাছের ঝোল
হলুদ বেশী, নুন কম,ঝাল পরিমাণ মতো
মাপতে মাপতে রাতের দিকে হেঁটে যায়।
দেখি,আর- আরও বেশি তারাপদ হয়ে যাই।
৭৭
এই ভাবে হাসতে হাসতে মরে যেতে পারলে
চারটি লেখা রেখে যাবো।
আমাকে কাঁধে করে বয়ে নিয়ে যাবে।
মাটিতে মিশে যাবো নাকি আকাশে উড়ে যাবো
নাকি জলে ধুয়ে যাবো মাথা ব্যাথা নেই
কে বুঝবি- বুঝে নে
বিষয় সম্পত্তি বলতে চোখের দৃষ্টি
বুকের শ্বাস, চূড়ান্ত প্রেম-
অস্বীকার করার বুকের পাটা কার
আমার মতো ভালোবেসে দেখাক কেউ।
৭৮
ক'টা শরীরের বিনিময়ে একটা মন?
কত শব্দের বিনিময়ে একটা বাক্য
অক্ষরেরা নিশ্চিত ভালো জানে।
আমি শুধু জানি- উত্তম পুরুষে হাওয়া
দখিনের জানালার ওদিকে ঘাপটি
মেরে আছে অনেকগুলো বছর।
জানালা বন্ধ বলে পরিস্কার ঘর।
ঘূণ পোকার দাপাদাপি বড় বেশী
কতদিন বন্ধ থাকবে কাঠ
এই কাঠে চিতাও সাজানো যায় না।
৭৯
প্রেমপত্র ছিঁড়ে ফেলার মতো
সম্পর্ক ছিঁড়ে ফেলি
তারপর রাতের ট্রেনে বীনা টিকিটে
সমুদ্র পাড়ে চলে যাই।
একবারও পিছন ফিরে না তাকিয়ে
বালুচর মাড়াই দুই পায়ে
দুই হাতে এবং পুরুষালী বুকে
ত্বকে ত্বকে জ্বলে সমুদ্র নুন।
সংসার আগুনে পড়শী পুড়ে যায়
ডোম হতে আপত্তি আছে বলে
ঠিকানা অস্বীকার করি।
তালা ঝুলিয়ে রাখি দরজায়।
আবারও প্রেমপত্র ছিঁড়ে ফেলি
সমুদ্র আমাকে দুই হাতে ডাকে।
0 Comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন