![]() |
উদয় সাহা |
সমুদ্র যতই ভেঙে ফেলুক সাঁকো
সবটা জুড়ে তুমিই জেগে থাকো...
(১)
আমার আপাদমস্তক নাগরিক বর্ম।ভেতরে আবহমান গ্রাম্যজীবন। রাতের অন্ধকারে এখনো জ্বালাই মোমবাতি। সেই মোমের আলোতে ফুটে ওঠে কাদায় আটকে যাওয়া এক নৌকোর কথা। আকুল তৃষ্ণায় আগুন চোখে এক মাঝির কথা। আমার যাতায়াতের পথের পাশে এখনো বেঁচে আছে ছবি না হওয়া ছবি সব--- ঘুঘু ডাকা দুপুর, পলাশের কুঁড়ি, ব্যাকরণহীন পুকুরপাড়, জেলে বৌ, অলীক জ্যোৎস্না, ঝাঁকি জাল। সেই মাঝি দুপুর হলে চাঙরায় বসে খবরের কাগজ পড়ে। আমার লিখতে না পারা কবিতা আর সেই বুড়ো মাঝির প্রিয় স্বপ্নগুলোর মধ্যে একটা অদ্ভুত মিল আছে । আমরা দু'জনেই ব্যর্থ। আমরা বিলাপ করি সকলের অগোচরে। আমরা চেষ্টা করছি সাধ্যমত শীতের পোশাক কিনবার।
(২)
'যীশু চোখ মারলেন শ্রীকৃষ্ণকে... ' আমাদের উঠোনে কালো মেঘের মহড়া চলে সারাবছর। একটা আপোষ, একটা বোঝাপড়া, একটা বন্ধুত্ব এখানে রামধনুর মত। নান্দনিক। আনন্দীবৈঠা। শ্যাম্পেনের ফোয়ারায় প্লাবিত হয় শীতের সব বকুলফুল। লক্ষণরেখার কনসেপ্ট থেকে বছর শেষে কোন সুদ আসেনা। তাই চোরকাঁটা লাগবার ভয়। আমরা প্রত্যেকেই নিজেদের জন্য তৈরি করেছি ভিন্ন রঙের ভিন্ন ঢঙের লাইন অব কন্ট্রোল।
(৩)
আমাদের বাড়িতে দুধ দিয়ে যায় যে ' মাসি ', তিনি কী সুন্দর করে বাড়িতে এসে মা-কে ডাকেন, " মউসি দুউউধ... " আর আমার মা সেই সুরেই প্রত্যুত্তর দিয়ে বলেন, " আয়ি মউসি "...
তবুও থামেনা গুলির আওয়াজ। বন্ধ হয়না ভাঙা সেতুর গান।আসন পেতে রাখা খাবার জায়গায় হঠাৎ মেঝেতে কেউ ঢেলে দেয় কলসির জল। বুকের বাম দিকে ভেজা পাটের গন্ধ, চড়ুইভাতি। বুকের ডান দিকে পোড়া ডিজেল, বিস্ফোরক বারুদ.... একটা ককটেল।
(৪)
বৃষ্টির নিমিত্ত ছিল। শান্ত দৃশ্যে ভিড়ে গেছে রক্ত। আর জলে মিশে গেছে দুধ। আমরা হয়ে উঠছি প্রাপ্তবয়স্ক। কোলবালিশ একটা ভালোলাগার বস্তু । তাই আমাদের দু'পাশে দুটো নৌকো। আমরা জানিনা কোন নৌকোতে রাখবো দেশের মান, দেশের মেয়ে, দেশ মা...
(৫)
শিক্ষক মশাই কালো বোর্ডে বেশ বড় বড় করে দুটো বাক্য লিখলেন--মানুষ মারা যাচ্ছে ; মানুষ তো মারা যাচ্ছে রোজই। এরপর প্রবল হাওয়া শুরু হয়। সব জানলা দিয়ে শুধু হাওয়া আর হাওয়া। তুফান আছড়ে পড়ে। শিক্ষক মশাই এবার বোর্ডে লেখেন ---- লবণ আন্দোলন। আমাদের কপালে গুড়ো গুড়ো নুন। শক্ত হয় আমাদের মুঠো।
(৬)
আঙুল তুলে কথা বলে কালো কোট।আমরা ডুবে যাই পালং শাকের খেতের মায়ায়। তবু--
"জননীর কাঠের ভিতরে
রক্ত পড়ে।
উল্লাসের আছে কিছু বেড়া।
হেমন্তের চেনাঘর আছে আধো টেরা।
অনন্ত বাহিরে
রক্ত পড়ে।
রক্ত পড়ে দুর্গাপ্রতিমায়।
এখন সহজে, সবই যায় ----
রক্ত পড়ে দুর্গাপ্রতিমায়। "
দূর থেকে শাহজাহান দেখছেন তাজমহল। আর আমি দেখছি বৈরাগী সাধু চলেছেন নিকটস্থ মসজিদের দিকে...
0 Comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন