![]() |
নিঃশব্দ আহামদ |
একটা আরশোলার ওড়াওড়ি দেখে দেখে ঘুমবিরক্ত রাতের বেড়ে চলে বয়স৷সে কবে থেকে চেষ্টা চলছে ঘুম আয়োজনের নামে এপাশওপাশ চেষ্টা৷কখনো জবুথবু লেপ মুড়ে থাকা,কখনোবা বসে থাকা৷পুরো প্যাকেট সমেত সিগারেট শেষে আর বাকি আছে তিনটি৷ছাই গন্ধে উশখুশকো এক অনুভুতি৷বুকের ওপর শাদা কাগজের প্যাডখানি রেখে এবড়োথেবড়ো চালিয়ে চলে কলমের টান৷কখনো ভাবছে একটা লিখে ফেলি সুসাইড নোট!যখন ভোর হবে অনিমা নামের তিনটি অক্ষরের ভেতর পৃথিবী ত্যাগের সমস্ত সম্মোহন রেখে পলায়ন হয়ে যাবে অনিন্দ্যের সমস্ত প্রতিদিনকার রাত৷
মানুষের ভেতরটা নিভৃতে কেঁদে চলে যার কিঞ্চিৎ প্রকাশ হয়তো চোখজলে যতোটা প্রকাশ পায় তার চেয়ে বেশি স্রোতে দুমড়ে মুচড়ে যায় ভেতরদেশ৷সে এই ক'দিনে অনিন্দ্য ভালো বুঝতে পেরেছে৷খুউব ইচ্ছে করে ঘুমোতে গেলে আর ঘুম হয়না,অনিমা এখন কি করছে ঠিক?তার চোখের গগলসে এখনো কি ঝরে পরছে বিম্বিত আনন্দ,উচ্চাসের৷লিখে চলছে কি রাত জেগে কোনো কবিতা৷ইতিউতি ভাবনা চাপিয়ে রাত বাতি জ্বলে গেলে অনিন্দ্যের খুউব কান্না হয়৷অনিমা ও কি বুঝে গেছে এভাবে রাতের পর রাত জেগে জেগে একদিন নিশ্চিত মৃত্যুর দিকে এগোচ্ছে অনিন্দ্যের সময়?প্রশ্নবিদ্ধ কতেক অনুভুতির প্রার্থনা রেখে বারবার তাকিয়ে থাকে নিঃসাড় দেয়ালময়৷টিকটিকি দূ'পালাক্রমে উর্ধ্বগামি হবার বারংবার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে একই বলয়ে৷জীবনটা একটা বলয়ের ভেতর যেনো কেটে গেলো অযুত ক্লান্তি,নিঃসঙ্গতার নামে এতোটাকাল৷এসব ভেবে ভিজে যায় চোখ সহসায়৷
মানুষের ভেতরকার কোনো শক্তি থাকে যা তাকে বেঁচে উঠতে ভুমিকা রাখে আবার এমনও শক্তি থাকে স্বেচ্ছা মৃত্যুতে এই যে নিয়ত শোকগ্রস্থতা কাটিয়ে উঠার মোক্ষম পদ্ধতি হিশেবে৷এপিটাফ খসড়া রচে চলে অনিন্দ্যও কারণে অকারণে সব রাতে,হয়তো অনিমা যখনি ই নিঃস্বর থাকে ,অনেক ডাকাডাকি শেষে অনিমার কোনো ইশারা না পেলে অনিন্দ্যের মনে হতে থাকে এই পৃথিবীতে বোধয় আর কোথাও এতোটুকু অপেক্ষার শেষতকও আর নেই৷হতাশার গানে জেগে ওঠে পলায়ন প্রার্থনা৷যদি আসন্ন সকালটিই শেষ কোনো সকাল হয় আর দ্যাখা হবেনা অনিমার চোখের কাজলে আঁকিবুঁকি টান,স্লীভলেসে উচ্ছল কোনো স্কুল ঘর,দুপুরের এপল সিডসের মিশেল খাবারের আনন্দ৷আরমান,মুক্তা,তুষি নামের অনবদ্য ভরাট উচ্চারণে ডেকে যাবে না আর কোনো বিকেলঘরের অলস বিশ্রাম৷
কাকভোরে জাগবেনা ভেবে আর কোনো চোখে পুরোটা দিনের একটা সারসংক্ষেপ,কেমন অসহায় হয়ে উঠে চারপাশ,এই যে বিছানাঘর যেনো ছেড়ে যেতে থাকে সমস্ত উষ্ণতা,শীতার্ত এক অনুভুতি ছড়িয়ে গেলে সারা শরীরে ভেসে উঠে অনিমা মুখ,পরপর যেনো বলে যাচ্ছে ,ঘুমিয়ে যা সোনা,ঘুমিয়ে যা,আমার কোনো কথায় রাখিস না!শরীর খারাপ করবে যে৷এই স্বরগুলো কেমন দ্যোতনা করে ফিরে ,সমস্ত অন্ধকারের ভেতর যেনো এতোটুকু উদ্ভাসে জাগে একখানি মুখ যেখানেই যাপনের তাবৎ সুখ লিপিবদ্ধ করে গেছে ঈশ্বর অনিন্দ্য নামে অপার কৃপায়৷ভাবনার সব ফুল এভাবে ঝরে ঝরে মৃদু মন্থর গতিতে রাত এগোতে থাকে কাঁটাছেঁড়া জীবনের কাছে,যেখানে ছিলোনা কোনো আনন্দ,শুধু ব্যথাবিদ্ধ এক হৃদয় খুঁজেছিলো এতোটুকু স্বস্তিসম্ভার অনিমা মুখে৷
অনিমা যেনো এতোটাকাল এখানে ছিলো,এখন কেমন করে তার একটা স্কুলঘর হলো,তার সান্ধ্যপথে এখন আমার অপেক্ষা জমে থাকে!এই ঠান্ডা রাতে লাল শাল জড়িয়ে পথময় ত্রস্ত পায়ের ছন্দ তুলে এগিয়ে যাচ্ছে পথ,সামনের কোনো বাঁকে সে উঠে যাচ্ছে ,একটু পরই আবার সিঁড়ি মাড়া আওয়াজ,সে একাকি ঘরে এলোমেলো ছড়িয়ে আছে তার বিন্যস্ত চুল বেখেয়ালে৷
হয়তো সে ভেবেছে কেবল সময় যাপনের একটা বিনোদনের মতো রোজকার এই কথালাপ,অথবা কোনো গল্পের প্লট আশ্রয়৷সে ক্ষোভে,বিদ্রুপে,অভিমান,অনুযোগে সে সরে যেতে থাকে পথ বদলের মতোন,অথচ আমি পথ বদলের গান শিখতে পারিনি বরং অনিমার অস্ফুট কথা পড়ে পড়ে শিখেছি অপেক্ষা পাঠ,ভাবতে থাকে অনিন্দ্য৷
কখনো অনিন্দ্য ভেবে চলে এই নো ম্যান্স ল্যান্ড অতিক্রম করে দীর্ঘপথ পাড়ি জমিয়ে ক্লান্ত হয়ে দুপুর রোদে জেগে উঠবে অনিমার শহর৷কল্পনাশ্রয় আর ভবিতব্য অসাড় ভাবনা যাই বলিনা কেনো,অনিমার বুকে বুক রেখে গ্রীবা ছুঁয়ে ক্রমাগত কেঁদে যাবার কোনো তাড়না তীব্র হতে থাকে আমার ভেতর,নিজ থেকে এসব ভাবতে থাকে অনিন্দ্য৷স্নানঘর থেকে ভেজা চুলের ঘ্রাণে মদিরতা এনে কবে যে সয়লাব কোনো মাতাল গন্ধাকুল দিনে যুগপৎ রচে ছিলো অভিসার ,সে ভাবনায় আঁধারে হারিয়ে গেছে জীবনের এতোটা সময়৷
এভাবে ঘড়ির কাঁটার টিকটিক শব্দে বাড়তে থাকে রাত,জড়োসড়ো হয়ে চাপিয়ে নিলে লেপ অনিন্দ্যের কেমন শীত শীত লাগে,না ,এ শীত কিন্তু ভেতরের কোনো কুয়াশার ,যেখানে শূন্যতার কোনো অতৃপ্ত বুকে শুধূ নির্গত হতে থাকে বেদনার নীল ঘাম,তা অস্থিমজ্জ্বায় যেনো ছড়িয়ে ছিটিয়ে গেছে এবার নিশ্চিত একটা অসুস্থতার প্রকোপ তাকে আড়ষ্ট করে৷এটাও পুরনো কোনো রোগের মতো ,তাকে আর ভাবিয়ে তুলেনা এই পীড়ন৷কতোকাল এ চেম্বার ও চেম্বার ঘুরে গিলেছে হরেক ঔষূধের ডোজ তার ইয়ত্তা নেই৷এখন বরং বিষাদ গরলে এমনো রোগের প্রাদূর্ভাব বেড়ে গেলে এভাবে কাটিয়ে দিবে তবু ঔষুধ না৷আর তা ভেবেও কেনো জানি দূ চোখ সমানে ভেসে যায় জলের ফোয়ারায়৷এই অনিমা,তুমি দ্যাখছো না,এখনো জেগে আছি!খুউব কষ্ট হচ্ছে আমার,এসব বিড় বিড় করতে তার শ্রবণেন্দ্রিয়ায় সাড়া পড়ে যেনো অনিমার উষ্ণ কোনো নিঃশ্বাস কিংবা স্বর,এই তো পাগল,আমি আছি,তোর হাতপাশে,দ্যাখ ছুঁয়ে দ্যাখ৷অশরীরি না তো!
সম্বিৎ এলে ভালো লাগে ,ভেবে এমনো কল্পবিলাস,কিন্তু বাস্তবতার নিরিখে যে এখানে ছিলো আয়োজন,অনেকটা পথ হেঁটে যাবার,হেঁটে হেঁটে ক্লান্ত হবার৷দিনশেষে বিকেল পথে কোনো অন্ধকারে আড়ালে জড়িয়ে থাকার অনেকটা ক্ষণ,একাকার হবার আনন্দ৷
অনেকটা তন্দ্রায় হারিয়ে গেলে চোখ পরতে নেমে আসে একটা ভোর,কাকসব কা কা রবে উড়ে যাচ্ছে পশ্চিমাকাশে৷একটা জংশন৷ভোরের কোনো ট্রেনে এই একটা শহর৷এখানে দূরবাসি একটা মুখের অপেক্ষা ৷দূপুর গড়ায়৷বিকট হুইশেলে থেমে গেছে একটা অটো৷প্রৌঢ় চালক খুলে দিলে বামের কোনো দরোজা,নেমে আসে অনিমা৷চোখে ঝুলে থাকে গগলস৷বেশ মানিয়েছে স্লীভলেসে আজ তাকে৷সদ্য গোলাপের পাঁপড়ির মতো ওষ্ঠাধরে এখনো জমে আছে চুম্বন সুষমা৷তারপর অনিন্দ্য বাড়ালেই পা,জড়াজড়ি বুকে থেমে থাকে অনেকক্ষণ নিঃশ্বাস৷নির্বাক ,গোঙানি হয়ে গেছে অনেকটা৷
ঘুম ভেঙে গেলো বিকট শব্দে৷দূরে কোথাও কুকুরগুলো সমানে ডেকে যাচ্ছে৷আষাঢ়ে রাত৷শোঁ শোঁ শব্দ তুলে বাতাস৷এমন আঁধারি রাত ,ভয়ার্ত চারিপাশ৷কোথাও যেনো বিলাপের আওয়াজ শোনা যাচ্ছে৷অদুর থেকে কোনো কান্নার
শব্দ গোঙানি হয়ে ফিরছে অনিন্দ্যের৷অনেকক্ষণ জানালার গ্রীল ধরে দাঁড়িয়ে থাকার পর শার্সি থেকে জলের ঝাপটা এসে লাগে মুখে৷মোমের আলোয় সে জল আঁটালো হয়ে কেমন অস্বস্তিভারি করে তুলছে৷
ভাবতে থাকে অনিন্দ্য৷ঠিক কি সম্পর্ক অনিমার সাথে তার৷যদি না এতো এতো কান্নার রাত পেরোনোর পরও গড়ে না উঠে একই আকাশ,একই ছাদ৷অনিমা টা অনেক দূরে৷সস্তা প্রেমের গল্প বুনে বুনে আর যাই হোক
জীবন চলেনা৷বরং ভুলে যাবো৷তবু ভুলে থাকা যাচ্ছেনা৷তার কান্না পায়,এতোটুকু স্পর্শের৷কখনো অস্থির হয়ে পড়ে প্রবল কামনায়৷তবু অনিমার পথ ফুরোয় না,ডিসেম্বরও আর আসেনা৷বড়দিনে স্কুল ছুটি পড়বে৷দুজনে দূরে কোথাও যাবো,শরীরে শরীরে জমে যাবে কোথাও সংসার৷অনিমা টা কে বুঝায় যায় না,দু সন্তানের জননী৷
অনিন্দ্যের মনে হতে থাকে অনিমা এখনো দু কিলো সাইকেল চালিয়ে আসছে৷তার রূপ সৌষ্ঠবে ও পাড়ার ছেলেরা হা হয়ে তার রূপ চাখছে৷ভাবনার বিস্তৃতি শেষে সেও যেনো তাদের সম্পর্কের ভেতর একটা সারসংক্ষেপ আঁকে৷খুউব অসম এক প্রেম৷দো টানা প্রেম৷তবু অনিমাটাকে খুব ভালোবাসি,ভাবতে থাকে অনিন্দ্য৷
অনিমা এখন খুব ব্যস্ত৷সারাদিন স্কুল,পরীক্ষা,জিরক্স ইত্যাদি৷তাই অনিন্দ্যর সাথে খুঊব একটা কথা হয়না৷
বুকদেশে তার চিন চিন করে উঠে ব্যথা৷অনিন্দ্যের কান্নাভেজা চোখ দুটো বেশ সুন্দর৷সব ছেড়ে ছুঁড়ে তার কাছে চলে যাওয়া যায়৷আবার ভাবে অনিন্দ্যও তো আসতে পারে৷কেনো আসেনা সে৷দুজন দু দেশর হয়েছে তো কি হয়েছে৷তাই বলে প্রেমে,কামে,অনুভবে থাকবে কেনো বারণ৷ঝিমোনো দুপুর ঘরে ঢুলতে থাকে অনিমা৷
মুঠোফোনটি হাতে নিয়ে অনিন্দ্যকে ফোন দিবে ভাবে৷তা আর হয় না৷
অনিন্দ্য রাত বিরাতে হাঁটে৷রাতের আঁধারি শরীর তার খুউব প্রিয়৷শূন্যতার একটা সহযোগ আছে আঁধারের সাথে৷এসব রাতে সে হেঁটে হেঁটে সংসার করে,বাচ্চা এক বাবা বাবা বলে ডাকে৷চাঁদের হাসির মতো সফেদ দাঁতে কখনো তার পাশ ধরে হাসে৷একসাথে সমুদ্র বিহার হয়৷বেলাভুমি তীর ধরে অনেক দুর যেতে যেতে গ্রীবায় ঝুলে থাকে অনিমার ওষ্ঠাধর৷কখনো অনিন্দ্য ভাবে এভাবে আর হাঁটা হবেনা,কোথাও বিচ্ছিন্ন মৃত্যু ঘটে!জাতির শোক ঘটে৷সরকারি ঘোষণা আসে শোকের৷এমনও মৃত্যু আসতে পারে,কিংবা দাগি আসামি হতে পারে ,সংশ্লিষ্টতা ছাড়া৷সব ই সম্ভব এখানে৷আবার কখনো অনিমা কে হারিয়ে ফেলে৷যেমন গুজবে একটা মানুষের প্রাণ সংহার করেও যেমন বিবেকের বালাই থাকে না এমনো আশংকা হতে থাকে৷তারপর হাঁটতে হাঁটতে ক্লান্ত হলে ভরা মাঠে শুয়ে পড়ে অনিন্দ্য৷রাতের করোটিতে ঝুলে চাঁদ৷আকাশ সভায় ঘনীভূত নৈঃশব্দ্য৷সে জলের শব্দ শুনে অকস্মাৎ৷পাশ ফিরে তাকাই৷জটলা দেখে৷ছোট একটা নদী ওখানে৷ঝিলের পাশ ধরে শান্ত স্রোত৷হাঁটতে থাকে,আরও সামনে৷অনিন্দ্যের টলছে পা৷ঘুম ঘুম পাচ্ছে খুউব৷পশ্চাদগামি পা৷ভন ভন আকাশ,ঘুরছে টালমাটাল৷এমন তো হয়নি কখনো আগে৷মাথার খুলি ভেদ হয়ে রক্ত আসে৷ধারা হয়ে বেরিয়ে আসে৷অনিমা হাসে,তার চোখে৷অনিমা,এসো৷আর অপেক্ষা না৷আমার পিঠ চাপড়াও৷চুলে বিলি কাটো৷আমার আর এগোনো যাচ্ছেনা৷তোমার পথে৷এসো৷অনিমা এসো৷কারা যেনো পালিয়ে যাবার শব্দ শুনে৷মাঠে জুয়া বসে৷সেতুর নীচে মদের আসর৷চোরাচালান হয়৷ভাগবাটোয়ারার দ্বন্দ হয়৷কারও কারও স্বার্থদ্বন্দে মৃত্যু হয়৷মানুষ গুলো পালাতে থাকে৷অনিন্দ্য হাসে৷অনিমা ,ডিসেম্বরে আর আসা হচ্ছেনা৷নিথর হয়ে পড়ে থাকে লম্বাকার অনিন্দ্য শরীর৷সকালের অটোতে খবর হয়ে উঠে পাড়া৷আততায়ি মৃত্যু এক৷
0 Comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন