![]() |
মৃদুল শ্রীমানী |
সেই কবিতাটি ভারি মনে পড়ছে। ছোটো ছোটো দুটি ছেলে। গরিব মা বাপের সন্তান। ভালো নয়, একেবারেই ধান হয় নি। তবু কোনো মতে তাদের বাবা দুখানি ছিটের জামা কিনে এনেছেন। মধু ছোট। বিধু সামান্য বড়। কিন্তু দুজনেই তো আসলে ছোটো। আসন্ন শারদোৎসবে ওরা আনন্দের স্বপ্ন দেখছে। মায়ের কাছে বাচ্চারা আবদার করল বাবা কি পোশাক কিনে এনেছে, তা দেখাতে। সামান্য দুটি ছিটের জামা মা দেখালে মধু খেপে উঠল। কেঁদে বললো রায়বাবুদের গুপি, পেয়েছে জরির টুপি, ফুলকাটা সাটিনের জামা। রাগ করে ঘোষণা করলো ওই জিনিস তারও চাই। মা বললেন - গরিব যে তোমাদের বাপ। এবার হয় নি ধান, কত গেছে লোকসান, পেয়েছেন কত মনস্তাপ। মধু বুঝল না। বুঝতে চাইল না। গিয়ে দাঁড়াল রায়বাবুদের দোরে। নিজেকে রায়বাবুদের দয়ার ভিখারি প্রতিপন্ন করতে শিশুটির আত্মসম্মানে বাধল না। কিন্তু রায় বাবু কি করলেন? নিজের বাড়ির বাচ্চাকে নির্দেশ দিলেন মূল্যবান পোশাক দরিদ্রের সন্তানকে দান করতে। বাচ্চা গুরুজনের নির্দেশ পালন করল। মধু নিজের বাপ মায়ের সম্মান ধুলোয় লুটিয়ে তা অম্লানবদনে গ্রহণ করল। এরপর আরো সাংঘাতিক। মধু সবাইকে নিজের ভিক্ষালব্ধ জমকালো পোশাক দেখিয়ে নিজের সহোদর দাদা বিধুর অতি সাধারণ পোশাককে হেয় করে বেড়াতে লাগল। মধুকে পোশাক ভিক্ষা দিয়ে যে রায়বাবু প্রকৃত ভাল কাজ করেন নি, এমন একটা বোধ আমার মধ্যে চারিয়ে দেন কবি। বাচ্চা ছেলেকে ভিক্ষা দেব, না, কি করব, এ নিয়ে সংবেদনশীল মানুষের মনে ঝড় তোলেন কবি। রায়বাবু মোটেও ঠিক কাজ করেন নি। মধুকে তিনি নষ্ট হয়ে যেতে দিলেন। সেই বোধের কথা স্মরণ করান কবি, যে বোধ বলে সম্মানবোধ আর মর্যাদাবোধই হল মানুষের সেরা সম্পদ।
0 Comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন