![]() |
ঈদারুল ইসলাম |
অফিসের কাজের ফাঁকে একটু অন্যমনস্ক হয়েছে, ঠিক এমন সময় 'তানজীম' সেক্রেটারিয়াল ডেস্কে রাখা পেন'টা হাতে নিয়ে খেলছে আর কিছু একটা ভাবছে ! খেলতে খেলতে হঠাৎই তার নাকে যেন একটা চিরপরিচিত পারফিউমের গন্ধ ভেসে আসে ! দু-চোখ বুজে গন্ধের উৎস এবং ঠিক কোথায় শেষ বারের মতো এই গন্ধ শুঁকেছিল তা মনে করবার চেষ্টা করছে, এমন সময় একটা ভীষণ পরিচিত ঘাম আর পারফিউম মিশ্রিত নেশা জাগান মৃদু গন্ধ বাতাসে ভেসে আসতে থাকে। ধীরে ধীরে তানজীম উপলব্ধি করতে পারে যে, এটা তার মস্তিষ্কের কোনো এক সংবেদী স্নায়ুতে জমে থাকা অনুভূতি যা বাস্তবের আঙিনায় কড়া নাড়ছে। ক'দিন ধরেই তার মনটা ভালো নেই। 'শিতাব'-এর সাথে তার দূরত্ব ক্রমান্বয়েই বৃদ্ধি পাচ্ছে। স্বামী শিতাব একটা কোম্পানির এরিয়া ম্যানেজার, রোজই বাড়ি ফিরতে ফিরতে অনেক রাত হয়ে যায়। বিয়ের পাঁচ বছরের মতো হলেও দিনে দিনে তাদের সম্পর্কের মধ্যে একটা ব্যবধান তৈরি হয়েছে; দু'জনই কেমন যেন খিটখিটে স্বভাবের হয়ে গেছে। কেউ কাউকেই সহ্য করতে পারে না। দিনে দিনে দু'জনের মাঝের দূরত্বটা যেন বেড়েই চলেছে। বেশিরভাগ রাতেই একে অপরের থেকে উল্টোদিকে মুখ ফিরিয়ে ঘুমিয়ে পড়ে।
এদিকে কিছুদিনের মধ্যেই সোশ্যাল মিডিয়ায় পরিচিত এক বন্ধু তার কথা বলার সাথী হয়ে ওঠে। ক'দিনেই সে তার হৃদয়ে একটা জায়গা করে নেয়। তার সাথে কথা বলতে, মনের যন্ত্রণা এবং হৃদয়ে জমে থাকা অনুভূতিগুলো প্রকাশ করতে কেন ভালো লাগে তা সে নিজেই বুঝে উঠতে পারে না। কিন্তু কেমন যেন একপ্রকার হ্যাবিচুয়েটেড হয়ে গেছে ! তার দেয়া উপদেশ যেন আজকাল কোনো মসিহার চেয়ে কম মনে হয় না !
অকস্মাৎ তানজিমের বুকের ভিতরটা কেমন যেন মোচড় দিয়ে ওঠে ! টেবিলের উপর রাখা সামনেই পড়ে থাকা সেলফোনটি হাতে তুলে নিতেই ডেস্কটপ স্ক্রিনে স্পষ্ট হয়ে ওঠা শিতাবের ছবিটির দিকে চোখ যেতেই,স্মৃতির পাতায় পাতায় ভেসে ওঠে দু'জনার ভালোলাগা মুহূর্তগুলো। তৎক্ষণাৎ চেয়ার থেকে উঠে ওয়াশরুমে গিয়ে চোখে জলের ঝাপটা দিতেই সামনের আয়নায় যেন নিজেকে নবরূপে খুঁজে পায় সে। এক অপরাধবোধ তাকে পেয়ে বসে। এ কি করছে সে ! যেই শিতাবের জন্য বাড়ির সকলের ইচ্ছের বিরুদ্ধে গিয়ে নিজের পছন্দে বিয়ে করেছে,আজ সামান্য একটু কর্মব্যস্ততা আর অন্যের প্ররোচনায় কান দিয়ে সেই শিতাবের সাথে সে এ কোন অন্যায় করতে বসেছে ? না-না, অনেক হয়েছে;আর নয়। সব মান-অভিমান ভুলে গিয়ে নিজের চেয়ারে বসে সেলফোনটি তুলে নিয়ে শিতাবের নাম্বারে ফোন করে সে।
অনেক্ষণ ধরেই ফোন বেজেই চলে,এক সময় ফোনটা রিসিভ করতেই বিপরীত প্রান্ত থেকে একটু গম্ভীরভাবে উত্তর আসে-
--- হ্যাঁ, বলো। কি হয়েছে ?
--- বাড়ি কখন আসবে ?
--- বাড়ি ! কেন ? কেউ কি আমার জন্য অপেক্ষার ডালি সাজিয়ে বসে আছে যে তাড়াতাড়ি ফিরতে হবে ?
--- প্লিজ শিতাব, এভাবে বলো না। আমি আর পারছি না;আজ একটু আগেই এসো।
তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরে ফ্রেস হয়ে আয়নার সামনে এগিয়ে গিয়ে নিজেকে একবার দেখে নেয় তানজীম। চোখের নিচে ক'দিনেই ডার্ক সার্কেল পড়েছে। আলমারি খুলে শিতাবের পছন্দের কাঁচা মেহেন্দি রঙের একটা আসাম সিল্কের শাড়ি বের করে, সাথে ম্যাচিং করা গ্রীন এন্ড গোল্ডেন কালারের বর্ডার লাগান ব্লাউজ আর গাঢ় চকলেট কালারের লিপস্টিক এবং কপালে ম্যাচিং করে একটা সবুজ রঙের বড় টিপ পরে নেয় সে। আজ যেন তাকে নববধূ মনে হচ্ছে !
সন্ধ্যা ছ'টা নাগাদ কলিংবেলের আওয়াজে ছুটে চলে যায় তানজীম। দরজা খুলতেই শিতাবের চোখে এক বিস্ময়কর প্রশ্ন ভেসে ওঠে !
--- এ কি, হঠাৎ করে তানজীমের আবার কি হলো ! আজ এই অসময়ে এতটা সেজেগুজে বসে আছে কেন ? তবে কি কোনো পার্টিতে যাবে ?
শিতাব কিছু বলবার আগেই তানজীম শিতাবের বুকে মাথা গুঁজে শরীরের ঘাম মিশ্রিত গন্ধ নিতে থাকে। কিছুক্ষণেই তানজীম শিতাবকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে শুরু করে দেয়। শিতাব কিছুই বুঝে উঠতে না উঠতেই তানজীম বলে ওঠে-
"আমি তোমার সাথে অন্যায় করেছি,শিতাব; আমায় ভুল বুঝনা,প্লিজ! আমি তোমাকে ভীষণ ভালোবাসি, তুমি তোমার তানজীমকে একলা ফেলে চলে যেও না। প্লিজ....!"
ধীরে ধীরে দু'জনের বাহুডোরের বন্ধন শক্ত হতে হতে দৃঢ় আলিঙ্গনে ভরে যায়। দুটো প্রাণ উষ্ণ ঠোঁটের চুম্বনে পুনরায় ভালোবাসার বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে হারিয়ে যায় অনাবিল এক আনন্দময় মুহূর্তে। চোখের জলে ভিজে পরিশ্রুত হয়ে যায় দু'জনার সকল মান-অভিমান আর অভিযোগ।।
0 Comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন