টু বি এইচ কে : শামিমা এহেসানা

শামিমা এহেসানা
টু বি এইচ কে : শামিমা এহেসানা

অণুগল্প

বিয়ে করতে যাওয়ার আগে ছবিটা হাতে নিয়ে কাঁদছে বিলাস, ঠিক তখনই ওর মা এসে পড়লেন। সবটা দেখে মা যেন আকাশ থেকে পড়লেন। ইচ্ছার বিরুদ্ধে সন্তান বিয়ে করবে, তা কিছুতেই মেনে নিতে পারছেন না মা।

নীরবতার বরফ ভেংগে মা বললেন, "তুই এখনও রাই কে ভালোবাসিস? তাহলে এই বিয়েতে মত দিলি কেন? তুই আমার সাথে বাইরে চল। আমি সবার সাথে কথা বলছি। আমি সব দোষ নিজের ঘাড়ে নেব। বলে দেব, তুই বিয়ে করতে চাসনি। আমিই জোর করে......"

দরজার দিকে এগিয়ে যাচ্ছিলেন মা। বিলাস ছুটে গিয়ে মায়ের হাত ধরে দরজায় ছিটকানি দিয়ে বলল, "তোমাকে আমার দিব্যি। তুমি কাওকে কিচ্ছু বলবে না। আমি তোমাদের পছন্দের মেয়েকেই বিয়ে করব।"

কাঁদতে কাঁদতে মা বললেন, "আজ এত বছর পরও তুই রাই এর ছবি হাতে নিয়ে কাঁদছিস, আর বিয়ে করবি অন্য কাওকে? কেন? রাইকে আমরা সবাই পছন্দ করেছিলাম, আপন করে নিয়েছিলাম, তাহলে এই সম্পর্ক ভাংতে গেলি কেন?"

মায়ের চোখ মুছিয়ে দিয়ে, রাই এর ২৫ তম জন্মদিনের সন্ধ্যার কথা বলল বিলাস। যে কথা সে কোনোদিন কাওকে বলেনি।

রাই এর মা সেদিন ওদের দুজনকে একসাথে একটা উপহার দিয়েছিল। কলকাতার বুকে একটা লাক্সারি টু বিএইচ কে ফ্ল্যাট।

 বিলাস এর বাড়ির প্রয়োজন নেই জানালে, রাই কৌতুহলী চোখে প্রশ্ন করেছিল, বিয়ের পর তারা কোথায় থাকবে।
বিলাস বলেছিল, যেখানে এত বছর ছিল, সেখানেই। তবে রাই এর ফ্ল্যাট বাড়ি পছন্দ হলে, ভবিষ্যতে একটা অনেক বড় ফ্ল্যাট কিনবে বিলাস। একটা ঘরে বাবা-মা, একটাতে বিলাস-রাই, আর একটাতে তার ছোটো ভাই।

বিলাসের উত্তর শুনে রাই স্পষ্ট জানিয়েছিল, ওর প্রিভেসির প্রয়োজনীয়তার কথা। এযুগে কেউই শ্বশুর-শ্বাশুড়ির সাথে এক বাড়িতে থাকেনা বলেই বিশ্বাস করত রাই। ওর কোনো বন্ধুই এভাবে থাকেনা বলেও জানিয়েছিল।

এই তর্কের একমাস পর, বিলাস আর রাই দুজনই একসাথে বসে কথা বলার চেষ্টা করেছিল। রাই বিলাসের শর্ত মানতে চায়নি, আর বিলাস কোনো শর্তেই তার বাবা-মা'র থেকে দূরে যাওয়ার কথা ভাবতে পারেনি।


সব শুনে মা কাঁদতে কাঁদতে বললেন, "তোদের সুখেই আমাদের সুখ। তুই একবার আমাকে বলতে পারতিস। আমরা কখনও তোকে বাধা দিতাম না বাবা।"

মায়ের চোখ মুছিয়ে দিয়ে বিলাস বলল, "একবার ছোটোবেলা আমাকে দিদার কাছে রেখে তোমরা রাজ্যের বাইরে গেছিলে, মনে পড়ে?"
মা বললেন, "সে আবার ভোলার কথা, না খেয়ে, অভিমান করে তুই অসুস্থ হয়েছিলিস। আমরা কাজ শেষ না করেই ফিরে এসেছিলাম।"

বিলাস বলল, "আমি কি আজ খুব বেশি বড় হয়ে গেছি মা?"


Share on Google Plus

About Shraboni Parbat

This is a short description in the author block about the author. You edit it by entering text in the "Biographical Info" field in the user admin panel.