![]() |
টাওয়ার অফ সাইলেন্স : পিনাকী চৌধুরী |
টাওয়ার অফ সাইলেন্স : পিনাকী চৌধুরী
হ্যাঁ, এখানে এক অন্তহীন নিস্তব্ধতা বিরাজ করে , এমনকি সামান্য একটি গাছের পাতাও এখানে পড়লে বোঝা যায় ! পার্সিদের মৃতদেহ সৎকারের স্থানের নাম হল ' টাওয়ার অফ সাইলেন্স'! তথাকথিত এই অন্ত্যেষ্টিস্থলে কিন্তু মৃতদেহ সৎকার বা দাহ করা হয় না, এমনকি কবরও দেওয়া নিয়মবিরুদ্ধ কাজ । বরং মৃতদেহ উন্মুক্ত আকাশের নিচে রেখে দেওয়া হয়, যাতে শকুন বা চিল ছিঁড়ে, খুবলে খেতে পারে সেই মৃতদেহ! হ্যাঁ, এমনটাই রেওয়াজ পার্সি সমাজের ! আর পার্সি বা জরথ্রুস্টিয়ানরা এই ধরনের রীতিনীতিতে বিশ্বাসী। আর এই ' টাওয়ার অফ সাইলেন্স' এর কথা প্রথম শোনা যায় খ্রিস্ট পূর্ব পঞ্চম শতকে তবে তারও পরবর্তী সময়ে এইরকম সুউচ্চ মিনার নির্মাণের উল্লেখ পাওয়া যায়।
এখানে উল্লেখ্য যে, প্রাচীন পারস্যের মানুষজন অগ্নির উপাসনা করতেন। আর অগ্নি তাঁদের কাছে পরম পবিত্র। আবার অপরদিকে পৃথিবী বা ভূমি ছিল পবিত্র। তেমনই আবার মৃতদেহকে তাঁরা' নাসু' বা অপবিত্র বলে মনে করতেন। পার্সিরা মনে করেন যে, পবিত্র ভূমি বা অগ্নি যেন অপবিত্র মৃতদেহকে যেন স্পর্শ না করে । সম্ভবত সেই কারণেই দাহ বা সমাধি দু'টোই নিষিদ্ধ পার্সিদের কাছে ! কলকাতার বেলেঘাটায় রয়েছে এইরকমই এক টাওয়ার অফ সাইলেন্স। তবে আপাতদৃষ্টিতে খুবই নৃশংস মনে হলেও পার্সিদের এই রীতির নেপথ্যে রয়েছে অন্য এক কারণ।
পার্সিরা যুক্তিগ্রাহ্য ব্যখ্যা দেন এইভাবে- আজ থেকে প্রায় পাঁচ হাজার বছর আগে পৃথিবীতে এমন কোনো সমাজের অস্তিত্ব ছিল না, যেখানে গোর খননের কোনো সুনির্দিষ্ট ব্যবস্থা ছিল না। আর কবর না দেওয়ায় কারণেই পচনশীল মৃতদেহ থেকে জীবিত মানুষেরও রোগ সংক্রমণ ঘটতো , এবং জীবাণু সংক্রমণের অবকাশ থাকতো। সেজন্যই সমাধি দেওয়া হত বা দূরে কোথাও ফেলে আসা হত। আর এইরকম ভাবে মৃতদেহ সৎকারের ফলে হয়তোবা পরোক্ষে জীব সেবার বার্তা যায় , কারণ - শকুনের খাদ্য হিসেবে এইসব মৃতদেহ কাজে লাগে ! হ্যাঁ, এখানে কোনও ওয়াচ টাওয়ার নেই , তবে বেশ একটা গা ছমছমে পরিবেশ। ছাদবিহীন সুউচ্চ কাঠামো , ঠিক যেন নৈঃশব্দ্যের মিনার হল পরপারের ঠিকানা !
0 Comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন