![]() |
করোনায় আতংকিত সারাবিশ্ব : কিরণ মাহমুদ মান্না |
কাছের একজন ছোট ভাই। বিকাল বেলায় একটু হাঁটতে বের হয়েছিলাম। দূর থেকে দেখতে পেলাম হতাশায় ভারাক্রান্ত মন নিয়ে ব্রীজের উপর সে একাকী বসে আছে। খুব চিন্তিত দেখাচ্ছে। কাছে গিয়ে তাকে বললাম-
-কি বেপার, তোমাকে কেমন যেন দেখাচ্ছে? এমন মনটা ভার করে এখানে বসে আছো কেন? কোন সমস্যা হয়েছে বাড়িতে? কেউ কিছু বলেছে?
- না ভাই, তেমন কিছু হয়নি।এই তেমন কিছু না।
তবুও আপনি বড় ভাই জানতে চাচ্ছেন। আপনাকে বলি বিষয়টা। এখানে বসেন ভাই।
- আচ্ছা বলো দেখি, শুনি কি ঘটনা।
- কয়েকদিন ধরে শরীরটা বেশি ভালো না। কেমন জানি গলাটা ব্যাথা করছে, হালকা হালকা খুশকি কাশিও আছে, শরীরটা বেশ গরম থাকে, সকালে একবার বমিও করেছি। সে কারণে গলাটা একটু একটু ব্যাথা করছে। মনে হচ্ছে জ্বর আসতে পারে।
-তা তুমি এখন ডাক্তার দেখাওনি?
- না ভাই এখনো দেখাইনি।
- কেন যাওনি?শরীর খারাপ নিয়ে ঘরে বসে থাকতে নেই।আগে থেকেই ডাক্তার দেখানো দরকার। তাছাড়া দেশে কি এক অদ্ভুত ভাইরাস এসেছে।
- হ্যাঁ, কি করে যাই ভাই। চারিদিকে যা শুনছি তাতে ডাক্তারের কাছে যাবার সাহসই পাই না। কিসের নাকি করোনা ভাইরাস এসেছে। শুনেছি- করোনা ভাইরাসের লক্ষণ নাকি জ্বর, ঠান্ডা কাশি এই সব। এখন আমারও তো এই সমস্যা। আমাদের দেশে তো করোনা শনাক্ত করার কোন যন্ত্রই নাই। যদি ডাক্তার আন্দাজি এখন আমাকে পরিক্ষা করে বলে তুমি করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত। কি উপায় হবে বলুন।দেখা যাবে আমার পরিবারের সবাই ভয়ে থাকবে অামাকে নিয়ে। আমার থেকে দূরে সরে যাবে। আমাকে একা করে দেবে। কমপক্ষে ১৪ দিন আমাকে এক ঘরে করে রাখবে। কারণ এটা নাকি ছোঁয়াচে রোগ। যদি একবার একজনের দেখা দেয়। পুরো পরিবারে বিস্তার করে। তারপরে পুরো সমাজে ছড়িয়ে পড়ে। তাই ভয়ে যাচ্ছি না।
- শুনো, রোগ এটাও আল্লাহ নিয়ামত স্বরূপ। আল্লাহর তরফ থেকে আসে আবার আল্লাহই সেবা দিয়ে সুস্থ করে তুলে। তাই বলি, যাই হোক, রোগব্যধি নিয়ে ঘরে বসে থাকা ঠিক না আগে গিয়ে তো দেখো, কি বলে ডাক্তার। আর শুনো, দেশের ডাক্তার সবাই যে খারাপ তা কিন্তু না। কিছু ভালো ডাক্তার এখনো আছে। তুমি কালই শহরে কোন ভালো ডাক্তার দেখাও।বাকিটা আল্লাহ ভরসা।
- আচ্ছা ভাই, আপনি যখন বলছেন।তাহলে কাল যাবো। ভাই আরেকটা কথা জিজ্ঞেস করি?
- হুমম, কি জানতে চাও বলো।
- এই যে মুবাইল নেটে, টিভিতে, দেখি, শুনি। কত বড় বড় দেশে নাকি কত মানুষ এই ভাইরাসে আক্রান্ত হইছে, অনেক মানুষ মারা যাচ্ছে। তাই এই ভাইরাস দমন করার জন্য নাকি দলবদ্ধ ভাবে থাকা, চলাচল করা স্কুল, কলেজ, মার্কেট, এবং কি সৌদি আরবে কাবা শরীফে তওয়াফ করা নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হইছে।
তাই দেখে অনেক দেশে সকল ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলোও বন্ধ করে দিচ্ছে।কই মানুষ এই বিপদ মুহূর্তে আল্লাহর কাছে প্রার্থণা করবে তা না সেখানে নিষেধ করা হইছে।
এটা কোন কথা হলো বলুন ভাই?
- হ্যাঁ তুমি কিন্তু ঠিক কথাই বলেছো। আসলে করোনা কি জিনিস, কেমন জিনিস, দেখতেই বা কেমন। কেউ জানে না। আর এই করোনার কোনো ভ্যাকসিনও তৈরি করতে পারছে না কোনো বিজ্ঞানী। এটা যে খোদা তায়ালারই একটা গজব তাতে কোনো সন্দেহ নাই। কিছু মানুষ, আমি জানি না কারা সে। তিলকে তাল বানিয়ে আজ সারাবিশ্বে আতংক সৃষ্টি করেছে। হতে পারে এটা একটা ইহুদিদের চাল। ঘোটা মুসলিম জাতির ঈমান নষ্ট করার একটা ফন্দি। তারা খুব ভালো ভাবে আঁচ করতে পেরেছে যে মুসলমানদের বৃহত্তর ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান কাবা শরীফ যদি বন্দ করা যায়। তবে আস্তে আস্তে সমস্ত মসজিদ খুব সহজেই বন্ধ করা যাবে।
পরম আল্লাহ তায়লার কাছে পানাহ্ চাওয়া। বেশি বেশি নামাজ পড়ে ক্ষমা চাওয়া। তিনিই একমাত্র মালিক যে কিনা এই মহামারি রোগ থেকে রক্ষা করতে পারে। করোনা যত ভয় পাবে তত বেশি আতংক বেড়ে যাবে। মনে রেখো যা মুশকিল তাহাই আসান।
বিপদ যখন আসে তখন ভয় না করে সাহস নিয়ে তাকে জয় করতে হয়। সকল রোগ ব্যধি ভাল করার মালিক আল্লাহ।তাই বলে আল্লাহ উপর সব ছেড়ে দিয়ে নিজেকে ঘুটিয়ে রাখা ঠিক না। নিজেদেরও সচেতন থাকতে হবে। সব সময় নিজের শরীরকে যত্নে রাখা নিজ দায়িত্ব। এটা তো আল্লাহ নিজে এসে করে দিয়ে যাবে না। তাই আমাদের সতর্ক থাকতে হবে, অন্যকেও সচেতন করতে হবে এই ভাইরাসের মোকাবেলায়। এটাও শুনতেছি অনেক দেশে নাকি আমদানি রপ্তানিও বন্ধ থাকবে। এভাবে যদি চলতে থাকে তবে সারাবিশ্বে কি যে হবে। বিরাট একটা দুর্যোগ যে নেমে আসতে পারে সেটা আঁচ করতে পারছে বিশেষজ্ঞরা।
যা হোক,তুমি কিন্তু ভয় পেয়ে অবহেলা করো না।কালই শহরে চলে যাও। আল্লাহ রহমতে তোমার কিছু হবে না।
- আচ্ছা ভাই। আপনার কথা শুনে খুব ভালো লাগলো।
অনেকটা সাহস পাচ্ছি। এখন থেকে সচেতন থাকবো এবং অন্যকেও সচেতন থাকার পরামর্শ দিবো। আপনি ভালো থাকবেন ভাই। খোদা হাফেজ।
- চলে এলাম সেখান থেকে। নিজে নিজে ভাবছি। কি শুরু হলো, সাধারণ মানুষ এখন জ্বর,ঠান্ডা কাশি হলে যে ডাক্তারের কাছে যাবে সেই আস্থাটাও হারিয়ে যাচ্ছে। হে আল্লাহ,ইয়া রাব্বুল আলামীন তুমি বিশ্বের সকল মানুষকে এই মহামারি দুর্যোগ থেকে রক্ষা করো। আমীন★
0 Comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন