![]() |
অথ সোনাগাছি কথা : পিনাকী চৌধুরী |
অথ সোনাগাছি কথা : পিনাকী চৌধুরী
পৃথিবীর সবচেয়ে নিবিড় আনন্দের অপর নাম যৌনতা !আর ভারততো বটেই, এমনকি এশিয়া মহাদেশের বৃহত্তম রেডলাইট এরিয়া হিসেবে মান্যতা দেওয়া হয় কলকাতার উত্তরে চিত্তরঞ্জন এভিনিউ, শোভাবাজার এবং বিডন স্ট্রিটের সংযোগস্থলের অনতিদূরে অবস্থিত , বহুচর্চিত এই সোনাগাছিকে ! শোনা যায়, অষ্টাদশ ও উনবিংশ শতাব্দীর বাঙালি বাবু সম্প্রদায় এই অঞ্চলে নিজ নিজ উপপত্নীদের প্রতিপালন করতেন । এমনকি তদানীন্তন প্যারিসের বিখ্যাত যৌনকর্মীরাও কলকাতার এই সোনাগাছি সম্পর্কে অবহিত ছিলেন ! কিন্তু এইরকম নামকরণের পিছনে কি কাহিনি লুকিয়ে রয়েছে ?
উনিশ শতকের প্রথম দিকে এই সোনাগাছিতে শুরু হয় দেহব্যবসা ।ভারতে তখন ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীর রমরমা বাজার ! ইংল্যান্ড থেকে তখন প্রচুর সুদর্শন তরুণ যুবকরা এসেছেন এই কলকাতায় । বয়স তুলনায় কম , রক্ত গরম ! বিলাসিতা এবং অবশ্যই ফূর্তিতে তাঁরা মনোনিবেশ করলেন ! কিন্তু তাঁদের স্ত্রীরাতো সেই ইংল্যান্ডেই রইলেন ! তাহলে উপায় ? এদেশের কালা মানুষগুলোর বিধবা মেয়েগুলোর যেন কপাল পুড়লো ! ধরে বেঁধে তাদেরকে আনা হল এই সোনাগাছিতে ! ক্রমে ক্রমে কলকাতা শহরে শুরু হল বেশ্যাবৃত্তি ! কথিত আছে যে, সুদূর অতীতের একসময় এই সোনাগাছি এলাকার মালিক ছিলেন সানাউল্লাহ বা সোনা গাজি নামক একজন মুসলিম ধর্মগুরু ।
সেই গাজির মাজার এখনও রয়েছে এই এলাকায় ! এই পতিতালয়ে বর্তমানে দশ হাজারেরও অধিক যৌনকর্মী বসবাস করেন, তবে তাঁদের বেশিরভাগই এই পেশায় কিন্তু ছদ্মনাম ব্যবহার করে থাকেন ! বিখ্যাত অথবা কুখ্যাত, যে নামেই অভিহিত করিনা কেন, সোনাগাছিতে যৌনকর্মীদের শিশুদের নিয়ে জানা ব্রিস্কি এবং রফ কফসান তৈরি করেছিলেন একটি বিশেষ ডকুমেন্টারি ফিল্ম ' বর্ন ইনটু ব্রথেলস'! যে তথ্যচিত্রটি সেরা ডকুমেন্টারি ফিল্ম হিসেবে ২০০৪ সালে অস্কার পুরস্কার লাভ করে ! কিন্তু এইসব যৌনকর্মীদের স্বার্থ রক্ষা করবে কে ? বলাইবাহুল্য, ১৯৯২ সালে ' দুর্বার মহিলা সমন্বয় সমিতি ' নামে একটি সংগঠন গড়ে উঠেছে, মূলত তাদের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় আজ হয়তোবা পতিতা স্বার্থ কিছুটা হলেও সুরক্ষিত !
পরিশেষে বলি, সমাজে কেউ ব্রাত্য নয় ! যে পতিতাদের সমাজ হেয় প্রতিপন্ন করে, দুর্গা প্রতিমা গড়তে কিন্তু এই বেশ্যালয়ের মাটি প্রয়োজন !
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন
(
Atom
)
0 Comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন