পুথি চুরি : চন্দনকুমার কুণ্ডু


পুথি চুরি

চন্দনকুমার কুণ্ডু

গ্ৰামের নাম বীরসিংহ। কোন এক মল্লরাজার সঙ্গে বৈবাহিক সম্পর্কে আবদ্ধ হয়েছিল এই গ্ৰামের কোন এক পরিবার। একই সঙ্গে সম্পর্ক গড়েছিল এই গ্ৰাম। এমন কিংবদন্তি প্রচলিত আছে এখন ও। তখন থেকেই বোধ হয় এই গ্ৰামের শিক্ষা সংস্কৃতিতে নাম ডাক আশপাশের আর পাঁচটা গ্ৰামের থেকে বেশি। অথবা এই গ্ৰামের শিক্ষা সংস্কৃতির নাম ডাকের কারনেই  এক মল্ল রাজা এই গ্ৰামে বৈবাহিক সম্পর্ক করেছিলেন। তা আজ আর জানার উপায় নেই।

চারিদিকে ঘন শাল, পিয়ালের জঙ্গল। বাইরে থেকে বোঝার উপায় নেই যে এত গভীর জঙ্গলের  মধ্যে এত বড় একটি গ্ৰাম তার আপন মহিমায় দীর্ঘ ঐতিহ্য বয়ে নিয়ে চলেছে। গ্ৰামের পূর্ব, পশ্চিম, উত্তর ,দক্ষিণ যেদিকেই যাওয়া যাক মাইল পাঁচেকের মধ্যে কোন পাকা রাস্তা নেই। মফসসলও চোখে পড়বে না। শাল, পিয়ালের, জঙ্গলের মাঝ বরাবর লাল মোরামের রাস্তা চলে গেছে অজগরের মত।

দেবদত্ত আচার্য এই বীরসিংহ গ্ৰামের বাসিন্দা। দেবদত্তের প্রপিতামহ দেবশঙ্কর আচার্য ছিলেন নিষ্ঠাবান ব্রাহ্মণ। সংস্কৃত পণ্ডিত দেবশঙ্কর আচার্যের শখ ছিল পুরানো পুথি সংগ্ৰহ। ছোটখাট একটি সংগ্ৰহশালা ও গড়ে তুলেছিলেন তিনি। দেবশঙ্কর আচার্যের কোন এক পূর্বপুরুষের মল্ল রাজ পরিবারের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে উঠেছিল। তার পর থেকেই তাঁদের পরিবারের  শ্রীবৃদ্ধি শুরু; দূর্গা পূজা থেকে রাস উৎসব তাঁদের পারিবারিক উৎসব হয়ে ওঠে।

গ্ৰামে আচার্য পরিবারের সমৃদ্ধি ও সুনাম বহু দিনের।বর্তমানে আচার্য পরিবারের  সুনাম যতটুকুই থাক সমৃদ্ধি বলতে কিছুই নেই। পুরানো ঠাকুর মন্দির, রাসমঞ্চ সবই আছে কিন্তু তা এখন জৌলুসহীন পোড়ো বাড়িতে পরিণত হয়েছে। রোজগার হীন নিঃসন্তান দেবদত্তের  যে দেব -দ্বিজে ভক্তি নেই তা নয়, তাঁর সামর্থ্য নেই। তা না হলে সারাদিন পুজো- আচ্চা নিয়ে থাকা মানুষ বাড়ির পুজো বন্ধ করবেন কেন ! শরিকি বিবাদ এড়িয়ে পুরানো বাড়িটার  একপ্রান্তে অল্প জায়গায় দেবদত্ত স্ত্রীকে নিয়ে বাস করেন।  পিতামহ দেবনারায়ণ আচার্য স্বয়ং আচার্য পরিবারের ইষ্টদেবতা শালগ্ৰাম শীলা ও একখানি প্রাচীন পুথি দেবদত্তের হাতে তুলে দিয়ে বলেছিলেন,
--তোমার হাতে ইষ্ট দেবতা ও আচার্য পরিবারের বহুদিনের রক্ষিত পুথি তুলে দিলাম। ভবিষ্যতে এঁরাই তোমাকে রক্ষা করবেন। দেখ কখনো যেন এঁদের অমর্যাদা না হয়।

 এঁদের আগলে দেবদত্ত বেঁচে আছেন। শালগ্ৰাম শীলার পূজা করেন প্রতিদিন। লাল শালুতে মোড়া  পুথি ও মাঝে মাঝেই স্নানের পর নতুন ধুতি আর সাদা  গেঞ্জি পরে কম্বলের আসনে বসে সুর করে পড়েন। পুরো পাঠোদ্ধার করা তাঁর পক্ষে সম্ভব হয় না, তবুও পড়তে চেষ্টা করেন  দেবদত্ত। এ পুথি কবে লেখা হয়েছে, যিনি লিখেছিলেন তাঁর সঙ্গে দেবদত্তদের  পারিবারিক কোন সম্পর্ক ছিল কি না এমন নানা প্রশ্ন দেবদত্তর মাথার ঘুরপাক খায়। কিন্তু এর উত্তর দেবে কে!

 ঠাকুরদার মত দেবদত্ত ও পুথি পড়তে ভালবাসেন। আচার্য পরিবারের আর্থিক অবস্থা অনেকদিন আগে থেকেই খারাপ হতে শুরু করেছে। দেবদত্তের সময়ে তা আরও শোচনীয় অবস্থায় পৌঁছেছে।  দেবশঙ্কর বাবুর বহু পরিশ্রমে গড়ে তোলা পুথিশালার অবস্থাও খারাপ। ছাত চুঁইয়ে জল পড়ে বেশির ভাগ পুথিই নষ্ট হয়ে গেছে। কিছু বা কৌতুহলী লোক ফেলে দেওয়া পুথি কুড়িয়ে নিয়ে গেছে। আস্ত দু- চারটি  দেবদত্ত নিজের কাছে রেখেছেন। কিন্তু কখনোই ঠাকুরদার দেওয়া পুথিটি তিনি জন সমক্ষে বের করেন না, এর সন্ধান ও খুব কম জন জানেন। আর  যারা এর খোঁজ রাখেন তাঁরা জানেন এক দুর্মূল্য জিনিস দেবদত্ত আগলে রেখেছেন গোপনে। দেবদত্ত না খেয়ে মারা গেলেও ওই শালগ্ৰাম শিলা, আর পুথি কাউকে দেবেন না।

দেবদত্ত দুটি মানুষকে চরম শ্রদ্ধা করেন। তাঁর স্কুলের প্রাক্তন হেডমাস্টার মশাই  রঞ্জন বাবু আর ইংরেজির শিক্ষক  জলধর বাবু। কারণে অকারণে এঁদের কাছে তাঁর যাওয়া আসা। রাস্তায় দেখা হলেও নানা বিষয়ে কথা আর শেষ হতেই চায় না। ওই মানুষ দুটিও তাঁদের প্রাক্তন ছাত্র দেবদত্তকে স্নেহ করেন যথেষ্ট। জলধর বাবু মাঝে মাঝে উৎসাহ নিয়ে বলেন,


--তোমাদের গ্ৰামে বহু মূল্যবান পুথি ছিল দেবদত্ত। এর মূল্য কেউ বুঝল না। সংরক্ষণ ও হ'ল না।‌ শুধু পুথির কারণেই এ গ্ৰামের নাম দেশে বিদেশে ছড়িয়ে পড়তে পারতো।

স্যারের কথার রেশ টেনে দেবদত্ত বলেন,

--কি আর করব স্যার। আমি তো বাড়ির পুথিশালা টাই রাখতে পারলাম না। কত পুথি নষ্ট হয়ে গেল কত লোকে নিয়ে চলে গেল। এ আক্ষেপ কী আর কম স্যার। আমার দূর্ভাগ্য।

--তোমাদের গ্ৰামের অনেকেই বাড়িতে থাকা পুথি জলের দামে বেচে দিয়েছে। তারা এর মূল্য বোঝে না ,কী করা যাবে... ইত্যাদি ইত্যাদি।

বীরসিংহ গ্ৰামের  মাইল দশেক দূরে সোনামুখী শহর। শহর না বলে মফসসল বলাই ভাল বোধ হয়।  কলকাতার এক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক অনিন্দ্য সরকারের শ্বশুর বাড়ি এই সোনামুখীতেই। সুচতুর প্রৌঢ় অনিন্দ্যবাবু আশপাশের গ্ৰাম গঞ্জের খবর রাখেন নিজের তাগিদেই। প্রাচীন পুথিপত্র নিয়ে গবেষণা তাঁর নেশা। বিশ্ববিদ্যালয়ের পদাধিকারী  হলেও নানা পুথি সম্পাদনা, পুথির আলোচনা ইত্যাদি নিয়ে তিনি খবরে থাকতে ভালবাসেন। ইতিমধ্যেই বীরসিংহ গ্ৰামের দেবদত্তের বাড়িতে থাকা পুথির খবর তিনি পেয়েছেন। দেবদত্তের ঠিক কাদের সঙ্গে সম্পর্ক ভালো সে খবর নিতেও ভোলেন নি তিনি। পুথির ব্যাপারে তাড়াহুড়ো করা যে সঠিক হবে না সেকথাও তিনি বিলক্ষণ জানতেন

দেবদত্তের প্রিয় দুই মাস্টার মশাই  এলাকার সম্মানীয় ব্যক্তিত্ব। এলাকার পরিচিত মানুষ। কাজেই তাঁদের ফোন নাম্বার পেতে অনিন্দ্য বাবুকে বিশেষ বেগ পেতে হল না। হঠাৎ একদিন  রঞ্জনবাবু ও জলধর বাবুকে ফোন করে আলাপ পরিচয় সারলেন। দেখা করে অনেক স্তুতিও করলেন তাঁদের। যতই হোক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক তাঁদের সঙ্গে কথা বলতে এসেছেন। দুজনেই আপ্লুত হয়ে গেলেন। অনিন্দ্য বাবু  বললেন,
--যাক এত দিনে দুজন খাঁটি মানুষের দেখা  পেলাম। এখানে মাঝে মাঝে আসতেই হয়, শ্বশুর বাড়ি বুঝতেই পারছেন। কিন্তু কথা বলার মত দুটো লোক ছিল না মশাই। আপনারা বাঁচালেন।


-- স্যার চলে আসবেন এদিকে। ঘন শাল জঙ্গল আর লাল মোরামের রাস্তা ... আপনি শহরের মানুষ তো ভাল লাগবে।

বলেন হেড মাস্টার মশাই।

এই আলাপের পর প্রায় মাস ছয়েক কেটে যায়। জলধর বাবুরাও অনিন্দ্য বাবুর কথা প্রায় ভুলেই যান। হঠাৎ একদিন সন্ধ্যায় জলধর বাবুকে ফোন করেন অনিন্দ্য সরকার,

--নমস্কার মাস্টার মশাই। আমি অনিন্দ্যবাবু বলছি। সব কুশল তো। বিশ্ববিদ্যালয়ের নানা কাজে জড়িয়ে আছি। দায়িত্ব অনেক তাই ফোন করা হয়ে ওঠে না  আর কি।

--এই চলে যাচ্ছে একরকম আপনাদের আশীর্বাদে। তারপর , এদিকে আসছেন না কি?

--আরে আসছি মানে এসে গেছি। আজ বিকালেই। তাই ভাবলাম , আপনাদের খোঁজ নিয়ে দেখি।
কুশল বিনিময় ও মামুলি কিছু কথাবার্তার পর  অনিন্দ্যবাবু বললেন,

--শুনুন কাল বিকালে রেডি থাকবেন;  হেডমাস্টার মশাইকেও ফোন করব এখনই। কোন কাজ রাখবেন না যেন-

তা যাবেন কোথায় সেটা তো বলুন।

-- আজ বলব না। একেবারে কাল বিকালে সারপ্রাইজ দেব। বেশ, রাখলাম আজ।

জলধরবাবু ভাবলেন , এ লোক কোথায় নিয়ে যাবে তাদের!  কিছু বুঝতে পারলেন না। পরের দিন যথাসময়ে অনিন্দ্যবাবু গাড়ি নিয়ে হাজির হলেন। নিজের গাড়ি করেই তিনি কলকাতা থেকে এসেছেন। জলধরবাবুকে তুলে নিলেন । পাশের গ্ৰাম থেকে হেডমাস্টার মশাইকে তুলে নিয়েই লাল মোরামের রাস্তাদিয়ে গাড়ি জঙ্গলের পথ ধরল।


-- যাব দেবদত্তের বাড়ি। আপনাদের আজ আমাকে একটু হেল্প করতে হবে। দেবদত্তের বাড়িতে থাকা পুথির খবর আপনাদের অজানা নয়। ওটা একবার দেখতে চাই। --তা ভালই তো‌। এ কথা আপনি ফোনে বলতেই পারতেন। দেবদত্ত অনেকবার আমাদের অনুরোধ করেছে ওই পুথি দেখতে যাওয়ার জন্য। কিন্তু পুথির বিষয়ে আমরা কি জানি বলুন!

বললেন হেডমাস্টার মশাই। জলধর বাবুও উৎসাহ  নিয়েই বললেন,

--ভালই হল বুঝলেন। এক্কেবারে একজন নামজাদা পুথি বিশেষজ্ঞকে নিয়েই চললাম। একেবারে চক্ষু- কর্ণের বিবাদ ভঞ্জন করা যাবে।

অনিন্দ্যবাবু বললেন এ গ্ৰামে আগে তিনি দু একবার এসেছেন। খালিহাতে ফিরেছেন এমন নয়। দু- চারটে পুথি তিনি এখান থেকে খুব অল্প দামে কিনে নিয়ে গেছেন। কিন্তু দেবদত্তের পুথি দেখার সুযোগ তাঁর হয়নি। কথা বলতে বলতেই  মোষের খাটাল আর কালো পাথরের কয়েকটা ঢিপি পার হয়ে গাড়ি থামল বীরসিংহ গ্ৰামে। জলধর বাবু আর একটু এগিয়ে বাঁদিকে গাড়ি ঘোরাতে বললেন। অনেক পুরানো গ্ৰাম। রাস্তা বিশেষ চওড়া নয়। পলেস্তারা খসে পড়া দেওয়াল ঘেঁসে গাড়িটা দাঁড়াল। গাড়ি থেকে নেমে জীর্ণ ,ফাটল ধরা বাড়ির একদিকের  খোলা গেট পার হয়ে জলধর বাবু ডাক দিলেন,
--দেবদত্ত বাড়িতে আছো , দেবদত্ত ?

দেবদত্ত বেরিয়ে অবাক হয়ে বললেন,

-- ও স্যার, আপনারা! আসুন আসুন।

অনিন্দ্যবাবু চোখ ঘুরিরে ঘুরিয়ে দেখলেন এ বাড়ির প্রাচীনত্বের আর গরিবিয়ানার ছাপ সর্বত্র। হেডমাস্টার মশাই অনিন্দ্য বাবুর সঙ্গে দেবদত্তের পরিচয় করিয়ে দিয়ে তাঁদের আসার উদ্দেশ্য কি তা বললেন।

দেবদত্ত অপ্রস্তুতের মত বললেন,

-- সে সব ঠিক আছে স্যার , কিন্তু..
.
মাস্টার মশাই দুজন তাঁর অতি প্রিয় মানুষ । কিন্তু তৃতীয় জনের সামনে তাঁর লক্ষ্মীকে যেন ঠিক বের করতে চান না। সেকথা যেন বুঝতে পারলেন  হেড মাস্টার মশাই। বললেন,

--আরে না না, তুমি যা ভাবছ তা নয়। উনি একেবারেই আমাদের ঘরের লোক। পণ্ডিত মানুষ। বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক। পুথি নিয়েই ওনার কাজ কর্ম। তাই তো ওনাকে নিয়ে এলাম।

দেবদত্ত ঠিক ভরসা পেলেন না যেন। তবুও স্যারদের কথায় বহু যত্নে রক্ষিত  লাল শালুতে মোড়া পুথিটি  বের করতে গিয়ে বুকের মধ্যে কেমন যেন মোচড় দিয়ে উঠল। ভাল করে পা, হাত ধুয়ে এসে পুথি পড়ার জন্য নির্দিষ্ট ধুতি ও গেঞ্জি পরে ধূপ ধরিয়ে পুথির স্থানে গিয়ে প্রণাম করলেন । তারপর লালশালু খুলে তার ওপর পুথি রেখে স্যারেদের সামনে ধরলেন। পুথিটা হাতে নিয়েই কেমন যেন চমকে গেলেন অনিন্দ্যবাবু; স্পষ্ট দেখতে পেলেন দেবদত্ত। অনিন্দবাবু পুথির পাতা উল্টে নেড়ে চেড়ে দেখে বললেন,

--পুথি  এভাবে হাতে নিয়ে কিছু বলা মুশকিল। এ পুথিশালায় নিয়ে গিয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষার দরকার আছে।
 অনিন্দ্যবাবু জানেন, অন্যেরা শিক্ষিত ঠিকই কিন্তু পুথির বিষয়ে কিছু বোঝেন না। তিনি বললেন,

--এক কাজ করা যাক মাস্টার মশাই। আমাকে দিন সাতেকের জন্য পুথিটা দিতে বলুন। ঠিক সাতদিন পরে আমি আপনাদের সঙ্গে নিয়েই ফেরত দিয়ে যাব। যদি অনুমতি করেন; এনিয়ে কাজ হলে দেবদত্তের সঙ্গে আপনাদের ও নাম হবে। না হলে এ অন্ধকারেই থেকে যাবে। দেবদত্ত মৃদু আপত্তি করতে যাচ্ছিলেন। দুজন মাস্টার মশাই তাকে বোঝালেন জ্ঞানী মানুষ। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ান। উনি কথার খেলাপ করবেন না। তাছাড়া তাঁরা তো আছেন ই।
--দেবদত্ত, তোমার বিশ্বাস না হলে পাঁচহাজার টাকা গচ্ছিত রাখতে পার-


বলে প্যান্টের পকেটে হাত ঢোকালেন অনিন্দ্যবাবু। তার আর দরকার পড়ল না। দেবী সরস্বতীর মুক্তির প্রয়োজন। তাঁকে বেঁধে রাখা সঠিক পথ নয়,.. ইত্যাদি আলোচনায় দেবদত্ত আর আপত্তি করলেন না। শালু বাঁধা অবস্থাতেই অনিন্দ্যবাবু কাঁধে ঝোলানো ব্যাগে ভরে নিলেন পুথি। তাঁর মুখ খানা চিকচিক করে উঠল। তিনি খ্যা খ্যা করে হায়নার মত হেসে উঠলেন।


সন্ধ্যা প্রায় নেমে এসেছে। দেবদত্ত শুস্ক মুখে মোরাম রাস্তা পর্যন্ত সকলকে এগিয়ে দিতে এলেন। গ্ৰাম শেষ হয়ে সবে জঙ্গলটা শুরু হয়েছে। একটা শিয়াল রাস্তা কেটে  অন্ধকারে মিশে গেল‌। দেবদত্তের বুকটা ছ্যাঁক করে উঠল।

এ ঘটনার পর বছর দুই কেটে গেছে। দেবদত্ত এখন অর্ধ-পাগল। যার সঙ্গেই দেখা হয় তাকেই জিজ্ঞাসা করেন,

--কলকাতার ওই অনিন্দ্যবাবু। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ান।কত নাম ডাক। উনি কী পুথি চুরি করতে পারেন বলুন! ঠিক আসবেন। আমার হাতে গৃহ লক্ষ্মীকে তুলে দেবেন বলুন।

কখনও বা বলেন,

- আমি নিজের হাতে তিনসন্ধ্যায় লক্ষ্মীকে চোরের হাতে তুলে দিয়েছি , আর কী তাকে পাব বলুন!

হেডমাস্টার মশাই ও জলধর বাবু দেবদত্তকে এড়িয়ে চলেন। তাঁর সঙ্গে দেখা করতে সংকোচ বোধ করেন।

অনিন্দ্যবাবু দেবদত্তের বাড়ি থেকে পুথি নিয়ে যাবার দিন কুড়ি পর তাঁকে ফোন করেছিলেন জলধর বাবু। ''সামনে সপ্তাহে আসছি'' বলে ফোন রেখে দেন অনিন্দ্যবাবু। এর পরেও কয়েকবার ফোন করেছিলেন জলধর বাবু ও হেডমাস্টার মশাই দুজনেই। অনিন্দ্যবাবু হয় ব্যাস্ত  আছেন বলেছেন নয়তো ফোন ধরেন নি। দুই অভিজ্ঞ , শিক্ষকের বুঝতে অসুবিধা হয় নি যে,পুথি আর ফেরত পাওয়া যাবে না। পুথি চুরি করেছেন অনিন্দ্যবাবু।

কেউ বলেন ও পুথি শ্রীকৃষ্ণকীর্তনের সময়ে লেখা আর এক বৈষ্ণব আখ্যানের। কেউ বলেন মল্লরাজবংশের গৃহদেবতা রাধামাধব কে নিয়ে লেখা 'মাধবমঙ্গল 'পুথি। দেবদত্তের আক্ষেপ,
--আমার 'ঘরের লক্ষ্মী। তাঁকে আমি নিজে চোরের হাতে তুলে দিলাম !!!

Share on Google Plus

About Shraboni Parbat

This is a short description in the author block about the author. You edit it by entering text in the "Biographical Info" field in the user admin panel.