করোনা ভাইরাস : ডাঃ সুদীপ রায়ের মুখোমুখি পিনাকী চৌধুরী

ডাঃ সুদীপ রায়
করোনা ভাইরাস : ডাঃ সুদীপ রায়ের মুখোমুখি পিনাকী চৌধুরী

( সারা বিশ্ব জুড়েই ত্রাস সৃষ্টি করেছে এই মারণ ভাইরাস ! কলকাতাতেও করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সন্ধান পাওয়া গেছে ! মেডিকা সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালের বিশিষ্ট চিকিৎসক তথা মাইক্রোবায়োলজিস্ট ডাঃ সুদীপ রায়ের মুখোমুখি পিনাকী চৌধুরী ।)    

 প্রশ্ন :- ডাক্তারবাবু, প্রথমেই বলুন যে এই করোনা ভাইরাস কতটা প্রাণঘাতী ?      
উত্তর :- সাধারণভাবে ২% থেকে ৪% এই করোনা ভাইরাস প্রাণঘাতী ।   তবে বয়স্ক মানুষদের ক্ষেত্রে কিছুটা ঝুঁকি থেকে যায় , তুলনায় শিশুদের ক্ষেত্রে এই করোনা ভাইরাস আপাতত কম প্রভাব বিস্তার করতে সক্ষম ।          

 প্রশ্ন :- আচ্ছা, এই করোনা ভাইরাস যদি মানব দেহে প্রবেশ করে, তাহলে কি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায় ?     
উত্তর :-  না, যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তুলনায় কম , তাদেরকে কিন্তু খুব তাড়াতাড়ি কাবু করে দেয় এই মারণ ভাইরাস ।             

 প্রশ্ন :- এই রোগের প্রাথমিক উপসর্গ গুলো কি কি ?      
উত্তর :-  খুবই সাধারণ উপসর্গ। প্রাথমিক ভাবে জ্বর, কাশি, এবং পরবর্তী সময়ে প্রবল শ্বাসকষ্ট ।            

প্রশ্ন :- কোয়ারেন্টিন শব্দটি ইদানিং খুব শোনা যাচ্ছে, আর 'হোম কোয়ারান্টিন' এ আদৌ চিকিৎসা সম্ভব?  
উত্তর :- হ্যাঁ, কোয়ারেন্টিন শব্দটি আমরা সাধারণত পাবলিক হেলথ এ ব্যবহার করে থাকি ! আর এই প্রসঙ্গে বলি, করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর চিকিৎসা করা হয় আইসোলেশন ওয়ার্ডে রেখে ! কিন্তু যাদের এই রোগ ধরা পড়ে নি, কিন্তু কোনো না কোনো কারণে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে এসেছিলেন, তাদেরকে কিন্তু এই ' হোম কোয়ারেন্টিন' এ রেখে পর্যবেক্ষণ করা হয় । তবে সাধারণত মহামারীর সময়ে এই হোম কোয়ারেন্টিনের ব্যবস্থা করা হয় , যাতে না রোগটি ছড়িয়ে পড়ে !         

 পিনাকী চৌধুরী
প্রশ্ন :- N95 মাস্ক ব্যবহার করলে কি সত্যিই রোগ প্রতিরোধ সম্ভব ?    
উত্তর :- হ্যাঁ। আক্রান্ত রোগীর হাঁচি কাশির সঙ্গে ভাইরাসটির কিন্তু বাতাসে ছড়িয়ে পড়ে, এবং তার অন্য কোনো মানুষকে আক্রান্ত করতে পারে । সেজন্যই এই মাস্ক ব্যবহার করলে কিছুটা সাবধানতা অবলম্বন করা হয়।          

প্রশ্ন :- COVID 19 কিভাবে মানব শরীরে নেতিবাচক প্রভাব বিস্তার করে ?      
উত্তর :- করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তির প্রাথমিক উপসর্গ খুবই সামান্য, কিন্তু পরবর্তীকালে জ্বর ও কাশি দেখা যায়, এবং অবশ্যই তার পরে প্রবল শ্বাসকষ্ট ! ধীরে ধীরে শরীরে অক্সিজেনের পরিমাণ কমতে থাকে। রক্তচাপ কমে যায়,  একে একে অঙ্গ বিকল হয়ে যায় !        

 প্রশ্ন :- পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখলে এবং জীবাণুমুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি করলেই কি এই করোনা ভাইরাস কে আটকানো সম্ভব ?      
উত্তর :- হ্যাঁ, অবশ্যই ! এই রোগ খুবই সংক্রামক ! মনে করুন, যে ব্যক্তির এই করোনা ভাইরাস সংক্রমণ এখনো ধরা পড়ে নি, কিন্তু কিছু কিছু উপসর্গ দেখা দিয়েছে, সেই ব্যক্তি যখন একটি ঘরের দরজা হাত দিয়ে টেনে খুলে ঘরে ঢুকলেন, আর তার কিছুক্ষণ পরেই হয়তোবা আপনি সেই ঘরের দরজায় হাত দিলেন, সেক্ষেত্রে কিন্তু আপনার শরীরেরও হয়তোবা এই মারণ ভাইরাস নিঃশব্দে প্রবেশ করলো, আর তা হয়তোবা আপনি জানতেও পারলেননা !       

 প্রশ্ন :- করোনা ভাইরাসের কোনো প্রতিষেধক আবিষ্কৃত হয় নি, কিন্তু শোনা যাচ্ছে যে, HIV এর প্রতিষেধক দিয়ে ভারতের এক জায়গায় এই করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসায় ইতিবাচক ফল মিলছে ! এটা কি সত্যি ?    
উত্তর :- হ্যাঁ। করোনা ভাইরাসের কোনো প্রতিষেধক এখনও পর্যন্ত আবিষ্কৃত হয় নি, কিন্তু বিজ্ঞানীরা নিরন্তর পরীক্ষা নিরীক্ষা চালাচ্ছেন ! অদূর ভবিষ্যতে এর ভ্যাকসিন আবিষ্কার হয়তো সম্ভব ! আর HIV এর প্রতিষেধক দিয়ে এই করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর চিকিৎসায় সত্যিই ইতিবাচক সাড়া মিলছে !             

প্রশ্ন :- থার্মাল স্ক্রিনিং এর মাধ্যমে কি আদৌ সুরক্ষিত থাকা সম্ভব ?       
উত্তর :- হ্যাঁ, বিষয়টিকে এই ভাবে ব্যাখ্যা করা যায়, মনে করুন, কোনো মানুষ  এই করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়তো হননি, কিন্তু খুবই সাধারণ একটু জ্বর জ্বর ভাব রয়েছে ! সেক্ষেত্রে এই থার্মাল স্ক্রিনিং এর মাধ্যমে ভিড়ের মাঝেও তাঁকে আলাদা করে নিলাম, সেখান থেকে সরিয়ে নিয়ে গেলাম ! হতে পারে ব্যক্তিটির সেই জ্বর হয়তো অন্য কোনো রোগের উপসর্গ !

 " পরিশেষে একটি কথা বলি, সতর্ক থাকুন, সুস্থ থাকুন, কিন্তু গুজবে কান দেবেন না !" ... ডাঃ সুদীপ রায়
Share on Google Plus

About Shraboni Parbat

This is a short description in the author block about the author. You edit it by entering text in the "Biographical Info" field in the user admin panel.