পাঞ্চালিকথন : ঝর্ণা মনি


পাঞ্চালিকথন 

ঝর্ণা মনি

আমিই দ্রৌপদী; কৃষ্ণা, পাঞ্চালি
যে নামেই ডাকো না কেন
আমি সেই নারী, হাজার বছরের লাঞ্চনার প্রতিমূর্তি।

আমিই সেই পাণ্ডব রাজবধূ;
যুগে যুগে যাকে সম্পত্তি করেছে পুরুষ। 

বিনা অধিকারে শতকে শতকে পাশা খেলায় ধরেছে বাজি। 

রক্তলোলুপ দুর্যোধনের কুদৃষ্টি আঘাত হেনেছে অযুত-লক্ষ-নিযুত কোটি বার। 

ভরা রাজসভায় বস্ত্র করেছে হরণ।
আমিই সেই অগ্নিজাত কন্যা
অগ্নি থেকে জন্ম হয়েও পুড়ছি জনমভর।

পাঞ্চালি আমি।
লাইফ-লাইন মিথোলজি হয়ে বাঁচতে চাই না আর।
দুখের বারোমাসিতে পুড়ে অঙ্গার সন্ধ্যাপ্রদীপের দিব্যি, 

আমি বদলে দেবো মেঘ-বৃষ্টি রোদে জীবনের ধারাপাত।

যতবারই জন্ম নেবো ততবারই আমি দ্রৌপদী।
মহাভারত থেকে আজ অবধি
একাই বয়ে বেড়াই জন্মের সব দায়।
আমিই বেছে নিয়েছি জীবনের খাণ্ডবদাহ
তক্ষকের মাথায় পা রেখে একাই পাড়ি দেই প্রস্তরযুগ।

হস্তিনাপুর, ইন্দ্রপ্রস্ত চাই না আর
চাই না ইরাবতী, অলকানন্দা

তেজস্বীনি আমি
বিষ পেয়ালা হাতে করি তান্ডবনৃত্য।
পঞ্চপান্ডব ভার্যা নয়, নয় পাঞ্চালরাজ দুহিতা
দুর্যোধনের রাজ্যে আমি একা এক নারী।
তবুও বিক্রি করিনি তেজ
ভীষ্ম, দ্রোণাচার্য, ধৃতরাষ্ট্রের নীরবতায় ধিক্কার জানিয়েছি একাই।
আমার তেজেই জ্বলে পুড়ে ছারখার কৌরবকূল।

আমি ইচ্ছে মৃত্যু।
প্রতিটি নি:শ্বাসে ছাড়ি মৃত্যুবাণ  
নারী মাংস লোভী দুর্যোধন-কীচক নিধনে।

যাজ্ঞসেনী আমি
জন্ম থেকেই জ্বলছি যজ্ঞ কন্যা।
আগ্নেয়গিরির জ্বলন্ত লাভার মতো আমার আগুন 

ছড়িয়ে পড়ে ইন্দ্রপ্রস্ত থেকে সমস্ত চরাচর। 

যে আগুনের লেলিহান শিখায় বারবার জন্ম, মরণ‌ও বারংবার।

আমার শেষ নিঃশ্বাসে লিখা হোক তাদের মৃত্যুদণ্ড।

Share on Google Plus

About Shraboni Parbat

This is a short description in the author block about the author. You edit it by entering text in the "Biographical Info" field in the user admin panel.