চিত্রনায়িকা: চাষী সিরাজুল ইসলাম

চিত্রনায়িকা: চাষী সিরাজুল ইসলাম
চিত্রনায়িকা: চাষী সিরাজুল ইসলাম
                              
- চিত্রনায়িকা সূচনার সাথে আমার প্রেম ছিল।

-গুল মারিস না। এ যাবত বহুত গুল মারছোস? শওকত বলে।

-আরে চাষীরে বলতে দেনা। ওর লেটেস্ট গুলটা শুনি। বলে লোদী।

জিয়া উদ্যানের উত্তরপাড়ে লেকের সানবাঁধানো সিঁড়ির ধাপে পড়ন্ত বিকেলে আড্ডা মারছে বন্ধু শওকত রাজু,আনিস, উত্তম, মাসুদ এবং চাষী। চাষী সিনেমার নায়িকার সাথে প্রেম করেছে বিশ্বাস করতে চায় না বন্ধুরা। ওদের বক্তব্য এতোদিন পর এই গল্প কেনো?

একটা সাধারণ ছেলের সাথে গ্লামার্স চিত্রজগতের নায়িকার প্রেম? অসম্ভব! কেননা চাষীর যে চেহারা আর ছিপছিপে বডি তাতে নায়িকাতো দূরের কথা সাধারণ মেয়েরাই ওর প্রেমে পড়বে সেটা গুল ছাড়া আরকি?

রাজু বলে,
-ক ক নায়িকার সংগে তোর প্রেমের গল্পটা ক।

অানিসের কাছ থেকে সিগারেটের পাছাটা নিয়ে শুরু করে চাষীঃ

সেবার ইরাক থেকে ছুটিতে এলে গালিব ভাই পরের দিন তার 'চন্দ্রনাথ' ছবির ডাবিংয়ে  নিয়ে যায় আমাকে এফডিসিতে। ডাবিং থিয়েটারেরর পর্দায় ডাবিংয়ের একটা লুপ চলছে। কিছুক্ষণ পরেই ডাবিয়ের ভয়েস দিতে ছবির নায়িকা সূচনা এলে গালিব ভাই অামাকে সূচনার সাথে পরিচয় করিয়ে দিয়ে বলে,

-আমার ছোটভাই চাষী। ওর অনেক গল্প করেছি তোমার কাছে। কাল ইরাক থেকে এসেছে।

নায়িকা সূচনা অামাকে দেখে উচ্ছল হয়ে ওঠে। গদোগদো হয়ে দ্রুত অামাকে সালাম দেয়। তারপর বলে,

-গালিব ভাইর কাছে আপনার অনেক গল্প শুনেছি। আপনার ইরাকের অনেক ছবি দেখেছি। গালিব ভাই আমাকে দেখিয়েছে। তখনই অাপনাকে ভালো লেগেছে। বন্ধু হিসেবে কামনা করেছি তখন থেকে। আজ সাক্ষাৎ পরিচয় হল। ভীষণ ভালো লাগছে। আজ থেকে আপনি আমার বন্ধু।

-কি সুন্দর চাপা মারতাছোস দোস? বলে বন্ধু রাজু।

বন্ধু উত্তম বলে,
-রাখ বেটা, শুনতেদে কাহিনীটা।

চাষী আবার শুরু করে।

সেদিন একটু পরে ডাবিংয়ের অবসরে প্রোডাক্টশনের ছেলেরা কাবাব আর নানরুটি দিয়ে গেল। সূচনা আর আমি পাশাপাশি একপ্লেট থেকে নিয়েই  খেলাম। একটু পরে নায়িকা সূচনা ডাবিংয়ের লুপে ভয়েস দিতে ব্যাস্ত হয়ে পড়ল। আমি ওর কাছ থেকে বিদায় নিয়ে আসতে গেলে সূচনা আমাকে সদর দরজা পর্যন্ত এগিয়ে দিয়ে বিদায় জানাল।

-তারপরের ঘটনা ক? প্রেম কখন হইলো সে কথা ক? বলল লেংড়া মাসুদ।

সদর দরজা পর্যন্ত এসে অামাকে বিদায় দিতে গিয়ে সূচনা অারো বলল,

-অাগামী পরশু সন্ধ্যারপর পাগলার পপুলার স্টুডিওতে শুটিং আছে। আসলে খুশী হব। আসলে শুটিংয়ের ফাঁকে ফাঁকে গল্প করা যাবে। আপনার ইরাকের গল্প শুনব।

তার দু'দিন পর বন্ধু শাওন কাদির অাইয়ুবকে নিয়ে পপুলারে গেলে সূচনার সাথে আমার বেশ ঘনিষ্ঠতা হয়ে যায়। ওর চোখের চাহনিতে বুঝতে পারি ও কিছু একটা বলতে চায়। সেদিন ওর চন্দ্রনাথ ছবির কিছু শুটিং দেখে চলে আসি। আসার আগে বেশ কিছু ছবি তুলি আমরা।

এর কয়েকদিন পর ছিল একুশে ফেব্রুয়ারি। একুশের সকালে বন্ধু শাওনের ভক্সওয়াগন গাড়িতে করে বাংলা একাডেমির বই মেলা দেখে একটা রিস্টুরেন্টে বসলে দেখি তসলিমা নাসরিন ও রুদ্র একটা টেবিলে বসে চা খাচ্ছে। তসলিমা আমাদের চিনলো কিনা জানি না। জানোতো আমরা এক সময় চিত্রালীর আপনাদের চিঠি পেলাম বিভাগে লিখতাম। এখন সে বিখ্যাত লেখক। যাকগে সে কথা। আমি আর শাওন চা খেয়ে বাংলা একাডেমী থেকে বেরিয়ে ছুটলাম সূচনার  কল্যাণপুরের ফ্ল্যাটে।

শাওন ওর বাবার কচ্ছপের মতো দেখতে ভক্সওয়াগান গাড়িটা চালিয়ে অামাকে সূচনাদের বাসায় নিয়ে গেল। ভেতরে গেলে পরে শাওনকে ড্রইংরুমে বসিয়ে সূচনা আমাকে নিয়ে গেল ওর বেডরুমে। কিছু কথাবার্তা হল। বুঝলাম ও আমার প্রতি ঝুঁকে পড়েছে। তারপর আমাদের প্রেম হয়ে গেল। ওর দিক থেকেই প্রস্তাবটা এল। আমার প্রেমে পড়েছে নায়িকা সূচনা। বেশ উচ্ছসিত হলাম। আপ্লুতও হলাম। আমি নায়িকার প্রেমে পড়ে গেলাম। অনেক গল্প হল সেদিন। বিদায় নেয়ার সময় সূচনা ওর দরজায় পথ আগলে আমাকে বুকে চেপে জাপটেধরে সজোরে চুমু খেল। আমি কেঁপে ওঠলাম। হতোভম্বও হলাম। ভালোও লাগল। একজন নায়িকা আমাকে চুমু খেল, ভালোবেসে ফেলেছে - এক ধরনের ভালোলাগা নিয়ে ফিরে এলাম।

সবাই সমস্বরে বললো,

-চাপাবাজির আর জায়গা পাসনা! এটা তোর কতো নম্বর গুলরে চাষী?

আমি হাসলাম। মনে মনে বললাম সত্য একটা ঘটনাকে ওরা গুল বলছে! বলুক।
Share on Google Plus

About Shraboni Parbat

This is a short description in the author block about the author. You edit it by entering text in the "Biographical Info" field in the user admin panel.