ত্রিপুরার উপন্যাস : গোবিন্দ ধর

ত্রিপুরার উপন্যাস : গোবিন্দ ধর
ত্রিপুরার উপন্যাস : গোবিন্দ ধর


প্রায় শতবর্ষ আগে একটি উপন্যাস ছাপা হয়েছিলো ত্রিপুরায় এই কথা ভাবলেই ভালো লাগে।তখন ছিলো না তেমন পরিবেশ। ছিলো না উন্নত ছাপাখানা।গদ্য প্রবন্ধ ছাপারই সমস্যা তথাপি ত্রিপুরায় একটি উপন্যাস ছাপা হয়।'রবি' পত্রিকা সে দায়িত্ব নিয়ে ত্রিপুরাকে গৌরবান্বিত করলো।আজও রবির এই দায়িত্ব আমাদের সময়কে আলোকিত করে।

১৮৬০ সালে ত্রিপুরার প্রথম লিটল ম্যাগাজিন 'ত্রিপুরা জ্ঞান প্রসারিনী' প্রকাশিত।রাধাকিশোর মানিক্যের পৃষ্টপোষকতায় প্রকাশ হয় 'বার্ষিকী'১৮৭৬ সালে।১৮৯০ সালে 'পঞ্চপণ্ডিত' আর ১৯০৩ সালে প্রকাশ হয় 'ধুমকেতু'।

ত্রিপুরার সাহিত্যে 'রবি 'মাইল ফলক।নরেন্দ্র কিশোর দেববর্মা সম্পাদিত 'রবি'তেই ত্রিপুরার প্রথম উপন্যাস'খাঁচার পাখি'প্রকাশিত হয়।রবির প্রথম বর্ষ বৈশাখ-চৈত্র সংখ্যা ১৯৩৪সালে প্রকাশিত।সেই সংখ্যায় পরিমলকুমার ঘোষের 'খাঁচার পাখি''প্রকাশিত হওয়ার মধ্যে দিয়েই ত্রিপুরায় উপন্যাসের হাতে খড়ি।

"খাঁচার পাখি"র একটি অংশ:

"বাহির হইতে ক্রমাগত ধাক্কা খাইয়া এই গৃহকোণের জীবটি এমন করিয়া কোণঠাসা হইয়া পড়িয়াছিলো যে সে নিজেই অজ্ঞাতে ভিতরে ভিতরে নিঃসঙ্গতায় একটু একটু করিয়া অসহিষ্ণু হইয়া উঠিতেছিল।তাই আজ যখন বাহিরের আলো-রূপ-শব্দ-গন্ধের বিচিত্র অর্ঘ্যভার তাহার অন্ধকার নির্জনতার মধ্যে বহন করিয়া আনিল, তখন তাহাকে বরণ করিয়া লইতে হেমন্ত এতটুকু কুণ্ঠা অনুভব করিল না"

তারপর সব ইতিহাস সকলেরই জানা।প্রায় চুয়াল্লিশ বছর পর বীরেন দত্তের হাত ধরে ত্রিপুরায় আবার উপন্যাস চর্চা শুরু হয়।মাঝে কোন উপন্যাস প্রকাশিত হলেও অদ্যবদি আমাদের চোখে আসেনি।

বীরেন দত্তের'গ্রামের মেয়ে'ত্রিপুরার আধুনিক উপন্যাসের যাত্রাপথ মসৃণ করেছিলো।১৯৭৮সালে "গ্রামের মেয়ে"প্রকাশিত হয়।

তখনের গদ্য ভাষা ছিলো:বীরেন দত্তের "গ্রামের মেয়ে"র অংশে:

"আমরা কাজের ক্ষেত্রে এক।মাঠে নামলে সকল কৃষকই চাষী।কলে-ফ্যাক্টরীতে সকল মজুরই শ্রমিক।কর্ম দুনিয়ার সৎভাবে জীবন উপায় অর্জনের কাজে... সমাজের জীবন রক্ষার কাজে আমরা সর্বদাই এক আছি-আজ দাবী আদায়ের কাজে এক হতে পারবো না-সেই কি কথা-কখখুনি নয়।এতটুকু পড়িয়া সমর গুপ্ত উল্লাসে এতখানি অধীর হইয়া পড়ে,সে সহসা দুই বাহুতে ঊষাকে জড়াইয়া ধরিয়া আবেগে বলিয়া উঠে :ঊষা, ঊষা,ঊষা,তুই আশ্চর্য -তুই মহামতী প্রতিভাশালী মেয়ে...।"


"খাঁচার পাখি"ও "গ্রামের মেয়ে"দুটি উপন্যাসের দুটি অংশ তুলে দিয়েছি পাঠকের কাছে ধরা পড়বে সময়ের সাথে সাথে ত্রিপুরার উপন্যাসের ভাষাশৈলীর পরিবর্তনের দিক।এই সময় দেশ ভাগসহ নানা পট পরিবর্তনের মধ্যে দিয়ে ত্রিপুরার উপন্যাসেও ভাষারীতি পট বদল পরিলক্ষিত। কথাকাররা সময়ের সাথে সাথে তাঁদের গদ্য ভাষার বুননেও এনেছেন আধুনিকতার ছুঁয়া।

এই প্রবন্ধে আমি ত্রিপুরার উপন্যাসের একটি সূচী তুলে ধরলাম।এই সূচী পূর্ণাঙ্গ নয়।আলোচনার সুবিধারর জন্য আলোকপাত মাত্র।আমার তালিকায় হয়তো অনেক উপন্যাসের নাম আসেনি।আপনারা কমেন্ট করলে বললে আমি পূর্ণাঙ্গ করবো এই তালিকা।


খাঁচার পাখী:পরিমলকুমারঘোষ-১৯৩৪(রবি)

গ্রামের মেয়ে:বীরেন দত্ত-১৯৭৮

লংতরাই:বিমল সিংহ

লংতরাই আমার ঘর:নৃপেন চক্রবর্তী

হাচুক খুরিঅ:সুধন্বা দেববর্মা(ককবরক)

ঠিকানা কিরাত ভূমি:নন্দকুমার দেববর্মা

অগুরুগন্ধা:ভীষ্মদেব ভট্টাচার্য

বিপন্ন:সমরজিৎ সিংহ

ট্রা-রা-রা-রা:সমরজিৎ সিংহ

আলান:সমরজিৎ সিংহ

অন্তর্জাল কথা:সমরজিৎ সিংহ

রক্ত মাংসের শরীর:দীপক দেব-১৯৯৪

পরিত্যক্ত প্রদেশ:দীপক দেব১৯৯৫

পারিজাত বৃক্ষ:দীপক দেব-১৯৯৭

প্রিয়ভূমি:অনুপ ভট্টাচার্য-২০০১

অগ্নিসূত্র:দুলাল ঘোষ-২০০০

ছদ্মবাস:দুলাল ঘোষ-২০০১

তবুও মানুষ:প্রদীপ সরকার-২০০৪

অন্য মানুষ:প্রদীপ সরকার-২০০৫

জন জীবন যুদ্ধ :প্রদীপ সরকার-২০০৮

অন্ত্যজ:কার্তিক লাহিড়ী

দিন রাত্রির মাঝখানে-১৯৯২

পোড়া পতাকা লাল পাণ্ডুলিপি :সত্যজিৎ দত্ত

অমীমাংসিত নদী:বিশ্বজিৎ দেব-১৯৯২

ছায়ানট:নির্মল দত্ত

খঙ:শ্যামলাল দেববর্মা(ককবরক)

খঙ(বাংলা অনুবাদ:সুরঞ্জন কুণ্ডু চৌধুরী)

তঙখাই নায়তুগুই:শ্যামলাল দেববর্মা(ককবরক)

বুখারি:শ্যামল ভট্টাচার্য-১৯৯৭

লোদ্রভার কাছাকাছি :শ্যামল ভট্টাচার্য -২০০৯(স্রোত)

দ্বীপান্তরে ফুল ফুটেছে:শ্যামল ভট্টাচার্য

(স্যন্দন শারদীয়)

বাঞ্ছা কল্পতরু:শ্যামল ভট্টাচার্য (মুখাবয়ব)

মহাসত্যের বিপরীতে:শ্যামল ভট্টাচার্য

ওপারে ফ্রাউনো, ট্যাবিশ...':শ্যামল ভ্ট্টাচার্য- কুবোপাখি

উর্বর ছায়া:মাধুরী লোধ-১৯২-৯৩

ঝিঁ ঝিঁ গায় পল্লীগীতি :মাধুরী লোধ-১৯৯৩

অভিমন্যুর তৃণ:মাধুরী লোধ-২০০০

প্রতিমার বৌদি :মাধুরী লোধ-২০০৩

মেঘলায় চাঁদ:মাধুরী লোধ-২০০৮

মহুরী চরের মানদা: মাধুরী লোধ-২০০১০

সাধু ভাই হরে হরে:মাধুরী লোধ- ২০১৪(আরোহন পূজা সংখ্যা)

শান্ত বালা হাসে:মাধুরী লোধ:২০১৮(ত্রিপুরা দর্পণ পূজা সংখ্যা)

জেলের ভেতর জেল:মীনাক্ষী সেন বন্দ্যোপাধ্যায় -১৯৯৩

হাজতি নম্বর মেয়াদী নম্বর:মীনাক্ষী সেন বন্দ্যোপাধ্যায় -১৯৯৪

মাগো:মীনাক্ষী সেন বন্দ্যোপাধ্যায় -২০১৫(মুখাবয়ব)

আগুনের পুত্র কন্যা :দীপালী ভট্টাচার্য -২০০০

বিধগ্ধ ধরিত্রী :দীপালী ভট্টাচার্য -২০০২(ত্রিপুরা দর্পন)

যোগ্য কন্যা:দীপালী ভট্টাচার্য-২০০০

ভূবন সীমান্তে :কল্যানী ভট্টাচার্য -২০০১

লংতরাই কুইন :কল্যানী ভট্টাচার্য -২০০৩

পথের ভূবন :কল্যানী ভট্টাচার্য -২০০৪

অস্তরবির আলো:কল্যানী ভট্টাচার্য

খোলা জানালায়:টগর ভট্টাচার্য -২০০১

অববাহিকা:সুনন্দা ভট্টাচার্য

ছাঁচ তলায় রোদ:সুনন্দা ভট্টাচার্য -২০০৩

বিপ্রতীপ :সুনন্দা ভট্টাচার্য -২০০৮

আরেকটু বসেন না:সুনন্দা ভট্টাচার্য -২০০৯

পলাশ কথা:সুনন্দা ভট্টাচার্য -২০০৯

তুষের আগুন:সুনন্দা ভট্টাচার্য -২০১১

বাহুদুর শাহের ফরমান:সুনন্দা ভট্টাচার্য :২০১৩

ঝাপসা বিহান:সুনন্দা ভট্টাচার্য -২০১৪

সুবল পুরের রূপকথা:সুনন্দা ভট্টাচার্য -২০১৫

পাঁচ পুরুষের উপাখ্যান :মুকুল খাসনবীস

সম্মিলন:দীপ্তি সেনগুপ্ত-২০০৯

শিরোনাম সুধা:(বর্তমান সময়:২০১০)

অমলিনের শিবাঙ্গী:নন্দিতা দত্ত(ত্রিপুরা দর্পন-২০১১)

ডিজাইনার না পুষ্প দর্জি:নন্দিতা দত্ত(ত্রিপুরা দর্পন-২০১৪)

মংলু মংলা:জয়া গোয়ালা

পার্বতীয়া:জয়া গোয়ালা-১৯৯৭

এই সীমান্তে:জয়া গোয়ালা-(পূর্বাভাস ১৯৯৮)

খোলা চিঠি:জয়া গোয়ালা-২০০০

দেয়াল:জয়া গোয়ালা-২০০৩

তবুও মাদল বাজে:জয়া গোয়ালা-২০০৩

মুর্গাঝুটির লাল ধুল:জয়া গোয়ালা-২০০৭

আগরতলা আনলিমিটেট:শঙ্খশুভ্র দেববর্মণ-২০১১(স্রোত)

ত্যুই:শঙ্খশুভ্র দেববর্মণ:২০১৭

মেঘবতী:শঙ্খশশুভ্র দেববর্মণ:২০১৮

কমলিনী উপাখ্যান :পল্লব ভট্টাচার্য -২০১২

বুনোগাঙের চর:শ্যামল বৈদ্য

উজানভাটি:শ্যামল বৈদ্য

ইতরবিশ্ব:শ্যামল বৈদ্য

জন্মবদল:শ্যামল বৈদ্য-২০১৮

চাকমা দুহিতা:শ্যামল বৈদ্য-২০১৮

লাল মাটির শিকারী:শ্যামল বৈদ্য:২০১৯

জীবন যেরকম:ননী কর(মৌমিতা)

১৯৮০:অতুল দেববর্মা-(ককবরক)

অচিন বৃক্ষ :হরিভূষণ পাল

যুদ্ধোত্তর:কিশোররঞ্জন দে

নদীর নাম বদলায়:কিশোরঞ্জন দে

ব্যবধান:মানসী চক্রবর্তী -২০১২

জীবনের খোঁজে এক অন্য গল্প :গৌরী বর্মণ (ত্রিপুরা দর্পন-১৪১৯)

তুমি রবে নীরবে এ হৃদয়ে:সেমা গঙ্গোপাধ্যায় -(মানবী-২০১৪)

ঈশ্বরী কথন:সুতপা দাস-২০১৮( গাঙচিল)

সোনার দুয়ারী ঘর রূপার দুয়ারী ঘর:সুতপা দাস-২০১৭

আইলাইনার:দিব্যেন্দু নাথ-(স্রোত:২০১৮)

সাম্যবাদী :জহর দেবনাথ -(স্রোত -২০১৮

চিরন্তন ভাবনা:জহর দেবনাথ

পাহাড়ী ফুল:জহর দেবনাথ

নদী থেকে হৃদয়ে:জহর দেবনাথ(ত্রিপুরা দর্পন)

দেওনদীর জল:পদ্মশ্রী মজুমদার-(স্রোত-২০১৯)

পাতাম কাঠের নৌকা:শুভাশিস তলাপাত্র

পথের প্রদীপ:প্রদীপ আচার্য

বানথাঙি::সুধাংশুবিকাশ সাহা

গোমতী:সধাংশুবিকাশ সাহা

সদাপূরাণ:অশোক দেব-২০১৮(পৌণমী)

অতলান্নতিকা:নন্দকুমার দেববর্মা(পৌণমী)

দূরের কুয়াশা:সূজয় রায়

ঊনপ্রেম:পৃথ্বীশ দত্ত(সোমবার)

অন্য এক নারী :পথ্বীশ দত্ত (প্রয়াস প্রকাশনী)

১৯৮০:বিমল চক্রবর্তী

গোমতীর অন্তস্তল :বিমল চক্রবর্তী

হৃদয় থেকে রাইমা:হারাধন বৈরাগী

উত্তরাধিকার:দেবব্রত দেব(অসমাপ্ত উপন্যাস-সূত্র আজকের ফরিয়াদ)


ত্রিপুরার সাহিত্যের ক্রমাগত বিস্তার করে যাচ্ছেন কথাসাহিত্যিক কবি সকলের সমবেত প্রচেষ্টায়।প্রতিবছর প্রকাশ হচ্ছে নতুন নতুন উপন্যাস।এই তালিকায় লিটল ম্যাগাজিনে প্রকাশিত সব কটি উপন্যাসও তালিকাভুক্ত করতে পারিনি।সাকুল্যে ত্রিপুরায় ১০০-১৩৫টি উপন্যাসের গল্প শুনা যায়।যা আমার পড়ার বিস্তৃতি কম হেতু সব কটি উপন্যাস তালিকাভুক্ত করতে পারিনি।এখন দেশভাগ,ত্রিপুরার স্থান,নদী-নালা উঠে আসছে উপন্যাসে।

আমার বিশ্বাস আলোচক গবেষকরা এগিয়ে এলে এ তালিকা সমৃদ্ধ হবে।
Share on Google Plus

About Shraboni Parbat

This is a short description in the author block about the author. You edit it by entering text in the "Biographical Info" field in the user admin panel.