কালীঘাট ফলতা রেলওয়ে : পিনাকী চৌধুরী
সেইসব সাদা কালো আবছা দিনে কু ঝিকঝিক শব্দে রেল ছুটতে থাকতো ফলতার দিকে ! ৪৩ কিলোমিটার দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে সেই ট্রেনকে অতিক্রম করতে হত ১৮ টি স্টেশন ! অত্যন্ত ঘরোয়া এই রেল যোগাযোগ তখন ছুটতো কখনো কারোর বাড়ির উঠোনের পাশ দিয়ে, কখনও বা আবার পুকুরের পাশ দিয়ে কু ঝিকঝিক শব্দে নিজ গন্তব্যে ছুটে চলতো ! স্থানীয় মানুষজন এই রেলকে নেহাতই আদর করে ডাকতো 'ম্যাকলিড সাহেবের গাড়ি' বলে। হ্যাঁ, সুদূর অতীতের সেইসব দিনে চক্র রেল বাজেট মেট্রো রেল ছিল না ! ছিল না এখনকার মতো এই ইঁট কাঠ কংক্রিটের জঙ্গল ! কিন্তু অবশ্যই ছিল এই রেল যোগাযোগ!
১৯১৭ সালের ২৮ মে ম্যাকলিয়ড এন্ড কোম্পানী এই রেল পরিষেবা চালু করে কালীঘাট থেকে ফলতা পর্যন্ত। যদিও তখন বেহালার ঘোলসাপুর থেকে ফলতা পর্যন্ত রেল যোগাযোগ স্থাপিত হয় , আর ১৯২০ সাল নাগাদ মাঝেরহাট পর্যন্ত রেল লাইন সম্প্রসারিত করা হয় । রচিত হয় এক নতুন অধ্যায় !এখানে বলে রাখা ভাল যে, তখনকার দিনে রেল মানচিত্র অনুসারে কালীঘাটে মা কালীর মন্দিরে যেতে গেলে নামতে হত কিন্তু মাঝেরহাট স্টেশনেই ! আর তারপরেই ক্রমে ক্রমে সেই কালীঘাট ফলতা রেলওয়ে সংক্ষেপে হয়ে গেলো কে .এফ.আর ! যার সাক্ষী বহন করে চলেছে এখনকার কে.এফ.আর মাঠ ! হ্যাঁ , এই বিস্তীর্ণ বেহালা অঞ্চলে অনেকদিন ধরেই বসবাস করে চলেছে এই প্রতিবেদক !
![]() |
পিনাকী চৌধুরী |
আর সম্ভবতঃ তারই পরিণতি এই কালীঘাট ফলতা রেলওয়ে ! সেইসব সহজ সরল অনাড়ম্বর জীবনে পুকুর থেকে মাছ তুলে কিম্বা শহর থেকে খবর আনার নিমিত্তে রেল পরিষেবার ওপর অনেকেই ভরসা করতেন । সময় থেমে থাকেনি! তারপর টালি নালা দিয়ে বয়ে গেছে অনেক জল ! ভারত স্বাধীন হওয়ার পরে ১৯৫৭ সাল নাগাদ ম্যাকলিড সাহেবের কোম্পানি এদেশ থেকে ব্যাবসা বাণিজ্যর পাত্তারি গোটায় ! সেইসঙ্গে হারিয়ে যায় কু ঝিকঝিক শব্দ ! তবে আজকের বেহালার জেমস লং সরণী কিন্তু সাহেবের স্মৃতিচিহ্ন বহন করে চলেছে সসম্মানে! হ্যাঁ , অতীতের সেই রেল পুরাণের বিবর্ণ ইতিহাস বইছে শহর !
0 Comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন