![]() |
বিপন্ন হতে বসেছে আজ টাইপ রাইটার : পিনাকী চৌধুরী |
বিপন্ন হতে বসেছে আজ টাইপ রাইটার : পিনাকী চৌধুরী
অতীতে একসময় দিনভর অবিরত খটখট শব্দকে সঙ্গী করে প্রায় সারাদিনই কর্মব্যস্ত থাকতেন টাইপ রাইটিস্টরা । আজ থেকে বিশ - পঁচিশ বছর আগেও আভিজাত্যে এবং কদরে টাইপ মেশিনগুলির চাহিদা ছিল আকাশছোঁয়া ! দলিল দস্তাবেজ থেকে শুরু করে পত্র পত্রিকার খবর , অথবা যেকোনো নথিপত্রের জন্য ছাপোষা মধ্যবিত্তের একান্ত ভরসার জায়গা ছিল এইসব টাইপ রাইটার , নির্দ্বিধায় তাঁরা তখন টাইপ রাইটিস্টদের দ্বারস্থ হতেন । আর টাইপ রাইটিস্টদের এই জীবিকা তখন রমরমিয়ে চলতো । কিন্তু সেসব এখন সোনালী অতীত ! বিধি বাম টাইপ রাইটিস্টদের । আধুনিক প্রযুক্তির দৌলতে চরম অনিশ্চয়তার মুখে আজ এই টাইপ রাইটার , বলা ভাল , অস্তিত্বের সংকটে টাইপ রাইটিস্টদের এই জীবিকা । কিন্তু প্রথম কবে আবিষ্কৃত হয়েছিলো এই টাইপ রাইটার ? উত্তরের স্বপক্ষে বলা যায়, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একজন যন্ত্রপ্রকৌশলী ক্রিস্টোফার শোলস্ ১৮৬৬ খ্রিস্টাব্দে প্রথম আধুনিক ধাঁচের টাইপ রাইটার মেশিন আবিষ্কার করেন , যদিও প্রথম উদ্ভাবিত টাইপ রাইটারে বিদ্যুতের ব্যবহার ছিলনা ।
এরপর ১৮৭৪ খ্রিস্টাব্দে রেমিংটন রান্ড কোম্পানি সাধারণ মানুষের কথা ভেবে শোলস্ এন্ড গ্লিডেনস্ ব্র্যান্ডের প্রথম টাইপ রাইটার বাজারে নিয়ে আসে । সময় থেমে থাকেনি ! জীবনের চাহিদা ও জীবিকার স্বার্থে পরবর্তীকালে আরও অত্যাধুনিক ইলেকট্রনিক টাইপ রাইটার বাজার দখল করে । এরপর রমরমিয়ে চলতো টাইপ রাইটার । বাঙালী তথা সারা বিশ্ববাসীর কাছে এই টাইপ রাইটারের গ্রহণযোগ্যতা ছিল অপরিসীম , পরম আদরেরও বটে । অত্যাধুনিক টাইপ রাইটারের প্রযুক্তিতেই উন্নতভাবে সাদা কাগজে ঝকঝকে ছাপা পাওয়াটাই যেন প্রচলন হয়ে গিয়েছিল । কিন্তু এই একবিংশ শতাব্দীতে যখন চারিদিকেই উন্নত প্রযুক্তির হাতছানি, তখন টাইপ রাইটারের কি অবস্থা তা জানতে এই প্রতিবেদক হাজির হয়েছিল আলিপুর কোর্টে । সেখানে এক টাইপ রাইটিস্ট আলাউদ্দিন মোল্লা জানালেন " অতীতে একসময় আমাদের এই জীবিকা রমরমিয়ে চলতো , এখন সেখানে কিছুটা হলেও ভাটার টান । আমাদের এখানে বর্তমানে ১০০ র ওপরে টাইপ রাইটিস্ট কাজ করেন " ।
গাছতলায় বসে কথাপ্রসঙ্গে বললাম " আপনাদের আয় কি কমেছে ?" আলাউদ্দিন মোল্লা জানালেন " হ্যাঁ, সেতো অবশ্যই ! আজকাল বেশিরভাগ ফ্লাইং কাস্টমারই কম্পিউটার থেকে প্রিন্ট আউট নিয়ে উকিলের কাছে যান । আর এখানে মাসের দ্বিতীয় ও চতুর্থ শনিবার বাদ দিয়ে আমরা টাইপ রাইটিস্টরা সোম থেকে শনিবার পর্যন্ত বসি " । এই প্রতিবেদক জানতে চাইলো " আপনি সুদূর ভাঙড় থেকে এই জীবিকার টানে ৩০ কিলোমিটার পথ উজিয়ে এখানে আসেন , পোষায় আপনার ?" আলাউদ্দিন মোল্লা ম্লান হেসে জবাব দিলেন " কি করবো দাদা, প্রথম থেকেই এই পেশার সাথে যুক্ত আমি । কম্পিউটার এবং ইন্টারনেটের দৌলতে আমাদের এই জীবিকা আজ চরম সঙ্কটের মুখে , আয়ও কমেছে অনেক । এইবয়েসোতো আর অন্য পেশায় যেতে পারিনা , তাই আজও এই টাইপ রাইটারকে আঁকড়ে ধরেই বাঁচার চেষ্টা করে যাই " !
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন
(
Atom
)
0 Comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন