আঁতেল : পিনাকী চৌধুরী

আঁতেল : পিনাকী চৌধুরী
আঁতেল : পিনাকী চৌধুরী

তীব্র শ্লেষ অথবা ব্যঙ্গ করে হামেশাই আমরা অপরকে ' আঁতেল' বলে সম্বোধন করে থাকি । আর আমাদের রকের ভাষায় বলতে গেলে, এই 'আঁতেল ' শব্দটির দ্বারা অপরকে চাটা বোঝায় ! আর এই আঁতেল শব্দটি মূলত 'বুদ্ধিজীবী থেকেই এসেছে ! সে বহুদিন আগেকার কথা , পঞ্চাশের দশকে একদল বুদ্ধিজীবী কফি হাউসে ধোপদুরস্ত সাদা পাঞ্জাবি পরিহিত হয়ে মুখে কাঁচি সিগারেট নিয়ে আড্ডায় মেতে উঠতেন ! আর এমন কোনো বিষয় নেই যে, তাঁরা জানতেন না ! এই বিশেষ বুদ্ধিজীবী সম্প্রদায় নিজেদের জাহির করতে ভালোবাসতেন এবং নিজেদের সেরার সেরা ভাবতেন ! সেই সময় থেকেই অনেকেই এই বুদ্ধিজীবীদের আড়ালে আবডালে 'আতেল' বলে ব্যঙ্গ করতেন !

এই আঁতেল সম্প্রদায় কিন্তু আজও বহাল তবিয়তে বেঁচে আছেন একাডেমি অব ফাইন আর্টস কিম্বা নন্দন চত্ত্বরে ! হ্যাঁ, আজও হয়তো তাঁদের কাঁধে ঝোলা ব্যাগ এবং অবশ্যই সাত দিনের না কামানো দাড়ি ! আর এই আঁতেল সম্প্রদায়ের কিন্তু পুঁথি গত বিদ্যার অভাব নেই, কিন্তু বিচার বিবেচনা ও কান্ডজ্ঞান নেই বললেই চলে ! বাস্তবে কোথায় কি বলতে হবে, তা তাঁরা জেনেও না জানার ভান করে ! এ শহরে আবার অল্প বয়সী আঁতেলও রয়েছে ! যেমন ধরুন, কিছুদিন আগেই এক আঁতেল প্রেমিক তার প্রেমিকাকে হোয়াটস অ্যাপে সাত সকালেই ম্যাসেজ করে বসলো " রমা , আজ তোমার পটি হয়েছে ?" ও প্রান্ত থেকে দু'টো ভালোবাসার ইমোজি তৎক্ষণাৎ চলে এলো !

আঁতেল প্রেমিক তখন দ্বিগুণ উৎসাহে বাংলায় টাইপ করে বসে " প্রিয় রমা , ( কমা) / তোমার প্রেম আমার হৃদয়ে লাগিয়েছে দোলন :-( সেমিকোলন)/  আচ্ছা, তুমি আমি কি অভিন্ন ?( জিজ্ঞাসা চিহ্ন) / তোমার সঙ্গে আমার আমার দেখার স্থান বিবেকানন্দ পার্ক!  ( এক্সক্লাইমেশন মার্ক ) । কিছুক্ষণ পরে ওপ্রান্ত থেকে রমা রিপ্লাই দিলো " তোমার সঙ্গে আমার পুরো ব্যাপারটাই ফ্লপ . ( ফুলস্টপ )!  হোয়াটস অ্যাপের এই কথোপকথন বন্ধুমহলে জানাজানি হতেই পাড়ার রকে সেই আঁতেল প্রেমিককে তীব্র শ্লেষ ও বিদ্রুপ মিশিয়ে বলা হল " আঁতেল টু দি পাওয়ার ইনফিনিটি ! " তবে আপাতদৃষ্টিতে আজকাল অনেকেই আঁতেল সাজতে পছন্দ করেন ! অন্ততপক্ষে সুকৌশলে অপরের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে অনেকেই আঁতেল সাজেন!  বিতর্ক যাই থাকুক না কেন, এই ' আঁতেল' শব্দটি কিন্তু সুপ্রাচীন !

মহাভারতে দ্রৌপদীর সয়ম্বর সভায়  ' নিপুণা বুদ্ধিজীবিন' কথাটি প্রথম ব্যবহৃত হয় ! তবে এই একবিংশ শতাব্দীর চরম ব্যস্ততার যুগে আজকাল অনেকেই অপরকে সমালোচনায় বিদ্ধ করতে শেষ অস্ত্র হিসেবে এই ' আঁতেল' শব্দটিকে ব্যবহার করেন এবং চূড়ান্ত অপদস্থ ও হেয় প্রতিপন্ন করেন ! পরিশেষে বলি, এটা ইন্টারনেটের যুগ ! মানুষের হাতে সময় পাওয়ার সময় কম ! মানুষ হয়তো হাসতে ভুলে গেছে ! সেই প্রেক্ষিতে লাফিং ক্লাবের গুরুত্ব বেড়েছে ! কিন্তু সেইসঙ্গে বেড়েছে অপরের ওপর হাসার প্রবণতাও .....বিশেষত এই  ' আঁতেল' শব্দটির দ্বারা !
Share on Google Plus

About Shraboni Parbat

This is a short description in the author block about the author. You edit it by entering text in the "Biographical Info" field in the user admin panel.