পরমাত্মীয় : মৃদুল শ্রীমানী

পরমাত্মীয় : মৃদুল শ্রীমানী
পরমাত্মীয় : মৃদুল শ্রীমানী

বাংলার প্রান্তিক জেলাটির ঐতিহ্যবাহী শহরটিতে গেলাম। গেলাম প্রমোশন সূত্রে বদলি হয়ে। হোটেলে বা লজে থাকা ইচ্ছা নয় বলে আমার থাকার ব্যবস্থা হল এক অধ্যাপকের বাড়িতে। অধ্যাপক প্রয়াত। বাড়ি ঘর আসবাবে সম্ভারে সচ্ছলতা আর সমৃদ্ধি যথেষ্ট। প্রয়াত অধ্যাপকের ষাটোর্ধ পত্নী আমার দায়িত্ব নিলেন। প্রৌঢ়া দুবেলা রেঁধেবেড়ে আমায় খাওয়ান। হ্যাঁ, কাজের বেতনভুক সহযোগিনী আছেন। মনের মতো বইগুলি আলমারি থেকে অবাধে টেনে পড়ি। দুবেলা বেশ ভাল খাবার দাবার। মাঝে খানিক ক্ষণ অফিস। সেখানেও কাজ দেওয়া হয় নি। আমায় কোন ব্লকে দেওয়া হবে সেই নিয়ে গবেষণা চলছে। কাজ চাইলাম আমার আশ্রয়দাত্রীর কাছে। তিনি কাজ দিলেন আমায় সন্ধ্যার পর রবীন্দ্র শরৎ তারাশঙ্কর প্রমুখের লেখা থেকে কিছু কিছু পড়ে শোনানো ও আলোচনা করা। তিনি উৎফুল্ল। আলমারির বইগুলি কেউ তবু ঘাঁটছে। আরো কাজ চাইতে সকাল বিকেল ছাতের টবের গাছে জলসেচনের কাজ দিলেন। ছাতেই জলের কল। তাতে নলযোগে টবে জল দেবার কাজ। দু বেলা রীতিমতো ভাল খাচ্ছি। খুব সংকোচে একদিন বলে বসলাম - "আমি কিছু দায়িত্ব নিতে চাই।"
"করছো তো। গাছে জল দিচ্ছ। সন্ধ্যায় বই পড়ছ।"
আমার মনোগত ইচ্ছে যে আমার আহার বাসস্থান বাবদে কিছু অর্থমূল্য জমা করি।
শুনে ক্ষেপে গেলেন বৃদ্ধা।
"জানো, তোমাকে আমি কি চোখে দেখি?"
অপলক তাকিয়ে আছি দেখে তিনি বললেন, "তুমি যখন লাগেজ নিয়ে রিকশায় এসে আমাদের দুয়োরে পৌঁছলে, আমার মনে হল কতদিন পর ঘরের ছেলেটা ঘরে ফিরল।"

দুটো শ্রান্ত চোখ জলে টলমল করে উঠল।
Share on Google Plus

About Shraboni Parbat

This is a short description in the author block about the author. You edit it by entering text in the "Biographical Info" field in the user admin panel.