কিশলয় গুপ্ত'এর একগুচ্ছ কবিতা

কিশলয় গুপ্ত'এর একগুচ্ছ কবিতা
কিশলয় গুপ্ত'এর একগুচ্ছ কবিতা

বাউলানী_১০

একদিন গতজন্ম রেখে আসবো তোমার বালিশে
স্মৃতির গাছে কোন ফুল নেই। একদম খালি সে

শুনেছি তোমার পাড়ায় এখন সকলে যন্ত্রচালিত
আঁচলের নিচে ভালো ছেলেরা ঘুমায়। গৃহপালিত

এদিকে আমার ধার দিনে হাজার ব্রন মুখময়
তারে সুর বাঁধলে সব তারা হাসে, বেশ সুখময়

দু'পায়ের নীচে পথ। পথের মাঝে পড়ে যাপন
অনেক ভেবেছি, জেনেছি আমিই আমার আপন

একদিন যাবতীয় কষ্টকে বলবো খালি চা
পান করে দুই পা মুড়ে বস রঙীন গালিচায়

চেয়ে দেখ গোটা আকাশ কেমন কালোয় গিলছে
তবু আগাপাশতলা ঘুরে নাচি- বাঁচি দিল সে

কোন জায়গা নেই এই মানচিত্রে বড় নালিশের
একদিন গতজন্ম রেখে আসবো তোমার বালিশে

১১
এসেই যখন পড়লি ঘরে বস
সামলে রেখে দূরন্ত সাহস

এই ঘরটায় চিল, শকুনও আসে
এবং তারা সবাই দেঁতো হাসে

সুযোগ পেলে ছোবল মারে ঠোঁট
তবুও কিছু অহম সামলে ওঠ

এসেই যখন পড়লি ঘরে থাক
কতই আসে চড়ুই'এর দল,কাক

চাল,ধান সব খুঁটে খুঁটে খায়
খাওয়া শেষে সবাই ফুটে যায়

তবুও যখন এলি বুকে- আয়
চোখ রেখেছি উপস্থিত হাওয়ায়

যখন ইচ্ছে চলে যাবে তো যা
আমার দরকার নেই সম্পর্ক খোঁজা।

                    ১২

একদিন শান্তিপুরের দিকে যেতে যেতে
পিছু ডাক শুনে ফিরে তাকিয়েছিলাম
তারপর আর একচুলও এগোতে পারিনি।

এদিকে নাগরিক অহংকারে বন্ধু ডাকে-
' কৃষ্ণনগর চলে এসো- কৃষ্ণনগর'
আমি তো পুরুষাকারে জপ তপ ভুলি
আমি তো শুধু ক্ষুধার গল্প লিখি।

চরিত্রের বিন্যাস করি সজ্ঞান শিল্পে
তসবি ধরে রাত কাটানো ঠিক পোষায় না
আসে না আপোষে ওম পোহানো।

বুক থেকে অনেকটা জল গড়িয়ে গেছে
এখন বয়সের সততায় শর্ত ভুলছি
কোন দিকে শান্তিপুরের খোলা পথ
ভাবছি কোন বাহনের প্রেমে পড়া যায়...

১৩
দীপাধারে আগুনের মান্যতা দিলে
রাতভর আলোর ধ্যান চলবে।
মানুষের বর্ণপরিচয় জুড়ে দিন
অহংকারী সূর্যের পরম্পরা।

একমুঠো মাটির যাচ্ছেতাই বিশ্বাসে
ফসলের জয় গান বাঁধা হয়।
এই জন্মের আঘোরী প্রকোপে
দুঃস্বপ্ন হাঁটে সাহসী মহড়ায়।

সুতরাং আঁধারের লঙ্কা কাণ্ড থাক
লেজের কাহিনী আবারও নাচুক
পথ মাড়িয়ে চলে প্রান্তিক চোখ।

দীপাধারে আলোর অনাত্মীয় ধ্যান...

১৪
ঝুলবারান্দায় খালি আরাম কেদারা দেখলে
চৌকাঠে প্রনাম সারি মনে মনে।

জানালা জুড়ে যতটা রোদ স্বাধীনতা পায়
দু'হাতে বন্দী করতে পারি তাকে।

"এই বিছানা গোছানো স্বভাবে আয় বজ্জাত
নাহলে ছুঁড়ে দেবো অকাল বৃষ্টিতে"

প্রত্যেকটি পা সিঁড়ি ভাঙে সব নামতা ভুলে
শেষ পাতে ফলাফল হয় শূন্য।

এই সকল ভারী কথার ভীড়ে একজন ত্যাগী
আত্ম প্রবঞ্চনায় মগ্ন জীবনভর।

খোলা ছাদের উপর অনন্ত খোলা আকাশ থাকে
পায়ের নীচে মাটি থাকে না।

                      ১৫

সম্পর্কের দোহাই দিয়ে কয়লা হল চামড়া পুড়ে
তোমরা ছিলে লেপের নিচে ঘর থেকে আমরা দূরে

আমরা মানে ফুটপাতিয়া আমরা মানে গজব গজব
এক পকেটে ইনসানিয়াত এক পকেটে ছোট্ট মজব

আমরা মানে পদ্মপাতা আমরা বড় টলোমলো
রীতির কোন তোয়াক্কা নেই অসামাজিক তোমরা বলো

আমরা তেমন রাস্তা চিনি পথের হদিশ বাদল দিনে
বৃষ্টি এলে ঘরে ফিরি অল্প দামের ছাতা কিনে

বাদবাকিরা আলোর নিচে তেলে জলে হাত বাড়ানো
আমরা নামে আছি মায়ে খেদানো বাপে তাড়ানো

আমরা মানে জ্বলন্ত ধূপ মনের রাজা মুক্ত পাখী
আমরা সেই চামড়া পোড়া মৃত্যু কথায় উদাস থাকি।

                 ১৬

ঘরের হাওয়ায় স্নেহ পদার্থ ওড়ে অভ্যাসে-
বাসন কোসনে সকড়ি স্বপ্নের প্রবেশ হেতু
গরাদের ওপাড়ে সিঁধেল চোরের আনাগোনা
বাগান তছনছ করে দেয় নিশাচর
তখন আকাশে খন্ড চাঁদ হাই তোলে।

একদল সুখী লোক মিছিলে হাঁটে
মোমবাতি হাতে অনশন মঞ্চে বসে রাত
মানুষ হবার সদিচ্ছায় পাড়া গান শেষ করে
দুই পা বিছানার আয়তন মাপে।ওই দলের কোথাও শুধু আমি নেই।

বড় ভাঙচুর হয়ে যায় অবশ্যম্ভাবী জনরোষ
কেউ তো ভাতের থালা ফেলে উঠে আয়
বুক থাবড়ে অন্তত একবার বল
প্রেম মানে সব আকাশে এক ঝাঁক পরিযায়ী।
Share on Google Plus

About Shraboni Parbat

This is a short description in the author block about the author. You edit it by entering text in the "Biographical Info" field in the user admin panel.