নির্লজ্জ : রানা হেনা

রানা হেনা
  নির্লজ্জ

তাঁহাকে আজ বড় বেশি মনে পড়াতে নির্লজ্জের মত তাঁহাকে আবার চিঠি দিয়া বসিলাম। সেও প্রথাগত নিয়ম না ভাঙিয়া চিঠিখানি চক্ষুদ্বয়ের সামনে মেলিয়া অতঃপর রাখিয়া দিলো। বড় অভিমান করিয়া গাল ফুলাইয়া বসিয়া রহিলো। ভাবখানি এমন,  কী কথাই বলিবো এই নষ্ট ছেলেটির সঙ্গে। সত্যিই তো। আমাকে তো খানিকটা ভাবিয়া দেখিতে হইতো। কীরূপে এই অবাধ্য, অসভ্য এবং অন্য সম্প্রদায়ের  একটি বালকের সঙ্গে তাঁহার মতো ব্রাহ্মণ ও বনেদি পরিবারের ভদ্র মহাশয় কথা বলিবে? ইহা কী তাঁহার মত ব্রাহ্মণ মহাশয়ের জন্য শ্রেয়?    ইহাও তো ভাবিতে পারিতাম৷
নাহ৷  এমন ভুলটি আর করিলে চলিবে না।  ভদ্র মহাশয়ের একটু শান্তির বিধান প্রয়োজন বোধ করছি।  যদিও তাঁহার শান্তি বিধানের কী অধিকার থাকিবে এই অন্য সম্প্রদায়ের বালকটির। তাহা ভাবিলেই মাথে ঘুরিয়ে, চক্ষুদ্বয় উল্টিয়ে পড়িয়া থাকিতে হয়।
বড়ই অদ্ভুত  লাগে এই ব্রাহ্মণ মহাশয় ও এই বালকটির বন্ধুত্বের কথা ভাবিলে। তাঁহারা কত ভালো বন্ধুই না ছিলো।  শুধইু কী বন্ধুত্ব?  তাঁহারা যেন সহোদর হইয়া গেল দিনের পর দিন৷ যেন এক নাড়িতেই বাঁধা পড়িয়া আছে।
কিন্তু সেই সহোদর কিছুকাল পরেই বৈমাত্রেয় ভ্রাতায় পরিনত হইলো। এক্ষণে তাঁহারা সমাজের উঁচু ও নিচু বর্ণে বিভক্ত হইয়াছে। তাঁহাদের মাঝে আজ ভারত মহাসাগর আসিয়া দাড়াইয়াছে কেননা হিংসায় ইহারও অঙ্গ জ্বলিয়া যায় বটে। তাই ইহার অঙ্গের আগুন নেভাতে আমাদিগের মধ্যে অবস্থান ।
কিন্তু চিরকাল আমি বড়ই ছোট পরানের মানুষ বলিয়ে তাহাকে বারবার তাড়াইতে চাহিলাম। কিন্তু তিঁনি সযতনে ইহাকে স্থান দিলেন। কি আর করা যাইবে। তাঁহাকে তো আর কিছুই বলিতে পারি না। তাই তাঁহার পানে চাহিয়া থাকি। সেইখানেও যেন বড় দোষ হইলো। তিঁনি আবার আমাকে দেখা দিতেই চান না। তাই নিজেকে লুকিয়ে রাখিতেছেন এই অবাধ্য, অসভ্য ও অন্য সম্প্রদায়ের বালকটি থেকে।

আমি কী প্রকারে ইহা মানিয়া লই বলুন দেখি?  ইহা কি আদৌ সম্ভব আমার পক্ষে?
তাই অযথাই তাঁহার ফেরার অপেক্ষায় রহিয়াছি।  বুঝি ইহা অন্তহীন অপেক্ষা  ছাড়া আর কিছুই নয়। তবু কেন জানিনা ভাবিতে ইচ্ছে করে যে, সে ফিরিবে। এই বালকটির কাছে।
Share on Google Plus

About Shraboni Parbat

This is a short description in the author block about the author. You edit it by entering text in the "Biographical Info" field in the user admin panel.