আমার প্রেমিকাটি : তৈমুর খান

আমার প্রেমিকাটি : তৈমুর খান
আমার প্রেমিকাটি : তৈমুর খান


আমি দূর থেকে আকাশের তারার মতো ওকে দেখি। চিরদিন ও কিশোরী। একটুও বয়স বাড়ে না। আমার দুপুর গড়িয়ে যায়। ক্লান্ত বিকেল আসে। চোখে কান্নার দাগ মুছি। তবু ভিজে থাকে। কেমন যেন একাকিত্ব আমাকে আড়াল করে রাখে। কারও সঙ্গে কথা বলতে ইচ্ছে করে না। ঝাপসা অন্ধকারে ফাঁকা উঠোন ভরে যায়। তখন ও আসে । বেণী দুলিয়ে হাসে । ডান হাতখানা বাড়িয়ে দেয়। এত স্নিগ্ধ হাত। আমি আশ্চর্য হই। বিশ্বাস হয় না। একবার চুমু খাই। দুবার খাই। বারবার খাই ।
     একটি হাত আমাকে বাঁশিব় মতো বাজায়। কবিতা লেখায়। শাসন করে।
     একটি হাত শুধু আমাকেই ডাকে। সারাজীবন ডাকে । ডাকতে ডাকতে প্রথম বর্ষা নামায়।
       এমনি করেই প্রেমিকাটি এসেছে। তখন ছোটবেলা। মাধ্যমিক। প্রেমিকাটি পঞ্চম। মাস্টার-ছাত্রী সম্পর্ক। একটু একটু করে ভালো লাগা। যত বড়ো হই ভালো লাগা লাফ দিয়ে এগিয়ে আসে। তারপর আমাদের দুজনের স্বপ্নে ঢুকে যায়। এক বছর দু-বছর দশ বছর চলতে থাকে। মাঝখানে আসে চোখের আড়াল। চিঠিপত্রে সংযোগ। মাঝখানে বয় নদী। তুমি যদি নৌকা ভিড়াও ওপার হই আমি। তুমি যদি হাতে হাত রাখো। চলতে পারি একসাথে।
      কিন্তু শেষপর্যন্ত নৌকা ভেড়েনি। একসাথে চলাও হয়নি। দুঃখের কবিতায় গড়িয়ে গেছে সময়। না পাওয়ার বেদনায় পুড়ে গেছে হৃদয়। জাত-ধর্ম তুলে কথা বলেছে চারপাশের মানুষ। প্রেমিকাটি সাহস পায়নি। ভেবেছে “কী হবে একটা প্রেম ছিন্ন করলে?"
      সমাজ এগিয়ে এসে ওকে প্রশ্ন করেছে —
      “তুমি কি সত্যি সত্যি প্রেম করেছ?"
       প্রেমিকাটি নিরুত্তর ।
       “বলো না?"
        আবার গভীর নিরুত্তর।
        এই নিরুত্তর কোনও সমাধান এনে দেয়নি। একদিন পথের মাঝে কথা বলতে গিয়ে হেনস্থা হতে হয়েছে অন্য লোকের দ্বারা। সেই অপমান আমাকে আরও জেদি করেছে। “তোমাকে ভুলব না মেয়ে, কোনওদিন ভুলব না।" প্রতিদিন অসুখের বিছানায় শুই। কীটসকে যেমন ফ্যানিব্রন একখণ্ড শুভরাত্রি লেখা কাগজ পাঠায়নি, আমাকেও তুমি পাঠালে না। সব প্রেমের উন্মাদনা ঝেড়ে ফেলে অন্য পুরুষের সঙ্গে ঘর করতে চলে গেলে। আমি এখানে নির্বাসিত জীবনযাপন করি। আর সাঁকো পেরোই। সূর্য অস্ত যাওয়া দেখি। ভোর হয়। কুয়াশায় জীবন খান খান হয়ে ঝরে পড়ে। ক্রমশ আমি মৃত হয়ে বাঁচতে থাকি।
        প্রেমিকাটির বাড়ির পাশ দিয়ে গেলে শুনতে পাই —
টেপে হিন্দিগান বাজছে । জানালা খোলা। নতুন শাড়ি পরে সে কলতলায় বাসন মাজছে। ওর হাতের চুড়ি বাজছে ঘন ঘন। শরীরে কী দারুণ লাবণ! সারাদিন টিউশানি করে বাড়ি ফেরা দুপুর। বড়ো বিষাদ পাই । তবু অদম্য প্রাণপিপাসা। বাড়ি ফিরে এসে লিখে ফেলি “বিবাহিতা প্রেমিকা" —

বেজে উঠছে বাসনকোসন
অদ্ভুত তোমার রাঙা দুটি হাত
কৃষ্ণটি কোথায় গেছে?

টিউশান সেরে রোদে রোদে
আমার সাইকেল
সারাদিন আমাকে ঘোরায়

টেপে বাজছে হিন্দিগান
একা তুমি কলতলায়
কৃষ্ণের জন্য কি আজ মাংস-ভাত?

ঝকঝকে থালায় মুখ ।
স্বপ্নে ঢুকে যাব —
তোমার পেটের ভ্রুণ হয়ে
ফিরে আসব আজকে রাতেই ।
Share on Google Plus

About Shraboni Parbat

This is a short description in the author block about the author. You edit it by entering text in the "Biographical Info" field in the user admin panel.