আদর্শ পিতা : ঈদারুল ইসলাম

আদর্শ পিতা : ঈদারুল ইসলাম
আদর্শ পিতা : ঈদারুল ইসলাম

সন্তান কে মানুষ করার ক্ষেত্রে বাবা-মা উভয়েরই ভূমিকা অনস্বীকার্য। একজন মা যেমন তাঁর সর্বস্ব দিয়ে সন্তান কে একটু একটু করে বড় করে তোলেন, নিজের সাধ-আহ্লাদ কে বিসর্জন দিয়ে । মায়ের ত্যাগের বিকল্প যে আর নেই তা বলার অবকাশ রাখে না, অনেকেই সেটা উপলব্ধি করতে পারি। এই বিষয়ে অনেকেই মাঝেমধ্যে লিখেও থাকেন। এক্ষেত্রে একজন বাবার ভূমিকা নিয়েও মুক্তকণ্ঠে স্বীকার করা তাৎপর্যময়। যদিও উভয় ক্ষেত্রেই ব্যতিক্রম রয়েছে। অনেক মা ই যেমন তাঁর দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ, ঠিক তেমনই অনেক পিতাই তাঁর কর্তব্যের থেকে পালিয়ে বাঁচতে চান ! কিন্তু বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায় যে শত অভাব অনটনেও একজন পিতা মায়ের মতোই সন্তানের জন্য অনেক ত্যাগ স্বীকার করে থাকেন।

                             ***

একটি ছেলে যখন বেড়ে উঠতে থাকে তখন তাঁর মধ্যে অনেক শারীরিক ও মানসিক পরিবর্তন হয়েই চলে। আর তারই জেরে আমরা পুরুষ কে একজন নারীর থেকে আলাদা পাই। অনুভূতির আত্মপ্রকাশে একজন পুরুষ অনেকটাই পিছিয়ে। উপরে লৌহ মানব আর ভিতরে মোমের ন্যায়। সেও কাঁদে ! হয়তো বা অশ্রু ঝরে পড়তে পারে না।

                             ***

পুরুষ তাঁর পৌরুষ কে পিতৃত্বের আচ্ছাদনের আড়ালে চাপা দেয়। একজন বাবা কে কী অমানবিক পরিশ্রমই না করতে হয় অবিরত, তার হিসেব কজনই বা রাখে ! যে ক্ষেত্রে কেবলই বাবার উপার্জনেই সংসার চালাতে হয়, সেই ক্ষেত্রে একজন বাবা কে তার সর্বস্ব খুইয়েও এনে দিতে হয় সন্তানের জন্য এক মুঠো হাসি ! সন্তানের আবদারে সাড়া দিতে গিয়ে একজন বাবা কে তাঁর সীমিত উপার্জনেই সংসার চালাতে গিয়ে নিজের অনেক কিছুই বিসর্জন দিতে হয়। অনেক সময় সীমাবদ্ধতার বাইরেও তাঁকে অনেক কিছুই করতে হয়। নিজের সাধ-আহ্লাদ কে বিসর্জন দিয়েই পালন করতে হয় এক বাবার গুরু দায়িত্ব ।

 নিজে শীতে কষ্ট করেও সন্তানের জন্য এনে দেয় পশমী পোশাক, নিজে জীর্ণ পোষাকেই কাজ চালিয়ে নেয়। অনেক পিতাকেই দেখেছি জীর্ণ কম্বলই তাঁর শীতের মরসুমে রাতের সম্বল আর দিনে ওটাই সাথী ! দেখেছি অনেক বাবাকেই একাকী যন্ত্রণায় কাঁদতে, চুপিসাড়ে সবার চোখের আড়ালে ! সন্তানকে কতটা ভালো বাসেন তা হয়তো বা ভাষায় প্রকাশ করতে পারেন না; কিন্তু তাঁদের ইচ্ছাপূরণে অতিরিক্ত প্রয়াস করতে তিনি কখনওই পিছুপা হন না ! তা নিজেকে বঞ্চিত করেই হোক না কেন। বর্ষায় যাতে সন্তানের কষ্ট না হয় সেই কারণেই তাঁদের জন্য রেইন কোট বা ছাতা এনে দিয়ে অনেক পিতাকেই ভিজতে দেখেছি। দেখেছি তাঁর তিলে তিলে সঞ্চিত অর্থ সন্তানের জন্য উজাড় করে দিতে। নিজে অসুস্থ হয়েও আগে সন্তানের জন্য তিনি ওষুধ এবং পথ্যের ব্যবস্থা করেন। একটি বারের জন্যও ভাবেন না যে শেষে যখন কর্মক্ষমতা হারাবে তখন কী হবে, কে দেখবে তাঁকে ! এটাই একজন আদর্শ 'বাবা'র চরিত্র।
Share on Google Plus

About Shraboni Parbat

This is a short description in the author block about the author. You edit it by entering text in the "Biographical Info" field in the user admin panel.