মেঘ-মল্লার : আরতি ধর

মেঘ-মল্লার : আরতি ধর
মেঘ-মল্লার : আরতি ধর


ওরা কিন্তু যমজ ভাই, তবুও যেহেতু মেঘের জন্ম মিনিট পনেরো আগে তাই মল্লার ওকে দাদা বলেই ডাকে। যমজরা নাকি একরকম হয় সব ব্যাপারে ই, এক্ষেত্রে কিন্তু তার ব্যতিক্রম রয়েছে। মেঘ বরাবর ই শান্ত, মেধাবী, পড়াশোনায় অত্যন্ত মনোযোগী। অপরদিকে মল্লার  দুরন্ত, পড়াশোনায় মন নেই।

মায়েরা বোধহয় এই অশান্ত সন্তান দের একটু বেশী স্নেহ করেন। এক্ষেত্রে ও তাই, মেঘ যেমন বাবার অত্যন্ত আদরের, মল্লার তেমনি মায়ের।

কিন্তু এই অশান্ত ছেলের ভবিষ্যত নিয়ে মায়ের চিন্তার শেষ নেই। পড়তে বসে পাঠ্য বই না পড়ে কমিক পড়ে সে, মা দেখে চিৎকার করলে আরো জোরে চিৎকার করে মল্লার "কি আছে পড়ার ব ই  তে, শুধু জ্ঞান আর জ্ঞান, আমার ভালো লাগে না "দুপুর বেলা যখন সবাই ঘুমিয়ে পরে দুরন্ত মল্লার চুপি চুপি বেড়িয়ে পরে, কখনো ডালিম গাছে ছোট্ট বুলবুলির বাসায় উকি মেরে দেখে ডিম আছে কি না, কখনো ফড়িং ধরে সুতো বেঁধে ওড়ায়, কখনো বা বড়শী ফেলে পুকুরে।

এবার ও ফেল করেছে সে, এ নিয়ে পরপর দু -বার ফেল করল সে এক ই ক্লাসে, দাদা মেঘ খুব ভালো রেজাল্ট করেছে, খুশি হয়ে বাবা তাকে সুন্দর সাইকেল এনে দিয়েছে।

মায়ের কষ্ট হয় মনে, কাছে ডাকে মল্লার কে, মাথায় হাত বুলিয়ে আদর করে বলে "তুই মন দিয়ে পড়, পাশ করলে আমি তোকে সাইকেল এনে দেবো "

"আর যদি ফেল করি"? মল্লার জিজ্ঞেস করে মাকে, তাহলে আমি গলায় দড়ি দেবো, মা উত্তর দেয়, আবার পরীক্ষা এলো যথারীতি দুই ভাই মা কে প্রণাম করে গেছে পরীক্ষা দিতে, পরীক্ষা দিয়ে মেঘ ফিরে এসেছে, কিন্তু ফিরলো না মল্লার, দিন শেষ হয়ে রাত হলো, মা কাঁদতে কাঁদতে চারিদিকে খুঁজে না পেয়ে ওর পড়ার টেবিলে যায়, দেখে একটা কাগজ ভাঁজ করা রয়েছে, কাঁপা হাতে খোলে কাগজ খানা, " মা আমার সাইকেল চাই না, আমি তোমাকে চাই, যে পরীক্ষায় আমার মায়ের বাঁচা -মরা নির্ভর করে সে পরীক্ষায় আমি বসতে চাই না মা, আমি নিজে থেকে হারিয়ে গেলাম, তাই আমার খোঁজ কোরো না, ইতি মল্লার
Share on Google Plus

About Shraboni Parbat

This is a short description in the author block about the author. You edit it by entering text in the "Biographical Info" field in the user admin panel.