বেশ্যা : কর্ণধর মণ্ডল

বেশ্যা : কর্ণধর মণ্ডল

বেশ্যা

কর্ণধর মণ্ডল

কী অদ্ভুত তোমাদের বিলাসিতা!
কাল রাতে যখন ওই পুরুষটার কাছে লালসার ভোগ্য হলাম,
তখন পর্যন্ত ছিলাম শুধুই প্রেমিকা।
আজ যখন রাত কেটে সকাল হলো,
তখন তোমরা ভদ্র-পোশাকি সভ্য পুরুষ।
তোমাদের কাছে উপাধি জুটলো শুধুই অপবাদের,
--হয় ''বেশ্যা''! না হয় ''গণিকা''।
হাঃ হাঃ! কি অদ্ভুত তোমাদের চেতনা।
কি অদ্ভুত তোমাদের মানসীকতা।
আর, আমরা হলাম "বেশ্যা! বেশ্যা! বেশ্যা''!

আচ্ছা, বেশ্যা মানে কি!
শুধুই তির্যক অঙ্গুলী তুলে বিদ্রুপ করা?
না, কি! আস্ফালনের ক্রুঢ় হাসি হেসে তাকে বিধ্বস্ত করা।
যখন! আমি রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাই সবাই বাঁকা চোখে উপহাস করে।
সবাই ঘৃণা করে।
কারণ!
''আমি বেশ্যা''।
কিন্তু বলতে পারো?
আমাকে ''বেশ্যা'' বানালো কে?  
এই ভদ্র-সমাজ!
জানি এর কোন উত্তর তোমাদের জানা নেই।
আমি শুধু বয়ে বেড়াই কলঙ্ক।
ডুবে যাই অন্ধকারে নিমজ্জিত নিকষ নিগূঢ় আকুল পাথারে।
এর জন্য দায়ী এই সমাজ এই সভ্যতা।
হাঃ হাঃ! এই সমাজের ভদ্র পোশাকি ভদ্র বাবুরা।
শুধু তারাই নিজের কামুক খিদে মেঠানোর জন্য আমাদের দেহটা করে চলে প্রতিনিয়ত বিধ্বস্ত।
ছিঁড়ে ছিঁড়ে খেতে থাকে হিংস্র বর্বর জানোয়ারের মতো।
আপন-স্বজনের অলক্ষ্যে চোখের আড়ালে রাতের অন্ধকারে।
তারা বাড়ির বউ কে বানায় সতী!
কি আশ্চর্য....
অথচ তাদের মুখে;
আমাদের শুনতে হয় বেশ্যা নামক অপ্রিয় শব্দবাণের আঘাত।
কি অদ্ভুত....
 হ্যাঁ হ্যাঁ! এই আমাদের সমাজ।

যেদিন মা মারা গিয়েছিল!
তখন আমার বয়স কত?
নয় কি দশ।
সেদিন কেউ আমাকে সান্ত্বনা দিতে আসেনি।
তিরস্কার করে অনেক বলেছিল অপয়া অভাগা।
কেউ ভালোবেসে এক মুঠো ক্ষুধার ভাত দেয়নি।
দুনিয়ার দুয়ারে দুয়ারে ভিক্ষার পাত্র নিয়ে করেছিলাম ভিক্ষাবৃত্তি।
আর সেদিন.....
রাতের পর রাত বদল হয়েছিলাম পাড়ার দাদা, কাকা, আরো কত ছদ্মবেশধারী মানুষের হাতে।
আমাকে সান্ত্বনা দিতে সারা শরীরে হাত বোলাতো কামনার আকাঙ্খা নিয়ে।
তখনও আমার শরীরের মাংস খণ্ড দু'টো হয়নি পরিপুষ্ট।
আর তাদের আদরে!
আমার যোনি'দ্বারটি হয়েছিল রক্তাক্ত ক্ষত-বিক্ষত।
আমি চিৎকার করে বলেছিলাম এই সমাজের কাছে।
সেদিন আকাশ-বাতাস চমকে গিয়েছিল।
থমকে গিয়েছিল তটিনীর কুলকুল শব্দ।
গাছের পাতারা নীরবে ঝরে পড়েছিল বৃক্ষ হতে।
বিষাদে ফুলের কলি লুটিয়ে পড়েছিল পথের ধুলায়।
কিন্তু,
সেদিন আমার কান্না বুক ফাটা আর্তনাদ পৌঁছায়নি একটিও মানুষের কর্ণ-কুহরে।
আর,
আজ আমাকে তোমরা বলছো ''বেশ্যা''।
হাঃ হাঃ! কি আশ্চর্য....
এই গিরগিটির ন্যয় আমাদের সমাজ?

আমি তো বাঁচতে চেয়েছিলাম অন্য দশ জনের মতো মাথা উঁচু করে।
কিন্তু কি পেয়েছিলাম সেদিন....
স্নেহ-মমতা-প্রেম-ভালোবাসার পরিবর্তে শুধু অবজ্ঞা-যন্ত্রণা আর তিতিক্ষা।
আজ চরম অভিশাপ মাথায় নিয়ে,
আমার মতো অসহায় নারীর ইজ্জত বাঁচাতে।
অনাথ সর্বহারা শিশুদের মাথা উঁচু করে বাঁচাতে, ক্ষুধার আহার জোগাতে আমার এই গণিকাবৃত্তি।
তা, না হলে! এই ভদ্র সমাজের কাছে থেকে পুরস্কার শুধু রাশি রাশি ঘৃণা আর ভৎর্সনা।
সভ্য-মানুষের কাছে হতে হবে নির্মম বর্বরতা শিকার।
আর সারা শরীরে এই ভদ্র সমাজ লেভেল সেটে দেবে- ''বেশ্যা! বেশ্যা! বেশ্যা''!

হে ঈশ্বর!
তুমি কি এখনও থাকবে ঘুমিয়ে!
আমাদের জন্য একটুও করবে না প্রণিপাত।
এই নিষ্ঠুর সমাজে করো বজ্র বরিষণ। মহাপ্রলয় হানো!
ঘুচিয়ে দাও এই অভিশাপ অপবাদ।
আর বইতে পারছিনা রক্ত'ক্ষরণের নির্মম যন্ত্রণা.....!!

Share on Google Plus

About Shraboni Parbat

This is a short description in the author block about the author. You edit it by entering text in the "Biographical Info" field in the user admin panel.