![]() |
বল্মীক : ঈদারুল ইসলাম |
হঠাৎ করে এমন বিদঘুটে নাম সম্মোধন করায় অবাক হলেন তো ? অবাক হওয়াটাই স্বাভাবিক; কারণ এই নামে সেই ছোট্টবেলায় উদয় নামে কেউ একজন তার বন্ধুকে ডাকত। হ্যাঁ, ঠিকই ধরেছেন উদয় ভীষণ দুষ্টু-মিষ্টি ছিল ! সম্ভবতঃ উদয় বল্মীক-এর চেয়ে বছর দুয়েকের ছোট হবে; শীর্ণ চেহারায়ও যেন হরিণের মত ছুটতো। আর বল্মীক যার ভালো নাম 'তন্বী', নাদুসনুদুস চেহারা নিয়ে থ্যাপথ্যাপ করে হেঁটে যেত।
আজও মনে পড়ে কৃষ্ণপুর গ্রামের সেই মেঠো পথ বেয়ে দু'জনাতে ছুটে চলা ! সেই সূর্যোদয়ের আগেই তন্বীর ঘুম ভেঙে যাওয়া আর উদয়ের বাড়ির ঠিক পিছনের দিকে এগিয়ে গিয়ে একেকদিন একেকটা আওয়াজে "এই উদয়- ওঠ, ওঠ, চল উঠবি না ?" বলে ডেকে সাড়া না পেলেই বাচ্চাদের মত ভ্যাঁ-ভ্যাঁ করে কেঁদে ওঠা ! উদয় দু'চোখ রগড়াতে রগড়াতে এসে তার কান্না থামবার জন্য মাথায় হাত দিয়ে আদর করে চোখের জল মুছে দিত । আর সে নাকে-মুখে সর্দি নিয়ে বলত যে, "যা তোর সাথে কথা নেই,আড়ি"। তার পর দু'জনে মিলে সূর্যোদয় দেখা; কখনো বা ওই মেঠো পথ বেয়ে ধানের ক্ষেতের আল দিয়ে দৌড়ে ছুটে গিয়ে ওই নালা পেরিয়ে জেলেদের মাছ ধরা দেখা।
ছোট্টবেলায় সেই গোল্লাছুট, দাঁড়িয়াবান্ধা, কিৎকিৎ, কানামাছি ভোঁ-ভোঁ এবং ছোঁয়াছুঁয়ি খেলার ছলে দু'জনের মারামারি করা । তন্বী উদয়ের দু'কান মলে দিত, আর সে তার ঝুঁটি ধরে টেনে দৌড়ে পালিয়ে যেত। খেলতে খেলতে কখন যে সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসত, কেউই টের পেত না ? স্কুল বন্ধ থাকলেই সেই ভরদুপুরে গাছের ছায়ায় রান্নাবাটি না হয় পুতুল খেলা; তন্বী বউ সাজত আর উদয়কে বর সাজাতো। বর-বউ কাকে বলে দু'জনের কেউই বুঝত না, কিন্তু একদিন না খেললেই যেন রাতের ঘুম নষ্ট হয়ে যেত। কোকিলের কুহুতান শুনতেই দু'জনে মিলে আওয়াজ কপি করে "কুহু- কুহু" শুরু করে দেয়া আর বেচারা কোকিলের কি ব্যাকুল কণ্ঠে উত্তর দেয়া ! হঠাৎ ঝড়ো হাওয়ায় চারিদিকে যখন ধূলিঝড় উঠত তখন দু'জনে মিলে ছুটে ঘরে ফিরতো।
হঠাৎ করে সব কোথায় যেন হারিয়ে গেল ! তন্বী ওই বাবুদের বাড়ির ছোট গিন্নি হয়ে বিয়ে করে চলে গেল কোলকাতায়, আর উদয় কর্মসূত্রে বাইরে। তার পর বহুদিন অতিক্রান্ত হলেও কেউ কারো খোঁজ রাখে নি !
আজও গ্রামের সেই মেঠো পথ ধরে দু'জনাতে হাতে-হাত রেখে নির্ভয়ে ছুটে চলা, মাটির ঘ্রাণ আর গ্রামের সেই ছোট্টবেলা উদয়কে তাড়িয়ে বেড়ায় ! হয়তো বা গ্রামের সেই চিত্র আজ আর নেই ! সেখানে অনেক জনবসতি গড়ে উঠেছে এবং রাস্তাঘাট সব পাকা হয়েছে ! কিন্তু আজও উদয়ের ইচ্ছে করে- তন্বীর হাতে-হাত রেখে সেই মেঠো পথে নির্দ্বিধায় আপন মনে হেঁটে যেতে; বাতাসে ভেসে আসা মাটির গন্ধে মাতোয়ারা হয়ে।।
1 Comments:
সমৃদ্ধ হলাম! অসংখ্য ধন্যবাদ, রুদ্র বাবু!💝
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন