শিক্ষার যন্ত্রণা
ঐশ্বর্য্য খাঁ
গল্পের নাম শুনে হাসি পাচ্ছে তাই তো? হুমম হাসি পাওয়ারই কথা। মনে হচ্ছে হয়তো শিক্ষার তো কোনো বিকল্প নেই তাহলে কেন এরকম কথা বলছি । সত্যি শিক্ষার কোনো বিকল্প নেই, কিন্তু এটাও খুবই সত্যি যে প্রকৃত শিক্ষার দাম পাওয়া আজকের দিনে খুবই দুরূহ। আর একজন প্রকৃত শিক্ষিত ব্যক্তি যখন শিক্ষার দাম পাননা তখনই তা হয়ে ওঠে শিক্ষার যন্ত্রণা। আমাদের দেশে ভুরি ভুরি মানুষ শিক্ষিত, কিন্তু প্রকৃত শিক্ষার দাম অনেক প্রকৃত শিক্ষিতরাও পাননা। সামান্য পড়াশুনা করেও যেমন অনেকে একটি ভালো জায়গাতে প্রতিষ্ঠিত হয়ে যান ঠিক তেমনই আবার উচ্চশিক্ষা আর প্রচুর ডিগ্রী অর্জন করেও অনেকে জীবনে প্রতিষ্ঠিত হতে পারেন না (ব্যতিক্রম অবশ্যই আছে)। হয়তো সাধারণ মানুষ একেই বলবে ভাগ্য।
বাবা আমাকে কোনো এক প্রসঙ্গে বলেছিলেন — যে যাই বলুক শিক্ষার দাম আছেরে মা, এবার ওই আরকি সবাইতো আর প্রতিষ্ঠিত হতে পারবে না এই জগতে তাই মেনে নিতে হয় এই বাস্তব সত্যটা। এই প্রসঙ্গে বাবা উদাহরন দিয়ে বলেছিলেন যে — গাছে তো অনেক ফুল ফোটে কিন্তু সব ফুল তো ঠাকুরের চরণে স্থান পায়না। এই কথাটা শুনে ভালো লাগলো ঠিকই কিন্তু আবার পরক্ষণেই মনে হল যে, আচ্ছা ঠিক আছে সব ফুল ঠাকুরের চরণে নাইবা স্থান পেল তাই বলে ঝড়ে পড়া ফুল গুলোকে পা দিয়ে চলে যাওয়ার অধিকারও তো মানুষদের গাছ দেইনি, তবে কেন এরকম হবে? মনুষ্য জগতেও তো ঠিক তাই হচ্ছে। একজন প্রকৃত শিক্ষিত ছেলে বা মেয়ে জীবনে প্রতিষ্ঠিত না হলে তার কোন মূল্য নেই সমাজে, তাহলে এখানে তার শিক্ষার দাম তো থাকছে না। যদি সমাজ প্রকৃত শিক্ষার দাম দিত তাহলে নিশ্চয় এরূপ হত না, কিন্তু তা কখনো কোনও সমাজ দেয়না। যদি অপ্রতিষ্ঠিত অথচ উচ্চশিক্ষিত ছেলে-মেয়েদের দাম থাকত তাহলে মানতাম যে, হ্যাঁ সত্যি শিক্ষার দাম আছে, কিন্তু সেটা তো হয়না বরং তাদের অবজ্ঞা ও অবহেলার মধ্যে জীবন কাটাতে হয় কেননা তারা শিক্ষিত বেকার যুবক-যুবতী । এক্ষেত্রে মানুষ তো তার শিক্ষাটা দেখছে না, শুধু এটাই দেখছে যে ছেলেটি বা মেয়েটি দিনের শেষে কত রোজগার করছে। তাই আজ যখন কোনো উচ্চশিক্ষিত ছেলে বা মেয়ে কোন এক ভালো প্রতিষ্ঠানে প্রতিষ্ঠিত হতে পারবেনা তখনই তো তার সেই উচ্চশিক্ষা যন্ত্রণায় পরিনত হবে। আমার মনে হয় শিক্ষার যে যন্ত্রণা তৈরি হয় তার পিছনে মানুষই পরোক্ষ ভাবে দায়ী। কেননা প্রকৃত শিক্ষার দাম দেই না এই পৃথিবীর মানুষ , দাম দেই তো শুধু বিষয়-সম্পত্তি ও টাকা-পয়সার। কাজেই গরিব-উচ্চশিক্ষিত-বেকার ছেলে মেয়েদের কাছে শিক্ষা ধীরে ধীরে যন্ত্রণাতে পরিনত হবে এটাই তো স্বাভাবিক।
0 Comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন