তৃতীয়া : সোনিয়া আক্তার

তৃতীয়া : সোনিয়া আক্তার

তৃতীয়া

 

সোনিয়া আক্তার

আকাশে শুক্ল পক্ষের চাঁদ। দেশী নিম গাছটার ঘন পাতার ভেদ করে কিছুতেই আলোটা আমার কোলে পড়তে পারছে না। বাতাস নেই। চারদিক নীরব। থমথমে। শব্দ বলতে বাড়ির পাশে ঝোঁপে ঝাড়ে শুধু ঝিঁঝিদের রাত জাগা গান। দূরের পাড়া থেকে মাঝে মাঝে ভেসে আসছে কুকুরের ডাক। বুকের ভেতরটা কেমন ফাঁকা ফাঁকা লাগছে আমার। চুপ করে দরজার সিড়িতে বসে থাকার চেষ্টা করছি । বার বার উঠে যাচ্ছি। হাঁটা বসা কোনোটাতেই স্থির থাকতে পারছি  না। বুকের ভেতরটা কেমন পাথর পাথর লাগছে। মনে হচ্ছে বুকের ওপর খুব একটা বড় পাথর রেখে দিয়েছে কেউ।জোরে জোরে কাঁদতে পারলে কষ্টটা কিছু কমতো হয়তো। পারছি না। বিকট একটা শব্দ হলো হঠাৎ। ফোনের স্ক্রীনের দিকে তাকিয়ে দেখলাম রাত ২.২৬ মিনিট। সামনের গেরেজে ট্রাক ঢুকেছে। তারই শব্দ। একটা ভোরের অপেক্ষা এতটা বিদঘুটে! ঘরে এসে লাইট জ্বালিয়ে ট্রাংকটা খুললাম । ট্রাংকের ভেতরে  আমার ছোটবেলার পুতুলটা এখনও আছে। শুভ্রর জন্মদিনে দেওয়ার জন্য কিনেছিলাম যে গিফট বক্সটা ওটা হাতে নিলাম। র‍্যাপিং পেপারটা ছিড়ে বক্সটা খুললাম। লাল একটা টাই,একটা ওয়ালেট,একটা হাতঘড়ি আর একটা পারফিউম। পারফিউমটার মেয়াদ হয়তো শেষ হয়ে গেছে। সেই পাঁচ বছর আগের কেনা।ফেলতে পারলাম  না। রেখে দিলাম। বক্সটা ওকে আর কোনোদিনই দেওয়া হবে না ভেবে ভেতরটা জ্বলে পুড়ে যাচ্ছে আমার। একটা  পুরাতন হাত ঘড়ি ট্রাংকের এক কোণায় । থেমে আছে। হয়তো ব্যাটারির চার্জ শেষ। দুষ্টমি করে শুভ্রর হাত থেকে খুলে রেখে দিয়েছিলাম একদিন।

সেদিন  বিকেল বেলা গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি পড়ছিলো। ভিসি চত্বরে ছাতা নিয়ে দাড়িয়ে অপেক্ষা করছিলাম ওর জন্য। বিকেল ৪ টায় আসার কথা ওর। ৫ টা বেঁজে গেছে অথচ ও আসছে না। ওর দেরী দেখে  একটু বসলোম।বরাবরই ব্যস্ত এই ভিসিচত্বর।হোক বর্ষা কি গ্রীষ্ম। ফাল্গুনী, শ্রাবণী, চৈতালি, ওয়ারি বটেশ্বর, ঈশা খা, ক্ষণিকা, বসন্ত, হেমন্ত  বিচিত্র নামধারী বাসগুলো ছেড়ে যায় এ ভিসিচত্বর হয়ে। পাউডারের গুড়ার মত হালকা বৃষ্টি হচ্ছে । কোলাহল কম নয়।বৃষ্টি বেশি হলেই যে ব্যস্ত এই চত্বর অবসর পেতো এমনও নয়। বাধানো কড়ই গাছের গোড়ায় বসে আড্ডা দিচ্ছে কেউ, গল্পগুজব করছে, কেউ কেউ আমার  মতো প্রিয়জনের জন্য করছে অপেক্ষা। কেউ অপেক্ষা করছে বাসের জন্য। রাগে অভিমানে একসময় বিরক্তি এসে গেলো। ধরে নিলাম শুভ্র আজ আসবে না।সিদ্ধান্ত নিলাম ওর জন্য অপেক্ষা করবো না।এমনিতেই একটু বসে থাকি। এই ব্যস্ততা,দেখি বৃষ্টি গায়ে মাখি।সত্যি সত্যি একসময় বিরক্তি কেটে গেলো আমার। হকার মামা ফ্ল্যাক্সটা আমার কাছে এসে নামিয়ে দাড়ালো।বললো-মামা,চা নেন এক কাপ।
-চা নয় মামা,কফি থাকলে দেন।
-এই নেন মামা।সাথে কিছু নেন।বিস্কুট আছে।
অামি হাসলাম।বললাম-কফির সাথে বিস্কুট খাবো না।কত হলো মামা?
-২০ টাকা দেন।
কফিওয়ালা মামা চলে গেলো।দাড়িয়ে থাকা বাসগুলোও সব চলে গেছে।মাগরিবের আজান হয় হয়।ততক্ষণে বৃষ্টি থেমে গেছে।ছাতা গুটিয়ে বসে ছিলাম এতক্ষণ  । মনে মনে  বলছি  কারো  আসা লাগবে না।অাবার খুব করে চাইছি ও আসুক।  বুঝতে পারলাম  শুভ্র আর আজ আর আসবে  না।হলে যাওয়ার জন্য রিকশা নিলামএকটা ।হঠাৎ শুভ্র দৌড়ে এসে এক লাফ দিয়ে রিকশায় উঠে বসলো।রাগে অামি গজগজ করছি।ও বললো -মামা,চানখারপুলের দিকে যান।অামি ভার গলায়  বললাম-আমি কোথাও যাবো না, হলে যাবো।শুভ্র হুড নামিয়ে দিয়ে বললো-হুড তুলে বসো কেন,বাতাস না লাগলে ভাল লাগে?ও এমন স্বাভাবিক ভঙিতে কথা বলছিলো যেন ও কিছুই করে নি।এটাই শুভ্রর স্বভাব।একসময় অামার  রাগ পড়ে গেলো।রিকশা ফুলার রোড ধরে সামনে চলছে।ল্যামপোস্টের সোডিয়ামের আলোয় ভেজা রাস্তা চিকচিক করছে।শুভ্র বললো-দেখছো,রাস্তাগুলো তোমার চোখের মত চিক চিক করছে।অামি হেসে ফেললাম।বললাম- আর কোনো উপমা পেলে না,না?ভেজা রাস্তা আমার চোখের মত!!শুভ্র  হাসলো।বললো-যখন তুমি থাকবে না তখন ভেজা রাস্তায় আমি কখনোই বের হবো না।ভীষণ মনে পড়বে তোমাকে!অামি ওর দিকে তাকিয়ে  বললাম আমি থাকবো না মানে?শুভ্র কথা ঘুরিয়ে দিয়ে বললো-তা কেমন উপভোগ করলে তোমার প্রিয়ো সন্ধ্যার এ ভিসি চত্বর?কফিটা ভালো ছিলো? অবাক হয়ে শুভ্রর দিকে তাকালাম।বললাম -তারমানে তুমি এখানেই ছিলে?শুভ্র হাসলো।বললো-হ্যাঁ,দেখছিলাম বিরক্ত হলে তোমার মুখটা কেমন হয়,কতবার দাঁত কামড়াও।
-তো কি দেখলে?
-নাহ্।তেমন কিছুই দেখলাম না।তুমি তো অন্যের প্রেমে মশগুল ছিলে।
অামি  ক্ষেপে গেলাম।বললাম-কি বললে!কি বললে তুমি?ও আমার জুনিয়র শুভ্র।ও যাচ্ছিলএদিক দিয়ে।  আমি সামনে পড়ে গেলাম।সালাম  দিলো ।একটু হেসে  হেসে কথা বললাম,আর  তাতেই তুমি এসব ভাবলে!!
শুভ্র অামার  গাল টেনে বললো-চোরের মন পুলিশ পুলিশ,না?আমি তো বলছিলাম তোমার ভিসি চত্বর প্রেমিকের কথা।আর তোমার জুনিয়রকে আমিই পাঠিয়ে ছিলাম ম্যাডাম,তোমাকে সঙ্গ দেওয়ার জন্য।
অামি  অবাক হলাম।এ শুভ্র বড়ই বিচিত্র।খুব একটা বুঝে উঠতে পারি না ওকে।চুপ করে রইলাম।রিকশা তখন ঢাকা মেডিকেল কলেজের সামনে। জ্যাম লেগেছে।শুভ্র বললো-একটা কথা বলো তো, ক্যাম্পাসে এত ভালো ভালো জায়গা থাকতে এই ব্যস্ত ভিসি চত্বর তোমার  পছন্দ কেন?
-এই চত্বরেই যে তোমাকে হারানের পর আবার পাওয়া।  আমাদের দেখা হয়েছিলো এখানে।আমি ভেবেছিলাম আমি তোমাকে সত্যিই হারিয়ে ফেলেছি।কিন্তু আমি তোমাকে পেয়েছি,এই চত্বরেই! তুমি আমার সামনে দাড়িয়ে ছিলে সেদিন,আমি বসেছিলাম। শুভ্র আমার হাতটা নিয়ে নিজের দুহাতে রেখে বললো-আমাকে পেয়েছো তো!
 পরম নির্ভরতায় ওর কাঁধে মাথা রাখলাম আমি ।
খাওয়া দাওয়া শেষ করে হলে এলাম।।শুভ্র অামাকে নামিয়ে দিয়ে চলে যাচ্ছিলো।হঠাৎ  থামিয়ে দিয়ে  বললাম-হাতটা দাও তো।শুভ্র ডান হাতটা দিয়ে বললো গিফট দেবে নাকি?
আমি  বললাম বাম হাত দাও,শুভ্র হাতটা দিতেই  ওর ঘড়িটা খুলে নিয়ে বললাম-হ্যা,গিফট! তোমার তো  ঘড়ির দরকার নেই।যার সময়জ্ঞান নেই,তার হাতে ঘড়ির দরকার নেই।শুভ্র হতভম্ব হয়ে রইলো।ও ভেবেছিলো অামার  রাগ পড়ে গিয়েছে।আসলেই রাগ পড়ে গিয়েছিলো।তবুও কেন জানি এটা  করে বসলাম ।হয়তো আজকের এদিনটা তৈরী করার জন্যই করেছিলাম।সেদিনের খুলে নিয়ে আসা ঘড়িটা আর কখনোই ফেরত দিতে পারবো না। ভেতরটা দুমড়ে মুচড়ে যাচ্ছে আমার।

শুভ্রকে ছেড়ে এসেছি আজ পাঁচ বছর।এ পাঁচ বছরে কি ভীষণ ব্যথা ওর ভেতর ঘর বেঁধেছিলো জানি না।গতকাল সন্ধ্যায় শুভ্র সুইসাইড করেছে।আমি খবর পেলাম ওর জানাযা হয়ে যাওয়ার পর।আগে খবর পেলেই বা কি করতাম!কি পরিচয়ে যেতাম ওর মুখখানি শেষবার দেখতে।কেমন  পরিবর্তন হয়েছিলো এ পাঁচবছরে  ওর চেহারার!একটা অপরাধবোধ আমাকে ভীষণ পুড়াচ্ছে।আমিই কি ওকে মৃত্যুর কাছে ঠেলে দিলাম।একাকিত্বের কাছে ওকে ছুড়ে ফেললাম?আমি বার বার সবকিছু ঘাটলাম।কোথায় ভুল করে এলাম খোঁজার চেষ্টা করছি।পাচ্ছি  না।একবার ভাবছি আমার চলে আসার ব্যথাটা কি ওর ভেতরে জমাট বেঁধে আজ মৃত্যু নাম নিলো?কিন্তু আমি তো ওকে ছেড়ে এসেছিলাম ওর চাওয়ার কাছে।ও মুক্তি চেয়েছিলো দুহাতে মাথা ঠেকিয়ে।এতটুকু ব্যাকুলতা কিংবা ব্যথা আমি ওর চোখে সেদিন দেখি নি। আমি তো খুব করে চেয়েছিলাম ও একটাবার আমাকে ডাকুক।
আমি আমার ভুল খুঁজছি।একটা ভুল খুঁজে পাওয়াটা যখন জরুরী হয়ে যায়,তখন ভুল ঠিক দুটোকেই ভুল মনে হয়।এতবছর পর মনে হলো-আমি শুভ্রকে ভুল বুঝেছিলাম।ও আমাকেই ভালোবাসতো!এতটা ভালো যে.....
 অপরাধবোধ আমাকে তাড়া করছে।আমি মেরে ফেললাম আমার শুভ্রকে!ভাবলাম যদি শুনতাম ও বিয়ে করে ফেলেছে তবে কষ্টটা হয়তো সাময়িক হতো।সান্ত্বনা পেতাম এই ভেবে যে চাইলেই দূর থেকে দেখতে পাবো ওকে।ভীষণ যন্ত্রণা হচ্ছে  মাথায়।
ফোনটা হাতে নিয়ে খাটে হেলান দিয়ে বসলাম।সময় ৪.৪৫।ডাটা অন করে মেসেঞ্জারে ঢুকলাম।সবুজ বাতি যাদের নামের পাশে জ্বলছে বেশিরভাগই ওয়াইফাই ইউজার।জেগে নেই কেউই।শুভ্রর পুরোনো মেসেজগুলো খুঁজছি।স্পাম করা মেসেজ বক্সে   সেই একই কথা-This person is unavailable in massenger.অথচ মানুষটা এই পৃথিবীতেই  আনএভেইলেবল।শুভ্রর মিষ্টি মধুর টেক্সটগুলো পড়তে পড়তে আমি সে সময়গুলোতে হারিয়ে যাচ্ছি।পরক্ষণেই টের পাই শুভ্র নেই।ভেতরটা মোচড় দিয়ে ওঠে আমার।শুভ্রর বন্ধু সজল অনলাইন হলো।সম্ভবত নামাজ পড়তে উঠেছে।ওর সাথে আমার তেমন কথা বার্তা হয় না।দেখলাম সর্বশেষ মেসেজ গত তিনবছর আগের।সে মেসেজে আমি শুভ্রর খোঁজ খবর নিচ্ছিলাম ওর কাছে।যতটুকু জেনেছি ততটুকু শুভ্রকে ছেড়ে থাকার জন্য যথেষ্ট  ছিলো।নক করলাম- সজলদা!
নক করতে গিয়ে কেন জানি টপটপ করে জল পড়ছো চোখ বেয়ে
হয়তো অবচেতন মনও বুঝতে পারছে যার খবর নেওয়ার জন্য নক দেওয়া সে আজ নেই।
মেসেজ সাথে সাথেই সীন হলো।
-বলো।
এতবছর পর কথা। রিপ্লাইটা কেমন ভার ভার মনে হলো।ভেতরটা মোচড় দিয়ে উঠলো আমার।তবে কি আমার ধারনাই সত্যিই।আমিই মেরে ফেললাম আমার শুভ্রকে!!সজলদাও আমার উপর অভিমান করে আছে এজন্য!
বললাম-শুভ্র.......
মেসেজ আর সীন হলো না।
আমার যন্ত্রনা আরো বেড়ে গেলো।ঘুমাতে পারি না রাতে।অসহ্য লাগে সবকিছু।
মাস  তিনেক পর একদিন অফিস থেকে বের হয়ে সজলদার সাথে দেখা।আমাকে দেখে খুশি হয়ে বললেন-আরে,অপরা যে!কেমন আছো?
আমি তার দিকে এগিয়ে গিয়ে বললাম -ভালো।আপনি ভালো?
সজলদা একটু বেশি কথাই বলেন সবসময়। রীতিমতো শুরু হয়ে গেলো-আর ভালো!ইন্টারভিউ দিলাম।দেখি হয় কি না।হলেই ভালো থাকি।
আমি আর সজলদা পাশাপাশি হাঁটছি ফুটপাত ধরে।একটা চায়ের দোকানে গিয়ে বসলাম।চায়ের অর্ডার সজলদাই দিলেন।
আমি বললাম-শুভ্র কেন সুইসাইড করলো সজলদা,জানেন কিছু?আমার চোখ জলে ভরে আসছে তখন।রাস্তার পাশে চায়ের দোকান।চারপাশে অসংখ্য পথচারী। হয়তো কেউ খেয়াল করবে না চায়ের দোকানে বসা একটি মেয়ে কাঁদছে অথবা একজনও খেয়াল করে ভাবছে-মেয়েটি কাঁদছে কেন?
আমি নিজেকে সামলে নিয়ে চুপ করে রইলাম।সজলদা বললেন-সুইসাইড নোট পাওয়া  গেছে।
-ওতে কি শুভ্র আমাকে কিছু বলেছে?আমার উপর অভিমান ওর?
সজলদা চায়ের কাপটা আমার সামনে দিয়ে বললো-তোমার ব্যাপারে তো কিছু দেখলাম না।শুধু একটা লাইন লিখা ছিলো ওতে।
আমি উদগ্রীব হয়ে বললাম-কি লাইন।
-ভালো থেকো,খুশবু।খুশবু কে আমি জানি না।
খুশবু মেয়েটাকে নিয়ে অনেক শুনেছি।কিছু কিছু নিজেও চোখে দেখেছি।বিশ্বাস অবিশ্বাসের টানাপোড়ন নিয়ে বসে ছিলাম পাঁচটি বছর।কেউ আসে নি আমার ভুল ভাঙাতে।আজ জানলাম আমার ভুল ছিলো না।
বুকের ভেতর থেকে অপরাধবোধটা উবে গেছে।সেই সাথে শুভ্র আমারই ছিলো ভাবনায় যেটুকু সান্ত্বনা ছিলো সেটুকুও। মানুষ যখন বুঝতে পারে তাঁর প্রিয়েজনকে সে  ভুল বুঝেছে,সে নিজেই বেশি খুশি হয়। তবে আমি শুভ্রকে ভুল বুঝে  ছেড়ে আসি নি।সত্যি ভালোবাসা  এসেছিলো শুভ্রর জীবনে,তবে সেটা আমার জন্য নয়।পাঁচটি বছর মিছিমিছি অভিমান চেপে নীরব ছিলাম!অথচ সে আমায় মনেও রাখে নি!আজ দ্বিতীয়বার উপলব্ধি করলাম-আমি তাদের মধ্যে তৃতীয়া!

Share on Google Plus

About Shraboni Parbat

This is a short description in the author block about the author. You edit it by entering text in the "Biographical Info" field in the user admin panel.