![]() |
ঈদারুল ইসলাম |
ঈদারুল ইসলাম
আমি এর আগেও বলেছি যে, স্প্রিচুয়াল ওয়ার্ল্ডটা আমায় ভীষণ টানে। সেই ছোট্ট বেলা থেকেই 'আত্মা/রূহ' এবং বিভিন্ন 'প্রেতাত্মা ও অলৌকিক' শক্তির উপস্থিতি উপলব্ধি করতে পারি। এটা আমার সৌভাগ্য না দুর্ভাগ্য জানা নেই! অনেকেই হয়তো বা হাসবেন অথবা ব্যঙ্গ করবেন। কিন্তু একজন বিজ্ঞানের ছাত্র হয়েও যখন বলছি তখন তার পিছনে যৌক্তিকতা অবশ্যই রয়েছে। আমি ওদের উপস্থিতি উপলব্ধি করতে পারি এবং শুভশক্তি বা অশুভশক্তি যেটাই হোক না কেন তার ধরণ অনুযায়ী এক অদ্ভুত অনুভূতি প্রকাশ পায়! কখনো গা ছমছমে ভাব তো কখনো বা উষ্ণ অনুভূতি, আবার কখনো বা এক শীতল-স্নিগ্ধ অনুভূতি! প্রায় একযুগ এর বেশি সময় ধরে যে মানুষটি আমার পাশে ঘুমোয় অর্থাৎ আমার জীবনসঙ্গিনী, সেও এই বিষয়ে সবই জানে এবং আমার পাশে ঘুমোনোর সুবাদে কয়েকবার এই অশরীরী আত্মার উপস্থিতি উপলব্ধি করতেও পেরেছে!
অনেকদিন ধরেই নিজেকে এই 'আধ্যাত্মিক' জগৎ থেকে একটু দূরেই সরিয়ে নিয়েছি। তবে 'আধ্যাত্মিক' সাধনা অব্যাহত রয়েছে! জানি না আমাদের সন্তান (আয়াত)-এর মধ্যেও এই সূক্ষ্ম অনুভূতি এবং আধ্যাত্মিক দৃষ্টিচক্ষুর উন্মোচন হয়েছে কি না! তবে গতকাল আমার আর আয়াতের সাথে যেটা ঘটেছে সেটা আমাদের দু'জনকেই ভীষণভাবে ভীতসন্ত্রস্ত করে তুলেছে! গতকাল দুপুরে মার সাথে দেখা করতে গিয়ে বাইক চালিয়ে যাতায়াত মিলিয়ে প্রায় ১১২ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করে যখন রাতে আস্তানায় ফিরি তখন ঘড়িতে প্রায় সাড়ে সাতটা হবে। স্নান সেরে ভালোভাবে হাত-পা স্যানিটাইস করে যখন ছেলের কাছে গেলাম তখন সে আচমকাই উচ্চস্বরে কাঁদতে শুরু করে দেয়! অন্যদিনের মতো সারাদিন আমায় মিস করেছে এই ভেবে ওকে কোলে তুলে নিই! কিন্তু এই দেড় মাস বয়সেই অন্যান্য দিন সে যেটা করে সেটা যেন কোথাও উধাও! অন্যদিন দুই হাতে দু'গালে আদর করে দিয়ে মুখ খুলে আমার দু'গালে আলতোভাবে স্পর্শ করে চুমু খায়! কিন্তু গতরাতে সে কিছুতেই আমায় সহ্য করতে পারছিল না, যেন ওর পাপা নয় অপরিচিত এবং ভয়ঙ্কর কেউ সামনে দাঁড়িয়ে আছে! যখনই বুকের কাছে টেনে নিচ্ছিলাম সে প্রচণ্ড ক্ষেপে গিয়ে দু'হাতে আমায় সরিয়ে দিতে থাকে, এমনকি খামচি কাটতেও শুরু করে দেয়। যেই না ওর মা বা মাসিমণির কাছে দিয়ে পাশের ঘরে যাচ্ছিলাম অমনি কান্না থেমে যায়! আবারও যখনই আমি শোবার ঘরে প্রবেশ করি, সে একইভাবে কাঁদতে থাকে! আমি যত রকমের আমল ও আয়াত জানি প্রায় সবই প্রয়োগ করে ব্যর্থ হতে হয়! একটা সময় এমন হয় যে, আমি নিজের মধ্যে এক অসহ্য অস্থিরতা অনুভব করি এবং উচ্চস্বরে আয়াতের উদ্দেশ্যে কথা বলতে থাকি, এমনকি বিছানায় ফেলে দিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে যেতেও ইচ্ছে করে;যেটা দেখে আমার স্ত্রী চেঁচিয়ে বলে ওঠে,"তুমি ওর সাথে এভাবে কথা বলছ কেন?" কিন্তু আমার অন্ততঃ এমনটা হওয়ার কথা নয়!
অকস্মাৎ মাথায় এলো যে রাস্তায় তো অস্বাভাবিক কিছু লক্ষ্য করলাম! সারাটা রাস্তায় কোনো সমস্যা না হলেও একটা ব্রিজের আগে এসে আমি যেন হঠাৎই বাইক চালাতে পারছিলাম না, বাধ্য হয়েই বাইক থামিয়ে একটু রেস্ট নিয়ে আবারও রওনা দিই। কিন্তু মনে হয় যেন বাইকের পিছনে কেউ একটু বাঁকাভাবে বসে আছে আর হ্যান্ডেলটা যেন একদিকে টানতে থাকে;কিন্তু পিছনে হাত বাড়িয়েও কারো অস্তিত্ব খুঁজে পাই নি (যেটা আমার সাথে আগেও বহুবার হয়েছে)! কিছুক্ষণ পর মনে হলো যে পিছনের চাকাটা টাল মারছে, কেমন যেন দুলতে থাকে! চাকার নাটগুলো আলগা হলে যেমন হয় ঠিক সেরকম অনুভূতি! আমি কিছুতেই স্মুথলি বাইক চালাতে পারছিলাম না! কিছু দূর এগিয়ে অপর একটা ব্রিজের সামনে এলে লাইটের আলোয় দেখলাম যে অন্যপ্রান্তে আমার দিকে (বাঁ দিকে) অনেকটা জল জমে আছে! জলের গভীরতা বুঝতে একটু সমস্যা হওয়ায় এবং বিপরীত দিক থেকে একটা গাড়ি আসায় ব্রিজের উপরেই দাঁড়িয়ে যাই। গাড়িটি চলে গেলে আবারও এগোতে শুরু করি, কিন্তু তেমন একটা জল দেখতে পাই নি! অথচ বাকি পথ অনেক কষ্টে বাইক চালাতে হয়, মাঝে মাঝেই যেন বাইক পিছলে পড়ার উপক্রম!
অবশেষে সম্পূর্ণ বিষয়টি আমার কাছে জলের মতো পরিষ্কার হয়! ততক্ষণে আমার সর্বশরীরে কাঁটা দিয়ে ওঠে, এদিকে আয়াত-এর কান্নাও থামার নাম নেই! আজমের শরীফ থেকে আমাকে দেয়া ধাগাটা যেই না ওর কপালে ছুঁয়ে দিই, সে যেন অকস্মাৎ তেলেবেগুনে জ্বলে ওঠে! কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে আমি আমার আরাধ্যের স্মরণে তৎক্ষণাৎ পবিত্র মনে বসে বিভিন্ন আমল ও আয়াত পাঠ করতে থাকি। প্রায় আধঘণ্টা প্রার্থনা শেষে আমি যখন আয়াতের পাশে যাই ততক্ষণে আমার শরীর ও মনে এক আশ্চর্য রকমের স্নিগ্ধ শীতলতা অনুভব করি এবং আয়াতের কান্না ও ভীতি যেন এক নিমেষেই উধাও হয়ে যায়! শান্ত ছেলের মত করে মায়ের পাশে খেলতে থাকে এবং আমি স্পর্শ করলেও আর কাঁদে নি!
আজ সকাল সকাল ওকে কোলে নিয়ে দুধ খাইয়ে যখন সূর্যালোকে নিয়ে যাই তখন সে পূর্বের ন্যায় আমায় আদর ও চুমু খেতে থাকে। এদিকে আজ সকালে আবারও যখন বাইক চালালাম তখন সবই ঠিকঠাক লাগল! বাইকের কোথাও কোনো সমস্যাও খুঁজে পেলাম না!
#ফলিতার্থ: মানো তো 'অধ্যাত্ম' না মানো তো 'বিজ্ঞান'!
0 Comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন