![]() |
ঋদেনদিক মিত্রো |
স্পর্ধা নিয়ো না, আমার নাম বাংলাদেশ
ঋদেনদিক মিত্রো
স্পর্ধা নিয়ো না, আমার নাম বাংলাদেশ,
এখন একটি কবিতা বলছি,
এর ছন্দ অক্ষরবৃত্ত, মাত্রাবৃত্ত বা স্বরবৃত্ত নয়,
ছন্দ মানে বাক্যের ভিতরের চলন,
আর এটা অন্তমিল, মানে
পংক্তির শেষে- শেষে সম উচ্চারণ নেই---
প্রচলিত পদ্ধতিতে,
কারণ এর ছন্দের নাম
" কাউকে পরোয়া করিনা"
আর এর অন্তমিলের নাম
"আমি যা বলছি শোনো",
এই ভাবেই কবিতাটা এগিয়ে যাক তবে,
স্পর্ধা নিয়োনা, আমার নাম বাংলাদেশ!
আমার জন্ম হয়েছিল প্রথম যে-ভ্রুণে
উনিশ শ পাঁচ খৃস্টাব্দে
অখণ্ড ভারতের ভাইসরয় লর্ড কার্জন
আমাকে বাংলা থেকে আলাদা করেন,
পত্রপত্রিকায় লেখা হলো ---
বাংলাকে ভাগ ক'রে দুর্বল করতে
কার্জন এর এই চালাকি আইন,
আমি বলি, না, কার্জন বুঝেছিলেন
আজকের স্বাধীন বাংলাদেশ যেটা--
তখন সেই মাটির পৃথক মর্যাদাকে
উনি চিনতে পেরেছিলেন,
হয়তো অবচেতনে, কেউ সে খবর জানতো না,
তারপর অনেক ইতিহাস বয়ে গেলো,
খন্ড দুই বাংলা আবার জোড়া হলো,
তারপর আবার আলাদা হলো,
যখন দেশ স্বাধীন হবার সময়
আলাদা নিয়মে হলো পাকিস্তান,
তখন ভারত থেকে খন্ড বাংলা হলো
পূর্ব পাকিস্তান,
শুরু হলো ইতিহাসের আর এক অধ্যায়,
রাজনীতির চালাকিতে
পূর্ব পাকিস্তানের মানুষেরা অনেকে
ঢুকে পড়ে তাদের আগের দেশ বাদবাকি ভারতে,
সে কী জীবন, কে কোন দিকে যাবে!
এর নাম রাজনীতি, সভ্যতার অভিশাপ,
যে শুধু ধ্বংস করে যায়,
মানুষ, পশু, পাখি, কীট, গাছপালা,
ধ্বংস করে যায় শিশু, নরনারী এবং
মানুষের অর্থ, স্বপ্ন ও গৃহ,
এর মধ্য দিয়েই বলে চলেছি,
স্পর্ধা নিয়োনা, আমার নাম বাংলাদেশ !
বলতে -বলতে এলো নতুন যুদ্ধের সময়,
পূর্বপাকিস্তান, মানে অর্ধেক বাংলায়
নেমে এলো পশ্চিম পাকিস্তান এর শোষণ,
এখান থেকে যেতো শস্য পশ্চিম পাকিস্তানে,
কারণ ওটা প্রায় মরু এলাকা,
বিনিময়ে পূর্বপাকিস্তানের মানুষ আমরা
দারিদ্রে থাকতাম
ওদের ভোগ বিলাসের জন্য সব দিয়ে,
তাতেও নিস্তার নেই,
পশ্চিমপাকিস্তান চাইলো
পূর্ব পাকিস্তানে বাংলাকে সরিয়ে উর্দুকে
চালু করতে সর্বত্র,
শুরু হলো ভাষা আন্দোলন,
উনিশ শ বাহান্ন একুশে ফেব্রুয়ারী---
হাজার-হাজার মানুষ রাস্তায় নামলো,
পুলিশের গুলিতে মারা গেলো কয়েকজন
বাংলাভাষা প্রেমী,
দেশ উঠলো জ্বলে,
বাংলা ভাষা আমাদের ভাষা,
বাংলা ভাষা আমাদের ধর্ম,
বাংলা ভাষা আমাদের জীবন,
এদিকে পরপর নানা ভাবে অত্যাচারিত
পূর্ব পাকিস্তান জন্ম দিলো
স্বাধীনতার যুদ্ধ,
শেখ মুজিব বলে এক তরুণ
জাগিয়ে দিলেন গোটা পূর্ব পাকিস্তান,
কোটি কোটি মানুষ তাঁকে নিয়ে উন্মত্ত,
চির তরুণ মুজিব বলছেন :--
আমার ভাইজানরা,
আমরা মরতে শিখেছি,
তাই কাউকে ভয় পাইনা !
সারা পৃথিবী বিস্মিত,
সবাই জানতো, একজন বিপ্লবী নেতা বলেন :--
আমরা বদলা নিতে জানি !
সেখানে তরুণ মুজিব বললেন,
আমরা মরতে শিখেছি ভাইজানরা,
তাই কাউকে ভয় পাইনা,
শিশু থেকে বড়
প্রতিটি মানুষের সাহস হয়ে গেলো
বিদ্ধংসী অস্ত্রে রূপান্তরিত,
ভারত সরকার ঘোষণা করলেন:--
এই মহান বীরের জাতিকে
বাঁচাতে হবে,
চললো নির্মম যুদ্ধ, পশ্চিম পাকিস্তানের সাথে,
সেই বীরের জাতি আমি
ঘরোয়া অস্ত্র নিয়ে
যুদ্ধ করেছি,
আমরা নির্মম ভাবে মরতে থাকলাম,
শিশু, বড়, মা, বোনেরা,
আমরা যে মরতে শিখেছি,
তাই কাউকে ভয় পাইনা,
উনিশ একাত্তর এ স্বাধীনতা পাবার
ঠিক কদিন আগে
পশ্চিম পাকিস্তানের সৈনিকরা
আমাদের হাজার-হাজার
জ্ঞানী পন্ডিত প্রতিভাদের ধরে
নির্মম ভাবে খুন করলো,
এই মাটিকে প্রতিভা নির্মূল করার জন্য,
ওরা বোঝেনি যে বাংলাদেশ
প্রতিভার আর এক নাম,
সাহসের আর এক নাম,
ভালোবাসার আর এক নাম,
প্রতিবাদীর আর এক নাম,
এরপর জন্মনিল
বাংলাদেশ, স্বাধীন বাংলাদেশ,
পৃথিবীর প্রথম বাংলা ভাষার স্বাধীন রাষ্ট্র
বাংলাদেশ,
ভারত বর্ষের বাংলা ভাষাও
মাথা তুলে দাঁড়ালো
বাংলাদেশের জন্য,
স্পর্ধা নিয়ো না, আমার নাম বাংলাদেশ,
এদিকে উনিশ শ' একষট্টিতে
ভারতের আসামে বরাক উপত্যকায়
বাংলা ভাষার সম্মান রাখতে চেয়ে
প্রথম মহিলা শহীদ হলো
ষোলো বছরের গরীব তরুণী
কমলা ভট্টাচার্য, সেই সাথে আরো
দশ এগারো জন,
আর একজন যুবক শরীরে বুলেট নিয়ে
বেঁচে ছিলেন প্রায় চব্বিশ বছর,
এরা ছিলো সব বাংলাদেশের থেকে ভারতের যাওয়া
বিপন্ন উদ্বাস্তু,
বিশ্বের ইতিহাসে কোনো ভাষার জন্য প্রথম পুরুষ শহীদেরা ছিলেন
পূর্ব পাকিস্তান, উনিশ শ বাহান্ন,
পরে তা হয় বাংলাদেশ,
আবার ভাষার জন্য প্রথম নারী শহীদ বাংলাদেশ,
কাহিনীর স্থান ভারত,
এবং ভারতের মতো বিরাট দেশে,
ভাষার জন্য যে এক গুচ্ছ প্রাণের সর্বনাশ হলো,
তারাও সব বাংলাদেশের উদ্বাস্তু,
বাংলাদেশ যেখানে যায়
ইতিহাস রচনা করে,
শিল্প সংস্কৃতি সাহিত্য আবিষ্কার
সমাজ বিজ্ঞান, সব কিছু দিয়ে
সে এক একটি দেশের সমাজকে
গড়ে তোলে গভীর সভ্যতা,
মিথ্যে বলছি কি বন্ধু?
স্পর্ধা নিয়ো না, আমার নাম বাংলাদেশ!
সহস্রাব্দের শেষে এসে আমরা আবার করলাম
বিশ্ব জয়,
রাষ্ট্রসংঘ ঘোষণা করলেন
একুশে ফেব্রুয়ারি বিশ্ব মাতৃ ভাষা দিবস,
মানে প্রতি বছর ঐ দিনে
পৃথিবীর সকলেই তাদের ভাষাকে
ভালোবেসে জয়ধ্বনি দেবে ,
উৎসব করবে, উপলব্ধি করবে,
এই বিশ্ব-প্রেমের নতুন মুক্ত হাওয়া এলো
কাদের জন্য !
সে বাংলাদেশ,
স্পর্ধা নিয়ো না, আমার নাম বাংলাদেশ,
গত সহস্রাব্দের শেষের দিকের সামান্য আগে
পশ্চিম আফ্রিকার সিয়েরা লিওনে
গেলো বাংলাদেশের থেকে
শান্তিরক্ষী বাহিনী
মাত্র হাজার পাঁচেক সৈন্য,
অন্য সব দেশের শান্তি রক্ষীবাহিনী
যখন সিয়েরা লিওনের গৃহ যুদ্ধ আটকাতে
অস্ত্র দিয়ে মোকাবেলা করছে,
তখন বাংলাদেশের শান্তি রক্ষী সৈনিকভাইরা
অস্ত্র ফেলে ওদেশে বাড়ি বাড়ি ঘুরে
দিয়েছে শিক্ষা, চিকিৎসা, খাদ্য, পথ্য,
আর শিখিয়েছে বাংলা ভাষা,
আর এই ভাষার কবিতা গান নৃত্য,
সমস্ত সিয়েরা লিওন জেগে উঠলো
বাংলাদেশের সৈনিকদের ভালোবাসায়,
বাংলা ভাষার ভালোবাসায়,
মাতৃভাষা ইংরেজির দেশ সিয়েরা লিওনের বিদ্রোহীরা মানে
ওই উগ্রপন্থীরা অস্ত্র ফেলে
বাংলাদেশের ওই সৈনিকদের
জড়িয়ে ধরে কেঁদে উঠে বললে :--
পৃথিবীতে তবে ভালোবাসা আছে, বন্ধু,
বাংলা ভাষা এমন মধুর সুন্দর !
এই জাতির লোকেরা বন্ধুক সরিয়ে রেখে
চেতনা দিয়ে বদলাতে চায় সব কিছু!
তোমরা সত্যি মহান !
দুহাজার দুই সালে ওঁদের মাননীয় রাষ্ট্রপতি আবেগে আপ্লুত হয়ে
বাংলা ভাষাকে ওঁদের আর একটি
রাষ্ট্রীয় ভাষা হিসেবে ঘোষণা করলেন,
পৃথিবীতে জন্ম নিলো বাংলাভাষার দ্বিতীয় রাষ্ট্র
পশ্চিম আফ্রিকার সিয়েরা লিওন !
আমি কিন্তু ওই সৈনিকদের একজন
স্পর্ধা নিয়ো না, আমার নাম বাংলাদেশ !
সারা পৃথিবীতেই যে-ইউটুব সভ্যতা এসেছে
সেটার মূল আবিষ্কারক
বাংলাদেশের এক অচেনা যুবক,
তোমরা জানো, ইংরেজির মূল কেন্দ্র
লন্ডনের নতুন অফিস-ভাষা হয়ে গেলো
বাংলা ভাষা, অস্ট্রেলিয়াতেও কোথাও,
বাংলা ভাষা এই ভাবে,
বাংলাদেশীরা এই ভাবে
শিক্ষা, সংস্কৃতি ও
ভালোবাসা দিয়ে জয় করেছে
সারা পৃথিবীকে,
খেলাধুলায়ও বিশ্বকে দিয়েছে আলো,
তোমরা অনেকে বলবে --
বাংলাদেশের মুসলমানভাইরা
অনেকে অন্য ধর্মীভাই বোনদের
নির্মম অত্যাচার করে,
সব কেড়ে নিয়ে বিতাড়িত করে
ভাগিয়ে দেয় বাংলাদেশ থেকে,
তবে শুনে রাখো বন্ধু,
যে-দেশ কাউকে অত্যাচার করতে শেখেনি
তার নাম বাংলাদেশ,
যে-দেশ শুধু ভালোবাসতে জানে
তার নাম বাংলাদেশ,
তুমি যাদের বিরুদ্ধে নালিশ করছো ---
তারা হলো বাংলাদেশের মহত্যকে
সহ্য করতে না পারা
এক শ্রেণীর শত্রু,
তারা বাংলাদেশের সহজ মনের ভাইদের
বোকা বানিয়ে কাঁধে বন্ধুক রেখে
শিকার করছে, কী নির্মম !
মুক্তি যোদ্ধার জাতি হিংস্র হতে পারে না,
রাষ্ট্রসংঘ অভিভূত হয়ে
যে- দেশের শান্তিবাহিনীকে
বিশ্বের নানা দেশে শান্তি ফেরাতে
পাঠাচ্ছেন দেশে-দেশে,
সেই দেশের নাম বাংলাদেশ,
স্পর্ধা নিয়ো না, আমার নাম বাংলাদেশ !
কোনো-কোনো দেশে আবার
বৈধ নাগরিকত্বের আইন বানিয়ে
বাংলাদেশি রক্ত ধারার নাগরিকদেরকে
বিপন্ন করার চেষ্টা করছে,
তাদের দেশকে নাকি নিরাপদ ও উপদ্রবহীন করতে,
সেই দেশ গুলোর শাসন ব্যবস্থা জানেনা
সেই দেশ গুলির ভাষাকে
সেই দেশগুলির নাগরিক দ্বারা সম্মান দেবার অভ্যেস করিয়েছে
একুশে ফেব্রুয়ারি,
সেই দেশ গুলির প্রধানমন্ত্রী রাষ্ট্রপতিও
সেই ছকের বাইরে নয় !
আর সেই একুশে ফেব্রুয়ারী
আমাদের, মানে বাংলাদের রক্তে তৈরী,
তাহলে যুক্তি কী বলে?
অকৃতজ্ঞ কারা,
বাংলাদেশি রক্ত-ধারা, নাকি বিপরীতে যাঁরা , তাঁরা ?
যদি কেউ বলো, বাংলাদেশি মানে
কুটিল, অসৎ, নির্মম, ও অনেক কিছু,
তাদেরকে বলি, ব্যক্তি- চরিত্র নিয়ে
যারা কোনো দেশের চরিত্রে গালি পাড়ে ---
তারা কোন পন্ডিতের দেশ?
তারা বৈধ নাগরিকের আইন তৈরী করে
কোন যুক্তির পথে?
তাদের দেশে থাকা
কিছু বাংলাদেশি রক্ত ধারা ছাড়া
বাদ বাকিরা কি সব সৎ,
তাহলে সংখ্যা গরিষ্ঠ তাদের দেশের মানুষেরা
দুর্বল শিক্ষা, বেকারত্ব, কুসংস্কার,
মারামারি, শোষণ, লুটপাট,
জালিয়াতি, ধর্ম ও জাত নিয়ে
হিংস্রতা ও কুটিল চরিত্র, ও
চাটুকারিতা নিয়ে নিজেরা নিজেদেরকে
সর্বনাশ করছে কেন!
আমি তোমার কাছে বন্ধু
দয়া চাই না,
কারণ আমরা জলা থেকে
কচুপাতা ছিঁড়ে সেদ্ধ করে খেয়ে
বস্তিতে থেকে কবি শিল্পী বিজ্ঞানী অধ্যাপক
হতে পারি, ওই অবস্থায় থেকে
হতে পারি নেতা মন্ত্রী বা কোম্পানির মালিক,
হতে পারি অলিম্পিযান,
গবেষক, মিউজিসিয়ান,
আমাদের অবৈধ নাগরিক ব'লে
বিপন্ন করতে পারবে না বন্ধু,
যে-বাংলাদেশকে ছোটদেশ বলে
প্রচার দিচ্ছেন অনেকে,
সেই দেশ পৃথিবীর একটি বৃহৎ জন সংখ্যার একটি দেশ,
একটি বৃহৎ আয়তনের দেশ,
যে-বাংলাদেশের শিক্ষাকে
তুচ্ছ শিক্ষা বলেন অনেকে,
সেই বাংলাদেশের সাহিত্য সংখ্যায় ও মানে
পৃথিবীর সেরা বলে গ্রাহ্য হচ্ছে,
যে-বাংলাদেশকে অভদ্র বলেন অনেকে
তাঁরাই বাংলাদেশে এসে অতিথি হিসেবে রাজ সম্মান পান,
বাংলাদেশীরা ঘরে-ঘরে
তাঁদের ডেকে নিয়ে গিয়ে সেবা দেয়,
নিজের খাবার টা খাইয়ে,
যাঁরা আমাদেরকে অভদ্র বলে প্রচার করেন,
তাঁরা অনেকেই এই ভাবে
আমাদের ভালোবাসা নেন !
বাংলাদেশ রক্তধারা জানে
নোট পড়ে নয়, নকল করে নয়,
প্রশ্ন পত্র চুরি করে নয়,
টাকা দিয়ে নয়,
পড়াশোনা করতে হয় বই পড়ে,
বাংলাদেশী রক্ত ধারা জানে
খেতে, খাওয়াতে, পোশাক পরতে,
বিদেশ যেতে, বই লিখতে,
গান গাইতে, থিয়েটার সিনেমা করতে,
ব্যাবসা করতে, বাউল হতে,
আবার মন্ত্রী হয়েও নিজহাতে
চাষাবাদ করতে !
শুধু ভুল ভাবে সময় কাটাতে নয়,
তোমরা অনেকেই বলবে --
বাংলাদেশী রক্তের
আভিজাত্য বোধ নেই,
বন্ধু, আভিজাত্য মানে কর্ম বিমুখ নয়,
ঋণ করে ঘি ভাত খেয়ে
ধনী সাজা নয়,
ঘুষ দিয়ে পাস বা চাকরি নয়,
ঋণ করে বাড়ি বানিয়ে
সেই বাড়ি বিক্রি করে
বিল্ডিং মেটিরিয়ালস ব্যাবসায়ীকে
টাকা দিয়ে পথে ভিক্ষে করা নয়,
আভিজাত্য মানে দোকানে ধার খেয়ে
দোকানি টাকা চাইলে তার সাথে
ঝগড়া হাতাহাতি করা নয়,
আভিজাত্য মানে টাকা পেলে
নেশা করে উন্মত্ত হওয়া নয়,
আভিজাত্য মানে বই কিনতে ভয় পেয়ে
বা কার্পণ্য দেখিয়ে
নিজেকে শিক্ষিত বলে দাবী করে
হাসির খোরাক হওয়া নয়,
যে-কথা বলতে ভুলে গেলাম--
বাংলাদেশ নাকি গরীব দেশ---
আর অসহায় দেশ,
পিছিয়ে পড়া দেশ,
যাঁরা এই দাবী করেন সেটা কোন নিরিখে?
বাংলাদেশে মাঠে সোনা ফলে
যে-সোনায় জীব জগৎ বাঁচে,
তাই সেই দেশ গরীব,
আর যে-দেশ গুলোতে
খনি থেকে ধাতব সোনা বেরিয়ে
সেই সোনা দর কষাকষি করে অহংকারের---
যে-সোনা সাম্রাজ্যবাদের লোভ তৈরী করে
সেই সোনার উৎপাদন করা দেশগুলি
ধনী দেশ, আমরা গরীব!
আরো মজার কথা---
যে-সব দেশে যত বেশী মারণাস্ত্র তৈরী হয়
এবং দেশ দখলের ছক তৈরী হয়
সেই দেশ গুলি বাংলাদেশের চেয়ে ধনী ও মর্যাদার দেশ, শান্তির দেশ,
যে-দেশ গুলি থেকে
অসহায় উদ্বাস্তু বা সৎ কর্মঠ প্রবাসীদের
তাড়িয়ে দিতে চায়,
সেই দেশ গুলি বিশ্ব প্রেমের দেশ,
এবং নিরাপদ দেশ,
আর যে-দেশে মুক্ত হাওয়া,
মাঠে সোনালী শস্য,
পথে ঘাটে গাছ পালা পাখপাখালি,
ঘরের চারপাশ ঘিরে ওঠে কত লতাশাক,
কোনো যত্ন ছাড়াই একা শস্য জন্মায়,
প্রতিবেশী কাউকে না কাউকে
বিপদে পাওয়া যায়,
গরীবের বাড়ি গেলেও
অতিথিকে না খাইয়ে ছাড়ে না,
সেই দেশটি পিছিয়ে পড়া দেশ,
আচ্ছা বন্ধু, এগিয়ে আর পিছিয়ে
কোন ফিতে দিয়ে কারা মাপেন কী ভাবে?
আরো একটি মজার কথা বন্ধু,
অনেক বিদেশী বলেন --- বাঙলাদেশের অস্তিত্ব হারিয়ে যাবে,
ওটা একটা দেশ নাকি,
ঝড়ে বন্যায় দেশটা তছনছ হয়ে তলিয়ে যাবে,
ওর কী মূল্য আছে!
তাঁদেরকে বলি ----
নমস্কার নেবেন,
বাংলাদেশ কি একটা আম গাছ,
ঝড়ে তছনছ হয়ে যাবে,
নাকি বাংলাদেশ একটা মাটির ঢিবি,
ওই একটু জল বেড়ে গেলে ডুবে গিয়ে
মিলিয়ে যাবে জলে!
কোনো দেশ সম্বন্ধে যাঁদের এতো কম জ্ঞান
কিংবা একেবারেই মহামূর্খ,
তাঁরা হলেন বড় ও জ্ঞানী দেশগুলোর
ইতিহাস-ভূগোল ও পরিবেশবিদ,
বাংলাদেশটা ধ্বংস হয়ে গেলে
তাঁদের খুব মজা হবে !
আচ্ছা, বাংলাদেশের অস্তিত্ব যদি খুব তুচ্ছ
তার কথা এতো আলোচনায় কেন !
নমস্কার নেবেন এই বিচারক গন,
এবার তবে বলি, বাংলাদেশ যদি
কখনো ঢিবির মতো ডুবে যায়
তবে সে আবার কোনোদিন
বিরাট দ্বীপ হয়ে মাথা তুলবে
পৃথিবীর মানচিত্রে,
কারণ এর নাম বাংলাদেশ !
আচ্ছা, এবার বলি,
বিদেশী বাংলাদেশ বিশেষজ্ঞসব বলুন তো ---
ঝাড় আর বন্যা-- এ দুটি কি
প্রকৃতিতে তৈরী হয়
শুধু বাংলাদেশের জন্য?
কিংবা ঝড় যখন বাংলাদেশের দিকে ছুটে আসে
তখন অন্য দেশগুলি দিয়ে আসার সময়
অন্য দেশ গুলি আনন্দে নাচে
আর বাংলাদেশ একা কাঁদে?
নাকি, পৃথিবীতে তিন ভাগ জল,
সেই তুলনায় বাংলাদেশ ছোট,
আর বাংলাদেশকে যারা ছোট দেশ বলে
সেই দেশ গুলি এক একটি
পৃথিবীর তিন ভাগ জলের চেয়ে বড়,
আপনারা এই রকম অংক কষেন নাকি?
আচ্ছা, এই অংক গুলি কোন বাজারে পাওয়া যায়,
আমি কিনতে যাবো, বলুন না !
বলবেন না, দুত্তেরিকা, আগের কথায় ফিরে যাই,
আভিজাত্য মানে ভুল নেতা যা বোঝাবে
সেটা বুঝে নিয়ে বুদ্ধিকে অচল করা নয়,
আভিজাত্য মানে নিজের অযোগ্যতাকে ঢাকতে
চৌদ্দ পুরুষনিয়ে রাজ মহত্বের
কাহিনী বানিয়ে বাজারে ছাড়া নয়,
কিংবা সরলতা মানে গলায় নেকটাই ঝুলিয়ে
নিচে গামছা বা লুঙ্গি পরা নয়,
আভিজাত্য মানে আমি জানি
ঝামেলা মুক্ত মানানসই জীবন,
বই কেনা ও পড়া,
বাড়ির কাজকরা লোকের সাথে
দুর্ব্যবহার না করা,
সরলতা মানে নিজেকে বিশ্বাস করা,
আভিজাত্য মানে অযোগ্যতা নিয়ে
বড় কাজের জন্য লোকের পিছু ঘোরা নয়,
মাঝখানে আর একটু ঘষে মেজে নিই দাঁড়াও বন্ধু,
ভারতের থেকে যারা বলো ---
এপার বাংলা, ওপার বাংলা,
তারা এখনও জানোনা বাংলাদেশ স্বাধীন রাষ্ট্র,
পাশের দেশ স্বাধীন কিনা জানোনা,
কিন্তু তোমরা পৃথিবীর খোঁজখবর রাখো,
ও, বাংলাদেশকে পুরোনো নামে ডাকবে আজও, মর্জি,
আচ্ছা, ভারতকে এখনও যদি বলা হয় ও লেখা হয়
ব্রিটিশ শাসিত ভারত,
বা পরাধীন ভারত,
তাহলে সেটা তোমরা মানবে তো?
আচ্ছা, পাকিস্তানকে তো বলোনা
ও-পার ভারত,
তাহলে বাংলাদেশকে বলো কেন ওপার বাংলা,
কারণ যে যত নম্র তাকেই বেশী আঘাত পেতে হয়,
দুঃখ নেই, আমাদের এই আঘাতই দিও,
আর সেটাই প্রমাণ করবে আমরা নম্র,
স্পর্ধা নিয়ো না, আমার নাম বাংলাদেশ,
আভিজাত্য মানে সঠিকটা জেনে
সঠিক ভাবে বলতে শেখা,
আভিজাত্য মানে
মাঝে-মাঝে জোৎস্না দেখতে শেখা,
পুরোনো বই পত্রিকা চিঠি নিয়ে
জানালার পাশে বসে দেখা,
পালঙ্কে শুয়ে বই পড়তে-পড়তে ঘুম,
পথ এপার ওপার হতে অক্ষম
কাউকে হাত ধরে পথ পের করে দেওয়া,
শরীর বুঝে খাদ্য গ্রহণ,
আয় বুঝে ব্যায়, ও কখনো অপব্যয় নয়,
বিপন্নতা সৃষ্টিকারী কোনো সঙ্গ এড়িয়ে থাকা,
পরিস্থিতি বুঝে থাকা বা চলে আশা,
সকলের শ্রমের প্রতি সম্মান ও মূল্য দেওয়া,
পশু, পাখি, কীট, প্রকৃতি,
সকলের অধিকারের প্রতি
যত্ন নেওয়া,
আভিজাত্য মানে --- আমার পরিচয় আমি ---
এই সত্য বিশ্বাস করা,
আভিজাত্য মানে --
কায়দাবাজের কায়দা বোঝা,
আভিজাত্য মানে---
অন্যায় দেখে রুখে দাঁড়ানো,
কোথাও অন্যায় হচ্ছে জানলে ---
চুপিচুপি নিজেকে যোদ্ধা তৈরী করে ---
হঠাৎ একদিন ঘোড়ার ওপর
লাফিয়ে উঠে লাগামে টান দিয়ে
চেঁচিয়ে বলে ওঠা ---
আমি বেরিয়ে পড়েছি অন্যায়,
অপেক্ষা করো !
0 Comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন