![]() |
সঞ্চারী ভট্টাচার্য্য |
সঞ্চারী ভট্টাচার্য্য
ব্রহ্মবৈবর্ত্য পুরাণ অনুসারে আদিদেব ব্ৰহ্মাই হলেন আমাদের সৃষ্টির উৎস বা অধিকর্তা |তাঁর তেজের থেকেই সৃষ্টি হয়েছে এই ব্রহ্মান্ড |এই আদিদেব ব্রহ্মা সৃষ্টির উৎস থেকেই রয়েছেন |তিনি পৃথিবীর সমস্ত বিষয়েই আত্মজ্ঞান সম্পন্ন |তাঁকে অন্তর্যামিও বলা হয়ে থাকে |কিন্তু তবুও তাঁর পূজার বিষয়ে অনেকেই গ্রহণযোগ্যতা প্রদানে নারাজ |সে আরেক ইতিহাস ! অন্য কোনদিন নয় সে বিষয়ে আলোচনা করবো |আজকের মুখ্য বিষয়টি হলো ব্রহ্মার হাতের পুষ্প বা "ব্রহ্মকমল"|ব্রহ্মদেবের হাতেই এই ফুলটি দেখতে পাওয়া যায় |পুরাণে বর্ণিত উপাখ্যানগুলি থেকেই আমরা তেমনটা জানতে পারি |আজকে আমরা আলোচনা করবো সেই দুষ্প্রাপ্য ফুলকে নিয়েই |সেই ফুলের মাহাত্ম্যকে নিয়ে |পুরাণে বর্ণিত আছে উত্তরাখণ্ডে হিমালয়ের পাদদেশে যে পবিত্র স্থানটি রয়েছে তা আজও দেবতাদের বিচরণক্ষেত্র |দেবতারা আজও সেখানে আসেন ও মর্ত্যের অবস্থাকে নিজের চোখে দেখেন |উত্তরাখণ্ডের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য কিছুটা তেমনই |সাক্ষাৎ দেবভূমির মতই লাগে |আপনি দেখলেও হয়ত তেমনটাই মনে করবেন|এখানেই দেখা যায় পৃথিবীর সবচেয়ে দুষ্প্রাপ্য ফুলটি "ব্রহ্মকমল"|এমনটাও মনে করা হয় যে এটি ব্রহ্মার তৈরি সৃষ্ট বাগিচা |এই সমস্ত ফুল তাঁরই সৃষ্টি |এই বাগান শুধু তাঁরই নয় সমগ্র দেবভূমির বিচরণক্ষেত্র |এই দুষ্প্রাপ্য ফুলটির সম্পর্কে আমরা খুব কমই জানতে পারি |এমনকি কোনো বৃহদ বিবরণও খুঁজে পাওয়া যায়না |যতটুকু রহস্যের উদ্ঘাটন সম্ভব হয়েছে তার পরিপ্রেক্ষিতেই সবাই এই বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করে থাকেন |তাই আমিও আমার স্বল্প জ্ঞানের ভিত্তিতে আপনাদের কাছে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করবার সিদ্ধান্ত নিলাম |
ব্রহ্মকমল নিয়ে জানার আগ্রহীর সংখ্যা প্রচুর |সমগ্র পৃথিবীতেই ভারতীয় পুরাণ ও তার ঐতিহ্য নিয়ে অনেকেই আগ্রহ প্রকাশ করে থাকেন |আমাদের এই রহস্যময়ী প্রদেশটিতে বহু রহস্য ছড়িয়ে ছিটিয়ে বিরাজমান |এই ব্রহ্মকমল রহস্যও তাদের মধ্যে অন্যতম |ওতো বড় একটি উপত্যকা জুড়ে কেনই বা ফুটে থাকে ঝাঁকে ঝাঁকে এতো ফুল ! নিজের থেকেই কি প্রকারে সৃষ্টি হতে পারে এতো বড় একটি উপত্যকা, যা কিনা রঙ বেরঙের দুষ্প্রাপ্য ফুলের সমন্বয়ে আবৃত, তা নিয়ে বৈজ্ঞানিকদের মধ্যেও যুক্তিতর্কের অভাব নেই |পদ্ম দু ধরণের,জলপদ্ম ও স্থলপদ্ম৷ আবার স্থলপদ্মের বিশেষ রূপটি হল পাথরের পদ্ম বা হিমালয়ের পদ্ম বা ব্রহ্মকমল৷ পুরাণ অনুসারে স্বর্গ-মর্ত্য-পাতালের সৃষ্টিকর্তা স্বয়ং ব্রহ্মা এই ফুলের উপরে বসে থাকেন৷ তাই একে ব্রহ্মকমল বলা হয়৷এটি বিশ্বের সবচেয়ে দামী এবং দুষ্প্রাপ্য ফুল। ভারতীয়দের কাছে এই ফুল ‘ব্রহ্মকমল’ নামেই বেশি পরিচিত। এটি পার্বত্য ক্যাকটাস জাতীয় ফুল। শোনা যায়, এই ফুল রাতে ফোঁটে এবং ভোর হওয়ার আগেই ঝরে যায়। তাই এর আর এক নাম ‘কুইন অব দি নাইট’। কোন দাম দিয়েই এই ফুল কেনা যায় না। পুষ্পপ্রেমীদের কাছে এটি তাই ‘অমূল্য রতন’।এটি বিশ্বের সবচেয়ে দামী ফুলের তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে। ২০০৬-এ চেলসি পুষ্প প্রদর্শনীতে প্রথম গোটা দুনিয়ার নজর কাড়ে এই ফুলটি। দাম প্রায় ১ কোটি ৫৮ লাখ ডলার।এটি একটি অর্কিড প্রজাতির ফুল। প্রায় আট বছরের নিখুঁত পরিচর্যার পর এই ফুলটি সম্পূর্ণ বিকশিত হয়।
ভারতের মাটিতে ব্রহ্মকমল পবিত্র ফুল হিসেবে বিবেচিত৷ দেবভূমির প্রায় সর্বত্র বিশেষ করে গাড়োয়ালে ব্রহ্মকমলের দেখা মেলে৷ হিমেল বাতাসে পাথরের খাঁজ থেকে বেরিয়ে আসা অদ্ভুত এক ফুল৷ শুধু ব্রহ্মকমলই নয় পার্বত্য উত্তরাখণ্ডে বহু ফুলের সমাহার হয়েছে৷ বিশেষ করে ফুলের উপত্যকা বা ভ্যালি অফ ফ্লাওয়ার্স৷ শিখ তীর্থস্থান হেমকুণ্ড সাহিব যারা যান তাঁদের এই উপত্যকা পার হতে হয়৷ যাত্রাপথের বিভিন্ন সময়ে হালকা ফুলের সৌরভ যাত্রীদের ঘিরে রাখে৷ ৮৭.৫ বর্গ কিলোমিটার বিস্তৃত এই উপত্যকায় কত ফুল রয়েছে তার সঠিক হিসেব গবেষকরাও দিতে পারেননি৷ বিভিন্ন রিপোর্টে প্রকাশ অন্তত ৫২১ প্রজাতির ফুলের দেখা মেলে দেবভূমিতে৷ যার ৪০টি প্রজাতি সবাই দেখতে পান৷ যার অন্যতম ব্রহ্মকমল৷ব্রহ্ম কমল এক ধরণের সপুষ্পক উদ্ভিদ যাদের মূল আবাস হিমালয় পার্বত্য এলাকা, ভারতের উত্তরাখণ্ড প্রদেশ, মায়ানমারের উত্তরাংশ এবং দক্ষিণ-পশ্চিম চীন। এটি হিমালয়ের ৪৫০০ মি. উর্দ্ধে দেখা যায়। এটি উত্তরখন্ডের রাষ্ট্রীয় ফুল। এটি ০.৩ মি. (১ ফুট) দৈর্ঘ্যের হয়। এর অন্য নামগুলো হলো: ব্রহ্মকমল, কন, কাপ্ফু।তিব্বতে এই উদ্ভিদ ভেষজ ঔষধ হিসেবে ব্যবহৃত্ হয়ে থাকে, যা সেখানে "সা-দু-গোহ-ঘুহ" (তিব্বতীয় ভাষায়: ཤཟའ བདྭད མཤ དཤྭ ) নামে পরিচিত। এটি তিতা স্বাদযুক্ত। সম্পূর্ণ গাছটিই ব্যবহারযোগ্য। এই উদ্ভিদটি বিলুপ্ত-প্রায় হয়ে যাচ্ছে কারণ মানুষ তাদের প্রয়োজনে এটি কেটে নিয়ে ধ্বংস করছে। এটি হিমালয়ের প্রার্বত্য এলাকায় পাওয়া যায়। এটি মুত্র-সংক্রান্ত সমস্যার ক্ষেত্রেও ব্যবহৃত হয়।
তেমন কিছু রঙের বাহার নেই৷ সাদা ও ঘিয়ে রঙের এই ফুলটির হালকা একটা গন্ধ রয়েছে৷ নামটাই এর মূল আকর্ষণ৷ আর ওষধি বিজ্ঞানের কদর তাকে অমূল্য করে রেখেছে৷ গ্রানাইট পাথরের খাঁজ থেকে বের হয়ে আসা ফুলটি পৌরাণিক কথা ও ওষধি বিজ্ঞানের অন্যতম উপাদান হিসেবে ছড়িয়ে রয়েছে উত্তরাখণ্ড হিমালয়ের আনাচে কানাচে৷পাঁকে যার জন্ম-সেই ফুল হল পদ্ম৷ আর পাথরে যার জন্ম সেই ফুল ব্রহ্মকমল৷ মরশুমি হাওয়ায় দোলা লেগেছে সেই পাথরের পদ্ম|
গাছের ধরণ :-
ক্যাকটাস গোত্রীয় এই গাছটি মসৃণ ও কন্টকহীন,কান্ড খাঁড়া,ঊর্ধ্বগামী,বিভ্রান্তিমূলক বা ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে এমন,ডালপালা বহুল পরিমাণে থাকে এবং তার বেশিরভাগ বায়বীয় শিকড় যুক্ত।গাছটি প্রায় ৮-১০ মিটার পর্যন্ত বাড়তে পারে।এই গাছের যথারীতি পাতা নেই,অর্থাৎ উদ্ভিদটি প্রযুক্তিগতভাবে পাতাবিহীন।রূপান্তরিত কান্ডই পাতার কার্য সম্পাদন করে।গাছের গোড়া শক্ত,ডাঁটার মতো,কাষ্ঠল।প্রধান কান্ড বেলনাকৃতি এবং লম্বায় ২-৬ মিটার হয়।যার অগ্রভাগ রূপান্তরিত হয়ে চ্যাপ্টা,পার্শ্ব প্রসারিত,মসৃণ,ফিতার মতো হয়।দুধারে আঁকাবাঁকা,খাঁজকাটা।দুটি খাঁজের মধ্যে বেশ কিছুটা ব্যবধান লক্ষ্যনীয়,শীর্ষভাগ সূক্ষ্মাগ্র থেকে সরু।গাঢ় সবুজ রঙের,বেশ পুরু,শিরা-উপশিরা স্পষ্ট।মধ্যশিরা স্হূলকায়,২-৬মিমি চওড়া।অপ্রধাণ কান্ড যা পাতার মতো দেখতে মসৃণ,উপবৃত্তাকার,প্রান্ত ঢেউ খেলানো এবং বৃত্তাকার দাঁতের মতো।যেখান থেকে শুধু পাতার মতো অংশই নয়,ফুলের কুঁড়িও জন্মায়।অ্যারোলা(areolar)ছোট এবং মেরুদন্ডহীন।পাতার মতো দেখতে এই অংশটি লম্বায় প্রায় ৩০সেমি এবং চওড়ায় প্রায় ১২সেমি এবং মোমের মতো।এর কারণ পাতায় কাটিনের(cutin) উপস্থিতি রয়েছে।কাটিনের উদ্দেশ্য হ'ল উদ্ভিদকে জল ধরে রাখতে সহায়তা করা।একটি মাইক্রোস্কোপের নীচে পর্যবেক্ষণ করার জন্য একটি পাতার নমুনা কাটার সময়,একটি জেল-জাতীয় পদার্থ বেরিয়ে যায়।যা বেশিরভাগ জল-ভরা টিস্যু নিয়ে পাতার কাঠামোর প্রতিনিধিত্ব করে।
ব্রহ্মকমল- দেবতাদের প্রিয়, সুন্দর, সুগন্ধী, দিব্যফুল। মে জুন মাস থেকে সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত ফুলটা ফোঁটে । সন্ধ্যা ৭-৮ টা থেকে এর ফোটা শুরু হয়, রাত ১১-১২ টার মধ্যে ফোটা সম্পূর্ণ হয়ে যায়। পরদিন সকালে ফুলটা মূর্ছা যায়। শাস্ত্রে এর ৬১ টা প্রজাতির কথা পাওয়া যায়। এটা প্রধানত হিমালয়ের ফুল। উত্তরাখণ্ড, সিকিম, হিমাচল- প্রদেশ, কাশ্মীরে এইফুল পাওয়া যায়। শিব, মা নন্দা দেবীর ও এ ফুল খুব প্রিয়। এই ফুল ফোঁটা দেখলে নাকি মানুষের মনের ইচ্ছা পূরণ হয়। বহু পৌরাণিক গল্প আছে এই ফুলকে নিয়ে।
শ্রীলঙ্কায় ফুলটিকে 'Kadupul Mal' বলে যার অর্থ 'Flower from the Heaven'(স্বর্গ থেকে পাওয়া ফুল)।শ্রীলঙ্কায় এটি কিংবদন্তি ফুল হিসাবে বিবেচিত এবং নাগেদের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত।বিশ্বাস করা হয় যে এটি স্বর্গ থেকে নেমে আসা একটি ফুল এবং এটি ফুল ফোটার পরে শ্রী পাদ-এর(Sri Pada) পবিত্র পাহাড়ে ধ্যানরত ভগবান বুদ্ধের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে তাদের স্বর্গীয় স্থান থেকে নাগগণ পৃথিবীতে আসেন।ফুলটির প্রস্ফুটনের মরসুমের সঙ্গে শ্রী পাদ-এ তীর্থযাত্রার মরসুম মিলে যাওয়ায় এই গল্পের বিশ্বাসযোগ্যতাকে আরও বাড়িয়ে তুলেছে।শ্রীলঙ্কায় এর উৎপত্তি হলেও জাপান,চীন এবং ভারতের পুরাণেও এর উল্লেখ আছে।জাপানে এটি 'Gekka Bijin' নামে পরিচিত।যার অর্থ ‘Beauty under the moon'(চাঁদের নিচে সৌন্দর্য্য)।চীনের লোকেরা তাদের রসবোধের প্রকাশ করে ফুলটি সম্পর্কে বলে থাকেন ‘flash in a pan'-কারণ এই ফুলটির ফোটার জন্য সারা বছর অপেক্ষা করতে হয় কিন্তু এর প্রস্ফুটন এবং খ্যাতি মাত্র সামান্য কিছু সময়ের জন্য।
উত্তর মায়ানমার, দক্ষিণ-পশ্চিম চীন ও ভারতের উত্তরাখণ্ড— মূলত এই তিন অঞ্চলেই দেখা পাওয়া যায় ব্রহ্মকমলের। ৩০০০ থেকে ৪৮০০ মিটার উচ্চতায়, পাথরের ফাঁকে ফোকোরে সবুজ ঘাসের মাঝে মাঝে দেখা যায় এই ফুল।পৌরাণিক মতে, হাতির মাথা লাগানোর পরে, গণেশের প্রাণ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ব্রহ্মকমলের জলে স্নান করে। যে কারণে, এই ফুলকে ‘জীবনদায়ী’ পদ্মও বলা হয়। কিন্তু, বর্তমানে এই ফুল বিপন্ন তালিকায় নাম লিখিয়েছে। তাও আবার মানুষের হাতে। ভারতের উত্তরাখণ্ডের বেশ কিছু জায়গাতেই দেখতে পাওয়া যায় ব্রহ্মকমল। মূলত রূপকুণ্ডের পথেই দর্শন পাওয়া যায় এই ফুলের। কিন্তু, এই অঞ্চলে এই ফুলের রক্ষণাবেক্ষণের কোনও ব্যবস্থাই নেই। পাশাপাশি, আঞ্চলিক মন্দিরগুলোয় পুজোর জন্য প্রভূত পরিমাণে ব্যবহৃত হয় এই ফুল। তা ছাড়াও, ব্রহ্মকমলের ঔষধি গুণাগুণের ফলে, প্রচুর পরিমাণে তা বিক্রি হয় কালো বাজারে। তৃতীয় কারণ, অবশ্যই আবহাওয়া। প্রতি নিয়ত বদলে যাচ্ছে পৃথিবীর আবহাওয়া। যার ফলে কমে যাচ্ছে ফুলের সংখ্যাও।

ফল :-
এই গাছে ফল খুব কম দেখা যায়।গাছে ফল ধারণের ঘটনা বিরল বলা যেতে পারে।ফলগুলি রসাল,আবৃত,নরম শ্বাসযুক্ত,১২-১৬ সেমি লম্বা ও ৬-৮ সেমি চওড়া ডিম্বাকৃতির,উপরিভাগ মসৃণ এবং কোণযুক্ত হয়।যা কাঁচা অবস্থায় সবুজ এবং পাকলে লালচে বেগুনি রঙের হয়।ভেতরে খব ছোট ছোট কালো রঙের ২-২.৫×১.৫ মিমি অনেকগুলো বীজ থাকে।পাতার থেকেই এর চারা তৈরী হয়।একটি পাতা কেটে মাটিতে ফেলে রাখলে কিছুদিনের মধ্যেই তার থেকে শিকড় গজিয়ে যায়।
স্বাভাবিকভাবেই ব্রহ্মকমল বিলুপ্তির দিকে পা বাড়িয়েছে। উত্তরাখণ্ডের পঞ্চ কেদার অঞ্চলে সমীক্ষা চালিয়ে, ‘নেচার গাইড’ নামে একটি বইয়ে প্রকাশিত হয়েছে এই তথ্য। সেখানে আরও বলা হয়েছে যে, ২০১৬ সালের তুলনায়, প্রায় ৭০ শতাংশ কম ব্রহ্মকমল ফুটেছে ২০১৭ সালে। এক সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, এই সমীক্ষাটি করে ‘ওয়াল্ডলাইফ ইনস্টিটিউট অফ ইন্ডিয়া’। বিশেষজ্ঞদের মতে, ব্রহ্মকমল বাঁচানোর জন্য পাহাড়ের আরও খানিক উপর দিকে, এই ফুলের চাষ করতে হবে। তবে পরিবেশ অনুকূল হওয়াটা খুবই জরুরি।প্রসঙ্গত, কেদারনাথ ওয়াইল্ডলাইফ স্যাঙ্কচুয়ারি, নন্দাদেবী বায়োস্ফিয়ার রিজার্ভ ও অ্যসকট ওয়াইল্ডলাইফ স্যাঙ্কচুয়ারি— ব্রহ্মকমলের জন্য বর্তমানে এই তিন অভয়ারণ্যই কেবলমাত্র সংরক্ষিত স্থান।
ব্রহ্মকমল কে সৌভাগ্যের প্রতীক বলে মনে করা হয়। অনেকে সকালে শুকিয়ে যাওয়া ফুলটাকে নিয়ে ঘরে ঢোকার দরজায় টাঙিয়ে রাখে। এতে কোন নেগেটিভ এনার্জি ঘরে ঢুকতে পারে না বলে মানুষের বিশ্বাস। এছাড়াও এর অনেক ঔষধি গুণ ও আছে।ব্রহ্মকমল এর এক এক জায়গায় এক এক রকম নাম। উত্তরাখণ্ডে একে বলে ব্রহ্মকমল, হিমাচলে দুলহাম্বুল। কাশ্মীরে গলগল, দুধফুল হিমাচলপ্রদেশে। শ্রীলঙ্কাতে কাদুফুল আর জাপানে গীকা ভীষণ।
এ গাছ কিনে লাগালে সৌভাগ্য খোলে না। কারো কাছ থেকে উপহার পেলে তবেই এটা লাগানো উচিৎ। পাতা থেকেই এর গাছ হয়।
ভেষজ হিসাবে ব্যবহার :-
Epiphyllum oxypetalum হলো এমন একটি অনন্য গাছ যার মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন ঐতিহ্যবাহী ঔষধি গুণাবলী।লোকেরা ওষুধের জন্য ফুল, কান্ড এবং তরুণ অঙ্কুর ব্যবহার করে।এটি হোমিওপ্যাথি চিকিৎসায় ব্যবহার করা হয় এবং মূত্রনালীর সংক্রমণের জন্য,অন্যান্য মূত্রনালীর সমস্যা,হৃদপিন্ডের অবস্থার জন্য যেমন অল্প পরিশ্রমেই হৃৎপিণ্ডে চাপ ধরা ব্যথা,আকস্মিক ব্যথা এবং রক্তক্ষরণের চিকিৎসার জন্য এর সুপারিশ করা হয় এবং হৃৎপিণ্ডের উদ্দীপক হিসাবে ব্যবহৃত হয়।এর রূপান্তরিত কান্ড যা পাতার মতো কাজ করে তাতে কিছু সক্রিয় উপাদান আছে যার অ্যান্টিব্যাক্টিরিয়াল(antibacterial) কার্যকলাপ রয়েছে।এর কান্ডটি শোথ এবং হৃৎপিণ্ডের সমস্যাজনিত কারণ নিরাময়ে ঔষধি রূপে ব্যবহার করা হয়।ভিয়েতনামী লোকেরা স্যুপ তৈরির জন্য বিবর্ণ ফুলের পাপড়ি ব্যবহার করে যার মধ্যে টনিক এবং কামোদ্দীপক উপাদান রয়েছে বলে মনে করা হয়।উদ্ভিদের রস মূত্রাশয়ের সংক্রমণ, শ্বাসকষ্ট এবং জল ধরে রাখার জন্য ব্যবহৃত হয়।বাতের ব্যথার উপশমে বাহ্যিকভাবে এর প্রয়োগ করা হয়।উদ্ভিদটি রক্তাক্ত কফ এবং কাশি,জরায়ু রক্তপাতের চিকিৎসার জন্যও ব্যবহার করা হয়।
এই উদ্ভিদ সংক্রান্ত পূর্ববর্তী প্রতিবেদন অনুযায়ী এর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ কিছু ঔষধি গুণাবলী এবং কিছু জৈবিক প্রভাব যেমন অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটোরি(anti-inflammatory),অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট (antioxidant) এবং অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল(antimicrobial) কার্যকলাপ প্রদর্শিত হয়েছে।অসংখ্য ঔষধি গুণাবলী থাকা সত্ত্বেও উদ্ভিদটি এখনও তেমনভাবে গবেষকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পারেনি।
শুধু ব্রহ্মকমলের দর্শনের আশায় প্রতি বছর লক্ষ লক্ষ যাত্রী ভিড় করে আসেন হিমালয়ের কোলে। হৃষীকেশ, বদ্রীনাথ ছুঁয়ে, অলকানন্দাকে সাক্ষী মেনে হাজির হন ফুলেল এই উপত্যকায়। ভ্যালি অফ ফ্লাওয়ার্স-এ। নন্দন কাননে।আপনি প্রশ্ন তুলতেই পারেন, রোজকার জীবনে তো ক্লান্তি কিছু কম নেই! তার পরেও কেন এত পথ পেরিয়ে, পায়ে হেঁটে, চড়াই-উতরাই ভেঙে শুধু ফুল দেখতে যাওয়া? তার চেয়ে বিলাসবহুল কোনও জায়গায়, সুন্দরী সাহচর্যেই কি জীবন ধন্য হয় না?
রং ভালবাসেন তো? দেখতেই তো পাচ্ছেন ছবিগুলো! এমন রঙের রায়ট আর কোথায় পাবেন বলুন তো? শুধু অজানা ফুলই নয়, অজানা রঙের খোঁজ পেতে হলেও আপনাকে আসতে হবে হিমালয়ের এই উপত্যকায়।
আর যদি রঙেও অনিচ্ছা থাকে?
তাহলে রয়েছে উদার নীলের কোলে জেগে থাকা হিমালয়ের স্নিগ্ধ গভীর রূপ। হিমালয় কিন্তু তার উপত্যকার দ্বার বড় একটা অবারিত করে রাখে না। এখানে সেই সুযোগ মেলে বছরে মাত্র একবার।তার পরেও আপনি আসবেন না?
কী ভাবে যাবেন:-
কলকাতা থেকে হরিদ্বার বা হৃষীকেশ ট্রেনে। সেখান থেকে বদ্রীনাথের বাসে গোবিন্দঘাট। গোবিন্দঘাট থেকে ঘোড়া কিংবা ডান্ডিতে ঘাংঘারিয়া। ঘাংঘারিয়া থেকে ১ কিমি ট্রেক করে গেলে ভ্যালি অব ফ্লাওয়ার্স-এর প্রবেশফটক। এখানে মাথাপিছু ১৫০ টাকার (বিদেশি হলে ৬৫০ টাকা) টিকিট কেটে উপত্যকায় ঢুকতে হয়। সারা দিন সেখানে কাটিয়ে সূর্যাস্তের আগেই ফিরে আসতে হয় ঘাংঘারিয়ায়। ওই পথেই ফেরা।
ঘাংঘারিয়া থেকে কিছুটা এগিয়ে লক্ষ্মণগঙ্গার উপর সেতু পেরিয়ে পথ দু’ দিকে বেঁকে গিয়েছে- বাঁ দিকের পথ গিয়েছে ভ্যালি অব ফ্লাওয়ার্স বা নন্দনকাননে আর ডান দিকের পথ শিখতীর্থ হেমকুণ্ড সাহিবে। দু’ পথেই ৬ কিমি করে হাঁটা। ঘাংঘারিয়ায় দু’-তিন রাত কাটিয়ে দু’টি জায়গা ঘুরে আসা যায়।
কোথায় থাকবেন:-
ঘাংঘারিয়াতে থাকার জন্য আছে জিএমভিএন-এর গেস্ট হাউস, বেসরকারি হোটেল। এখানকার গুরুদোয়ারা কর্তৃপক্ষও রাতে থাকার ব্যবস্থা রেখেছেন। গোবিন্দঘাটে পৌঁছে সে দিন যদি ঘাংঘারিয়া না আসা যায়, তা হলে গোবিন্দঘাটে রাত কাটানোর ব্যবস্থা আছে।
যা খেয়াল না রাখলেই নয়:-
ভ্যালি অব ফ্লাওয়ার্স-এ ৫২১ রকম প্রজাতির লতা, গুল্ম ও বৃক্ষ দেখতে পাওয়া যায়। ৩০০ প্রজাতির ফুল ফোটে এখানে। ঘাংঘারিয়ার বন অফিস বা ভ্যালি অব ফ্লাওয়ার্স-এর কনজার্ভেশন প্রোজেক্ট অফিস থেকে অনেক তথ্য পাওয়া যায় যা একটু জেনে গেলে ফুল চিনতে সুবিধা হয়। সঙ্গে একজন গাইড নিলে লাভ বই ক্ষতি নেই। তিনিই ফুল চিনিয়ে দেবেন। আর হ্যাঁ, সাধারণত ভ্যালি অব ফ্লাওয়ার্স-এ ব্রহ্মকমল দেখতে পাওয়া যায় না। এই পুষ্প উপত্যকায় ব্রহ্মকমল দর্শন বিরল অভিজ্ঞতা। তবে হেমকুণ্ড সাহিবে গেলেই দেখা যায় ব্রহ্মকমল।
তথ্যসূত্র :-
"Saussurea obvallata (DC.) Edgew".The Plant List. Retrieved 6 August 2013.
"Saussurea obvallata - Brahma Kamal". flowersofindia.net. 2012. Retrieved 8 October 2012. Brahma Kamal, the much reverred flower of the Himalayas, is an excellent example of plant life at the upper limit of high mountains (3,000-4,600 m).
"Uttarakhand State Signs | Uttarakhand State Animal | Uttarakhand State Bird | Uttarakhand State Flower | Uttarakhand State Tree". uttaraguide.com. 2012. Archived from the original on 7 November 2012. Retrieved 8 October2012. State Flower : Brahm Kamal
0 Comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন