ফাংশান : অর্পিতা নন্দী

ফাংশান : অর্পিতা নন্দী
ফাংশান : অর্পিতা নন্দী

"হ্যালো হ্যালো মাইক টেস্টিং ওয়ান টু থিরি ফোর হ্যালো হ্যালো...নমস্কার আজ সন্ধ্যা সাত ঘটিকায় বাদামবাগান সংস্কৃতি সংঘের বার্ষিক সাংস্কৃতিক সন্ধ্যা....."

সদ্য গরম পড়েছে, বিকেলে গা ধুয়ে আটপৌরে করে শাড়ী পরে একটু গায়ে মুখে পাউডার বুলিয়ে ঠাকুরের সামনে ধুপ দিচ্ছে মালা  কি একটা গুন্-গুন্ করতে করতে..

..."সমবেত সংগীতের পর নৃত্য পরিবেশন করবেন ঋতিকা মন্ডল, তারপর আবৃত্তিতে মাস্টার সুশোভন শীল, তারপর ঋতুরঙ্গ পরিবেশনায় নৃত্যাঙ্গন ডান্স স্কুল, একক সংগীতে শ্রীমতি মালা দেবী ঘোষ.."

মালার কানে শেষ শব্দ কটা ঢুকতেই মনটা বৃষ্টিস্নাত মেঘলা দুপুরের ময়ূরীর মতো নেচে উঠলো..

... মালা তখন বারো,যেদিন মায়ের হাত ধরে প্রথম গিয়েছিল গানের স্কুলে, তারপর পাঁচ বছর নিয়মিত নিষ্ঠা সহকারে শিখেছে রবীন্দ্রসংগীত, দিদিমণি খুব খুশি ছিলেন, বলতেন আরো বড়ো হতে হবে তোমায়…

তারপর সব কেমন হঠাৎ বদলে গেলো একদিন.. বাবা দুদিনের রোগ ভোগে চলে গেলেন দুম করে কাউকে কিছু সুযোগ না দিয়ে.. একটু সামলে নিয়ে  মায়ের জীবন সংগ্রামের হাতিয়ার হয়ে দাঁড়ালো সেলাই মেশিনটা..কষ্ট আর পরিশ্রমের প্রথম বলি হলো মালার গান চর্চা…

"দিদি শুনছ, কটা কথা ছিল.." হাঁসি হাঁসি মুখে পাড়ার ঘোষ কাকিমা এলেন মালাদের বাড়ি..মালার তখন প্রথম বর্ষ কলেজের..বাবা চলে যাবার দু বছরের মধ্যে মালার বিয়ে হয়ে গেলো..

পাত্র ব্যবসায়ী, আমতলা বাজার এ বড়োসড়ো মুদিখানা দোকান.. বাপ্ ভাইরা মিলে উদয়াস্ত খেটে দোকান চালায়ে রমরম করে.. গুছিয়ে ঘর গেরস্থালি আর দেখতে শুনতে পরিষ্কার,আর কোনো দাবিদাওয়া ছিল না ঘোষ পরিবারের...সবকিছু সুন্দর করে সামলে নিলো মালা..

…....শেষ খদ্দেরকে সামলে শাটারটা আদ্দেক নামিয়ে দিলো শ্যামল, এবার বাড়ী যেতে হবে, এই প্রথম স্টেজে উঠে গান গাইবে মালা ..

"ও শ্যামলা তোর বৌ এস্টেজে উটে গাইবে রে, চিন্তা করিস নে ক…..." মালের ঘোরে বলেছিলো  কেলাবের কালচার সেক্রেটারি বিমলদা.. কথা রেখেছে কিন্তু, শ্যামল মনে মনে ভাবছিলো কেলাবে মোটা চাঁদা দেওয়া, কেলাবের রাতের আসরে  দোকান থেকে এটা ওটা সাপ্লাই করা এদ্দিনে সার্থক হলো.. অবশ্য নিজেও যে এক্দুবার আসরে বসেনি তা না..সাত পাঁচ ভেবে মুচকি হেঁসে ভুড়িতে হাত বুলিয়ে নিলো শ্যামলা, তারপর বাড়ির পথ ধরলো..

গুছিয়ে স্টেজে বসলো মালা.. আঁচলটা পিঠের ওপরে টেনে নিয়ে.. পাশে তবলচি কমল তবলায় তাল ঠুকে বাঁধছে., মালার চোখ একটু খুঁজে নিলো টাবলু আর তার সরল সাদাসিধে বাপকে ..সার সার মাথার ভিড়ে কচি গলায় ভেসে এলো.. মা ও মা.. এই যে .. আমরা এই দিকে,..
কানে এলো কমলের চাপা গলা 'বৌদি, নিন শুরু করুন" মালা পুরোনো গানের খাতা পাতা উল্টে শুরু করলো..
"আমার একটি কথা বাঁশি জানে, বাঁশিই জানে, ভোরে রইলো বুকের তালা, কারো কাছে হয়নি বলা, কেবল বলে গেলাম বাঁশির কানে  কানে ...."
Share on Google Plus

About Shraboni Parbat

This is a short description in the author block about the author. You edit it by entering text in the "Biographical Info" field in the user admin panel.