গরিবের মড়া : মৃদুল শ্রীমানী


গরিবের মড়া
 
মৃদুল শ্রীমানী

কবর দেবার জায়গায় জমি মেলেনি। করোনা রোগীকে কেউ পছন্দ করে না। এড়াতে চায়। নির্দিষ্ট কবরস্থানে অন্ত‍্যেষ্টির অধিকার দেয় না সম্প্রদায়ের লোকজন। তাই জমি খুঁজে বের করতে হয়। শববাহী গাড়ি পাওয়া গেল না পয়সা কবুল করেও। হাসপাতালে লোকজন ব‍্যস্ত অন‍্য কাজে। বডি ব‍্যাগে মড়া কি করে ঢোকাতে হয়, কেউ দেখিয়ে দিল না। তাই আমি ফোনে বলে কয়ে বিডিও অফিস থেকে বডি ব‍্যাগ যোগাড় করে দেওয়া সত্ত্বেও গরিবের মড়া বাড়িতে পড়ে রইল কতক্ষণ। আমি গিয়ে দেখি লোকজন বিশেষ নেই। ওঁর নাতবৌ একটু লেখাপড়া শিখেছেন মনে হল। তাঁকে ফোনে ফোনে পরামর্শ দিয়ে চলেছিলাম। দমকল ডেকে এলাকা সাফাই করালাম। মড়া বইবার লোক মেলে না। সবাই দেওয়ালি মানাতে ব‍্যস্ত।

এলাকার মহিলা পৌর প্রতিনিধি অসুস্থ শরীরে একটু দেখা দিয়ে গেলেন। আর কোনো পলিটিক্যাল, থুড়ি সমাজসেবী মিলল না। তিনজন মিলে মড়া বের করছিল। আমি ঠিক করেছিলাম, পাশে থাকলেও, ওদের দিয়েই সব করাবো। গাড়ি চড়লাম না। পুলিশের লোকও আমার সাথেই হাঁটতে হাঁটতে চলল। মৃতদেহবাহী দলের সাথে হাঁটতে হাঁটতে একটু একটু করে লোক জুটল। তারপর জঙ্গলের মধ‍্যে ঘোর আঁধারে সরকারি জমিতে গিয়ে মাটি খুঁড়ে কবর।

আমি নিজের হাতে হাসপাতাল থেকে চারটি পিপিই ও দস্তানা ইত‍্যাদি জোগাড় করে দিয়েছিলাম। মুসলিম সম্প্রদায়ের নেতা হাতে করে নিয়ে গিয়েছিলেন আমার থেকে। সন্ধ‍্যায় মৃতের বাড়ি গিয়ে দেখি মাত্র একজন পিপিই পরে বসে আছেন। বাকি পিপিইগুলো কোথায় তার হদিস নেই। শববাহী গাড়ি এল না পয়সা কবুল করা সত্ত্বেও। আমি গিয়ে ধমক দিয়ে "মড়া" বের না করালে ওই অচলাবস্থা চলত। হাঁটতে হবে শুনে পিপিই পরা লোকটাও সটকে পড়ল। আরেকটু হলে আমাকেই কাঁধ লাগাতে হচ্ছিল। গরিবের মড়া, বুঝলেন তো?


Share on Google Plus

About Shraboni Parbat

This is a short description in the author block about the author. You edit it by entering text in the "Biographical Info" field in the user admin panel.