 |
এলিজা কার্সন |
২০৩৩ সালে মঙ্গলগ্রহে হারিয়ে যাবে যে মেয়েটি : রুদ্রসাগর কুন্ডু
মাতৃহারা এক মেয়ে। এলিজা কার্সন। বর্তমানে মাত্র আঠারো বছরে, নাসার সব থেকে কনিষ্ঠতম মহাকাশ বিজ্ঞানী। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে আজ থেকে ১৩ বছর পরে আগামী ২০৩৩ সালে মাত্র ৩২ বছর বয়সে মঙ্গলগ্রহে পারি জমাবে এই নভোচারী। কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো মঙ্গলগ্রহেই বিলীন হয়ে যাবে এই সাহসী মেয়েটির জীবন। ভাবা যায় ? জেনেবুঝে একটি মেয়ে অজানাকে জানার নেশায় পারি জমাবে নির্জন এক গ্রহে। যেখান থেকে সে আর কোনোদিন ফিরে আসতে পারবে না পৃথিবীতে। শুধু কি তাই? এক দু বছরের মধ্যেই হয়তো তার শরীর বিলীন হয়ে যাবে মহাবিশ্বে।
সংবাদটি আমাকে ভাবিয়ে তুলেছিল ২০১৯ সালের প্রথম দিকে। খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে পড়েছি বিভিন্ন মাধ্যমে প্রকাশিত এই বিষয়ের সমস্ত সংবাদ। অবাক হওয়ার থেকে গর্বিত হয়েছি বেশি। অভূতপূর্ব এমন সঙ্কল্পের গল্প, সকলের মনকেই নাড়িয়ে দেয়। এলিজা ছোটবেলা থেকেই মাতৃস্নেহ থেকে বঞ্চিত। অর্থাৎ মাকে সে কোনোদিন দেখেনি। বাবার কাছে মানুষ। এলিজার যখন মাত্র ৭ বছর বয়স, তখন তার বাবা আলবামার একটি স্পেস ক্যাম্পে পরিদর্শনের জন্য নিয়ে যায়। সেই ক্যাম্পের অবস্থান, কার্যকলাপ, ব্যবস্থাপনা, ও উদ্যেশ্য এলিজাকে প্রভাবিত করে। এলিজার ভাবনার জগৎকে অন্য শিশুদের থেকে সম্পূর্ণ আলাদা এক জগতে নিয়ে যায়।
 |
রুদ্রসাগর কুন্ডু |
দ্বিতীয় ঘটনাটি ঘটে, ৯ বছর বয়সে। মহাকাশচারী সান্ড্রা ম্যাগ্নাসের সঙ্গে সাক্ষাতের সময়ে। তিনিও একজন নারী নভোচারী। তিনি এলিজাকে তার ছোটবেলার নভোচারী হওয়ার স্বপ্নের কথা বলেন। দৃঢ় সঙ্কল্পের গল্প বলেন। তারপর থেকে মহাকাশ নিয়ে অসীম জ্ঞান-পিপাসায় এলিজা কেবল নিজেকে তৈরী করার কথা ভাবছিলো। মাত্র ১২ বছর বয়সে, সবচে কম বয়সে এলিজা আলবামা, কানাডার কুইবেক ও তুরস্কের ইজমিরে নাসা পরিচালিত ৩ টি বিশেষ ক্যাম্পে অংশ গ্রহণ করে।
মহাকাশ সম্পর্কে সাধারণ জ্ঞান অর্জনের পাশাপাশি বিভিন্ন মিশন পরিচালনার পদ্ধতি আয়ত্ত করতে থাকে এলিজা। মহাকাশে মহাকর্ষ-শূন্য স্থানে চলাচল করার পদ্ধতি, এবং সেখানে বসবাসের বৈজ্ঞানিক ব্যবস্থাপনা, জরুরি অবস্থায় দ্রুত সিদ্ধান্ত নেয়ার প্রস্তুতি সম্পর্কে দক্ষতা অর্জন করেন। রোবোটিক্স বিষয়ে জ্ঞানলাভের পাশাপাশি সে একটি রকেটও বানিয়েছে। নাসার পক্ষ থেকে তার একটি ডাকনামও দেয়া হয়েছে। ব্লুবেরি। আমাদের ভারতে এই বয়সে পরিপূর্ণ সাধারণ জ্ঞানটুকুও অর্জন করে না নারীরা।
আটারো বছরের এই যৌবনবতী মেয়েটির প্রেম করার অধিকার নেই। কারো সঙ্গে যৌন সম্পর্ক করারও অধিকার নেই। হ্যাঁ, এমনি এক চুক্তিবদ্ধ সিদ্ধান্তের মধ্যে চুড়ান্ত হয়েছে এলিজার মঙ্গলগ্রহে যাওয়ার স্বপ্ন। নাসার নিয়মানুসারে, এলিজা যেহেতু আর কোনোদিন পৃথিবীতে ফিরে আসবে না, সেহেতু পৃথিবীর কোনো মানুষের সঙ্গেই নতুন কোনো সম্পর্কে সে আর জড়াতে পারবে না। ভাবা যায় ? কী এক অজানা রহস্যে আবর্ত হই পৃথিবীর পৃষ্ঠদেশে। কি তার নিয়ম, কি তার কারণ; কিছুই জানি না আমরা।
কিন্তু এলিজারা আমাদের মতো নন। আর মাত্র তেরোটি বছর পেরিয়ে ৩২ বছর বয়সে চিরতরে হারিয়ে যাবে মেয়েটি। নিজসিদ্ধান্তে একমাত্র নিঃসঙ্গ মানুষ হিসেবে বাকি জীবনটা কাটিয়ে দেবে পৃথিবী থেকে কোটি কোটি মাইল দূরের ক্ষীয়মাণ নীল নক্ষত্রের এক গ্রহে। যেখানে লোহার লালচে মরিচে ঢাকা প্রচন্ড শীতল নিস্প্রান এক গ্রহে। মানুষের এমন বিশাল স্বপ্নের কথা জানলে অবাক হতে হয়।
``তুমি তোমার স্বপ্নের কথা ভাবো, কারো কথায় তা বদলে ফেলো না। '' ... এলিজা কার্সন
2 Comments:
আনন্দের মধ্যেও কষ্ট হয়।
আনন্দের মধ্যেও কষ্ট হয়।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন