তৈমুর খানের জন্ম ২৮ জানুয়ারি ১৯৬৭, বীরভূম জেলার রামপুরহাট ব্লকের পানিসাইল গ্রাম। পিতা ও মাতার নাম : জিকির খান ও নওরাতুন। প্রথম শিক্ষার সূচনা গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয়েই। তারপর দাদপুর-বাতাসপুর জুনিয়র হাইস্কুলে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত। ১৯৮৩ সালে আয়াস হাইস্কুল থেকে মাধ্যমিক পাশ করেন। তারপর রামপুরহাট মহাবিদ্যালয়ে উচ্চ মাধ্যমিক ও বাংলা সাহিত্যে অনার্সসহ বি এ দ্বিতীয় শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হন। অভাবের সংসারে শিক্ষালাভের তেমন সুযোগ না থাকলেও প্রচেষ্টা ছিল বলেই পাটনা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. শিবেশ চ্যাটার্জির সঙ্গে পরিচয় ঘটলে সেখানেই এম এ ক্লাসে ভর্তি হন। পরবর্তীতে সেখান থেকেই ড. ললিতা সান্যালের কাছে প্রেমেন্দ্র মিত্রের কবিতা নিয়ে পিএইচডি সম্পন্ন করেন (২০০১)।
বিবাহ
২০০৫ সালের এপ্রিল মাসের ১২ তারিখ বীরভূম জেলারই নলহাটি ব্লকের বসন্ত গ্রামের মেয়ে সাবিনা ইয়াসমিনকে বিয়ে করেন। দর্শন শাস্ত্রে তিনি রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এম এ পাশ করেন। তাদের দুই ছেলেমেয়ে। মেয়ে বড়ো, নাম তিয়াসি খান।ছেলে ছোট, নাম শ্রেয়ান খান।
কবিকে দীর্ঘদিন বেকার জীবন অতিবাহিত করতে হয়। ১৯৯০ থেকে ২০০৩ পর্যন্ত টিউশান করেই জীবিকা নির্বাহ করেন। মাধ্যমিক পরীক্ষার পর কাজের সন্ধানে বেশ কয়েকবার মুম্বই শহরেও গিয়েছেন। সেখানে দৈনিক মজুরের কাজ করেছেন। গ্রামেও মাঠের কাজ, মাটিকাটার কাজ করতে হয়েছে। কিন্তু কখনোই পড়াশুনো একেবারে ছেড়ে দেননি। ১৯৯৮ সালের নভেম্বর মাসে নলহাটি হীরালাল ভকত কলেজে অংশকালীন শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন। কিছুটা হালে পানি পায়। ২০০০ সালের বন্যায় সর্বস্বান্ত কবি দিশেহারা হয়ে পড়েন। নষ্ট হয় তাঁর বহু পাণ্ডুলিপি। তবুও স্মৃতি ও বেদনা নিয়ে আবার জীবনকে আঁকড়ে ধরেছেন। করেছেন সংগ্রাম। ২০০২ সালের এস এস সি পরীক্ষায় পাশ করে হাইস্কুলের শিক্ষকতার চাকরিতে প্রবেশ করেন। বর্তমানে মুর্শিদাবাদ জেলার সাগরদিঘি ব্লকের বোখারা জুবেদ আলি বিদ্যাপীঠের সহশিক্ষক হিসেবে নিযুক্ত আছেন। উল্লেখ্য এই বিদ্যালয়েই শিক্ষকতা করেছেন স্বনামধন্য সাহিত্যিক আবদুর রাকিব। বর্তমানে কবি তাঁর নিজ শহর রামপুরহাটেই বসবাস করেন।
নব্বই দশকে অর্থাত ১৯৯৩-৯৪ সালে অধ্যাপক ড. নোজফুল হকের সঙ্গে “বালার্ক” নামে একটি পত্রিকা সম্পাদনা করেছেন। মাত্র দুটি সংখ্যাই প্রকাশিত হয়ে পত্রিকাটি বন্ধ হয়ে যায়। সেই সময় রামপুরহাটের “বিকল্প”, “সহেলি”, “ডানা” প্রভৃতি পত্রিকায় কবিতা ও গদ্য লিখতে শুরু করেন। প্রথম কবিতা কবি নজরুলকে নিয়ে প্রকাশিত হয় রামপুরহাট কলেজ ম্যাগাজিনে ১৯৮৪ সালে। পরবর্তীকালে “কাঞ্চিদেশ” পত্রিকার সম্পাদক হিসেবেও কাজ করেছেন। ১৯৯৪ সালে প্রথম কাব্য দৌড় প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত হয় “কোথায় পা রাখি” নামে ।সম্পূর্ণ বিনা খরচে কাব্যগ্রন্থটি প্রকাশ করেন সম্পাদক মধুমঙ্গল বিশ্বাস। সেই সময় থেকেই প্রথম কলকাতায় পদার্পণ। ২০০২ থেকে বিভিন্ন সময়ে “দেশ” পত্রিকায় লেখা প্রকাশিত হতে থাকে। কবিতার সঙ্গে বিভিন্ন বিষয়ে প্রচুর গদ্যও লিখেছেন কবি। ইতিমধ্যে বেশ কিছু গদ্যের বইও প্রকাশিত হয়েছে।বীরভূমের চণ্ডীদাস থেকে পেয়েছেন কবিরুল ইসলাম স্মৃতি পুরস্কার (২০১০) । ২০১৫ তে “প্রত্নচরিত” কাব্যগ্রন্থটির জন্য পেয়েছেন দৌড় সাহিত্য সম্মান । ২০১৭ তে পেয়েছেন অক্সিজেন পুরস্কার ।২০১৮ তে নতুন গতি সাহিত্য পুরস্কার।
0 Comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন