ললাটের লিখন :- পিনাকী চৌধুরী

ললাটের লিখন :- পিনাকী চৌধুরী
ললাটের লিখন :- পিনাকী চৌধুরী 

 " আজকে কাগজে তোর রাশিফল দেখেছিস " ? তোতলাতে তোতলাতে প্রদীপ কোনোরকমে উত্তর দেয় " না" । এবার ক্লাস টিচার প্রদীপের গালে সপাটে একটা চড় কষিয়ে বললেন " অশুভ" ! তারপর কিছুক্ষণ থেমে ক্লাস টিচার অরুণ বাবু বললেন " আমার ক্লাসে এসব অসভ্যতা চলবে না ! " বাস্তবে এই প্রদীপ  টেনেটুনে মাধ্যমিক পাশ করেছে, কিন্তু তারপর আর তার পড়াশোনা এগোয়নি ! সম্প্রতি প্রদীপ বিয়ে থাওয়া করেছে বটে, কিন্তু প্রচন্ড অর্থকষ্টে ভুগছে ! নুন আনতে পান্তা ফুরানোর মতো অবস্থা না হলেও সংসারের দৈন্যদশা ক্রমশই প্রকট হচ্ছে ! প্রদীপরা দুই ভাই , বড় ভাই সেই কবেই আলাদা হয়ে গেছে ! আর প্রদীপ তার বাবা মা ও স্ত্রীকে নিয়ে একটি ছোট্ট বাড়িতে কোনোরকমে দিন গুজরান করে ! একদিন প্রদীপ তার এক বন্ধুর পরামর্শে একজন জ্যোতিষীর শরণাপন্ন হল ! 

সেই জ্যোতিষীর তখন বেশ পসার হয়েছে । প্রদীপের কুষ্ঠি বিচার করে বললেন " তোমার এখন দারিদ্রযোগ চলছে ! প্রায় প্রতিটি গ্রহ নক্ষত্রের অবস্থান বেশ বেশ বেগ দিচ্ছে তোমাকে । তবে তোমার ভাগ্যরেখা কিন্তু প্রবল ! আর সেইজন্য বলছি , তুমি যাকে তাকে হাত দেখাবে না । " প্রদীপ কোনোরকমে ঢোঁক গিলে বলে " এর কি কোনো প্রতিকার নেই"? উত্তরে হাসতে হাসতে জ্যোতিষী বললেন " ধৈর্য্য ধরো ! সুসময় অবশ্যই আসবে । তবে এখন তোমার কিচ্ছুটি হবে না ! বরং ...."! প্রদীপ এবার বিমর্ষ হয়ে বাড়ি ফিরে গেলো । কিন্তু সংসার প্রতিপালেনের জন্য তো অর্থের সংস্থান তাকে করতেই হবে । তাহলে উপায় ? অনেক ভেবেচিন্তে প্রদীপ সাপ্তাহিক লটারির টিকিট কিনতে শুরু করে । ক্রমে ক্রমে লটারির টিকিট কেনাটা তার নেশার মতো হয়ে গেল । কিন্তু টিকিট কিছুতেই যেন মিলতে চায়না ।  

ওদিকে প্রদীপের মানসিক চাপ আরও বাড়তে থাকে । ধার করেও সে লটারির টিকিট কেনে ! শেষমেশ লাগ লাগ লাগ ভেলকি ! প্রথম পুরস্কার বাবদ প্রদীপ দশ লাখ টাকা পায় ! সে আনন্দে আত্মহারা হয়ে যায় ! কিন্তু কতোগুলো টাকা নিয়ে সে কি করবে, বুঝে উঠতে পারে না । মনে মনে প্রদীপ সেই জ্যোতিষীকে বেশ করে গালিগালাজ করে এবং একদিন সে সত্যিই আবার সেই জ্যোতিষীর কাছে গিয়ে রীতিমতো তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে বলে " আপনি যে বলেছিলেন আমার এখন দারিদ্র্য যোগ চলছে ! এই দেখুন , আমি দশ লাখ টাকা পেয়েছি । তা , এইসব বুজরুকি আর কতোদিন চলবে "? জ্যোতিষী এবার সস্নেহে প্রদীপকে বললেন " আমিও চাই তুমি পাঁচ জনের একজন হও ! তোমার অর্থসম্পদ আরও বাড়ুক । কিন্তু সত্যিই তোমার এখন দারিদ্রযোগ চলছে । টাকাকড়ি সামলে রেখো । " বলেই জ্যোতিষী এবার একটা গভীর দীর্ঘশ্বাস ফেললেন ! 

আর তারপরেই প্রদীপ সেই জ্যোতিষীকে এক হাজার টাকা মুখের ওপর ছুঁড়ে দিয়ে বললো " এসব আপনাদের গিমিক ! ফালতু সব...!" জ্যোতিষী এবার প্রদীপের মুখের দিকে চেয়ে বললেন " হে ভগবান , ওকে রক্ষা করো !" প্রদীপ তারপর বাড়ি ফিরে আসে ! মনে মনে ভাবে , সত্যিই তার সুদিন ফিরে এসেছে । নতুন অনেক কিছুর পরিকল্পনা করে প্রদীপ ! কিন্তু কি আশ্চর্য ! এবার প্রদীপের পাওনাদারেরা তার বাড়িতে হানা দেয় ! এমনকি প্রদীপের বাবা যে দোকান থেকে নিয়মিত জিনিস কিনতেন , তারা এসেও উপস্থিত ! এসে বলেন " গত দু'বছর ধরে আপনি আমাদের থেকে ধারে মাল নিয়েছেন । আজ সেসব সুদে আসলে উসুল করবো । ওদিকে এক বন্ধুর পরামর্শে প্রদীপ বাদবাকি টাকা দিয়ে শেয়ার কিনেই যেন সর্বস্বান্ত হল ! এদিকে পাওনাদারদের জ্বালায় অতিষ্ট হয়ে প্রদীপের বাবা রীতিমতো অসুস্থ হয়ে নার্সিং হোমে ভর্তি হলেন ! সেখানেও সাত দিনের বিল বাবদ প্রদীপকে প্রায় দু'লাখ টাকা মেটাতে হল ! সবমিলিয় প্রদীপের যেন আবার দেউলিয়া অবস্থা হল ! এরকম এক রাতে সেই জ্যোতিষীর কথাটা প্রদীপের মনে পড়ে গেল ! আজও সেই জ্যোতিষীর বাক্যবাণটি প্রদীপের কানে আলপিনের মতো ফুঁটছে " তোমার এখন দারিদ্রযোগ চলছে "!
Share on Google Plus

About Shraboni Parbat

This is a short description in the author block about the author. You edit it by entering text in the "Biographical Info" field in the user admin panel.