এসো পরচর্চা করি : পিনাকী চৌধুরী

এসো পরচর্চা করি : পিনাকী চৌধুরী 
এসো পরচর্চা করি : পিনাকী চৌধুরী 

উত্তর শহরতলীর এক প্রত্যন্ত অঞ্চল, বলা ভাল গ্রাম , সেখানে এলাকার মহিলামহল দারুন জনপ্রিয় শুধুমাত্র পি.এন.পি.সি কারণে ! মানে পরচর্চা পরনিন্দা ! সেখান মিত্তিরদের এক চিলতে রকে রোজ বিকেলে মাঝ বয়সী মহিলাদের আড্ডা বসে ! আর মহিলাদের আড্ডা মানেই অবধারিত ভাবে চলে আসে অপর কোনো মহিলার চরিত্রের চুল চেরা বিশ্লেষণ , অথবা কোনও বাড়ির হাঁড়ির খবর , কিম্বা পাড়ায় আগত নতুন কোনো হ্যান্ডু যুবকের গুণকীর্তন ! আশ্চর্যের বিষয় হল, এইসব মহিলাদের পরচর্চা পরনিন্দা না করলে যেন পেটের ভাত হজম হয় না ! সারটা বিকেল ধরে মহিলা মহল বেশ আয়েশ করে রসের গল্প করে , তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলে ভর সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরে তুলসী তলায় বাতি জ্বালিয়ে, শাঁখ বাজিয়ে সন্ধ্যা দেন ! সেবার গোধূলি বেলায় শেষ সূর্য আলো যখন মিত্তিরদের রকে জাফরি কাটছে, তখনই হঠাৎ করেই যেন অলোকা কাকীমা অন্য মহিলাদের উদ্দেশ্যে বললেন " আচ্ছা, আমাদের এই ক'জন মহিলাদের নিয়ে একটা হোয়াটস অ্যাপ গ্রুপ খুললে কেমন হয় ?"

মিসেস বিশ্বাস আগ্রহের সঙ্গে বললেন " হ্যাঁ, হ্যাঁ , বেশ ভালো হয় ! আর আমি আমাদের এই হোয়াটস অ্যাপ গ্রুপের নাম দিলাম " এসো পরচর্চা করি "! সেকথা শুনেই বাদবাকি মহিলারা ঘাড় নেড়ে সম্মতি জানায় ! যেমন কথা, তেমনই কাজ ! গ্রুপের অ্যাডমিন অলোকা কাকীমা একে একে মোট দশ জন মহিলাকে সেই গ্রুপে অ্যাড করলেন ! আর দ্ব্যর্থহীন ভাষায় বলে দিলেন যে, সেই হোয়াটস অ্যাপ গ্রুপে পুরুষ প্রবেশ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ । তবে মাঝ বয়সী এই মহিলাদের গ্রুপে এক অবিবাহিতা মেয়ে অন্তরাকেও যুক্ত করা হল ! আর এই অন্তরা সত্যিই খুব ভাল এবং মুখচোরা গোছের মেয়ে । পরের দিন সকালে মিসেস বিশ্বাস ওই গ্রুপে গুড মর্নিং ম্যাসেজ দিয়ে লিখলেন " শূন্যে বাঁধি ঘর ! পথের শেষে পথ মেলেনা, কে-বা আপন -- কে -বা পর !" ওদিকে আবার ললিতা বৌদি এই ম্যাসেজ দেখে উত্তর দিলেন " সুপ্রভাত !

বিশ্বাস বৌদি আপনি আবেগ দিয়ে খুব সুন্দর লিখেছেন এটি ! তবে আমার যে এখন খুব জোরে বেগ এসেছে ! " সঙ্গে সঙ্গে বিশ্বাস বৌদি চারটি হাসির ইমোজি পোষ্ট করলেন ! আর তমলাকি বৌদি লিখলেন " সুপ্রভাত ! আমারও বেগ এসেছে ! ফিরে আসছি বিরতির পর !" এরকম ভাবে সময়গুলো কেটে যাচ্ছিল মহিলাদের ! একদিন অলোকা কাকীমা লিখলেন " পাড়ার আনাচে কানাচে আজকাল অনেকেই পরকীয়া করছে, কেউ কি লক্ষ্য করেছো তোমরা ?" উত্তরে মিসেস বিশ্বাস লিখলেন " সো হোয়াট ? প্রেম করাটাতো শরীর স্বাস্থ্যের পক্ষে ভালো । আর এখন তো পরকীয়া বৈধ !" এরকম ভাবে কথার পৃষ্ঠে কথা বাড়ে, কথার মাঝেও কথা বাড়তে থাকে হোয়াটস অ্যাপ গ্রুপে ! আর অন্তরা নিজে কিছু পোষ্ট না করলেও যখনই অন লাইন হয় , তখন সবার মন্তব্য গুলো মন দিয়ে পড়ে আর মনে মনে হাসে !

একদিন অন্তরা এক কান্ড ঘটালো ! সেদিন গ্রুপে পাড়ার কাকীমাদের সব কমেন্টস গুলো সে হঠাৎ করেই স্ক্রিন শট নিতে থাকে এবং তারপর একে একে সেইসব পাড়ার কাকীমাদের স্বামীদের কাছে সেগুলো ফরোয়ার্ড করে দেয় ! ব্যাস ! পাড়ার সেইসব মহিলাদের স্বামীরা তা জানতে পারেন , এবং অবশ্যই অবধারিত ভাবে যেন প্রত্যেক পরিবারে লঙ্কা কাণ্ড বেঁধে যায় ! চারিদিকেই যেন আক্ষরিক অর্থেই হুলুস্থুল পড়ে যায় ! আর অবধারিত ভাবেই যেন সেই হোয়াটস অ্যাপ গ্রুপ " এসো পরচর্চা করি' এর দফারফা হয়ে যায় !
Share on Google Plus

About Shraboni Parbat

This is a short description in the author block about the author. You edit it by entering text in the "Biographical Info" field in the user admin panel.