![]() |
ইশিতা জেরীনের "তন্দ্রা ও তমিস্রার কাব্য : নিঃশব্দ আহামদ |
ইশিতা জেরীনের "তন্দ্রা ও তমিস্রার কাব্য গভীর জীবনবোধ,উপমিত সৌন্দর্য্য,চিন্তার বিস্তৃতি ,কল্পনা ও বাস্তব যাপনের সৌন্দর্য্য৷
আত্মবিলাপ না এই স্বর,আত্মোপলদ্ধির৷স্মৃতি ও বিস্মৃত অনুভুতির গভীর মর্মস্পর্শী সংযোগ প্রতিটি কবিতা৷ঠিক কবিতা ও তন্দ্রার মাঝে যেমন তিনি দেখেন স্মৃতির দেয়াল৷তেমনি যেনো সেঁটে আছে দেয়ালময় জীবনের গুঢ় আলাপ,যা ভাবায়,আলোড়িত করে,উদ্দীপ্ত করে চেতনায়৷সদা জীবন্ত,প্রাণবন্ত এক আত্মা কিংবা জীবসত্তার উপস্থিতি কবিতায়৷
জীবনের প্রগাঢ় তন্দ্রা ভেঙে জেগে দেখি
আমার শরীরে এখনো সামুদ্রিক শ্যাওলা,মুক্তা—প্রবালের ঘ্রাণ৷তন্দ্রাবিন্দু -পৃ-০৮৷
জীবন ,কালে কালে যতোটা তন্দ্রার মতো যাক কেটে,তবু এতোটুকু জাগানিয়া,সম্বিৎ হতে থাকে -না,আমি ই আছি সর্বত্র৷শুধু একটা তন্দ্রার ভেতর ছিলো অবসর৷আছে তাঁর কবিতায় গভীর জীবনবোধ,উপমিত সৌন্দর্য্য,চিন্তার বিস্তৃতি আছে মিথ আর কল্পনার সৌন্দর্য্য৷
দুটি চোখের ভেতরে দুটি চোখের মাঝে দুটি চোখের আরশিতে
দুটি চোখের চর্যাপদ—পদে পদে চৌর্য্যবৃত্তি—পদস্থলন৷শিঙা-পৃষ্টা -১৪৷
ঠিক তাই৷চোখের ভেতর পুরে থাকে চোখ,চাহনি৷মুগ্ধরূপ৷চোখেই ধরে রাখে হাসি,কান্না বিদ্বেষ আবার চোখের আড়াল করেই চোখেই ধরে রাখে চৌর্য্য কীর্তি,বৃত্তি৷ভাবনার নান্দনিকতা তাঁর কবিতাকে করেছে নিঃসন্ধেহে সমৃদ্ধ৷
সময় এবং জীবন রীতিসিদ্ধ৷যেমন আপাতঃ দৃষ্টিতে যেমন দেখি দিবা শেষে রাত,জীবন এবং মৃত্যু তার সুন্দর এক প্রকাশ কবি ইশিতা জেরীনের রীতি কবিতাটি৷
প্রতিটি পরিসমাপ্তির পিঞ্জর ছেড়ে বেরিয়ে আসে একটি প্রারম্ভ
যেভাবে গহন রাত্রির সঘন গহবরে গুপ্ত থাকে গগনসূর্য ৷রীতি—পৃ ১৯৷
ঠিক এমনিই আঁকেন তিনি জীবনের ছবি৷প্রতিটি পরিসমাপ্তি মানেই শেষ বলে পিছপা হবার না বরং প্রারম্ভ নামে উদ্বেলিত হবার৷যেমন গভীর রাত পেরোলেই আসে ভোরের খরকর আলো দিগন্তবিস্তারি৷ধূয়ে পাপ,যেমন সাফ হয় আবার৷ঠিক নদী ভাটার গানে যেমন বক্ষে রাখে জোয়ারের টান৷এভাবে কবিচোখে এঁকেছেন জীবন ও সময় রীতিবদ্ধ৷যা থেকে না বিচ্যুত হবার৷এই গ্রহ,উপগ্রহ সমস্ত তাবৎ বিশ্বভ্রম্ক্ষান্ড আর মানব জীবন৷ভোর থেকে সান্ধ্যগানে দেখি রীতিসিদ্ধ সবখানে৷প্রতিটি কবিতায় মিশে যাচ্ছি,ছুঁয়ে যাচ্ছি কিংবা ঠিক তাই হচ্ছে যাই পাঠ করছি সমস্ত শব্দে শব্দে৷
আমি আমার ঘরের জানালা খুলে বসে থাকি
ইন্দ্রিয়াতীত অমোঘের তৃষ্ণাতুর প্রতীক্ষায়৷জানালা-পৃষ্টা২১৷
কবি জানালা খুলে রাখেন৷ঠিক জানালা বলতে যা কিছু ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য হয়৷যা সব যোগায় আলোড়ন,জাগায় চৈতন্য তারই প্রকাশ তাঁর জানালা কবিতায়৷
করোটিকে মনে হয় কফিন
আর মস্তিষ্ক কাফনে জড়ানো লাশ৷রক্তপুরীর খনিজ-পৃ-২৭৷
কবির যাপনকাল চিন্তাজগত আর লদ্ধ উপলদ্ধি বিচ্যুত না৷তাঁর কবিতায় আছে ইহজগতের নানাবিধ অনুভুতি,রীতিসিদ্ধ সমস্ত যা ,একদিন ইতিবৃত্ত হয়ে উড়ে যাবে৷আর তাই কবি অনুভব করেন সেই চরম রূপ,ঠিক কেমন তা৷তখন জাগতিক জগত এবং পরজগত রূপ তিনি অনুধাবণ করেন কবিতায়৷মৃতের মতো বোধহীন হয়ে উঠে পরক্ষণেই এই সমস্ত সময়৷
কবি ইশিতা জেরীন উত্তরাধুনিক সাহিত্যের প্রতিভাধর এক উজ্জল নক্ষত্র,তাঁর কবিতা ভাবনা,শাব্দিক প্রয়োগ বহুমাত্রিক,চিন্তার জগত বিস্তৃত৷প্রতিটি কবিতায় সুখপাঠ্য হয়ে বাড়ায় পাঠ একাগ্রতা,ভেতর ভাবনা ছুঁয়ে যাবার আছে স্পৃহা৷
না —এইসব যথেষ্ট নয়৷
জীবনের প্রবাহ আরো বেশি কিছু চায়
বুকের সম্পূর্ণ বর্গক্ষেত্রে এক কবরস্থান বয়ে বেড়াই আমি আজন্মকাল
হতচ্ছাড়া এই হৃৎপিন্ড তোর সমগ্রতার কবর৷
নিঃসন্দেহে কবি ইশিতা জেরীন সমসাময়িক কাব্য ভাবনায় অগ্রবর্তী,তাঁর কবিতায় আছে স্বপ্ন ও বাস্তব যাপনের সাথে এক দ্বান্দিক সম্পর্ক৷
পুরো পৃথিবীটায় যেনো ধূমায়িত,ধোঁয়াশায়৷যা কবিকে তাড়িত করে৷অসাড়,অবসন্ন করে—আয়ুহীন তন্দ্রাচ্ছন্নতায় স্বপ্নাহত করে৷আর কবি ইশিতা জেরীন এসব ক্লান্তির ভেতর আঁকেন শৈশবের দৃশ্য৷বেড়ে উঠা সময় কাল৷কলকল ধ্বণী,ভাঙন নেশার গ্রাসী নদী৷জাগে চোখময়৷প্রত্যেক জীবনের সাথে,বৈচিত্রের সাথে আছে নদী ও তার সময় প্রবাহের নিবিড় সম্পর্ক৷কবি নদীরূপ এঁকেছেন,স্মরণে এনে যেনো বিগত সময় তিনি ব্যস্ত হয়ে উঠছেন এসব যাপন ক্লান্তি নাশিতে কিংবা লোপাট করতে নিদ্রা ও জাগরণের সমস্ত বিভেদকে৷
জ্বরদাহ্য বালিশাবদ্ধ তন্দ্রার তন্ত্রীতে ইন্দ্রিয় ঢেলে আমি
আমার মাতৃনদীর ধূ-ধূ জলের কলস্রোত শুনি
৷তন্দ্রা ও তমিস্রার কাব্য-পৃ-৭৯৷
এমনো ৪৫টি কবিতার সৃষ্টি সম্ভারে কবিমানসের অনবদ্য সৃজন তন্দ্রাও তমিস্রার কাব্য"পুস্তকখানা নিঃসন্ধেহে বাংলা সাহিত্যের অনন্য সাক্ষর৷যা পাঠে ক্লান্তি নেই,আছে কবিতার পরম আস্বাদ অথবা যাকে বলি পরতে পরতে মুগ্ধতার বিন্যাস৷
তন্দ্রা ও তমিস্রার কাব্য
ইশিতা জেরীন
প্রচ্ছদ-জান্নাতুল ফেরদৌস
রোদেলা প্রকাশন
মূল্য-১৫০/
0 Comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন