![]() |
সিঁদুর দান : মৃদুল শ্রীমানী |
বাড়ির আশি পেরোনো কর্তার হঠাৎ মৃত্যু হল। বেশ টুকটুক করে ঘুরতেন, ফিরতেন, সর্বদাই হাসি মুখ। পার্থিব কোনো ব্যাপারে তাঁর মনে সংকটের লেশমাত্র নেই। ছেলেরা সবাই দাঁড়িয়ে গিয়েছে। সকলে স্বাবলম্বী। এমন অবস্থায় মৃত্যু খুব বিভীষিকা বহে আনে না। তাই কেউই কান্নায় আছাড়ি পিছাড়ি খাচ্ছেন না। কেবল সত্তর পেরোনো গৃহকর্ত্রী মাঝে মধ্যে চোখের জল মুচছেন। যা হোক এত দিনের সুখ দুঃখের সঙ্গী। সে চলে গেল। দুঃখ পাওয়া খুব স্বাভাবিক। শুভানুধ্যায়ীরা ভিড় করেছেন। দেহ এখনো বিছানায় শয়ান। সে সময় এক শুভাকাঙ্খী মহিলা সিঁদুরকৌটো হাতে নিয়ে সদ্য স্বামীহারা প্রবীণাকে জিজ্ঞাসা করল "আপনি সিঁদুর পরেছেন? সিঁদুর যে একটু পরতে হয়!" অমনি প্রবীণার চোখ ভরে জল। সেই যে স্বামী সিঁদুরদান করেছিলেন। আর তো পরা হবে না। এক কটুভাষী আমি দাঁড়িয়ে ছিলাম ভিড়ের সামনে। বুক চিতিয়ে বলে উঠলাম, "যা আপনাদের কৃত্য আছে, নীরবে সমাধা করুন। মাসিমাকে আর কাঁদাবেন না।" মৃত ব্যক্তির জ্যেষ্ঠ পুত্রও মৃদু প্রতিবাদ করে উঠলেন। বললেন, "এ যুগে এ সব আর মানায় না।" শুভাকাঙ্খী মহিলা অকুতোভয়। তিনি বেশ জানেন, তাঁকে কেউ বাধা দেবে না। তাঁরা সংখ্যাগরিষ্ঠ। সংখ্যাগুরু হলেই সত্য উপলব্ধির লাইসেন্স জুটে যায় না, এ কথা কে তাঁকে বলে দেবে!
0 Comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন