রাস্তার কুকুরটা পর্যন্ত রাজনৈতিক সামঞ্জস্য বজায় রেখে চলে : রুদ্রসাগর কুন্ডু

রুদ্রসাগর কুন্ডু
আমাদের সমাজে পরিচিত বহু মানুষকে বলতে শুনেছি, তিনি রাজনীতি করেন না। অনেক জ্ঞানী, বুদ্ধিমান মানুষ গর্বের সঙ্গে বলেন, আমি রাজনীতি থেকে দূরে থাকি। আমি অনেক কবি-সাহিত্যিককেও বলতে শুনেছি, সাহিত্য-জীবনের সঙ্গে রাজনীতির কোনো সম্পর্ক নেই। মোটের ওপর জীবন-জীবিকা, সংস্কৃতি, সাহিত্য চর্চা এমন সব গুরুত্বপূর্ণ বিষয় গুলির সঙ্গে রাজনীতির একাত্মতা মানতে চান না অনেকেই। অনেক সাংবাদিক এবং অনেক সংবাদ পত্রের গোষ্ঠীকেও বলতে শোনা যায়, তারা রাজনীতি নিরপেক্ষ সাংবাদিকতা করেন। সমাজে বসবাসরত অনেক সাধারণ মানুষও এই দাবি করেন। যদিও, আমার জানা মতে রাজনৈতিক নিরপেক্ষতা বা রাজনীতিক মতাদর্শ থেকে, জীবনকে বিচ্ছিন্ন করে রাখা আজকের আধুনিক সমাজ ব্যবস্থায় বসবাসকারী কোন মানুষের পক্ষেই, সম্ভব নয়।

আমার আলোচ্য বিষয়, জীবনের সঙ্গে রাজনীতির কি ধরণের সম্পর্ক? সমাজে বিভিন্ন পেশার মানুষ বসবাস করেন। একেক পেশার সঙ্গে ভিন্ন ভিন্ন পদ্ধতিতে রাজনীতির সম্পর্ক বিরাজ করে। সমস্ত দিক পর্যালোচনা করলে লেখার মূল বক্তব্য হারিয়ে যাবে, তাই আমি একজন মানুষ হিসেবে, মানুষের সঙ্গে বা মানব-জীবনের সঙ্গে রাজনীতির কি ধরনের সম্পর্ক জড়িয়ে আছে তাই বলব।  এবং তার কি কি রূপরেখা কিভাবে প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে রাজনীতি দ্বারা আমরা নিয়ন্ত্রিত হই এবং রাজনীতি আমাদেরকে ওতপ্রোতভাবে অক্টোপাশের মত জড়িয়ে থাকে, এগুলোই আমার আলোচনার মূল লক্ষ্য।

একটি শিশুর জন্ম লগ্ন থেকেই শুরু করা যাক। শিশুটি একটি পরিবারের পরিচয় বহন করে এই সমাজে পা রাখে, সেই পরিবারটি, যে রাজনৈতিক মতাদর্শে বিশ্বাসী; শিশুটিরও  তেমন একটি পরিচয় তৈরি হয়ে যায়। যেমনটা হয়, ধর্মের ক্ষেত্রেও। অর্থাৎ পরিবারের ধর্মবিশ্বাস এবং রাজনৈতিক আদর্শের সঙ্গে তার একটি সম্যক পরিচিতি লাভ ঘটে।  মানেটা খুব সোজা, হিন্দু ছেলে হিন্দু, মুসলিমের ছেলে মুসলমান পরিচয় নিয়েই সমাজে পরিচিতি লাভ করে। শিশুটির জন্ম পরিচয় পত্র তুলতে হলে এক ধরনের রাজনৈতিক সুবিধা বা সুপারিশের প্রয়োজন হয়। শিশুটি জন্মানোর আগে তার মায়ের গর্ভকালীন সময়ে সরকারি কিছু সুবিধার জন্য রাজনৈতিক দলের সুপারিশ বা নিয়ন্ত্রণ-এর প্রয়োজন হয়। যেমন ধরুন, ডাক্তার বাবু একটু বিশেষ নজরে যেন প্রসূতিকে দেখেন, হাসপাতালে পরিষেবার ক্ষেত্রে তিনি যেন ঠিক-ঠাক সুবিধা পান, ইত্যাদি।  অ্যাম্বুলেন্স এর প্রয়োজন হয়, স্বাস্থ্য সাথী দিদিমণি যেন একটু নিয়মিত খোঁজখবর রাখেন অর্থাৎ কি-না সমাজে ন্যূনতম রাজনৈতিক যোগাযোগ না থাকলে এই সুবিধা গুলো পাওয়া যায় না।  সুতরাং শিশু ভূমিষ্ঠ হওয়ার প্রক্রিয়ার সঙ্গেই আমরা প্রথমত দেখতে পাই রাজনীতির নানাবিধ সম্পর্কের নমুনা।

এরপরে শিশুটির যখন ৬ বছর পূর্ণ হয়, তখন তার প্রাথমিক শিক্ষা শুরুর একটা প্রক্রিয়া চলতে থাকে।  বেশিরভাগ বাবা মা-ই, সরকার দ্বারা পরিচালিত নিম্নমানের প্রাথমিক বিদ্যালয় ছেলে মেয়েকে ভর্তি করাতে চান না। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই বাবা-মা চান, অপেক্ষাকৃত একটু উন্নত শিক্ষা ব্যবস্থা প্রদানকারী স্কুলে ছেলে মেয়েকে ভর্তি করাতে। এই ক্ষেত্রে কোনও কেন্দ্রীয় সরকার পরিচালিত স্কুল বা মিশনারী পরিচালিত  স্কুলকে তাদের ছেলেমেয়েদের জন্য বেছে নেন। যেহেতু তুলনামূলক উন্নত শিক্ষা-ব্যবস্থা প্রদানকারী এইসব স্কুলে ছাত্র-ছাত্রী ভর্তির জন্য নির্দিষ্ট একটি সংখ্যা থাকে, সেহেতু ভর্তির জন্য এক ধরনের প্রতিযোগিতা পরিলক্ষিত হয়। অর্থাৎ কিনা ভর্তির আসন সংখ্যা তুলনায় ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা অধিক থাকে। এবং এই কারণে ছেলেমেয়েকে ভর্তির জন্য রাজনৈতিক নেতা এবং রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার প্রয়োজন হয়।  রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ ছাড়া এইরকম শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে, ভর্তি করানো সম্ভব নয়। অর্থাৎ কি-না, শিশুর জন্মের প্রক্রিয়া এবং প্রাথমিক শিক্ষা গ্রহণের ক্ষেত্রে আমরা গভীরভাবে অনুভব করছি এক ধরনের রাজনৈতিক প্রভাব-এর মধ্যে শিশুর ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে।

এরপরে উচ্চশিক্ষা গ্রহণের ক্ষেত্রেও একই নিয়ম রীতি ও রাজনৈতিক প্রভাব এর মাধ্যমে উত্তীর্ণ হতে হবে। অর্থাৎ সরকার দ্বারা নির্ধারিত সিলেবাস, সরকার দ্বারা নির্ধারিত শিক্ষানীতি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিকাঠামো, শিক্ষকদের রাজনৈতিক অনুরাগের ভাষা, পদ্ধতি-প্রয়োগের প্রভাব। মোটের ওপর বলা যায়, রাজনীতির সীমারেখাকে পেরিয়ে যাওয়া কোন মানুষের পক্ষেই সম্ভব নয়। একবার ভেবে দেখুন, এই যে শিক্ষাব্যবস্থা, যাকে আমরা শিক্ষানীতি বলছি, এই শিক্ষানীতি তৈরি করেন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব অথবা রাজনৈতিক দলের পছন্দ করা কোন কমিটি। এই কমিটির একমাত্র লক্ষ্য থাকে, সরকারি দলের মানসিকতার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে একটি পরিপূরক শিক্ষানীতি প্রণয়নের অর্থাৎ শিক্ষা গ্রহণের ক্ষেত্রে পাঠ্যপুস্তক এর বিষয়বস্তু এবং শিক্ষা গ্রহণের পদ্ধতি পরিকাঠামো সুবিধা অসুবিধা সমস্ত কিছুই সরকার দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। এবং এই সরকার অবশ্যই একটি রাজনৈতিক দলের কার্যক্রমের মধ্যে দিয়ে গঠিত হয়। রাজনৈতিক দলের সংখ্যাগরিষ্ঠতা সরকার তৈরি করে, আর এই সরকার, তৈরি করে দেয় একটি শিক্ষানীতি। সেই শিক্ষা নীতি গ্রহণ করে, সমাজে বেড়ে ওঠে একটি শিক্ষিত জাতি, সেই শিক্ষিত জাতির মধ্যে এই শিক্ষা নীতির প্রভাব বিরাজ করতে থাকে, আর সেই শিক্ষা গ্রহণের শেষে মানুষটি বলছে, তিনি রাজনীতি থেকে দূরে থাকেন!

সরকারী শিক্ষা নীতির মধ্যে যে ধরনের শিক্ষা ব্যবস্থা আমাদের দেশে প্রচলিত রয়েছে, সেই ধরনের শিক্ষা ব্যবস্থা আজকের দিনে মোটেই ব্যবহারিক নয়। অর্থাৎ আন্তর্জাতিকভাবে পৃথিবীর সামাজিক স্তরের যেভাবে অগ্রগতি হয়েছে, আমাদের শিক্ষানীতি সেইভাবে অগ্রগামী নয়। ফলে আমাদের এই শিক্ষা নীতির মাধ্যমে, শিক্ষিত যে জনগোষ্ঠি তৈরি হচ্ছে, তারা মূলত অকেজো, ব্যবহারের অনুপযোগী একটি তথাকথিত শিক্ষিত জাতিতে পরিণত হচ্ছে। এবং সে কারণেই দেখবেন পৃথিবীর উন্নত দেশের তুলনায় আমাদের দেশে স্বনির্ভরতা কম, বেকারত্বের সংখ্যা বেশি। এরকম একটি অসামঞ্জস্যপূর্ণ সমাজব্যবস্থা রাজনীতির সুফল কুফল যেভাবেই বলেন না কেন, মানতে হবে, রাজনীতির প্রভাবেই আজকের এই সমাজের বাস্তব চিত্র তৈরি হয়েছে।

এবারে আরেকটু উচ্চতর শিক্ষা ব্যবস্থার দিকে আসুন অর্থাৎ কি-না কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে স্তরের শিক্ষা ব্যবস্থায়।  তুলনামূলক হয়তো অনেকটাই পরিবর্তিত শিক্ষানীতি ও সিলেবাসের সুযোগ ছাত্র-ছাত্রীর জীবনে আসে।  কিন্তু এখানে আরেকটি বিরম্বনা খুব শক্ত ভাবে তৈরি হয়ে থাকে, আর তা হল ছাত্র রাজনীতি। রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞ ব্যক্তিরা খুব উৎসাহের, সঙ্গে উচ্ছ্বাসের সঙ্গে বলেন, ছাত্ররাজনীতি না থাকলে আগামী দিনের রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বে তৈরি কি করে হবে? আর এই রাজনীতি না চললে রাষ্ট্র কিভাবে চলবে তার জন্য নাকি ছাত্র রাজনীতির প্রয়োজন আছে। ছাত্র বয়স থেকে রাজনীতি করতে করতে শেষ পর্যন্ত যিনি রাজনীতিকে পেশা হিসেবে নেন, তিনি সমাজের সর্বস্তরে একসময় শ্রেষ্ঠত্ব গ্রহণ করেন।  আর্থিকভাবে, সামাজিকভাবে, সর্বোপরি সমাজের সমস্ত স্তরে তিনি মান মর্যাদার সঙ্গে জীবন অতিবাহিত করেন। কিন্তু কিছু মানুষ থাকেন যারা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এসব রাজনৈতিক অস্থিরতার জন্য সহজ ও সাবলীল ভাবে শিক্ষা সম্পন্ন করতে পারেন না। বাস্তব জীবনে, তারা সরকারি চাকরিও পাননা।  শিক্ষাব্যবস্থার এমন অনুপোযোগীতার জন্য স্বাবলম্বী ও স্বনির্ভর হতে পারেন না।

প্রচলিত শিক্ষা ব্যবস্থায় যে ধরনের পদ্ধতি অবলম্বন করা হয়, এবং এমন পদ্ধতির প্রভাবে যে শিক্ষিত মানুষটির উন্মেষ ঘটে, শিক্ষার সমাপ্তি শেষে তার বয়স ২০ থেকে ২৫ এর কোঠায় এসে দাঁড়ায়।  তারপর, চাকরির জন্য নতুন নতুন পদ্ধতির আরো অনেক পরীক্ষা-নিরীক্ষা মধ্যে দিয়ে তাকে অতিক্রম করতে হয় আরো কঠিন কঠিন পথ।  সেখানে আর্থিক সামঞ্জস্যের প্রয়োজন হয় । প্রয়োজন হয়, পারিবারিক সংগতি, মানসিক ধৈর্য, শারীরিক সুস্থতা এবং অনুকূল পরিবেশের।  যা বেশিরভাগ শিক্ষার্থীর জন্যই সম্ভবপর হয়ে ওঠে না। ফলে জীবন চলার পথকে মসৃণ করার এই শিক্ষানীতির অসুখে, মাঝপথেই যবনিকা টানতে হয় অনেক শিক্ষার্থীকেই। একজন শিক্ষার্থীর কী ধরনের শিক্ষা গ্রহণ করার আগ্রহ রয়েছে, কেমন ধরনের শিক্ষা গ্রহণ করলে সে সহজে আয়ত্ত করতে পারবে এবং প্রয়োগ করার ক্ষমতা অর্জন করতে পারবে, তার যাচাই বাছাই ছাড়াই চাপিয়ে দেওয়ার মতন এক ধরনের অপ্রয়োজনীয়, অক্ষম শিক্ষানীতি ও সিলেবাসের মাধ্যমে সমাজে প্রচলিত এই ব্যবস্থার দ্বারা নীরবে, নিভৃতে চলছে এক চরমতম অবক্ষয়।

প্রচলিত ব্যবস্থায় এমএ পাস করার পরেও তাকে যদি চাকরি করতে হয়, তাহলে তাকে আরো দু'একটি পরীক্ষার দ্বারা নিজেকে শিক্ষিত প্রমাণ করার অপেক্ষা রাখে আমাদের প্রচলিত সরকারি ব্যবস্থায়।  একবার ভেবে দেখুন, এমএ পাস করার পরেও তার জন্য সরকারি দপ্তরে কোন চাকরি নেই। এমন ধরনের শিক্ষা ব্যবস্থা রেখে কি লাভ? যে শিক্ষাব্যবস্থা একজন মানুষকে প্রকৃত অর্থে সরকারি দপ্তরে কাজ করার যোগ্য হিসেবে তৈরি করতে পারেনা! ক্লাস ওয়ান থেকে এমএ পাস করা পর্যন্ত ১৭ বছরের এই যে শিক্ষা পদ্ধতি, কিসের জন্য তৈরি করা হল, যদি শিক্ষার শেষে, পুনরায় বিভিন্ন ধরনের, বিভিন্ন কোর্স পদ্ধতিতে পরীক্ষা দিয়ে নির্ধারিত পেশায় যাওয়ার জন্য নতুন করে আবার শিক্ষা গ্রহণের প্রয়োজন পড়ে? তাহলে এই সিদ্ধান্ত সাধারণত হাই স্কুল অথবা মাধ্যমিক পাশের পরই গ্রহণ করা উপযুক্ত বলে মনে করি। মনে করাটা অত্যন্ত স্বাভাবিক নয় কি? আমার মত একজন সাধারণ মানুষ যখন এই সমস্যার সমাধান কে ভাবতে পারে, তাহলে সরকার ব্যবস্থায় ( ছাত্র রাজনীতি করে আসা )এত মহান ব্যক্তিত্ব, এত উন্নত মস্তিষ্কের মানুষ গুলো কেন বুঝতে পারছে না? নাকি বুঝেও বুঝতে চাইছে না! কোথাও না কোথাও একটা কিন্তু-কিন্তু থেকেই যায়।

এই কিন্তু-কে খুঁজে বের করা একান্ত জরুরি। চাকরি জীবনেও পিছু ছাড়ছে না রাজনীতি। কর্ম ক্ষেত্রে রয়েছে ইউনিয়ন। অর্থাৎ কিনা বিভিন্ন মতের ভিন্ন ভিন্ন রাজনৈতিক গোষ্ঠী রয়েছে, যারা ইউনিয়নের নামে পরোক্ষভাবে রাজনৈতিক শক্তি সঞ্চয় করে ও প্রয়োজনমতো প্রয়োগ করার পদ্ধতি আয়ত্ত করে। একজন সরকারি চাকরিজীবী নিরপেক্ষভাবে তার কাজকর্ম করে স্বাভাবিক জীবন যাপন করার ইচ্ছে প্রকাশ করে, কিন্তু এই ইউনিয়নের নামে পরোক্ষ রাজনীতির সংগঠনগুলি তার স্বাধীনচেতা ব্যক্তিত্বে বারবার আঘাত হানে এবং তাকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করে। এই-সব ইউনিয়নের সঙ্গে সম্পর্ক না থাকলে নিয়মমাফিক ছুটিছাটা ও পাওয়া যায় না।  উপরন্তু ওপর থেকেও থাকে নানান ধরনের চাপ।  এভাবে রাজনৈতিক প্রভাব ও বৃত্তের ভেতর থেকে থেকে বেড়ে ওঠা সমাজের কবি-সাহিত্যিক-সাংস্কৃতিক-বুদ্ধিজীবী সকলেই যখন বলতে চায়, আমরা রাজনীতির বাইরের লোক, আমরা রাজনীতি করি না, রাজনীতির প্রভাব মুক্ত ... তখন হাসি পায়।

সরকারি চাকরি পেলে আপনি ইউনিয়ন ভিত্তিক রাজনীতির একটি অংশে পরিণত হবেন আর যদি সরকারি চাকরি না পান? বেকারত্বের ঘানি কাঁধে নিয়ে সারা জীবন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের তাবেদারী করে জীবিকা নির্বাহ করতে হবে।  গোটা জীবন ভর। তাতে আপনি সামাজিকভাবে সাফল্য পেতেও পারেন, নাও পেতে পারেন। কিন্তু কোনও না কোনও ভাবে আপনাকে, যে কোনও  রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় জীবিকা নির্বাহ করতে হবে।  সরকারি চাকরিজীবীর অবসরপ্রাপ্ত পেনশন এর সুবিধা, এমন বিবিধ কিছু সমস্যা রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার জন্য অবশিষ্ট থেকে যায়। আর বেকারত্বের জীবনে বা বেসরকারি কর্মসংস্থান ও চাকরির জীবনে থেকে যায় সীমাহীন রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার কুৎসিত হাতছানি।

জীবনের পাকচক্রে অতি সতর্কতার সঙ্গে যেসব ধূর্ত মানুষেরা এইসব রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার ভেতর থেকেও নিজেকে বাঁচিয়ে রাখতে পারেন, তারাও কোন‌ও না কোন‌ও ভাবে রাজনীতির প্রভাবে‌ই প্রতিনিয়ত বেড়ে ওঠেন।  কেননা, যারা প্রকৃত অর্থেই সবকিছু থেকে নিজেকে সরিয়ে রেখেছেন, তাদের কাছে আমার একটি সরল প্রশ্ন : সরকারি নির্বাচনের ক্ষেত্রে আপনার ভোটাধিকার প্রয়োগ যে কোন‌ও একটি রাজনৈতিক দলের পক্ষেই তো  যায়, নয়কি? ফলে একান্তই যারা অস্বীকার করতে চান যে, রাজনীতি থেকে নিজের জীবন ও আদর্শ নিজের কর্ম ও অভ্যাসকে দূরে রাখতে পেরেছেন, তাদেরকে বলব, বোকার স্বর্গে বসবাস করছেন।  রাজনীতির অসীম শক্তি, আপনার জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত সমস্ত সময় ছায়ার মতো জড়িয়ে আছে, তা কি আপনি কোনওদিনও সরিয়ে দিতে পারবেন না।

আপনার মৃত্যুর পর আপনার পরিবারের সঙ্গেও সে ছায়া জড়িয়ে থাকবে। গভীরভাবে বিশ্লেষণ করে বুঝেছি, এই সমাজের সর্বস্তরে রাজনীতির ছায়া থাকে। প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ যাই হোক না কেন ? শুধু জন্মমৃত্যু নয়, আপনার উপলব্ধি এবং প্রকাশের ভাষাকেও নিয়ন্রণ করে রাজনীতি। এবং  এও উপলব্ধি করেছি, রাস্তার কুকুরটা পর্যন্ত রাজনৈতিক সামঞ্জস্য বজায় রেখে চলে।  আমরা চাই বা না চাই, রাজনীতি আমাদের সবসময় নিয়ন্ত্রণ করে।  রাজনৈতিক প্রভাবে প্রাকৃতিক উপায়ে বেড়ে ওঠা রাস্তার বৃক্ষটিও মাথা ঝুকিয়ে একবার নেতাকে সালাম জানায়। 

Share on Google Plus

About Shraboni Parbat

This is a short description in the author block about the author. You edit it by entering text in the "Biographical Info" field in the user admin panel.