জেগে থাকে কৃষ্ণ পক্ষের রাত : মাসুদ সুমন

মাসুদ সুমন
জেগে থাকে কৃষ্ণ পক্ষের রাত

সকলের মতো আমরাও ভালোবাসি আমাদের গ্রামকে। যদিও আমাদের গ্রাম সৌন্দর্যের লীলাভূমি নয়। বাঙলাদেশের আর দশটা সমতল ভূমির মতোই আমাদের গ্রাম- পাশ দিয়ে বয়ে গেছে নদী। নদীর পাড় ধরে এঁকে-বেঁকে পায়ে হাঁটা মাটির সরু রাস্তা- যা এখন আরও উঁচু এবং বিস্তৃত হয়েছে এবং যার বুক জুড়ে বিছানো হয়েছে লাল লাল ইট। রাস্তার দুইধারে সারি সারি বৃক্ষ। কোথাও জংলা ঝোপ। ভাটগাছ, আখন্দ গাছ, আইশাল ঝোপ, কলমী লতার ঝোপ আর বড়ই গাছে শূন্যলতার গায়ে জড়াজড়ি করা লাল লাল পানি ফল। রাস্তার পাশ ঘেষে গাছ-গাছালির ছায়ায় জিরোতে থাকা ঘর। ঘরের চালে শুয়ে শুয়ে দোল খায় নীল রঙা সিমফুল। সামনে নিকানো ছোট্ট উঠান। মাচায় শাদা শাদা ফুলের নিচে ঝোলে লাউ। পাশেই গোয়াল ঘর। সকাল বেলা আবাল বাছুর তার মায়ের পাশে দাঁড়িয়ে ছড়ছড় চোনায়। পশ্চিম পাশের্^ বিস্তীর্ণ ধানী জমির ক্ষেত। চৈতমাসের বাতাস ভরা বিকেলে সবুজ ধানপাতাগুলি তিরতির কাঁপে- একেই আমাদের কাছে শ্রেয়তর বলে মনে হয়। মনে হয় রূপ কথার স্বর্গ রাজ্য বলে। নরোম ভোরে শিশিরভেজা পথে ক্ষেতে যেতে যেতে আমরা পুলক অনুভব করি। শ্যাওড়া গাছে বসে থাকা লেজ ঝোলা পাখিকে একান্তই আপন মনে হয়। অলস দুপুরে আনার মা’র ভিটা থেকে ভেসে আসা ঘু-ঘু’র ডাক আমাদের উদাস করে দেয়। কুঁড়েঘরই প্রতিভাত হয় শান্তির নিবিরতম সুখের স্থান বলে।             
আমাদের ভেতরে কোন কবি কিংবা চিত্রশিল্পী কিংবা গীতিকারের জন্ম হয়নি বলে এর রূপ সৌন্দর্যের বর্ণনা আলাদাভাবে কেউ কোনদিন করেনি। তবু আমরা প্রত্যেকেই মনে-প্রাণে ভালোবাসি একে। পাশের গাঁয়ের সাথে হা-ডু-ডু খেলায় জিতে আমরা সমস্বরে উল্লাসে ফেটে পড়ি। গালে কপালে রঙ-জরি মেখে শিল্ড উচিয়ে নেচে নেচে সারা গাঁও ঘুরে বেড়াই। প্রতিটা ঘর থেকে নারীরা আমাদের বাহবা দেয়। পুষ্প বৃষ্টি ছড়িয়ে দেয়। যেন মহান এক বিজয় অর্জন করেছি। দীর্ঘদিন ঢাকা কিংবা অন্যকোন শহরে কিংবা বিদেশে থেকে গ্রামে ফিরলে- নদীর ওপারে এসে গ্রামের আবছায়াটুকু চোখে পড়া মাত্রই আমাদের বুকের ভেতরে এক তীব্র ভালোলাগা আন্দোলিত হয়। আদ্র হয়ে ওঠে চোখের কোণ। নৌকা পার হতে হতে যার সাথেই দেখা হয়, মনে হয় বুক মেলাই।

আমরা মোটামুটি দরিদ্রই ছিলাম। তবু সুখী ছিলাম আমরা। আমাদের ভেতরে এমন কেউ জন্মায়নি যিনি গাঁয়ের রোশনাই বৃদ্ধি করবেন। আমাদের গাঁয়ে কোন প্রাইমারি স্কুল নাই। যে স্কুলের ক্যাচমেন্ট এরিয়ার মধ্যে পড়েছে আমাদের গ্রাম, সেটার দূরত্ব প্রায় সাড়ে তিন কিলোমিটার। ফলে প্রায় অর্ধেক শিশুই প্রাথমিক বিদ্যালয়ে না গিয়ে স্থানীয় মক্তবে ভর্তি হয়ে আলিফ-বা-তা-সাযুক্ত জ্ঞান নিয়ে বয়োপ্রাপ্ত হয়ে ঊণোমানুষে পরিণত হয়। আর যারা সাড়ে তিন কিলোমিটার ধুলিপথ পাড়ি দিয়ে স্কুলে যায় তাদের বেশিরভাগেরই স্লেট যায় হারিয়ে- বই যায় ছিঁড়ে আর ছোট ছোট পা ফেলে যেতে  যেতে এবং আসতে আসতে এতোটাই হাপিয়ে পড়ে যে, প্রাইমারির গ-ি পেরোনোই হয়ে ওঠে না। অর্থনৈতিকভাবে কি সামাজিকভাবে সরকারের বড় চাকুরে কিংবা রাজনৈতিক নেতা কিংবা শিল্পপতি অথবা বুদ্ধিবৃত্তিকভাবে দেশ ও দশের সমীহ জাগাতে পারেন এমন কেউ জন্মায়নি আমাদের ভেতরে।

নদীর ওপারে যে বন্দর নগরী- আশপাশের সাত গাঁয়ের লোকেরা যেখানে প্রতিদিন সদাই-পাতি করতে কিংবা বাড়ির আঙিনায় চাষ করা আনাজ-তরকারি বিক্রি করতে আসে এবং যেখানে দেশের রাজনৈতিক আবহের ঢল আছড়ে পড়ে সেখানে আমাদের কোন প্রতিনিধি নেই। সেখানে আমরা প্রতিদিন যাই এবং ফিরে আসি। ফিরে এসে সেখানে ঘটে যাওয়া নানান ঘটনার বর্ণনা এমনভাবে করি- যেন রাজদরবারের রাজ-রাজাদের কাহিনি বর্ণনা করছি- আমরা সেখানে নেহায়েতই প্রজা।

তবু সুখী ছিলাম আমরা। যদিও আমাদের ঘরে পর্যাপ্ত খাবার ছিল না। তিনবেলা পেট পুরে ডাল-ভাত খাওয়ার মতো অবস্থাসম্পন্ন ঘরের সংখ্যা ছিল নিতান্তই নগণ্য। তবু আমাদের রমণীরা বিকেলবেলা উঠানে পা ছড়িয়ে পরস্পরের মাথায় বিলি কাটত। এক খিলি পান ভাগাভাগি করে মুখে পুরে জোছনা রাত্রিতে গল্প করত। কিশোর-কিশোরিরা ছুটে বেড়াত বিস্তীর্ণ মাঠ জুড়ে- দাড়িয়াবান্ধা, গোল্লাছুট, টিলোটিলো, বৌ-ছি, পাতা আনো, চোর-ডাকাত, ওপেনটি বায়োস্কোপ, মার্বেল, ডাংগুলি, সাতচাড়া, মোরগ লড়াই, হাডুডু খেলে পার করে দিত একেকটি স্বাপ্নিক বিকেল। হেমন্তের ধান ওঠা সারা হলে পালা গান কিংবা কবি গান কিংবা জারি গান অথবা যাত্রা পালার আয়োজন হতো। যেখানে জড়ো হতো গাঁয়ের ছেলে-বুড়ো সকলে। এমনকি চাচি-নানি-খালা-ফুপুরাও গায়ে চাদর জড়িয়ে জুত করে বসত। রাত বাড়ার সাথে সাথে যাত্রা পালার নায়ক-নায়িকার ব্যথায় ব্যথাতুর হয়ে উঠত তাদের বুক। হাহাকারে ভরে উঠত হৃদয়। মোটকথা অর্থনৈতিক প্রাচুর্যতা না-থাকলেও ঘরে প্রশান্তি ছিল আমাদের। এমন নয় যে, আমরা খুবই শান্তিপ্রিয় ছিলাম। অল্পতেই- খুবই তুচ্ছতর ঘটনাকে কেন্দ্র করেও আমাদের ভিতরে ঝগড়া লেগে যেত। এবং আমরা কখনও সখনও মাছ মারা কোচ কিংবা ট্যাটা অথবা কাতরা পরস্পরের রান কিংবা কুচকিতে গেঁথে দিতাম। তবে হ্যা আমাদের গ্রামে কেউ এ-ব্যাপার নিয়ে কখনই থানা-পুলিশ করেনি। আদালতে যাওয়া বিষয়টা চিন্তারও বাইরে ছিল। নিজেরাই সালিশের মাধ্যমে মিটমাট করে নিতাম। এবং খুব দ্রুততম সময়ের মধ্যেই পূর্বের সম্পর্কে ফিরে আসতাম। যেন কিছুই ঘটেনি।

ইদানিং- অবশ্য ইদানিং বলা ঠিক হবে না- বেশ ক’বছর ধরে বদলে যেতে শুরু করেছে আমাদের গ্রাম। আমরাও বদলে যাচ্ছি। ঢিলেঢালা গ্রামটা আটোসাঁটো হয়ে উঠেছে। ঘর আর ঘর। ঘনবসতিতে পরিণত হয়েছে আমাদের গ্রাম। বিকেলবেলা যে চডানে আমরা খেলাধূলা করতাম- যার বিস্তৃতি ছিল ধূ ধূ- সেখানে এখন গাঁথানো গাঁথানো ঘর। সন্তান উৎপাদনে আমাদের নারীরা খুবই উর্বর। বিশেষত নানী-দাদী এবং মা-চাচীরা। প্রতিবছরই পোয়াতি হতেন তারা। একেকটা রুগ্ন সন্তান জন্ম দিতেন। কালাজ¦র-টাইফয়েড-কলেরায় মরে মরেও যেকজন বেঁচে যেত তাদের সংখ্যাও নেহায়েত কম নয়। ফলে অগণতি মানুষের জন্য প্রয়োজন হয়ে পড়ে অসংখ্য ঘরের। এদিকে আমাদের অর্থনৈতিক অবস্থাও খানিকটা ফিরেছে। আশ-পাশের এলাকার থেকে পরে হলেও আমাদের গাঁয়ের ছেলেরাও পাড়ি জমাতে শুরু করেছে বিদেশের মাটিতে। মিডেলিস্ট ছাড়িয়ে জানের বাজি রেখে পাকিস্থান, ইরান, তুরস্ক হয়ে গ্রিস কিংবা ইতালিতে ঢুকে পড়েছে। ফলে রিংগিত-দিনার-ইউরোর ঘ্রাণে বাতাস ম ম করে। আগে যেখানে এক খাডালে হোগলা বিছিয়ে পুরো পরিবারকে রাত কাটাতে হতো এখন সেখানে নির্মাণ হয়েছে আরও আরও ঘরের। খড়ির ব্যাড়া, ক্যাচার ব্যাড়া উঠে গিয়ে টিন এবং টিনও উঠে গিয়ে অনেক ঘরেই ইটের দেয়াল উঠেছে। ছাদ ঢালাই হয়েছে। বাইরের থেকে বেশ রঙিন হয়ে উঠেছে আমাদের গ্রাম।

ঘরে ঘরে পৌঁছে গেছে স্যাটেলাইট। আমাদের তরুণ এবং তরুণীরাও বেশ আধুনিক হয়ে উঠেছে- অন্তত পোশাকে এবং চলনে। কিন্তু তারা ভুলে গেছে খেলতে। চডান কাকে বলে তারা জানে না। তারা জানে না ঘুরি কিভাবে বানাতে হয়। দাড়িয়াবান্ধা, গোল্লাছুট, টিলোটিলো, বৌ-ছি, পাতা আনো, চোর-ডাকাত, ওপেনটি বায়োস্কোপ, মার্বেল, ডাংগুলি, সাতচাড়া, মোরগ লড়াই, হাডুডু কিভাবে খেলতে হয় তারা তা জানে না। তাদের কৈশোর উধাও হয়ে গেছে। আমাদের শিশুরা শিশুকাল পার করেই উপণিত হয় যৌবনে।

আমাদের ঘরের পাশে কিংবা এখানে সেখানে অনেক পতিত জঙ্গল ছিল। জঙ্গলে নানান ধরনের পাখি ছিল। যাদের কলকাকলিতে মুখরিত ছিল আমাদের গ্রাম। জঙ্গল উজাড় হয়ে গেছে। আমাদের গ্রামে এখন কোন পাখি ডাকে না। কালেভদ্রে কর্কশ গলায় কাক ডেকে ওঠে। একসাথে অনেক কা-কা-কা। কাক ডাকলেই আমরা বুঝতে পারি গ্রামের কেউ মারা গেছে। অবশ্য মৃত্যুর সংবাদ মসজিদের মাইকেও শুনতে পাই। অনেকগুলো মসজিদ নির্মিত হয়েছে আমাদের গ্রামে। হালদার গোষ্ঠি, মাদবর গোষ্ঠি, মোল্লা গোষ্ঠি, খা গোষ্ঠি, বেপারি গোষ্ঠি প্রত্যেক গোষ্ঠিতেই নির্মিত হয়েছে একটি করে মসজিদ। প্রত্যেকটাই প্রত্যেকটার চেয়ে বৃহৎ এবং সৌন্দর্য্যম-িত। ভিতর এবং বাইর টাইলস্ লাগানো। প্রত্যেকটার মিনার প্রত্যেকটার চেয়ে উচু। পাঁচবেলা আযানের ধ্বনিতে মুখরিত হয়ে ওঠে আমাদের গ্রাম। অনেক সময় ধরে চলতে থাকে এ ধ্বনি তরঙ্গ। এক আযানের স্বর ছাপিয়ে যায় অন্য স্বরকে। আগে আমাদের গ্রামে এতো মসজিদ ছিল না। একটাই মসজিদ ছিল সারা গাঁয়ে। দুই ঈদে গাঁয়ের সকল লোকেরা মধ্যমসজিদ মাঠে নামাজ আদায় করে পরস্পরের সাথে কোলাকুলি করতাম এবং ছেলে-মেয়েরা দলবেঁেধ প্রত্যেক ঘরে ঘরে যেতাম শিন্নি খেতে। এখন কেউ কারও ঘরে যাই না।

আরও একটা লক্ষণীয় ঘটনা ঘটেছে আমাদের ভিতরে- আমরা রাজনৈতিক দলের সাথে সম্পৃক্ত হয়ে পড়েছি। যদিও নেতা বলতে যা বোঝায় ঠিক তেমন কেউ এখনও পর্যন্ত আমাদের ভেতরে জন্মাননি। তবু নদীর ওপাড়ে বন্দর নগরীর নেতাদের ডাকে আমরা দারুণ উত্তেজিত হয়ে পড়ি। আরও বড় নেতার নামে স্লোগান দিতে দিতে আমাদের গলার শিরা ফুলিয়ে ফেলি। অবশ্য সরকারি দলের গ্রুপিংয়ে আমরাও বিভক্ত হই। আমাদের গ্রাম এখন অনেক উপদলে বিভক্ত। আমরা প্রায় প্রত্যেকেই ভিতরে ভিতরে প্রত্যেকের শত্রু হয়ে উঠেছি। কেউ কাউকে বিশ^াস করি না। একদল স্লোগান দেয়, নেতা মোদের অমুক ভাই- অন্যদল সেøাগান দেয়, নেতা মোদের তমুক ভাই। স্লোগান দিতে আমরা আরাম বোধ করি। নিজেদের দারুণ শক্তিশালী মনে হয় তখন। নেতার নামে স্লোগান না দিলে ভীষণ রুগ্ন আর অসহায় লাগে। নিঃস্ব মনে হয়। অবশ্য সরকার পরিবর্তন হলে আমাদের স্লোগানে নেতার নামও পরিবর্তন হয়ে যায়। সেটা ঘটে খুব ধীরে। নতুন নেতার নাম আত্মস্থ করতে এবং তার চ্যালা-চামু-ার আস্থাভাজন হতে খানিকটা সময় লাগে। এখন আমরা সরকারি দলের দুই মহান নেতার নামে স্লোগান দেই। মোড়ে মোড়ে নেতার ছবির পাশে ফটোশপে এডিট করা নিজেদের হাসি হাসি ছবি ছাপিয়ে অশুদ্ধ বানানে শুভেচ্ছা জ্ঞাপন করি এবং নিজেদের বেশ একটা হোমরা-চোমরা ভেবে যারপরনাই আহ্লাদিত হই।

ইদানিং আমরা খুবই আনন্দপ্রবণ হয়ে উঠেছি- আমাদের তরুণেরা সবকিছুতেই স্ফুর্তি খুজেঁ পাচ্ছে। মোছলমানি, বিয়ে, জন্মদিন, আকিকা, থার্টিফাস্ট নাইট, পহেলা বৈশাখ অথবা যেকোন আয়োজনে বিরাট আকৃতির সাউন্ড বক্স আসে। সারারাত সরগরম থাকে আমাদের গ্রাম। দ্রিম দ্রিম উল্লাসে মেতে উঠি আমরা। এমনকি একুশে ফেব্রুয়ারির রাতেও খিচুরির আয়োজন করি। বড় বড় সাউন্ড বক্সে হিন্দি গান ছেড়ে নৃত্য করি। আনন্দে ঘেমে উঠি।

সিজনে সিজনে মেলা বসে খোলা চকে কিংবা মাঠে। মেলার মূল আকর্ষণ জুয়া এবং পুতুল নাচ। মেলা কর্তৃপক্ষ অবশ্য জুয়াকে জুয়া বলতে নারাজ- তারা বলেন লটারি। সকাল হলেই দশদিকে লটারির মাইক ছুটে যায়। ঘরে ঘরে পৌঁছে যায়। আবাল-বৃদ্ধ-বণিতা সকলে প্রতিদিনই হুমড়ি খেয়ে পড়ি লটারির টিকেট নিতে। রাতারাতি অনেক টাকার মালিক বনে যাবার এ সম্ভাবনাকে কেউ এড়াতে পারি না আমরা। রাত বাড়তি হলে আমাদের রমণীরা টিভি খুলে বসেন লটারির ফলাফল দেখার জন্য। মঞ্চের উপরে মাইক্রোফোন হাতে অনবরত কথা বলে যায় যে লিকলিকে লোকটি- তার বাকপটুতায় দারুণ মুগ্ধ আমাদের রমণীরা। সে এমন অশ্লীল কায়দায় কথা বলে যা আমাদের দারুণ বিমোহিত করে। অশ্লীলই এখন আমাদের ভীষণ আনন্দ দেয়। ত্রিপল দিয়ে ঘেরা পুতুল নাচের ঘরে আলো ও অন্ধকারের মোহনীয় রহস্য গন্ধ ছড়ায়। আমাদের অকালপক্ক তরুণেরা দারুণ বীর্যবান হয়ে ওঠে সে ঘরে ঢুকে। মঞ্চে কড়া মেকাপ করা অর্ধ নগ্ন তরুণীরা (আসলে তারা তরুণী না চল্লিশোর্ধ মহিলা কড়া মেকাপ আর লাল-হলদে-নীল আলো-আঁধারিতে আমরা ঠিক ঠাহর করতে পারি না) যখন হিন্দি গানের তালে তালে দেহ বাঁকিয়ে বেজায় অশ্লীল ভঙ্গিমায় নেচে ওঠে তখন দর্শকের সারিতে জড়ো হওয়া ছেলে-বুড়ো সকলের মনে দারুণ রোমঞ্চ ভর করে। রাত বাড়ার সাথে সাথে নৃত্যরত নারীদেহে পোশাকের দৈর্ঘ্য কমতে থাকে আর গতিসমৃদ্ধ হতে থাকে অঙ্গসঞ্চালন। আমরা আরও বেশি মাতোয়ারা হয়ে উঠি। আয়োজকদের প্রতি কৃতজ্ঞ হয়ে পড়ি- মাইরি খাসা জিনিস উঠাইছে...

কোন কোন রাতে- যখন কিছুতেই আর ঘুম আসে না তখন নদীর পাড়ের ইট বিছানো রাস্তায় একা একা হাটি। হঠাৎ হঠাৎ কোন গভীর রাতে দূরে একটা কান্নার আওয়াজ পাই। অস্পষ্ট নারী কণ্ঠের কান্না। যেন একজন প্রৌঢ়া শাড়ির আঁচল মাটিতে ছড়িয়ে যেতে যেতে সুর করে কাঁদেন। আমার কেন যেন মনে হয়, এই নারী আমার মা। আমার প্রিয় গ্রাম। আমি আসলে ঠিক জানি না এটা আমার কল্পনা না সত্যি সত্যি আমি শুনতে পাই আমার দুঃখিনি জননীর কান্না ভেজা স্বর।


Share on Google Plus

About Shraboni Parbat

This is a short description in the author block about the author. You edit it by entering text in the "Biographical Info" field in the user admin panel.