![]() |
রুমেলা চিকবড়াইক : উত্তম চৌধুরী |
রুমেলা চিকবড়াইক : উত্তম চৌধুরী
রুমেলা তার মুখের সামনে আকাশরঙা গ্লোবটিকে ঘোরাচ্ছে। বাঁ হাতে চেপে ধরেছে গ্লোবের নীচের স্ট্যান্ডটি। গ্লোবের লেখাগুলো এবং রেখাগুলো গতি বাড়তে বাড়তে ক্রমশ এক হয়ে যাচ্ছে। তখন শুধু এক ফ্যাকাশে আকাশরঙা বল আর কিছু নয়।
নবাগতা রুমেলা ভূগোলের শিক্ষিকা। টিফিনের কমনরুমে তখন অনর্গল কথার খৈ ফুটছে--হালকা হাসিঠাট্টা বা ঘন হয়ে বসে দু-তিনজনের নীচু গলায় কথোপকথন।
গ্লোবের ঘূর্ণন দেখতে দেখতে রুমেলা যেন কিছুটা অন্যমনস্ক। সে সময়ে টেবিলের অন্য প্রান্ত থেকে কানে একটি প্রশ্ন এসে পৌঁছোয়--তাহলে তুমি এক বেকার ছেলেকেই বিয়ে করবে? রুমেলা যেন শুনেও শুনতে পায়নি--এমন ভাব করছিল। প্রথম পিরিয়ডে যাওয়ার আগে বিয়ে সংক্রান্ত কিছু কথাবার্তা হয়েছিল। বিষয়টি তার ভালো লাগেনি। অন্য প্রান্ত থেকে আবার কৃষ্ণাদির কণ্ঠস্বর ভেসে এল--রুমেলা, তোমাকেই বলছি।
রুমেলা গ্লোবটি থামিয়ে তার উপর হালকাভাবে আঙুলের ছোঁয়া লাগাতে থাকে এবং একটু হেসে জবাব দিল-- বাধা কোথায়! আমার যা চেহারা-সুরত একজন বেকারকে বিয়ে করলে সে বরং বর্তে যাবে যেমন কোনও চাকরিজীবী ছেলে গরিব ও সুন্দরী মেয়েকে বিয়ে করে উদ্ধার করে।
দমকা হাসির ঢেউ যেন আছড়ে পড়ল কমনরুমের টেবিলে এবং তা দরজা-জানালা দিয়ে বেরিয়ে যাবার আগেই অনেক মুখের অনেক প্রশ্ন--সে তোমার স্কুলের ভাত রেঁধে দেবে? শাড়ি,সায়া,ব্লাউজ,ব্রা কেচে দেবে? থালাবাসন মাজবে? চা-নাস্তা করে দেবে? ঘর-দুয়ার মুছবে? বিছানা-আলনা গোছাবে? উলুধ্বনি,পুজোআচ্চা দেবে? সন্তান লালনপালন করবে? শাঁখা,সিঁদুর পরবে?
রূমেলা বিভ্রান্ত না হয়ে বলল--সব যে সম্ভব তা নয়। তবে যুগটা অনেক পালটেছে। আসলে ও আমার আয়ত্তে থাকবে।
একজন বলে উঠল--যদি নিস্তার পেতে চায়!
--খোরপোশ দিয়ে দেব। হাসতে হাসতে বলল রুমেলা।
--বলাটা খুব সহজ রুমেলা। মনে রেখো জাতটা পুরুষ। সারাবিশ্বে এক পোশাক হতে পারে,এক ভাষা হতে পারে,এক খাদ্য হতে পারে--কিন্তু নারী-পুরুষ কখনওই এক হবে না। বিশ বছর ধরে একটি মানুষের ঘর করছি অথচ এখনও কেমন অসহায় লাগে।
গম্ভীর হয়ে উঠছে কমনরুমের বাতাস। জানালা-দরজার পর্দাগুলো যেন স্থির। রুমেলা আবার গ্লোবটিকে ঘোরাতে থাকে এবং দেখতে থাকে কেমনভাবে এক হয়ে যাচ্ছে গ্লোবের রংগুলো,রেখাগুলো,লেখাগুলো সব।
0 Comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন