বাংলা গ্রামের দুপুর
ঋদেনদিক মিত্রো
[ মুক্ত ঘূর্ণন ছন্দে মিশ্র পংক্তির অন্তমিল ]
জানালারই পাশের খাটে
দুপুরবেলা শুয়ে আছি ---
হাতে ধরে বই,
এদিক ওদিক নীরব এখন
নেই কোনো হৈ চৈ !
একেই বলে
বাংলা গ্রামের দুপুর !
দূরের থেকে মাঝে-মাঝে
আসে ঘুঘুর ডাক,
হঠাৎ করে জানলা-ধারে
উড়েই এলো কাক !
শাপলা পাতায় ডাহুক হাঁটে,
অদূরে এক পুকুর,
একেই বলে
বাংলা গ্রামের দুপুর !
হাঁসগুলো ওই পুকুরেতে
করছে যে চৈ-চৈ,
এসব অনুভূতির সাথে
হাতে আমার বই !
কারোর ঘরে মেয়েটি নাচে,
ইস্কুলে ফাংশন তো আছে,
প্র্যাক্টিসটা করছে খানিক,
বাজছে পায়ের নুপুর,
একেই বলে
বাংলা গ্রামের দুপুর !
শুয়ে থেকেই ঘাড় ঘুরিয়ে
দেখছি চেয়ে দূরে,
কোনো পথিক নিজের মতন
যাচ্ছে গলি ঘুরে,
মাথার ওপর কয়টা পাখি
চলছে উড়ে-উড়ে,
ঝোপের ধারে ছেলে মেয়েরা
কু-চিক-চিক খেলতে গিয়ে
করছে তো হৈচৈ,
জানলা-ধারে খাটে শুয়ে
আমার হাতে বই!
কু-চিক-চিক তাল ফসকে
আছাড় খেলো,
লাগলো নাকি খুকুর,
একেই বলে
বাংলা গ্রামের দুপুর !
হঠাৎ কানে এলো, শুনি ---
চুড়িও'লীর ডাক,
মাথার ওপর ঝুড়িতে তার
ধরা দুটি হাত,
জানলা দিয়ে তাকিয়ে দেখি
পাশের বাড়ির উমা, টেঁপি,
বেরিয়ে এলো ঘরের থেকে
কিনবে চুড়ি, আলতা, ফিতে,
মুখে খুশির ছাপ !
চুড়িও'লীর ওই ঝুড়িতে
রাখা আছে কত কী যে !
উমা, টেপির চক্ষু করে
সেসব সুখের মাপ !
একটু খানি ছায়ার দিকে
চুড়িও'লী গিয়ে
মাথার ঝুড়ি নামিয়ে রেখে
মুখে আঁচল দিয়ে
ঘামটা মুছে চোখ ঘুরিয়ে
শ্বাসটা নিয়ে বসলে,
ঝুড়িটারই কাছে তখন
লুসি, টেঁপি ছাড়াও আরো
কজন হেঁটে চললে!
ঝুড়ির দিকে তাকায় তারা,
মনের ভিতর কী এক সাড়া ---
মজিয়ে দিলো ওদের ভিতর,
নেড়ে চেড়ে ঝুড়ির জিনিস
কেউবা স্পর্শ করলে,
এক গোয়ালা নিজের মতন
গলি দিয়ে যাচ্ছে তখন ---
দই আছে, ভালো দই,
এসব দেখতে-দেখতে পড়ি
খাটে শুয়ে বই !
খানিক পরে আর একজন
আইসক্রিম নিয়ে আসে,
বিশেষ রকম হাঁক টা দিতেই
রহিমা উচ্ছাসে
দৌড়ে এলো টাকা নিয়ে,
দোকানিকে টাকা দিয়ে
আইসক্রিমটা হাতে ধরে
কী যে মজা তার,
এটাই জীবন, এটাই তো সুখ,
মানুষের সংসার !
জানালারই গায়ে দেখি
পিঁপড়ে সারি যায়,
গভীর নম্রতায় !
তাদেরও তো আছে ভাষা,
তর্ক ও হৈচৈ,
ভাবছি এসব ---
খাটে শুয়ে
বুকের ওপর রেখে যখন
পড়ছি কোনো বই !
দূরে গাছের কোটরেতে
পাখির উঁকিঝুঁকি --
আমার মতন কজন দ্যাখে
এসব চুপিচুপি !
এসব দেখতে-দেখতে যখন
বইয়েতে চোখ রাখি --
বইয়ের পাতার বাক্যগুলি ---
যেন দূরের পাখি !
দুপুর বেলা খাটে শুয়ে
বালিশটাতে মাথা থুয়ে ---
অনেকটা ক্ষণ কাটিয়ে দিয়ে,
শরীর নেড়ে হাতে নিও
বালিশেরই পাশে রাখা ---
একটি কোনো বই,
কী যেন এক সুখের জগৎ !
আপন চিন্তা করবে মহৎ,
দুপুর বেলা খাটে শুয়ে
বালিশটাতে মাথা থুয়ে
হাতে কোনো বই !
কিংবা এলো সাপুড়ে এক,
সদরেরই সামনে এসে
বীনটা নিয়ে বাজায়,
ডুগডুগিও বাজায় আবার ---
মাথা তুলে সাপটা কেমন
মেজাজ নিয়ে তাকায় !
ঘিরে-থাকা ছেলে মেয়েদের মাতায় !
আমার বাড়ির কেউ বেরিয়ে
সাপুড়েকে করলো খুশি
চাল কিংবা টাকায় !
পিঠটা তুলে উঠে বসে
দেখছি এসব
ওঁৎ পেতে ঠিক আরেক জানালায় !
কিংবা এলো বাঁদর নিয়ে
আর একটি লোক,
বাঁদর নিয়ে খেলা দেখায়,
এদের ঘিরে
দশটা শিশুর চোখ !.
স্কুলের থেকে ফিরছে কিছু
ছেলে মেয়ের দল,
ছুটির সুখে চলছে তাদের
কেমন কোলাহল,
ভাবছি ছাত্রজীবন টা কী,
আসবে না আর ফিরে সে দিন,
চোখে আসে জল,
দেখছি যখন দুপুরবেলা
স্কুলের থেকে বাড়ি ফেরা
ছেলে মেয়েদের মত্ত কোলাহল !
বোস বাবুদের শস্য বাগান
খাচ্ছে কাদের
গরু এবং ছাগল,
বোস বাবুদের বড় বাবু
বাগানেরই ক্ষতি দেখে
গালি দিতে-দিতে হয়েন পাগল,
" কোন শয়তানদের এই গরু, ছাগল !"
এই জগতের মাঝে অনেক
নামী দৃশ্য,
নির্মাণ, আর দ্রব্য,
মানুষ সেসব নিয়ে থাকে
সুখেই অনবদ্য !
আমার কাছে বাংলা-গ্রামের
তুচ্ছ দুপুরবেলায় ---
কী যে গভীর-গভীর ভালো লাগে!
এমন ঢঙের দৃশ্য গুলো
অপূর্বতার স্বাদে !
এর চেয়ে আর পাইনা সেরা
কোনো কিছুই
এই জগতের মাঝে!
জানলা-ধারে খাটে শুয়ে
বই পড়তে-পড়তে --
এমনি করে
কত কিছু দেখি, ভাবি,
কত কী সুখ ধরতে !
কবিতা, গল্প, নাটক, নভেল,
যা কিছু হোক --- সুখ যে অঢেল,
হয়তো নোবেল পাওয়া কারোর
লেখা গ্রন্থ তাই,
দেখতে-দেখতে পড়তে-পড়তে
কোথায় চলে যাই !
কিংবা কারোর জীবনীটা ---
পড়তে-পড়তে কতটি স্বাদ পাই !
বিদেশী সব লেখকদিগে পড়ি কত,
কিন্তু, ওহে,
বাংলা ভাষার সাহিত্য তো
বিশ্ব-জুড়ে মাতায়,
মূর্খ যারা ভাবি তারা ---
বাংলাভাষার সাহিত্যটা
ঢুকে আছে ---
ছোট্ট কোনো খাঁচায়,
হায়রে আমার বাংলাভাষা,
কজন জানে তোর গৌরব
সাত সমুদ্র তেরো নদী
পেরিয়ে কোথায় যায় !
হায়রে আমার বাংলাভাষা
তোর গৌরব, গভীরতা,
এই বাঙালির কজন বোঝে হায় !
বাবুই পাখি পায়না পুরস্কার,
ফ্ল্যাট কিংবা টাকা,
তার নেই তো খ্যাতি পাবার
ইচ্ছে কিংবা আশা !
তবুও কেন যুগে-যুগে
শ্রেষ্ঠ বলে গণ্য হোলো
বাবুই পাখির বাসা !
হতেও পারে খাটে শুয়ে পড়ছি কোনো
স্থানীয় কোনো
অনামী পত্রিকা,
তাতেও কত গভীর ভাবের
গল্প, কবিতা !
এই বিশ্বের মাঝে কত ---
সৃষ্টি চলে অবিরত
জীবলোকের ভিতর,
কত সৃষ্টি আছে মহান,
কয়জনে বা পায় উঁচু মান ---
নাম ও খ্যাতির শিখর?
কিন্তু যেটা সৃষ্টি-সেরা,
নিজের গর্বে থাকে তাজা,
নাম না পেলেও মহান টা তো " মহান ",
হয় না তো সে ইতর !
নাই বা পেলো সকল গুণী
উচ্চখ্যাতির শিখর !
হতেও পারে পড়ছি এখন ---
হঠাৎ করে খুঁজে-পাওয়া
ছোটোবেলার " বর্ণ পরিচয়, "
কিংবা " সহজ পাঠ ",
দুপুরবেলায় খাটে শুয়ে
বুকের ওপর বইটা নিয়ে ---
দেখতে-দেখতে পৌঁছে যাবো ---
ছোট্ট বেলার প্রাইমারি স্কুল,
কিছু দূরে খালের পাশে
চম্পাবেনীর হাট !
মাঠ দিয়ে কে যাচ্ছে হাটে,
পিছু - পিছু নেচে-নেচে
ছুটছে পোষা কুকুর,
একেই বলে
বাংলা গ্রামের দুপুর !
-----------------------------------------------------------
( 30-সেপ্টেম্বর, 1 অক্টবর, 2020, Ridendick Mitro )
This is a short description in the author block about the author. You edit it by entering text in the "Biographical Info" field in the user admin panel.
0 Comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন