ভ্রান্তিবিলাস : ঈদারুল ইসলাম


ভ্রান্তিবিলাস

 ঈদারুল ইসলাম

আরাম কেদারায় হেলান দিয়ে একটু চোখ লেগেছে আর শৈশবের দিনগুলো যেন চোখের সামনে ভেসে আসছিল! গ্রামের রাস্তায় এক হাঁটু কাদা পেরিয়ে হাওয়াই চটি পরে হাতে বইয়ের বাক্স আর একটা কাঠের হাতলযুক্ত দেহের তুলনায় বড় ছাতা নিয়ে টিপিটিপি হেঁটে চলেছি,হঠাৎ করেই একটা হাওয়াই চটি কাদায় গেঁথে যায়। চোখেমুখে বিরক্তি নিয়ে এক হাতে সেটা তোলার চেষ্টা করছি,কিন্তু কিছুতেই সেটা উঠছে না!

#দৃশ্য-১

একটু তন্দ্রা ভেঙেছে ঠিক এমন সময় লক্ষ্য করলাম- ঠোঁটে লিপস্টিক,দুচোখে কাজল পরা এবং নাকটাও লাল রঙের একটু গোল মতো,শরীরে অদ্ভুত আকার বিশিষ্ট পোশাক পরা কিম্ভূতকিমাকার এক ব্যক্তি ময়ূরের পেখম দিয়ে দুই কানে সুড়সুড়ি দিয়ে ডাকছে। আচমকা চমকে উঠে এমন চেহারার কাউকে সামনে দেখতে পেয়ে ঠিক কি করব বুঝে ওঠার আগেই প্রশ্নের মুখে পড়তে হলো-
---আমি আজ তোকে তিনটি বর দিতে এসেছি। হাতে সময় খুবই কম,তিন মিনিটের মধ্যেই ইচ্ছে প্রকাশ করতে হবে।

---কিন্তু তুমি কে? কেনই বা আমায় বর দেবে? আর তোমার চেহারার এমন অবস্থা কেন? মনে হচ্ছে অনেকদিন স্নান করা হয়নি!

---সে সব না হয় পরে হবে। আমি ভূতের রাজা,তোর প্রতি সন্তুষ্ট হয়েই এই বরদান দিতে এসেছি।

---কিন্তু এই মুহূর্তে তো আমার মনে অনেকগুলো ইচ্ছে দানা বেঁধেছে! কোনটা ছেড়ে কোনটা চাইব এটা ভাবতে না ভাবতেই ভূতের রাজা খিলখিলিয়ে বলে ওঠে-
"বুঝেছি,তুই ঠিক করতে পারছিস না তো? আচ্ছা ঠিক আছে আমি তোর মনের থেকে প্রথম তিনটে ইচ্ছেপূরণ করার বরদান দিলাম।"

---এই কথা বলেই খিলখিল করে হাসতে হাসতে দূরে কোথাও উধাও হয়ে যায়।

---হঠাৎ চোখ খুলেই দেখি আগে পিছে দুটো স্কর্পিও আর মাঝে একটা মার্সিডিজ বেঞ্জ কার। অত্যাধুনিক বন্দুক হাতে গোটা দশেক সিকিউরিটি গার্ড,আর সাদা ইউনিফর্ম পরা ড্রাইভার মার্সিডিজ কারের দরজা খুলে দিয়ে বলে ওঠে-
"খোকাবাবু তোমার গাড়ি রেডি,চলো স্কুলের জন্য দেরি হয়ে যাচ্ছে।"

একটু বিস্মিত হয়ে নিজের শরীরের দিকে তাকিয়ে দেখি কোটপ্যান্ট-শু ও গলায় ল্যাঙট (টাই) পরে বেশ সাহেবের মতো লাগছে!

---কংক্রিটের রাস্তায় ফুল স্পিডে গাড়ি চলছে। চারিদিকে পাকা বাড়ি আর রাস্তাঘাট বেশ পরিচ্ছন্ন! গাড়ি গিয়ে স্কুলের গেটে পৌঁছতেই সিকিউরিটির দায়িত্বে থাকা সবাই নেমে এসে ক্লাসরুমে পৌঁছে দিয়ে বাইরে অপেক্ষা করতে থাকে।

---বাবা প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী এবং বিশিষ্ট সমাজসেবী। মিনিস্ট্রি লেভেলেও যথেষ্ট হাত রয়েছে। কোনোমতে ডিগ্রি অর্জন করতে পারলেই বাবার অফিস ও ব্যবসা অপেক্ষা করছে।

#দৃশ্য-২

ডিগ্রি কমপ্লিট করে বাবার ব্যবসার দায়িত্ব নিয়ে আজকাল সারাদিন ভীষণ কর্মব্যস্ততার মধ্যেই সময় কাটছে। বন্ধুদের অভাব তো নেই-ই সেই সাথে ডজন খানেক গার্লফ্রেন্ডও রয়েছে। অনেক সময় কার কি নাম ঠিক মনে থাকে না!  

এদিকে প্রায় রোজই কোথাও না কোথাও বিশেষ অতিথির আসন অলংকৃত করতে হয়। মাইক্রোফোন হাতে নিয়ে খেলতে আজকাল বেশ লাগে। অফিস শেষে বিভিন্ন পার্টির শোভা বর্ধনেও যথেষ্ট ভূমিকা রয়েছে। রঙিন পানীয় ও সুন্দরী রমণীর কোমল স্পর্শে জীবনটা বেশ রঙিন মনে হতে শুরু করেছে।

#দৃশ্য-৩

সারাদিন ভীষণ কাজের চাপ ছিল। তার উপর লাঞ্চে একটা ফরেইন ইনভেস্টরের সাথে মিটিং সেরে অফিসে ফিরে ভীষণ ক্লান্ত লাগছিল। ইজি চেয়ারে বসে একটু ঝিমিয়ে পড়েছি,এমন সময় টেবিলে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রাখা গোটা দশেক ল্যান্ড ফোনের একটা বেজে ওঠে। ফোনটা রিসিভ করে কথা বলতে বলতে সেক্রেটারিয়েট ডেস্কে রাখা পেনটা হাতে নিয়ে খেলতে খেলতে একটু অন্যমনস্ক হয়েছি,ঠিক এমন সময় এ.সি-র হাওয়ায় একটা সুমিষ্ট গন্ধ সংবেদী স্নায়ু হয়ে মস্তিষ্কের বিশেষ বিন্দুতে আছড়ে পড়ে! উৎসস্থলটা কোথায় সেটা আবিস্কার করতে গিয়ে কাচের রুমের থেকে বাইরে চোখ যেতেই লক্ষ্য করি বছর পঁচিশের এক সুন্দরী রমণী নিজের টেবিলে ফাইল নিয়ে ব্যস্ত!

---হঠাৎ কি যে হলো কে জানে! চেয়ার থেকে উঠে মেয়েটির সামনে গিয়ে হাঁটু গেড়ে বসে বলে উঠি-
"উইল ইউ ম্যারি মি? না বোলো না,প্লিজ!"

আচমকাই গিন্নির কর্কশ আওয়াজ সহ কনুইয়ের এক গুঁতোয় ঘুম ভেঙে যায়,আর আমাদের ভালোবাসার নিশান'কে দুজনের মাঝে নিশ্চিন্তে ঘুমন্ত অবস্থায় দেখতে পাই।।

Share on Google Plus

About Shraboni Parbat

This is a short description in the author block about the author. You edit it by entering text in the "Biographical Info" field in the user admin panel.