এলালতার প্রেম : মৃদুল শ্রীমানী

 মৃদুল শ্রীমানী

এলালতার প্রেম 

মৃদুল শ্রীমানী

এলালতা দাশগুপ্তকে কলেজের পুরুষবন্ধুরা যে আড়ালে আবডালে "ছোটো এলাচ" বলে উল্লেখ করতো, সেটা এলা জানত। "বড়ো এলাচ" শুনতে হত আর একটি মেয়েকে। তার চেহারার বহর ও ছিল সে ধরণের। এলা নামে রূপসী সুন্দরীটি জানত কলেজজীবনে ছেলেদের এ রকম আচরণে আদৌ কোনো গ্লানি নেই। ছেলেরা কখনো কখনো একটু বাড়াবাড়ি যে একেবারে করে না তা নয়। তবে একটু বুদ্ধি খাটালে সেটাকে নির্দোষ আমোদ হিসেবেই উপভোগ করা চলে। কিন্তু এই সহজ হাসি খুশি মেয়েটি ব্যক্তিজীবনের গহনে ভারি একা একা থাকত। পুরুষের প্রতি তার আগ্রহ মেশা কৌতূহল ছিল না, তা নয়। কিন্তু নিজেকে নিয়ে তার ভারি বিড়ম্বনা ছিল। সে যে নিজের চোখে মায়ের হাতে তার গুণী বাবাকে বিনা দোষে নির্যাতিত হতে দেখেছে। বাবার সেই শাস্তিভোগ এলার মধ্যে মেয়ে জন্মের উপর একটা অনাস্থা গড়ে দিয়েছিল। তার কেবল ভয় করত, তার মায়ের পথ ধরে সেও যদি কোনো নিরপরাধের কষ্ট ভোগের কারণ হয়ে বসে!

কিন্তু মানুষ ভাবে এক আর হয় আর এক। দেশে তখন গুপ্তবিপ্লবী আন্দোলনের প্রভাব ছিল। সশস্ত্র পথে বিদেশী সরকারকে উৎখাত করা যায়, এমন একটা সংস্কার ছাত্র যুবদের মধ্যে কাজ করত। এটাকেই কাজে লাগাতেন কিছু উচ্চশিক্ষিত ধুরন্ধর ব্যক্তি। এঁদের উচ্চশিক্ষা আর ক্ষুরধার বুদ্ধিবলে সশস্ত্র আন্দোলনের গুপ্তপথের অসারতা তাঁরা বুঝতেন না, এমন নয়। কিন্তু, বিদেশী সরকারের নেক নজরে না আসতে পেরে এক সুগভীর হতাশা এঁদের বিকৃত করে দিত। এক সর্বনাশা পথে ছাত্র যুবদের চালিত করার মধ্য দিয়ে সেই বঞ্চনার শোধ তুলতেন এঁরা। ইন্দ্রনাথ ছিলেন এমন এক ব্যক্তি। এলালতা দাশগুপ্ত পড়লো তাঁরই খপ্পরে। গুপ্ত বিপ্লবী দলের হয়ে নানা কাজ করা যেমন ছিল, তেমনি দলের ছেলেদের ধরে রাখার কাজে মেয়েদের একটা ভূমিকা পালন করতে হত। ভাই ফোঁটা অনুষ্ঠানের ভিতর দিয়ে সামান্য একটু স্পর্শের সংকেত সে সব দিনে ছাত্র যুবদের মনে অদ্ভুত দোলা দিত। 

ইন্দ্রনাথ জেনেশুনে মেয়েপুরুষে কাছে আসতে দিতেন। আর তাদের মধ্যে সংস্পর্শজনিত কোনো একরকম আসক্তি জেগে উঠলে, সে ঘনিষ্ঠতাকে সমূলে উচ্ছেদ করতে বাধত না ইন্দ্রনাথের। গুপ্তবিপ্লবী দলের সদস্যদের নিয়ে নিজের খুশিমত পুতুল খেলতেন ইন্দ্রনাথ। দরকারে তাদের দিয়ে অপরাধ করিয়ে, গুপ্তচর মারফত সে খবর পৌঁছে দিতেন পুলিশের উপর মহলে। এইভাবে অপছন্দের ব্যক্তিকে নিকেশ করে দেওয়া ছিল ইন্দ্রনাথের বাঁ হাতের খেল। এলা জুটেছিল বিপ্লবী দলের উপরিতলের তরল আবেগকে লক্ষ্য করে। তার মেধাবী চোখ মুখ যে অনেক প্রতিশ্রুতিবান যুবকের পাঁজর ঘেঁষে টান দেবে, সে কথা ইন্দ্রনাথ ভালো ভাবেই টের পেয়েছিলেন। এভাবেই না বুঝে দলের কাজ করতে করতে এলা খুঁজে পায় অতীনকে। অতীন্দ্রনাথ। তারপর গুপ্তবিপ্লবী দলের পরিবেশে কি দমবন্ধ একটা খেলা শুরু হয় চার অধ্যায় উপন্যাসে।
Share on Google Plus

About Shraboni Parbat

This is a short description in the author block about the author. You edit it by entering text in the "Biographical Info" field in the user admin panel.