বাংলাদেশে রাষ্ট্রচিন্তা যে কারণে উপেক্ষিত : রায় সুহৃদ

রায় সুহৃদ

বাংলাদেশে রাষ্ট্রচিন্তা যে কারণে উপেক্ষিত 

রায় সুহৃদ

মানুষের স্বতন্ত্র স্বত্তা ও আদর্শিক ধ্যানধারণা টিকিয়ে রাখতে এবং রাষ্ট্রের সুযোগ-সুবিধা নিয়ে সামগ্রিক উন্নয়নের জন্যই রাষ্ট্রের উৎকর্ষতা, উৎপত্তি। এদেশের  বিশ্ববিদ্যালয়ে রাষ্ট্রতত্ত্ব পড়ানো হয়,বড়বড় ডিগ্রি প্রদান করা হয়, গোল্ডম্যাডেল দেওয়া হয় কিন্তু রাষ্ট্রচিন্তার শক্ত-শক্ত থিওরিগুলো এদেশে অথর্ব, শক্তিহীন। এদেশে 'পলিটিক্যাল থট'কে আলগোছে সমুদ্দুরে নিক্ষেপ করা হয়। ফলশ্রুতিতে রাষ্ট্রের পুরুষত্ব নষ্ট হয়, রাষ্ট্র হারিয়ে ফেলে নিজস্বতা। হারিয়ে ফেলে গতিময়তা। প্রাচ্যদেশিয় চিন্তাভাবনার ঐতিহাসিক ভিত্তি খুবই মজবুত! মিশরীয়, ভারতীয়,চৈনিক, ব্যাবিলনীয়, পারস্য-এই প্রাচ্যদেশিয় সভ্যতাগুলোর রাষ্ট্রচিন্তার দর্শন, ইতিহাস, ঐতিহ্য অনেক সভ্যতার চেয়ে প্রাচীন হলেও পশ্চাতে এসবের মূল্য যথারীতি মূল্যহীন। পাশ্চাত্যের দেশগুলো যদিও অকপটে স্বীকার করেন যে, তাদের শিল্প, সাহিত্য, জ্ঞান-বিজ্ঞান বিকাশের জন্য প্রাচ্যদেশের নিকট ঝণী তথাপি রাষ্ট্রচিন্তার বিকাশে যে এসব সভ্যতার কোন অবদান থাকতে পারে-তারা এটি স্বীকার করতে অনাগ্রহতা প্রকাশ করে। তারা মনে করে, রাজনৈতিকভাবে এসব সভ্যতা আনপ্রোডিক্টিভ, বন্ধ্যা।এই যে দ্বিমুখী মতামত, আদর্শিক দ্বন্দ্ব এটা রাষ্ট্রের উৎপত্তি থেকে শুরু করে সার্বভৌমত্ব, রাষ্ট্রের আয়তন পর্যন্ত বিস্তৃত।

কোন কোন চিন্তাবিদ মনে করেন, রাষ্ট্রের উৎপত্তি হয়েছে ডিভাইন অরিজিন থিওরির ফলে,আবার অনেকেই মনে করেন ফোর্স থিয়োরির ফলে, অনেকেই ভাবেন সোস্যাল কনট্র্যাক থিওরির ফলে! এই কিসিমের কনট্রাডিকশন সবক্ষেত্রে। হাজারও দ্বন্দ্ব থাকলেও পাশ্চাত্যের দেশগুলো সবক্ষেত্রেই রাষ্ট্রচিন্তাকে প্রাধান্য দিয়েছেন, গঠন করেছেন মজবুত ভিত্তি। তাদের শক্ত পরিক্রমার প্রধান কারণ-চিন্তাবিদদের, শিক্ষানবিশদের সঠিক মূল্যায়ন, বিপরীত এই প্রাচ্যদেশ।

 এখানে ভন্ভামি আর মূর্খতার রাজনীতি চলে।এখানে রাষ্ট্রচিন্তার  সাথে সম্পর্কিত বিষয়গুলো উপেক্ষা করা হয়। অবমাননা করা হয় রাষ্ট্র গঠনের নীতি, প্রচ্ছন্ন ইতিবাচক রাজনৈতিক শক্তি। এদেশে কূটনৈতিক লেনদেন, চিঠিপত্র, রিপোর্ট, বিভাগীয় প্রতিবেদন, উন্নত বিশ্বের উন্নয়নের লক্ষ্য-এগুলোর পুঙ্খানুপুঙ্খ বিশ্লেষণ,বিরচন কিছুই হয়না। এদেশে 'লজিক অব ফিস'র কতৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এই কৃত্রিমতা, অবমূল্যায়নের ধারণা পরিবর্তন না করতে পারলে, রাজনৈতিক লেজুড়বৃত্তি,চাপরাশিগিরি বন্ধ না করতে পারলে এদেশে সুশাসন,রাষ্ট্রচিন্তা সীমাবদ্ধ থাকবে রাজনৈতিক বিভাজনের কালো পতাকায়!

Share on Google Plus

About Shraboni Parbat

This is a short description in the author block about the author. You edit it by entering text in the "Biographical Info" field in the user admin panel.